বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

গল্প --- স্বপন চক্রবর্তী

   





   স্বপন চক্রবর্তীর রচনায়,  আমরা যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত করি , দেখতে পাই এক নির্জন কল্পনাতাপস , আপনমনে অন্তরাত্মার সঙ্গে যেন নিরন্তর কথা বলে চলেছেন । সেই কথা , তার অন্তর্লীন সুর, শেষ পর্যন্ত পাঠককে মোহাবিষ্ট করে রাখে । এখানে আমরা তার একটা ছোট লেখা পড়ে নিই ---





পথিক-জন্মদিন 

 স্বপন চক্রবর্তী 



প্রিয় সম্পূর্ণা, 

জন্মদিনের শুভেচ্ছা। 

এখন, এইমাত্র তোমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পরে পরেই   হঠাৎ করে লিখতে বসে গেলাম এই চিঠি। মনে মনে ভাবছি এখন কত আনন্দ-অনুষ্ঠান হচ্ছে তোমাদের বাড়িতে, তোমাকে ঘিরে ! 

আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে। 


এবারে যে পুরুলিয়া ভ্রমণ করে এলাম কদিন আগে, চার দিনের জন্য। ফিরে আসার দিনের একটি ঘটনা বলি। 

সেটাও পথের মধ্যে একটা জন্মদিনের উৎসব। 

আমরা পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে কিছুটা পথ পার হয়েছি, আমাদের গাড়ি ছুটছে মসৃণ কালো পীচ-ঢালা পথ ধরে। পেন-ড্রাইভে আমাদের গাড়িতে গান বাজছে : ও মঞ্জরী, ও মঞ্জরী আমের মঞ্জরী...!

 চারপাশের প্রকৃতিতে ফাল্গুনের তাপ ও শৈত্যের মিশ্র-প্রবাহ। অন্তর কী যে মনোরম হয়ে উঠলো অমনি, ওই গানের কথায় আর সুরে! 

ঠিক প্রায় তখুনি চায়ের জন্যে একটা ধাবায় এসে থামলো আমাদের গাড়ি। নেমে, মৃদু-মোলায়েম রোদ্দুরে ইতস্ততঃসাজিয়ে রাখা যে টেবিল-চেয়ারগুলো-- তারই একটা নিভৃত প্রান্ত বেছে নিয়ে বসে পড়লাম। 

হঠাৎ খেয়াল করলাম  একটু দূরে ওই ধাবারই অপর প্রান্তে কয়েকজন তরুণ-তরুণীর একটি দল হৈ হৈ করে একটি রঙিন টোপর পরিয়ে দিলো তাদেরই দলের একটি মেয়েকে।

সেই মেয়েটিকে আমরা স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছি না--  অনুমানে মনে হচ্ছে সে একটি কিশোরী, অথবা সদ্য-তরুণী। ওই দলের অন্যান্য সঙ্গী ছেলেমেয়েদের দেখেও তা-ই মনে হলো। 

মেয়েটির পরনে গোলাপি রঙের প্রিন্টেড চুড়িদার। আমাদের টীমের একজন সঙ্গী এসে বললো, "জন্মদিন! Birthday-Celebration !"

 ও মা, তা-ই ? হ্যাঁ, তা-ই তো ! 

এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি, ওই কিছুটা দূরে ওদের টেবিলে সাজানো কয়েকটা রঙ-বেরঙের মোমবাতি। সেগুলো তারা জ্বাললো  ধীরে ধীরে ... মোমবাতির শিখাগুলো ফু- দিয়ে নিবিয়ে দেবার পর সেই রঙিন টোপর-পরা মেয়েটি এবার টেবিলে সাজিয়ে রাখা কেক কাটলো ...  ওই দলের একটি মেয়ে তাকে এক টুকরো কেক খাইয়ে দিলো ... এর পর ক্রিমের প্রলেপ লাগানো সেই কেকের কিছুটা জন্মদিনের মেয়েটির গালে আলতো করে মাখিয়ে দিয়ে বাকিটা সক্কলে মিলে এ-ওকে খাইয়ে দিলো। 


কী যে ভালো লাগছিল দৃশ্যটা ! 

অভিনব !

জীবনে কখনো এইরকম জন্মদিন- উৎযাপন দেখিনি। আমার অন্তর আবেগে বাঁধনহারা হয়ে উঠছিল। মনে মনে ভাবছি আমার কাছে যে লজেন্সগুলো রয়েছে, মুঠো ভরে সেগুলো তুলে দিয়ে আসি মেয়েটির হাতে : আজ তোমার জন্মদিনে এই শুভেচ্ছা। 

আরেকবার ভাবলাম, একটু ভিডিয়ো  তুলে রাখি এই চমৎকার অনুষ্ঠানের। 

শেষে ভয় হলো, যদি কিছু মনে করে । যদি রুক্ষ স্বরে বলে ওঠে, "কী ব্যাপার বলুন তো?" 


সামলে নিলাম নিজেকে। 

কেবল মনে মনে সেই অলৌকিক, না-যেন অতীব-লৌকিক সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠান-উৎযাপনটি প্রত্যক্ষ করলাম পথের প্রান্তে একটি ধাবায় বসে বসে। 

সেটা মাত্র চার দিন আগের ঘটনা, আজ থেকে। 


পথিক হয়ে পথে নামলে কত যে বিস্ময়! কত যে এরকম অন্তরস্পর্শী মুহূর্ত সামনে এসে পড়ে! 

ভালো লাগে খুব। মনে হয় জীবন পূর্ণ হয়ে উঠলো একটুখানি।



স্বপন চক্রবর্তী বহু অবিস্মরণীয়  গ্রন্থের প্রণেতা |

 তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ ----


মিথ্যার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি * লৌকিক মাঘোৎসব * আত্মপ্রতিকৃতি * গীতবিতানের হাট 

যে কুসুম নিজের নাম না -জেনেই ফুটে আছে * স্মৃতি স্বপ্ন কান্না দরবারি *

হেমন্তের কাক তুমি অপরাহ্নের ডাক ইত্যাদি |







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন