বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

শিমুল আজাদ

SC-7676

  

  ' আরো সহস্রবার আমি সূর্যের দিকে চাইবো '-- এই যে জীবনতৃষ্ঞা ,বলিষ্ঠ উচ্চারণ ' আলোর স্কুল বন্ধ থাকবে ' জেনেও কবি শিমুল আজাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ,তার স্বরক্ষেপ , নিবিড় অভিনিবেশ থেকে আমরা সহজেই কবির স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত করতে পারি |

 




 গুচ্ছকবিতা/ শিমুল আজাদ

 


অসমাপ্তিকা

 

ছুঁয়ে দিলে সে খুলে যেতে পারতো

খোঁপায় বাধতে পারতো

নীল রোদ

নীল জল

নীলাকাশ

নীলরোদ আর সাদার সমুদ্র।

দীর্ঘদিনের রোদ জল ঘামে

গড়ে তোলার স্বাদ, আকাঙ্ক্ষা

একে একে খসাতে পারতো মুক্তদানা

সাদা সাদা তীক্ষ্ণতর ঝিলিক।

আমি তাকে ছুঁইনি

ছুঁতে পারিনি

দেইনি দিতে পারিনি

নীল রোদ

নীল জল

নীলাকাশ

নীলরোদ আর সাদার সমুদ্র।

ঋণগ্রস্ত আমি ঋণহীনবোধে ভাবি

কাঁপি

কম্পনের কাচ বুকের বিনুনে গাথে

খুব ঝুকে পড়া দুখী দুপুরের

গল্প বলে যায়, করুন গল্প।

 

 

 

 

জন্ম-জন্মান্তর

 

সময়ই প্রধান!

ঘটনা-দুর্ঘটনা তার ভিতরের ব্যাপার

প্রাণের বিকাশে-

বেড়ে ওঠা সবুজের ডালে পাতায় পাতায়

মর্মরিত হয়ে ওঠা তার গান

স্বাদে-বিস্বাদে,

অনুভবে সংবেদে বদলায় পালটে ফেলে-

সহস্র খোলস

নির্মাণে-বিনির্মাণে,

ধ্বংসে-বিধ্বংসে তার ছায়া কাঁপে;

বুঝিয়ে দিতে চায় প্রকটতা,

ফেলে আসা মুহূর্তের মাপ-পরিমাপ

সঞ্চালনে অনিবার্য পায়

ভাঙা গড়ার ঢেঊ জন্ম-জন্মান্তর 

 


রৌদ্রহীন দিন

 

আজ রোদ উঠবে না

ছায়ারা মুখ আড়াল করবে

আলোর স্কুল বন্ধ থাকবে

আজ রোদ উঠবে না

ঘুমের বিছানায় কড়া নাড়বে না ব্যস্ততার ঘণ্টা

চায়ের কাপে মুখ রেখে জাগবে আয়েশী নিঃশ্বাস

স্মৃতিরা লাজ-লজ্জা ভুলে আঙিনায় পর্দা খুলবে

নস্টালজিক বিভোরতা উড়ে বেড়াবে দশদিক

বিড়ালটা আলনার কাপড় টানবে

মুখ খুঁটবে কাগজে

পুকুরের জলে সরিসৃপ সাঁতার কাটবে

বেজিরা গর্তে, ঝোপের ফাঁক-ফোঁকরে লুকাবে

বোন পারুল সুতা কাটবে না

উলে বুনবে না আসন্ন শীতের স্যুয়েটার

কিংবা গোলাপি কার্ডিগান

চরকারা ঘুরবে না আজ সারাদিন

 


অনিবার্য জিজ্ঞাসায়

 

জিজ্ঞাসার একান্ত ঢেউ এলে ভাবি শুন্যতায় যাবো

পূর্ণতার ছায়াটুকু গুড়িয়ে আলস্যের পালকসমূহ ছড়িয়ে 

হাঁটতে থাকবো যেকোনো দিক

অভিজ্ঞতার তেতো স্বাদ বৃদ্ধি পেলে নিস্কলুষ আত্মার ডাকে সাড়া দেবো-

শিশুতীর্থে ক্ষণিক জিরাবো কিংবা জন্মক্ষণের পানে ঝুঁকবো;

কৈশরের সরলতায় নিমজ্জিত হতে হতে সময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবো

পুণর্বার অপচয়কৃত যৌবনকে ব্যবহার করবো সম্পূর্ণ উদ্দ্যেশ্যহীন,

প্রকৃতই প্রাপ্তিমোহ ভেঙ্গে ছুটবো পৃথিবীর প্রান্তরে

জিজ্ঞাসার ঢেউ এলে ভাববো আমি সমাজতান্ত্রিক;

দেশ-বিদেশে প্রবাহিত পুঁজিবাদের শরীরে জেঁকে বসা 

অনভিপ্রেত মানবিক স্পর্ধার মৃত্যুকে দেখবো। আর তখন বারবার 

ঘৃণায় বিকৃত হতে হতে-আরো সহস্রবার আমি সূর্যের দিকে চাইবো

ফিরে আসবো আবারো প্রাকৃতিক শক্তির আধারে

একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্রের নিকষ থাবা কিংবা গণতন্ত্রের 

ফাঁকা আওয়াজগুলি টপকে-জিজ্ঞাসার ঝড়ে তছনছ ভেঙ্গে পড়ার পূর্বে

আমি বারবার পৃথিবীর পরিপার্শ্বের দিকে চোখ মেলে চাইবো

আমার ব্যাকুল চোখ পুণর্বার-

জীবনকে দেখতে চাইবে তার নিজের মতন






প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ  বিরুদ্ধ প্রবাসে ( ২০১০, ঢাকা একুশের বইমেলা)

                       জন্মান্ধ আয়নার পাশে( ২০১১, ঢাকা একুশের বইমেলা)

                                রোপিত রোদন ( ২০১২, ঢাকা একুশের বইমেলা)

                                প্রত্যাবর্তনের কালে (২০১২, ঢাকা)

                                আশ্চর্য অপরাধী ( ২০১৩, ঢাকা একুশের বইমেলা)

                                আলোরস্ক্রিন: শব্দময় নৈ:শব্দ্য (কবিতীর্থ,কলকাতা-২০১৭)        

                                

 প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থঃ অদ্বৈত গদ্যের ঘ্রাণ( ২০১১, ঢাকা একুশের বইমেলা)

                                      শিল্পের গোপনীয়তা ( ২০২০, ঢাকা একুশের বইমেলা)।

 

 

                      


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন