বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

কবিতা উপন্যাস ---- দীপংকর রায়


 " বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল  ঘুঙুরের মতো কেঁদেছিল তার পায় " লিখেছিলেন জীবনানন্দ । কবি দীপংকর রায়ের  কবিতা স্বতন্ত্রভাবে , অতলস্পর্শী ভাবনার গভীরতায় স্পর্শ করে  আমাদের চৈতন্যের নদী । দেশজ  আটপৌরে শব্দের ব্যবহারে , বিরল পংক্তি বিন্যাসে এক মায়াময় ব্যতিক্রমী কবিতাজগৎ সৃষ্টি করেন তিনি । এখানে আমরা ধারাবাহিকভাবে পড়বো তাঁর একটি কবিতা উপন্যাস ।



কোথাকার অতিথি আমি ( মানসভ্রমণ )



দীপংকর রায় 

 


হাতে বেশি সময় নেই, চলুন বেরিয়ে পড়ি..... আলম তো বলেছে, ঘুরে আসুন, এখন করোনা ---পাশপোর্ট-ভিসা- ইমিগ্রেশন ,সরকারী ছাড়পত্রের নেই প্রয়োজন। চেকপোষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যাব। বাঁশ -টাঙ্গানো থাকে থাকুক, হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে যাবো.... কতোদিনের স্বাদ, মানিক, মুনাই ,কার্তিক দেবনাথ, আরো যে যে যাবে.... তাপস কি যাবে, বাবলা, শক্তির খোঁজ নেই। সুশান্ত হাটতে পারে না, পায়ে ব্যথা। 

যাচ্ছি তো যাচ্ছি ই-- 

হ্যন্ডিকামে ছবি তুলছে মাগুরার ফাঁকা পথের ----এই দাঁড়াও, এই দ্যাখো বড়োপোল, চাউলে বাস-স্ট্যান্ডের ছবি তুলেছি, কী সুনসান....! স্বপন চক্রবর্তী বলছে। মাগুরা থেকে রূপন্তি বায়না ধরছিল যাবে। রীয়া বললো, সেলফি তুলবো যেমন খুশি। মানিক বলছে, সত্যিই দাদা, এটা ওয়ার্লেস মোড় না, এটা সত্যিই নবগঙ্গা --- 


বাতাসে বাতাসে পথ পায়ের উপর সোজা  

দেখেছ দেখেছ মানিক, দ্যাখো দ্যাখো ---দুহাজার  বহু পেছনে হারিয়ে গ্যাছে তো কী হয়েছে ---রাড়ীখালী তো রাড়ীখালীই ---কই দীপঙ্কর কই---তাকে দ্যাখা যাচ্ছে না কেন?.... উৎসবেরই বা কী হবে, খাওয়া-দাওয়ার দরকার নেই ---এই পথ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে ,যেভাবে খুশি যাবো আসবো.... 

মানিক বলছে, তা তো হলো, সে কই---- জল-বাতাসে ঢেউ তুলে  , সকলেরই আরো একটু ঢেউ চাই -----নাহলে কি শরীর জুড়োয়, এসব সব তো চেনা ,'মুনাই বলছে, আপনারা না হয় নতুন, ও মানিকদা, কার্তিকদা ,চিতসাতার দিয়ে নিন , তারপর না হয় ডানা কাটুন জল, দেখবেন, সব ক্লান্তি একেবারে সাফ ---

সে তো হলো, সে কই , তোমরা তো আসল লোককেই খুঁজে পেলে না ,গ্যালো কোথায়? 

দ্যাখো এতক্ষণে উড়ে যেয়ে কোন ডালে বসেছে ,তার তো কতো শাখা-প্রশাখা ---

রূপন্তী বলছে ,এই তো, এই তো, এখন আমার হাত ধরা ---

বলে দিয়েছি, আর কোনো দিকে না, '

রিয়া বলছে, সেলফী সেলফী, শস্যফুল নেই তো কি, আমগাছের ডাল ধরেই ঝুলে পড়ি এসো। মানিক বলছে, তা নাহয় পড়লাম, কোথায় গ্যালো ' ইচ্ছে-পতঙ্গের কান্না? 

---আছে আছে, ভালো করে দ্যাখো মানিক ---সবটাই তো ইচ্ছ-পতঙ্গের কান্না, ওই যে.... ওই যে.....,'ওইখানে আছে তারা.... 

---আবার বলছে, এই বাবলা, তুই তোল কিছু , তাপস ,তুমি কিন্তু তুলে যেও, বলা তো যায় না, অনেকদিন পড়ে আছে হ্যন্ডিকামটা ---- মানিক বলছে, চিন্তা নেই, আমি তো নিচ্ছি ---কিন্তু আপনারা যে বলছেন সে আছে, আমি তো দেখতে পাচ্ছি না? 

রূপন্তী বলছে, বললাম না, আমার কাছে, বাচাধনকে বলেছি, আর যাই করো, আর একদম এদিক ওদিক না। একজনেরই ছাড় আছে, বাকি অর্ধেক আমার, তাই তো আগলে রেখেছি, যদি পালায়,সময় এলেই ছেড়ে দেব, তখন না হয় চিলে ওড়া উড়ে দ্যখাবে, '  ঠিক আছে, ঠিক আছে, অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়া যাক, '....


সমবেত কন্ঠস্বরে উৎসব এখন ।

নবগঙ্গা থেকে এক আজলা জল তুলে মুনাই টেবিলে ছড়িয়ে দিল, বাকি কাজ যা যা গুছিয়ে রেখেছে আগেই বিধান। শুনুমামা কোথায় ছিলো, হাতে তালি দিয়ে উঠলো। সকলেই বিস্ময়-ভরা চোখে তার রবীন্দ্রসঙ্গীতে মন দিয়েছে ---সে ঘুরে ঘুরে গান গাইছে আর বলছে, 'কে বলেছে আমি নেই..... '


তাপস, বাবলা, কার্তিক, মানিক সকলেই চেয়ে চেয়ে দেখছে আর বলছে, কাউকেই তো দ্যাখা যাচ্ছে না, তাহলে সুর ভেসে আসছে কোত্থেকে....? 

স্বপন চক্রবর্তী বলছে, মানিক, ওতো  শুনুমামা  , ওই যে.... ওই যে, দেখতে পাচ্ছ না? বিধান চোখ মুছছে। বিদ্যুৎ মামা চ্যাচাচ্ছে ,পাগল.... পাগল বলে। মামা বলছে, ও মামা, ও মামা ,আপনি তো জানেন,'  

 ---   দাদুভাই কিছু বলো?

মুনাই আকাশ থেকে দুহাতে সব মেঘ পেড়ে এনে, সমবেত দর্শকমণ্ডলীর দিকে চেয়ে আছে স্থির!

স্বপন চক্রবর্তী ফিসফিস করে, চলো, চলো, পরে বলছি, এখন চলো দেখাই সকল চরিত্রদের ,এই দ্যাখো, জাবা -চেনি রোদ্দুরে দেওয়া। এই দ্যাখো, মলন মলার খুঁটো ।এই তো গ্রীষ্মের রোদ্দুরে ভেসে বেড়াচ্ছে দিদিমা ---বড়ো -মা রা সকলেই। ওইখানে পোড়োবাড়ির উঠোন জুড়ে হা -ডুডু খেলছে ছুঁচো -ইঁদুরেরা ।এইখানে কালীমন্দির, দিদিমা ঘর আর নেই। 

----আরো আছে যা যা 

তা ওইখানে কোলে করে বসে আছেন নতুন মাসিমা! 

এতগুলি ক্যামেরায় যা যা উঠলো , নবগঙ্গার পাড়ে যেতেই হাওয়ায় হাওয়ায় ভেঙে গ্যালো যেন সব। মানিক চিৎকার করে উঠলো, আরে আরে, কী করছেন কি স্বপনদা,পড়ে যাবেন তো, ' পাউড়িতে দাঁড়ায় নাকি কেউ? 


এতক্ষণ কোথায় কোথায় যে ছিলাম, কোথায় কোথায় যে লুকিয়ে ঘুরিয়ে আনলো রূপন্তী, কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, বগুড়া না মাগুরা, মাগুরা না বগুড়া? অথচ এখানেই তো ছিলাম ওর ওড়নার আড়ালে.....?


রূপন্তী বলছে, ভালো হবে না কিন্তু, আমি তো  কখনই একটু আড়াল করেই ছেড়ে দিয়েছি, তুমিই তো বললে, একটু দেখিস, যদি কেউ খোঁজে তো বলিস, এই আমাকে দেখাস শরীরটা শুধু ----মনটার না হয় অনেক আতিথেয়তা থাকে, '


----এভাবেই বাতাসে বাতাস, মেঘে মেঘ, রোদ্দুরে রোদ্দুর ....সকলে মিলে কোথাকার অতিথি হলাম যেন...! 

নীলকমল নিঃশব্দ ছিল, যেমন থাকে, শুধু বললো, পাসপোর্টে ছাপ পড়লো না  যে? মুনাই -স্বপন চক্রবর্তী বললো একসাথে, খরচা নেই এই পর্যটনে .....



পর্যটন পর্ব ---2                                                  


অন্ধকার থাকতে থাকতে চলুন

এরপর নানা কৈফিয়ত ।

নলডাঙায় যাবো, প্রতিমার  মাকে দেখতে ---আজ সেই পথে চলুন 

মাগুরা ছাড়ালেই ---আর বাধা নেই, দিগন্তপ্রসারী মাঠ -----

শিশু-কড়াই-মেহগনী-জারুল ছায়ায় সকালের রোদ্দুরের খেলা ---


ওখানে কোনো বারণ নেই 

চা পেলে চা, না পেলে তো ধান-পাটের ভূইয়ে পাতলা মেঘেদের ছায়ায় ছায়ায় ঝিমুনি আছেই 

আকাশের তলায় শুয়ে থাকবো আমরা ডানা মেলে দোয়েল-শ্যমাদের মতো। 


নাড়া তুলে না হয় লাইটার জ্বালাবো ,ছোলা-গাছ পুড়িয়ে খেয়ে নেব সবাই -----

বলা তো যায় না, কী পাবো কী পাবো না 

ওই তো পথের ধারে বাঁশের মাচায় বসে পড়ি কিছুক্ষণ, 

এতগুলি মানুষ দেখে বন্ধ-দোকানের ঠিকই তুলবে ঝাপ ---

না হয় বলবো সব কথা ---না হয় বলবো পকেটের ভেতরে রেখেছি যাকে 

          তার মুখটি দ্যখাবো---


ভয় কী, কেউ দেখবে না। যে আছে সে থাক গোপনে। 

তার কথা বলা যাবে না এখন, সে তো একান্ত গোপন,…

সে আমার ওই হু হু হাওয়ায় মেশানো পথের মুগ্ধতায় কেবলই ডানা মেলা 

সে আমার মাঠ-ঘাট জোড়া দীর্ঘশ্বাস এক ,'


তাই, সে আছে যখন ম্যানেজ করে নেবে সব, যাকিছু লৌকিকতা ----

আমি তো তার হাতেই তুলে দিয়েছি এই পর্যটনের ভার, '


কে কার কথা শোনে, স্বপনবাবু বলছে, তাই কি হয়---? মুনাই বলছে, মামার না হয়  শ্বশুরবাড়ি, আমাদের তো শ্বশুরবাড়ি না ----মানিক বলছে, তাই তো, ঠিক-ই বলেছ মুনাই ,বিশ্ব কোত্থেকে জুড়ে গ্যালো, তাকে তো আনিনি ,আসার সময় তার কথা ভুলে গ্যাছিলাম একদম |

বিশ্ব সিগারেট বের করলো পকেট থেকে, বলছে, একদম দু-একটা ---নিন ধরুন, ওসব বাজেকথা রাখুন তো, মুনাই, এই মুনাই,চলো তো ,সামনের ওই যে জায়গাটা, ওখানে দেখি, 

তাপস বলছে, সে কি কথা, তাই কি হয়, বউদি কী বলবে? এইভাবে এক একজন এক এক কথা নিয়ে গোল,' পকেটে লুকোনো যে জন, সে হাসছে মিটি মিটি ,' 

সে তো জানে নানা কায়দায় ক্ষীর-সন্দেশ পুরে দিয়েছিল কীভাবে ঠাকুরদাস ---

ও বাবা তুমি তো বিষয়ী 

              জানোও ,'

তাই তো বলি এমন কাজ তো তোমারই ক্ষমতা ---এ যে অর্ধেক রাজত্বসহ রাজকন্যা ----  !

থুড়ি ,বলা যাবে না কাউকে। গোপন চুক্তি। 

একদমই মুখ বার করতে দেওয়া যাবে না। 

তার চাইতে হাততালি দিয়ে গুপি-বাঘার মতোন পার করে দি এইসময়---

না হলে মুনাই যে লৌকিকতার জন্যে ব্যস্ত 


না পেলে কী উপায়.....?

ছবি উঠছে , ছবি উঠছে--পুরো ছবিটাই হ্যান্ডিকামে 

ধরা থাকছে? 

স্বপনবাবু বলছে, মানিক, দীপঙ্করের শ্বশুরবাড়ির জন্যে কিছুটা রাখি, বলা তো যায় না, তুমি তো প্রথম,

 যদি কিছু ইচ্ছা হয়,'

বাতাসে ভাসছে কাঠ-পোড়া জ্বালানির গন্ধ। 

বাবলা-নীল কমল, কার্তিক মৌনব্রত পালন করছে নাকি? 

এই বাবলা, ছবি তোল, ছবি তোল, তোর ফেসবুকের কী হলো? 

স্বপনবাবু বলছে। 


বাবলা বলছে, ধুর, ফেসবুক আমি আবার পারি নাকি! কার্তিক বলছে, সবটাই আপনা কায়দা, না হলে পুজোটা কোথায়.....?  না না ,হাসলে হবে না কার্তিকদা, সবটাই কায়দা না, কিছু তো সত্যি ---তাপস বলছে। 


ঘুরে ঘুরে পথ চলছে পথের মতন ,ঘুরে ঘুরে ডোবা-পুকুর -মাঠ-খামার গোয়ালঘর ,রাজহাঁসের প্যাক প্যাক.... মোরোগের ডেকে ওঠা, স্কুলঘর--মাদ্রাসা ---খেলারমাঠ -----মাটির ঘরদুয়োর, সব চলকে চলকে ভেসে যাচ্ছে চোখে -মুখে ----


এই পথ সত্যি বাড়তি পাওনা, এই না হলে বাঙলাদেশ ? মানিক এবং বিশ্ব একসাথে বলে উঠলো। 

বিশ্ব, নমস্কার বাবা করোনা, তুমি এলে বলেই এমনভাবে আসা হলো ,তা না হলে যত সব ঝামেলা, আমার কি পোষায়? 

স্বপনবাবু গান ধরেছে ---'আজি দখিন-দুয়ার খোলা ----এসো হে, 

এসো হে, এসো হে, আমার  বসন্ত এসো। 

 দিব হৃদয়দোলায় দোলা,...... '


গানে গলা মেলাচ্ছে কেউ কেউ। কেউ কেউ আঙুলে আঙুলের ঠোকা দিয়ে সুরে সুর মেলাচ্ছে 

 এই বৈশাখে...., '

আড়ালে যেজন সেজন শুধু খোঁচা মারছে আর বলছে, কী হলো, এভাবে কত আর? 

আমি বলছি, কেন, বেশ তো আছো, সময় হোক, সময় হোক.... 

তাপস বলছে, কাউন্টারটা দিয়েন, সিগারেট পুড়ছে দুরন্ত বাতাসে। বাবলা ঝিমোচ্ছে ।নীল কমল মোবাইল ঘুরিয়ে চলেছে আপন ছন্দে। মানিক বলছে, বেশ তো, বেশ তো, এই পথ যদি না ফুরোয় .....বেলা চড়ছে,রোদেরা খেলা করছে ল্যাংটা-শিশুদের মতো পথের ধুলোয়। মানুষ -জন নেই ,শুধু পথ আর পথ বাতাসের ভরে আমরা কজন যেন ছুটে চলেছি ছেঁড়া- পাটের -আশের মতো .....


মুনাই বলছে, এই তো, এই তো স্বপনদা,নলডাঙার স্কুল, গৌতমের দোকান না. ..চলেন, চলেন ,নামি ....,'

কদমগাছতলায় এসে গ্যাছি, ডোবাটির ভেতর থেকে উঠে এলো প্রতিমার ঠাকুমা, বলছে ,জামাই এলে গো, জামাই এলো ---উলু দাও...... এগিয়ে আসছে একে একে সবাই, বাঘাকুকুরটা ডেকে উঠলো.... মধুকাকু বলছে, এই ---হেই ---আহা, তুমি যেন চেন না...? যা, যা, ওদিকে, আসেন, আসেন, ভালো আছেন তো? 

সন্তু -অন্তুকে দেখে মুনাই বলছে, তোরা কতো বড়ো হয়ে গেছিস রে...., স্বপনদা, চিনতে পারছেন...?স্বপনবাবু ঘুরছে আর বলছে, কতো পাল্টে গ্যাছে সব.... দু’হাজার আর দু’হাজার কুড়ি..... বুঝলে কিনা মানিক, ওই তো, ওইখানে ওরা পড়ছিল,সবাইমিলে হারিকেন জ্বলে..... হ্যা হ্যা গৌতম ভালো তো, তোমার দেওয়া খাতাখানি আজো আছে, একটা দাগ ও দিই নি ----কই ,দিদি কই ,এই তো, লাবনী- শ্রাবণী ভালো আছে তো? 


আমি স্থির, একেবারেই স্থির। ঠাকুমাকে দ্যাখা যাচ্ছে না আর। ডেকে দিয়েই ডুব! প্রতিমার দাদুকেও দেখলাম একঝলক শিউলিতলায় ,'ওমা, শিউলি গাছটা কোথায়? যেখানে গ্রুপ- ছবি তোলা হয়েছিল প্রতিমার দাদুর সাথে। বনির সেই লাল গেঞ্জিটাকতো ছোট দ্যখাচ্ছে এখন...... !

এরা সব কোথায় গ্যালো, ও স্বপনবাবু? 

---মুনাই নিয়ে গ্যাছে বেগবতীর দিকে--- 

বাশ-ঝাড় --জঙ্গল---বেতবন --শিশু --মেহগনির ছায়ায়, 

ও গৌতম, আমি কি দোতলায় যাবো?

গৌতম বলছে ,সে কি, উপরে তো আপনার বিছানা করে রেখেছে উর্মি ---যান না কজন যাবেন। বাড়িশুদ্ধ এ ওর মুখের দিকে চাইছে ----শ্বাশুরিরা বলছে, যাও, যাও তো বাবা ---হাত-মুখ ধুয়ে নাও গে, আর বলো না, কী দিন যে আসলো, '

ঘরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে খচমচ, ----কী হলো কী? 

বেরোবে না আমি? 

বলছি তো হবে, হবে, হবে রে বাবা, বস, তারপর না হয় লুকিয়ে পড়িস আবার, বুঝিস না কেন, শ্বশুর বাড়ি বলে কথা? 

ফিরে এসে সকলেই বিশ্রাম গ্যালো। 

সামনের লম্বা ছাদের উপর শুনতে লাগলাম বত্রিশ বছরের আলো -হাওয়াদের কথা বলাবলি। জামরুল গাছটা বলছে দিদি কই ও জামাইবাবু? নিচের জবাগাছটাও 

                  লালে লাল ----

সে যেন স্বপনবাবুর ক্যামেরা  আমাদের যুগলবন্দী মেলে ধরলো। 

কাকে যেন ডাকতে থাকলাম ---

কে যেন পিছন থেকে দুচোখ চেপে ধরে বলতে থাকলো, উ হু, একদম না ---একদম না, আগে বলুন তো আমি কে? কতোজনকে যে কতোজনের কথা বলি? 

সকলেই গোল হয়ে ঘিরে ধরলো। ----তা হবে না, তা হবে না -----বলতে তো হবেই.... ,'

যেই ফিরে দাঁড়ালাম ,ওমনি সে ছায়া হয়ে সরে গ্যালো গাঢ় অন্ধকারে----

কী যে করি ---কাকে যে বলি , তুমি যে কে....? 

ভেতর থেকে আবারো ---কী হলো, আমি যে একা----

বেশ তো লুকোচুরি খেলে !

কতো খেলার তুমি যে নায়ক-----.আপনারা জানেন কিছু ---?


একসাথে এতগুলি ক্যামেরা ,অমি কোনদিকে যে দাঁড়াই ,কেমনভাবে যে ঘোরাই মুখটা 

কোথাও নিজের মুখটাকে তো পাই না !

ডেকে ওঠে, চোখ গ্যালো, চোখ গ্যালো , চোখ গ্যলো পাখিটা -----,'

মুনাই আবার বলছে, খরচা নেই, খরচা নেই..... চলুন বেরিয়ে পড়ি, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির দেখে ঝুমকোজব| বনের ভেতর বেগবতীর চড়ায়, সেই সাকোটা ----কালীদহ স্নান করে নি চলুন। 

মানিক বলছে, মধুসূদনের বাড়ি যাবো না? কপতাক্ষ, কতো দুরে? 

তাপস বলছে, যাবো তো, এ সুযোগে পতিসর, শিলাইদহ, সাজাতপুর,  লালনের আখড়ায় বাউল হবো না, তাই কি হয়? 

রাতের আকাশ জুড়ে অসংখ্য নক্ষত্রেরা ঝুলে আছে মাথার উপর। 

ছাদে আমরা কজন 

বাঙলার এই রাত্রি আকাশে নক্ষত্রদের ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে 

যার যার কথা যার যার মনে, তাসের ঝোলা থেকে বেরিয়ে লুকিয়ে রাখা বস্তুটি ,,'

কার্তিক নেচে উঠলো , বাবলা বিশ্ব স্বপনবাবু মুনাই,যে যার মতো পাখি হয়ে গ্যাছে যেন, রাত পাখি...... 


মানিক বলছে, ওই যে.... ওই যে.... 

ছায়ার খিদেয় আমরা আজ মিথ্যার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, '

দেখি লক্ষ্মী-প্যাচা হয়ে বাদুড়ের ডানায় এই যে আমরা লিচুর খোসা ছাড়াচ্ছি , ও স্বপনবাবু, আমরা কি সকলেই এখন এক একটি ভেসে বেড়ানো প্যাচা ....?  কতকাল এই ঘুম-জাগরণে তাপসের লুকোনো বস্তুটি গলায় ঢেলে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের অপেক্ষায় বসে থাকবো তাই বলুন দেখি? 


বাতাসে এখন কাঠপোড়ার গন্ধ। বাতাসে এখন ঝি ঝি  পাকিদের চিৎকার। 

তবু বাতাবিফুলের গন্ধ আসছে ভেসে...... 

কে যেন ঝপ করে কোলের ভেতর পড়লো  মুখগুজে , শেষরাতের  কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের মতো কিনতে থাকলো, 


এই মুখ- অন্ধকারে ওখানে তুমি কে?


 


 পর্যটন পর্ব ----- 3                         



সম্পর্কের ব্যবধান বোঝেনা এই যাত্রা পথ ---

কে যে কেবলই পেছনে পেছনে ছোটে -----


এক-জায়গার সকাল আর এক জায়গায় মনমরা। সমস্ত ঋতুমুখ ছুঁয়ে চলে এই ঘোর, '

কুয়াশায় মাখামাখি হয়, 'পথের দু-পাশ তুলে দেয় থোড়ো ধান-গাছের ঢেউ, '

বাচক -পাটের বোঝা নিয়ে চলে যায় যে চাষা 

তার সকল বৈশাখ চিনি আমি? 

তার শেষ বসন্তর কৃষ্ণচূড়া ডালে ডালে ----পাটমাদারেরা এখনো খানিকটা লাল, '


তুমি কেদনা  , কেদনা--- পথের ধুলায় তোমার আঁচল ছিঁড়ে যায় দেখি...,'


আসা -যাওয়া চলতেই থাকে , হোক তা বাউলের,' হোক তা বৈষ্ণবের খঞ্জনী,' হয়ে যাক একতারার টঙ্কার। 


তুমি কেদনা , কেদনা   অমন করে আর 

--এই শিশুগাছের ছায়ায় ছায়ায় ----

ফাঁকা পথের হলকায় 

যে-মুখ দেখি আমি 

তাকে কেমন করে পরিচয় করাই, চিবুকটি ধরে কেমন করেই বা বোঝাই 


চেয়ে দ্যাখো, চেয়ে দ্যাখো এই বাঙলায়,ওই পথপাশে আঙিনায়, বসে আছে যে বাঁশের খুঁটিটি…

ধরে ,কেমন জড়িয়ে আছে অজানা-অপেক্ষা ,এই সকালের 

               একচিলতে আলোয় আলোয়.....,'


হ্যাঁ হ্যাঁ সেই তো, সেই তো আমাদের বিভক্ত দেশ ও মৃত্তিকা ---

হাজার নিয়র ঝরা রাতের গল্প, বকুল ফুলের বৃষ্টি ভেজা রাতের গান, 

ঘুঘু - ডাকা এক একটি দুপুরবেলার স্মৃতি, '

কেবলই ভাসায় নৌকো ,

নৌকো ভাসায় মেঘভাঙা নদীতে ঝোড়ো হাওয়ারা 

                          এসে.....


সে কপোতাক্ষ আমি কীভাবে আজলায় তুলি 

কীভাবে বোঝাই 'সতত,হে নদ ,তুমি পড় মোর মনে।....,'


গান ধরেছে আবারো স্বপনবাবু, সুরে সুর মেলাই.... 


এসো, সবাই জন্মকোল থেকে তুলে ধরি তাঁর বাল্যকাল, যে কবি বেঁচে ছিল আশৈশব এই মুখটি নিয়ে বুকে 

সেই জননী-জান্হবী কাঁদছে যেন আজো 

      কপোতাক্ষের ঢেউয়ে--


আমরা যার অমিত্রাক্ষে চতুর্দশপদী ,'

শুনি, দাঁড়াও ,পথিক-বর, জন্ম যদি তব /বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল!....,''


বলছিলাম গল্পটি ---মানিক, তাপস, কার্তিক মন দিয়েছিল। মুনাই তো জানেই, বিশ্ব বলছিল, ও বাবা, এখানেও কাহিনী? বাবলা,    হোক না, ক্ষতি নেই তো! 

অধৈর্য হলে হলো ,যে বাক ঘুরে ঘুরে এলে, এর প্রতিটি খাজে খাজে এক একটি গল্প, শোনো, মিথ্যা বলছি কি না? 

মুনাই, কোন খাদে যে কোন সোনা, সে তো খাদানের শ্রমিকই জানে,''

ওসব রেখে, চলো যাই আগে, সেবার তো এখানেই বিহ্বল বাপি, 

কবিতা পড়া শুরু করে দিল, কোথাকার গোল কোথায় গ্যালো যে? 

জল যেন আগুন, জলে যেন উতল এসেছিল এক,'


তারপর সব ছবি, কেউ কি দ্যাখে, আমি দেখি, আমি দেখি ,সমস্ত দেশটায় কী যে আবেগ, কী যে উৎসর্গ .

বলি না  তো, কিছুই বলি না, দুদিনেই ফুরিয়ে গ্যালো? 

হায়, সব শূণ্য , সব ----

নিতান্ত আবেগটুকুও নাই? 


মানিককে বলছিলাম,' ইতির-কথা', গল্পটি... 

চলো তাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি। 

স্বপনবাবু বলছিল, যাবেন ,পথ কিন্ত অনেক 

শেষে যদি সমস্যায় পড়ি এতগুলি মানুষ, ওদিকে আবার লাবুর শ্বশুরবাড়ি, '

বললাম, মণিরামপুর, শ্রবণা, না না, দাড়ায়নিতো পথের মোড়ে,'

আবেগটাতো একপক্ষের না, ইতি নাহয় থাক, তাছাড়া কালের নিয়মে বয়েসও তো বাড়লো, ছেলে শুনেছি এখানেই কর্মরত, বঙ্সগত অধিকারে চাকরি ,কী দেখুন ,ছেলের জন্যে বাবার চাকরিটাই গ্যালো, এইতো, এখানেইতো ছিলো, এখন সেই মাঠের এককোণায় মিলছে খানিকটা জমি, আর আছে পদবীটা ,''


কার্তিক বলছে, তাই, আপনার আত্মীয়? কতোদিন ছড়িয়ে রেখেছেন যে লতাপাতা , ঐদিকে বলছেন 'পতিসর,' সেখানেও নাকি আছে, কী বললেন,চৌধুরী না কে, '


এই গান গাইবো একখানা? 

এরপর তার দুহাত বাড়িয়ে ,কাদ ঝাঁকিয়ে 

'"পরান মাঝে কী আছে লুকোনো ......,''

তারই খানিকটা ---


কে যে কাকে চিনি, কে যে কাতে পরিচিত হই.....?  কই ,কোথাও পেলে কি সেই ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত দালান, গাছগাছালির চিৎকার, ''

এখন তো রাজবদান্য পেয়ে বুকফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিমেন্টকাস্টিঙ,''

এ দশা তো শিলাইদহতেও ,এ মা  ,এ কী কুঠিবাড়ির চেহারা? 


শাদা কি সুফি-দরবেশ , শাদা কি শান্তি দেয় শুধুই? 

কোথাও রঙ থাকবে না 

কোথাও জীবন, সবটাই দুহাত তোলা? 


এই সব ভেল্কিতে বিশ্বাস নেই কারো, যে যেমন তাকে সেখানেই থাকতে দাও না, '

কখন যেন কপোতাক্ষের পাড়ে আমরা সবাই 

ঢেউয়েরা বলছে যেন, যে নদীটি আসমুদ্রহিমাচল ,'

যে নদীটি টেমস্ না হয়ে মাতৃদুগ্ধ ,'

আজ তার এ কী হাল? কল্পনায় কতো রঙই না থাকে মেশানো ,

কল্পনায়ই আমরা বাচি

না হলে বাস্তব তো বাস্তবই

 

 হাহাকারের আর এক অর্থ? 

তাপস সিগারেট ঝুলিয়ে ক্যামেরা তাক করেছে ----

হ্যণ্ডিকামের কী অবস্থা? 

ধরা কি সবটা পড়ে, ওই যে মোড়ে মোড়ে যতবার ঘুরি, এক একটি রঙে সেই যে বদলে যায়, '

এক একটি মন আমাদের, তার ছবি কী দিয়ে তুলে নি? 



মানিক বললো, আলাদা কিছুই না, একই দুর্দশা --ঐতিহ্যে আমরা বিশ্বের কারো ধারে কাছেও না 

না না, দেশ তাদের অনেক 

কিন্তু এসব, এসব রক্ষণাবেক্…


জানলা নেই। দরজা নেই। আছে তবু অনেক বড়ো সে-সব দরজা -জানলা ---পোশাকি নাম ইচ্ছা -পরিবহন? শিলাইদহ পৌঁছতে বেশ রাত। অবলম্বন বলতে করিমভাই , গেস্টহাউস খুলে দিলো, রাতের খাবার সাজিয়ে দিল, সেবার যেমন, '.....কেউ শুনবে না, যাবেই এই রাতে, দেখে আসবে রাতের নিঝুমতায় দাঁড়িয়ে আছেন কীভাবে রবীন্দ্রনাথ.....? 

আগামীকাল পদ্মায় পড়া হবে, ছিন্নপত্রাবলী ----

সকলে ফিরে যাবো নদীমাতৃক, যখন নদী ছিল একমাত্র পথ, বজরায় উঠে পৌঁছে যাবো সাজাতপুর, পরিসর, নাটোর নদীর কূলে, ''ছায়াসুনীবিড় নির্নিমেষ চোখের বড়ো বড়ো পল্লবের নীচে গভীর ছলছলে ভাবের মতো।'' বিষাদ বিষণ্ণতার ছোঁয়ায় যেখানে দাড়ানো সেই ঘর.... ',


নাই বললো, বেশ হবে, এটাই তো, এটাই তো, '....

যেভাবেই হোক বলেকয়ে বোটে  উঠে গড়াই, ইছামতী, আর্তাই ,চলনবিল হয়ে পৌঁছবো নগরের কূলে পতিসরের সেরেস্তায়, '-----


অন্তরালের জন উঠলো হেঁকে, সে কি যার সাথে কথা দেওয়া গোপনে, যাকে রাখলে একান্ত, তার ঘর ফেলে তোমরা পতিসরে কোথায় থাকবে? 

এতকাল পরেও আমি দেখবো না আমার গ্রামখানি ?

কতো স্বপ্ন-কল্পনায় তোমার সঙ্গে ঘুরেছি যে, এতকাল পরে তাকে একটু দেখাব না আমার কাঞ্চনপুর ,চৌধুরী মহাল? 

আরে না না, সে তো হবে ,যাবো তো বোটে,তারপর যে যেখানে থাকে সকলেরই তো আছে ইচ্ছা কিছু, যাক না যে যেখানে যায় যাক, শুনুক রাত-প্যাচার ডাক, হয়ে যাক না সকলেই আজ পদ্মায় রাত-পাখি ,বিচিত্র জল-কল্লোল  শুনুক খানিক, 

নদীপথ পাক একটি রাত হৃদয়ের সব ঘুমে...।

এই পর্যটন একান্তই গোপন। 


কে যেন বলছে ,''তুমি এসেছ, তোমাকে দেখে আমি বড়ো খুশি হয়েছি। ''......নির্জনতা যেন গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ''...আবার বলছেন :''চারদিকে কেবল মাঠ ধু ধু করছে ---মাঠের শস্য কেটে নিয়ে গেছে, কেবল কাটা ধানের অবশিষ্ট হলদে বিছিলিতে সমস্ত মাঠ আচ্ছন্ন।....সূর্য ক্রমেই রক্তবর্ণ হয়ে পৃথিবীর শেষ রেখার অন্তরালে অন্তর্হিত হয়ে গেল। চারদিক কী যে সুন্দর হয়ে উঠলো। বহু দূরে একেবারে দিগন্তের শেষ প্রান্তে একটি গাছপালায় ঘের দেওয়া ছিল, সেখানটা এমন মায়াময় হয়ে উঠলো ---নীলেতে লালেতে মিশে এমন আবছা হ'য়ে এলো --মনে হ'ল ঐখানে যেন সন্ধ্যার বাড়ি.... সমস্ত অপার মাঠের উপর ছায়া পড়েছে ---একটি কোমল বিষাদ একটি নির্নিমেষ চোখের উপর বড়ো বড়ো পল্লবের নীচে গভীর ছলছলে ভাবের মতো।''


ছিন্নপত্রাবলী ----

পল্লীপ্রকৃতির কোলে  ফিরে যে অনুভব, তাই কয়েকটুকরো, পূর্ববঙ্গের কবিজীবন ,তার যেসব মূল্যবান রচনা ----পদ্মা-যমুনা -আর্তাই -নাগোর নদীটি ঘিরে যেখানে ক্ষুদ্রের মধ্যে বিশালকে খুঁজে পেলেন কবি ----

চলাচলের ছন্দ ঘা খেল যে চলনবিলে ,আমাদের সকলের মন- পথ সে পথেই ভাসতে চায় যেন আজ। কিন্তু কোথায় খুঁজে পাই তাকে, কোথায় কীভাবে আমরা সেই নদী-পথ পাবো --সেটাই ভাবছে সবাই। ঝড় উঠলো। পাল ছিঁড়ে গেল। জল-কল্ললে উথাল পাথাল , বৃদ্ধ পদ্মা-বোট কেবলই চড়ায় ঠেকে যাচ্ছে ---

নদী যেখানে আর নেই। নদী যেখানে কালের হাওয়ায় ভেঙ্গেচুড়ে ঢুকে গেছে মানুষের বাড়বাড়ন্তয় ,প্রয়োজন স্মৃতির ঘর-দুয়োর রাখেনি মনে। সময়কে করেছে ছোটো, সময়ের মারী ও মড়কে নিষ্প্রাণ হয়েছে কতো মানুষের মন,বুঝিনি সে কথা ---তাই পথ বুজে গ্যাছে, নিশ্চিহ্ন প্রায় আর্তাই --গড়াই ---নাগোরের যে কী হাল, চেয়ে দ্যাখো পদ্মার দিকে ----

মনে মনে ভাবো, মনের এই পর্যটনে ,দ্বিতীয় মনে ফিরে পাও যদি, দড়ি -কাছি -মাঝিমাল্লা ,স্রোতমুখের পালতোলা নদী ,

কিন্তু কোথাও নেই ---চিহ্ন নেই এখন চলন বিলের ও যেন, শুনেছি বর্ষা এলে জাগে নাকি, বুকের উপর ভাসায় স্প্রিট -বোট ,'


তথাপি কঙ্কালসার ফসিলের উপর অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি রেখেও যদি ডাকি ,সেই মহাকালের নিঝুমতা ভেঙ্গে কোনো সাড়া পাবো না তার, '  তাই মনে মনে যেতে চাইলেও, সেই পথ মনের হাতটি পাবে না খুঁজে-- এই নির্জনতা যতোটুকু, ততটুকু ই যেন সেই সত্য, ' তাছাড়া আর সেই সময়কে ঘিরে, এখনও যে অবয়বে চাই তাকে আমরা দক্ষিণের জানলায় বসে আছেন যেন আজো


দূর পথে লালন গাইছেন যেন গান, এখনি যেন দেখা হবে পড়শির সাথে ,' আকাশচুম্বী একতারাটার  শিরিশ শাখায় হাত রেখে গান ধরেছে যেন মহাকাল এসে.... 

আমরাও যেন কেবলই খুঁজে ফিরছি এই পথের ধুলায় ধুলায় সেই মানুষটিকে ,যে আমাদের ফেরায় ,যার জন্যে ফিরে আসে ভেতর মানুষের দ্বিতীয়-জন ?


লালন যেন গান এসে, 'হায় চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি /ভেদ পরিচয় দেয় না আমার ওই খেতে ঝরে আখি। /পাখি -বুলি বলে শুনতে পাই /রূপ কেমন দেখি নে ভাই /বিষম ঘোর দেখি, /চিনাল্  পেলে চিনে নিতাম /যেত মনের ধুকপুকি ।/.....


                                           ( ধারাবাহিক )


                                                                                       


   









1 টি মন্তব্য:

  1. দীপঙ্করদার এই লেখার বিষয়বস্তু আমার অনেকটা জানা বিষয়ের মধ্যে। তার কারণ চরিত্রগুলো পরিচিত। আমার সব থেকে ভালো লাগলো ওনার লেখার গতিশীলতা। পড়তে পড়তে এমনভাবে এগিয়ে যাচ্ছি যে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছি না। পড়ে মুগ্ধ হয়েছি আমি। উনি ভালো ও সুস্থ থাকুন এই কামনা করি।

    উত্তরমুছুন