কবি-লেখকেরাই স্বরবর্ণের মূল চালিকা শক্তি। তাঁদের সৃষ্টিকাজ বুকে ধরে 'স্বরবর্ণে'র পথ চলা। কোনও সন্দেহ নেই,সেই সঙ্গে তার চলার গতিকে ত্বরান্বিত করেছে পাঠকের সুচিন্তিত মতামত। পাঠকের মতামতের আজ দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে থাকছে, গদ্য সংক্রান্ত পাঠকের প্রতিক্রিয়া ----
শুভাশিস ঘোষ এর গল্প পড়ে তন্ময় রায় লিখছেন 'পরিযায়ী' এক কথায় একটি অসাধারণ গল্প। লক ডাউনের বিভীষিকাময় দিনগুলিতে শ্রীদামের মতো অসহায়, সহায়- সম্বলহীন মানুষদের চোখের জলের কথা ভাষায় রূপ পেয়েছে গল্পটিতে। কোথায় ঘোড়ামারা দ্বীপ,মুড়িগঙ্গা নদী আর কোথায় তেলেঙ্গানা সিঙ্গেরানি কয়লাখনি। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কী বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তা আমরা যেমন দেখেছি, সেই সময় খবরের কাগজে কিংবা টিভিতে, তারই এক টুকরো ছায়াছবি যেন 'পরিযায়ী' গল্পটি।
শিল্পী গাঙ্গুলী শতদল মিত্রের গল্প পড়ে জানাচ্ছেন আবার সেই ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতি ফিরে এল । মানুষ যে কখন কোথায় হেরে বসে থাকে! খুব ভালো লাগল।
বিশ্বনাথ পালের অণুগল্প পড়ে গৌরীশঙ্কর দে লিখেছেন বেশ ভালো লাগলো। অত্যন্ত আকস্মিকভাবে শেষ হলো গল্পটি।
দীপংকর রায়ের উপন্যাস "কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে" সপ্তম পর্ব পড়ে অনীল হাজরা জানাচ্ছেন দীপংকর রায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস "কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে " নিয়মিত পড়ছি। আর ৭১-এ ভিটামাটির ছেড়ে এবার বাংলায় চলে আসার যে মর্মযাতনা উপলব্ধি করছি হাড়ে হাড়ে, কারণ ওই একই সময়ে আমারও উদ্বাস্ত হয়ে এবার বাংলায় চলে আসা, আমার সব আবার শূন্য থেকে শুরু করা। লেখকের লেখায় যখন পড়ছি "... সেখানে সন্ধ্যা নেমে আসে ডাহুকের ডাকে। দুপুর বেলাগুলিরও স্তব্ধতা ভেঙে দেয় ওই ডাহুকগুলি । এ কোণা ও কোণা সে কোণা থেকে তারা যেন কেবলই মনে করাতে চায় আমার সেই ফেলে আসা সময়গুলি ।" তখন পড়তে পড়তে হুহু করে কেঁদে উঠছে মনটা।
শীলা দাশের নিবিড় পাঠে পত্রিকার গদ্য রচনাগুলির নানাদিক উন্মোচিত হয়েছে, এমন পাঠককে কুর্নিশ।
রূপায়ণ ঘোষের অনুবাদ কবিতা প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন ফারসি ভাষায় তিন নারী ---জমিলা ইস্পাহনি, জাহাঙ্গীর পত্নী নূরজাহান, যিব্-অল্-নিসা-মখ্ফি-র রচিত কবিতার অনুবাদ খুব ভালো লাগলো। কবি রূপায়ণ ঘোষকে অভিনন্দন।
শংকর ব্রহ্মের কবিতা বিষয়ক গদ্য 'মির্জা গালিব' সম্পর্কে তাঁর অভিমত শঙ্কর ব্রহ্ম রচিত মির্জা গালিবকে নিয়ে রচনাটি অতি উৎসাহ নিয়ে পড়লাম। অনেক কিছু জানলাম। সমৃদ্ধ হলাম। কিন্তু আমার মনে হলো, রচনাটি পুনরুক্তি অথবা অতিশয়োক্তি দোষে দুষ্ট। পারম্পর্য হীনতাও কিছুটা রয়েছে। শুরুর দিকে গালিবের জীবনীর কিছু অংশ যেটা বলা হয়েছে, সেটা আবারও মধ্য অংশে পুনর্বার বলা হচ্ছে।যে কবিতাগুলো সর্বশেষে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আগেই রচনার মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে।অনেক তথ্যথাকলেও সুন্দর সমাপন ঘটেনি। সাযুজ্য ও পরিমিতি রক্ষা করতে পারলেই একটি সার্থক প্রবন্ধ নির্মিত হতে পারে। লেখক নিজে যেহেতু কবি তাই নিজের রচিত একটি কবিতা দিয়ে রচনাটি শেষ করতে পারতেন। তবু রচনাটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম তাই লেখককে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা।
'ধুলোর সিংহাসন' দেবাশিস সাহার উপন্যাসের অন্তিম পর্ব পড়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া 'ধুলোর সিংহাসন' উপন্যাসের অন্তিম পর্ব এমন ভাবে সাসপেন্স নিয়ে এল যেন বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। সত্যিই সোনায় মোড়া সিংহাসন এক নিমেষেই চুরচুর হয়ে ধুলোয় মিশে গেলো।নামকরনের সার্থকতা। স্নেহ অতি বিষম বস্তু এ কথাটি যে পরম সত্য সেটা শেষ স্তবকে বেহালার ছড়ে করুণ সুরে বেজে উঠল।সংসার জীবনের নির্মম বাস্তবের প্রতিচ্ছবি। ট্র্যাজিক উপন্যাস।এত সুন্দর চরিত্র উপস্হাপনা। অশোক-অলির এত সুখের সংসার যার তুলনা পাওয়া ভার। অর্থের অভাবে তাদের সম্পর্কে কখনো ফাটল ধরেনি। ভালোবাসা স্নেহই তাদের সম্পদ। তিল তিল করে গড়া এই সম্পদ যখন প্রাচুর্যে পরিণত হতে চলেছে তখনি বজ্রপাত। অতি আদরের একমাত্র সন্তান উপমার কাছ থেকে চরম আঘাত। প্রজন্মের ব্যবধানকে অশ্রুজলের শব্দে নির্মাণ করলেন পরিণত ট্রাজেডি। আগামী দিনে এমন সৎ ও সুন্দর উপন্যাস আরো পড়তে চাই। অনেক অভিনন্দন।
স্বপন নাগ দেবাশিস সাহার 'ধুলোর সিংহাসন' উপন্যাসের অন্তিম পর্ব পড়ে লিখছেন এভাবে শেষ হবে, ভাবনায় ছিল না। একটা মনখারাপের ঢেউয়ে চিন্তার সমুদ্র দুলে উঠছে। লেখার গুণে অশোক-অলি-উপমা যেন কল্পিত কোনও চরিত্র নয়। একেবারে আমাদের পাশেরই চেনাজানা রক্তমাংসের মানুষ। তাদের দুঃখ-আনন্দ আমাদের নিজস্ব অনুভূতির বাইরে কিছু নয়। আর নয় বলেই বুঝি উপমার এভাবে চলে যাওয়া আমাদেরও বিষণ্ণ করে, হতাশ করে। খুব ভালো লাগলো 'ধুলোর সিংহাসন' উপন্যাসটি। লেখাটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হবে, আমি নিশ্চিত।
আব্দুস সালাম সামগ্রিকভাবে পত্রিকা সম্পর্কে লিখছেন স্বরবর্ণ এক উন্নত মানের সাহিত্য পত্রিকা। এতো দিন পড়ার সুযোগ হয়নি। প্রতিটি বিভাগ যথেষ্ট বলিষ্ঠ। দেবাশিস সাহার উপন্যাসটির অন্যান্য কিস্তি পড়তে পারিনি। কেননা, সদ্য আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে এই মূল্যবান সংখ্যাটি। সুন্দর সমাপনী। অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কথাকার মহাশয়কে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন