তৈমুর খানের দুটি কবিতা
১
প্রতারণা
সবাই এখন ভালো ভালো প্রতারণার দোকান খুলেছে
যা যা দরকার কিনতে গেলেই পাওয়া যায় সব:
পাত্র-পাত্রী, হাতি-ঘোড়া, দুঃখ-কান্না, নাচানাচি এবং মিছিলের লোকও।
খুব ভালো ভালো প্রতারণা:
দামি সাজ-পোশাক, মসৃণ মুখ, চোখে চশমা,রঙিন নখ এবং কালো চুলও।
খুঁজতে খুঁজতে বিশ্রামের কাছে এসে বসেছি:
বিশ্রাম, কিসের চেয়ার বানিয়েছো?
বসতে গিয়ে ঠোকা খেলাম
আর বিস্ময় খুব হাসলো।
স্নানের জন্য কুয়োর ধারে গিয়ে দাঁড়িয়েছি
কুয়ো ভর্তি অনবদ্য জল
কিন্তু মাথা ভেজালো না
বালতি ভর্তি যৌবনে শুধু এক দৃশ্য তৈরি হলো।
মাঠময় ছড়ানো আছে কাদের পালক?
প্রতিটি পালকে পাখিজন্মের ইতিহাস খুঁজে খুঁজে
আমার সব বিশ্বাসই হারিয়ে গেল
কী নিয়ে ফিরবো তবে?
পালকেরা কেউ মৃত নয়, তবুও মৃত্যুর গন্ধ লেগে আছে গায়ে।
আমি আত্মবিসর্জন দিতে পারিনি বলে
এখনো সেই গন্ধ পাই
প্রতারণা ভালো মৃত্যুও বিক্রি করে এখন
রাজনীতির কসাইখানা থেকে কেউ কেউ মাংস কেনে
ছুটির দিনে বেসামাল পরকীয়ায় ডুবে যাবে বলে
অদ্ভুত ঘোড়ায় চড়ে কেউ কেউ শহর পরিক্রমা করে…
২
কল্যাণী
আজ আর কল্যাণী নেই!
শুধু তাকে ডাকি বারেবারে
আমাদের শোকাবহ জুড়ে
ভীরু তমসার গান ঝরে
কে তবে আলো জ্বেলে দেবে?
সন্ধ্যার পানপাত্রে মদিরা ঢেলে সাজাবে টেবিলে
আর সস্নেহ উষ্ণতার স্পর্শে জাগাবে!
আমরা সবাই কল্যাণ
আমাদের ঘরকন্না জুড়ে থাকে কল্যাণী
তার কাছে সান্ত্বনা পাই বলে
আমরা এখনো আত্মহত্যা করিনি
কত সংকট আজ পার হচ্ছে যুগ
আমাদের অসহায়তায় ডুবে যাচ্ছে চাঁদ
কল্যাণী, দেখে যাও তোমার কল্যাণেরা আজ
পুষেছে বিষাদ
তৈমুর খান -এর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭)

অনবদ্য উচ্চারণ। তৈমুর খানের কবিতায় খুঁজে পাই শূন্ তার আলিঙ্গন। বোধের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বর্তমানের জটিল সংবিধান খুঁজে পাই। আমাদের অসহায় পরিবেশনের দুরন্ত স্বপ্নচারী কবি কে হার্দিক শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুন