প্রবন্ধ সাহিত্যে সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় এককথায় অনন্য, অসাধারণ । গভীর অধ্যয়ন এবং সৃষ্টিশীলতা তাঁর রচনায় পরতে পরতে গেঁথে থাকে । অ্লোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত"আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাস"গ্রন্থে সত্তর দশকের কবিতা' তাকে পরিচিতি দিয়েছে।১৯৯৫ সালে ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তর তাকে সাহিত্যে সিনিয়র ফেলো হিসেবে মনোনীত করে। স্বরবর্ণের বর্তমান সংখ্যায় আমরা পড়ব সদ্য প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে লেখা তাঁর একটি অসামান্য স্মৃতিচারণ---
শিল্পের বল্কল ছিঁড়ে ছিঁড়ে
সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর, থিওসফিক্যাল সোসাইটিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী অভিজিৎ দাস (কথাশিল্পী জয়ন্ত জোয়ারদার)এর লেখা 'ফুট প্রিণ্ট অফ দি ফুট সোলজার্স' বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসেছেন শঙ্খ ঘোষ। কথা বলার সমস্যা রয়েছে তখন। সাধারণত সভা সমিতিতে উপস্থিত থাকলেও কথা বলেন না। কিন্ত আশ্চর্য ভাবেই তিনি নিজেই মাইক্রোফোনের দিকে এগিয়ে এলেন। তার স্মৃতিতে জাগরুক হয়ে ওঠে সত্তর দশকের ছাত্র তিমিরবরণ সিংহের কথা। তিনি বলেন: "এই বইটার একটি বিশিষ্টতা আছে যে, দেখতে পাচ্ছি সেই ছেলেগুলিকে। আমার প্রত্যক্ষ ছাত্র তিমির, তিমিরবরণ সিংহ তার সঙ্গে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল আমার, সেদিন পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে সে গ্রামে চলে যাবে ঘোষণা করেছিল। তার কিছু বইপত্র চেয়েছিল আমার কাছে। তারপর থেকে তাকে আর দেখিনি। তার বিষয়ে কিছু কিছু কথা উড়োভাবে শুনতাম...। তারপর তার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম। মধ্যবর্তী অবস্থাটা ঠিক কী ছিল সেটা এই বইটিতে জানতে পারলাম। সেই সময় কিছু ছেলেকে দেখেছিলাম যাদের চোখে একটা বিশ্বাস ছিল, স্বপ্ন ছিল, সত্য ছিল..."। কিন্ত একইসঙ্গে তিনি জানাতে ভোলেন না আন্দোলনের এই পথকে তিনি বিশ্বাস করেন না। আবার একই সঙ্গে লক্ষণীয় যে, সবরকম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ডিসেম্বর সংখ্যা "কলকাতা" পত্রিকায় লেখক রঞ্জিত গুপ্তের "নকশাল দমনকারী পুলিশ অফিসার" এই পরিচিতিকে উপলক্ষ করে সম্পাদক জ্যোতির্ময় দত্তকে তিনি লেখেন: "শৃঙ্খলার অজুহাতে কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের নামে যখন একটা প্রজন্মকে বিকৃত বিকলাঙ্গ করে দেওয়া হয় পুলিশের অন্ধকার গুহায়, তখন তার বিরুদ্ধে যদি আমরা সরব হতে নাও পারি, তার সপক্ষে আমরা যেন কখনো না দাঁড়াই। এইটুকু ধিক্কার যেন আমাদের অবশিষ্ট থাকে যা ছুঁড়ে দিতে পারি সেই জেল প্রাচীরের দিকে, যার অভ্যন্তর ভরে আছে বহু নিরপরাধের রক্তস্রোত আর মাংসপিন্ড, ব্যক্ত আর অব্যক্ত বহু আর্তনাদের স্তরান্বিত ইতিহাসে।"
১৯৭৪ এ প্রকাশিত "মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়" কাব্যগ্রন্থে "তিমির বিষয়ে দু'টুকরো" এই শিরোনামের "আন্দোলন" কবিতায় তিনি লেখেন: "ময়দান ভারি হয়ে নামে কুয়াশায়/ দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ/ তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া?/ নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই/…
কিন্ত রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, বা সামাজিক কোনও আন্দোলনের অভিঘাতে কবিতার সৃজন শঙ্খ ঘোষের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কিছু নয়। ১৯৭২এ "পা তোলা পা ফেলা " রচনায় তার অঙ্গীকার: "কী নিয়ে লেখা হবে কবিতা? আমার বাইরের পৃথিবী নিয়ে? না কি আমারই ব্যক্তিগত জগৎ নিয়ে? এই ছিল তর্ক, দেশবিদেশের বহুকালের পুরোনো তর্ক। কিন্ত এই দুই কি ভিন্ন নাকি? এই দুইয়ের মধ্যে নিরন্তর যাওয়াআসা করেই কি বেঁচে নেই মানুষ? তার থেকেই কি প্রতিমুহূর্তে তৈরি হয়ে উঠছে না একটা তৃতীয় সত্তা? তাকে সব কথাই বলতে হয় তাই। তবু, না, আমাদের সেই প্রথম পর্বে যেন জল-অচল ভাগ দেখেছিলাম দুই প্রতিপক্ষে। এর কোনও দিকেই এগোনো হলো না আর, সরে আসতে হলো যে কোনও সঙ্ঘ থেকে দূরে।"
কিন্ত, ১৯৫৪ সালে, যখন তিনি সদ্য এমএ পাশ করেছেন, সেই সময় পথ চলতে চলতেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে বলেছিলেন: "লিখতে যদি চাও, পার্টি মেম্বারশিপ নেবার কথা কখনোই ভেবো না। পার্টির কাজ যদি করতে চাও, তাহলে বাইরে থেকে করো। বাইরে থেকেই অনেক ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।... পার্টির কাজে সাহায্য করার কথা ভুলো না কখনো। আর মানুষের সঙ্গ ছেড়ো না।"
শঙ্খ ঘোষের কাব্য-প্রতিন্যাস এই ভাবনাবলয়েই আবর্তিত হয়েছে।
২
প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দিনগুলি রাতগুলি' (১৯৫৬) থেকেই তার কবিতায় সামাজিক ও কাব্যিক উভটান লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫১ সালে কুচবিহারে পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোরীর ঘটনা তার কবিতার ভাবনা বীজ হিসেবে উঠে আসে: "বিশ্বাস হতে চায় না কথাটা। ক্ষোভেলজ্জায় কাগজ হাতে বসে থাকি এই খবরের সামনে। এক কিশোরী? চার বছর পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার পর, আজও এই খবর? ওয়ান্ মোর্ আনফরচুনেট্! ওয়ান্ মোর্ আনফরচুনেট্! 'The Bridge of Sighs'এর প্রথম লাইনটা।" তারও পরে, কলকাতায় ফিরে আসে সেই একমাসের পুরোনো সেই কুচবিহারের ঘটনা: "ফিরে এলো নাম-না-জানা সেই মেয়েটি আর তার মায়ের মুখচ্ছবি, দুলে উঠলো কয়েকটি শব্দ: "নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে!" এইভাবে রচিত হয় "যমুনাবতী" কবিতা। কিন্ত কবিতাটি এমন একটি নির্মম হত্যার ভাবনা বীজ থেকে রচিত হলেও কবিতাটির নির্মাণে কবি শিল্পসুমিতির এক নতুন ধরনকে গড়ে তোলেন। কবিতার এক স্তবক থেকে অন্য স্তবকে বদলে বদলে যায় ছন্দ, যা আমাদের মনে পড়িয়ে দেয় বিষ্ণু দে'র কথা।
শঙ্খ ঘোষের জন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ চাঁদপুরে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) বাবা মণীন্দ্রকুমার ঘোষ, মা অমলাবালা ঘোষ। পাকশি চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠে শিক্ষারম্ভ। দেশভাগের পর কলকাতা চলে আসেন সপরিবারে। ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পরীক্ষায় প্রথম। পরের বছর বঙ্গবাসী কলেজ ও মুর্শিদাবাদ জঙ্গীপুর কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৫৬ সালে বহরমপুর গার্লস কলেজ। ১৯৬৫ তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান। পরের বছর আমেরিকার আয়ওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রামে যোগদান করেন। এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে পড়ান।
ফিরে আসি তার কবিজীবনে। ১৯৬৭ তে প্রকাশিত হয় ‘নিহিত পাতালছায়া’। ১৯৬৯ তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক’ একই সময়ে প্রকাশিত হয় তার প্রিয় বন্ধু-সহকর্মী কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের ‘শিল্পিত স্বভাব’।
১৯৭৬ এ 'বাবরের প্রার্থনা' প্রকাশিত হবার পর তাঁর কবিতার অভিমুখ স্পষ্ট হয়ে যায়। ১৯৭৫ এ জরুরী অবস্থাকালীন সময়ে তাঁর ‘রাধাচূড়া’ ও ‘আপাতত শান্তিকল্যাণ’ কবিতা দু’টি নিষিদ্ধ হয়: "পেটের কাছে উচিয়ে আছো ছুরি/ কাজেই এখন স্বাধীনমতো ঘুরি/ এখন সবই শান্ত , সবই ভালো।"। কিন্ত, ১৯৭৮ সালে "তুমি আর নেই সে তুমি' কবিতায় তিনি যখন লেখেন: "তুমি বললে মানবতা/ আমি বললে পাপ/ বন্ধ করে দিয়েছে দেশ/ সমস্ত তার ঝাঁপ।/ তুমি বললে হিটলারি-ও/ জনপ্রেমে ভরা/ আমি বললে গজদন্ত/ তুমি বললে ছড়া।" পশ্চিমবঙ্গে তখন বাম শাসনকাল। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে কবিতাটির দারুণ অভিঘাত সৃষ্টি হয়।
১৯৮৪ তে প্রকাশিত "বন্ধুরা মাতি তরজায়" ও ১৯৯৩ তে প্রকাশিত "লাইনেই ছিলাম বাবা" এই দুটি ক্ষীণতনু কাব্যগ্রন্থে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে তিনি প্রশ্নপরায়ণ হয়ে ওঠেন। এবং শেষপর্যন্ত ১৯৯০ সালে বানতলা-বিরাটীতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠেন: "ক্ষমতায় উৎস থেকে ক্ষমতার মোহনা - যা বলো -/ সে কেবল ক্ষমতাকে দাপিয়ে বেড়ানো ক্ষমতায়।/ এত ছোটোখাটো কান্ড কেঁদেকেটে মাথা হবে হেঁট?/ চরিত্রই নেই যার তার আবার ধর্ষণ কোথায়?"(চরিত্র)।
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ শিশির মঞ্চে আয়োজিত ফ্রণ্টের বুদ্ধিজীবী সমাবেশে তিনি বলেন, “প্রতাপমত্ততা ও প্রতাপ অন্ধতা যে কোনও সরকারের পক্ষে সর্বনাশের সূচক। সেইরকম কিছু মত্ততা আর অন্ধতায় আমরা ভুলে যাচ্ছি মানুষের যথার্থ ক্ষোভের প্রকৃতি ও পরিণামকে, ক্ষোভ আর প্রতিবাদের প্রকাশমাত্রকেই ধরে নিচ্ছি শত্রুপক্ষীয় আচরণ...”
বাম শাসনের মধ্যগগণে এইকথা উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন তিনি।
৩
ক্রমশ চাপা দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠে তার কবিতার আখরগুলি। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যভুবনের সঙ্গে সমীকৃত হয়ে যায় তার চেতনাবলয়। ২০০৭এ প্রকাশিত "সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি" কাব্যগ্রন্থের "তুমি বলেছিলে জয় হবে জয় হবে" কবিতায় তিনি বলেন, "তুমি বলেছিলে দল হবে দল হবে/ দলের বাইরে থাকবে না কিছু আর/ অনুগত হলে সহজে পেরিয়ে যাবে/ দুর্গম গিরি দুস্তর পারাবার।"
এই ২০০৭এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনার প্রতিবাদে তিনি লেখেন "স-বিনয় নিবেদন" কবিতা যেটি আনন্দবাজার পত্রিকায় ১৮ মার্চ প্রকাশিত হয়, "গুলির জন্য সমস্ত রাত/ সমস্ত দিন খোলা -/ বজ্রকঠিন রাজ্যে এটাই/ শান্তি ও শৃঙ্খলা।"
মনে রাখা প্রয়োজন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও দেবেশ রায়। কিন্ত তাঁর অবস্থানের কোনও বদল হয়নি। ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালা বদলের পর ঐ বছরই প্রকাশিত 'হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ' কাব্যগ্রন্থে তার কারুবাসনার কোনও বদল হয় না। তিনি লেখেন, "নিজেরই জয়ের কাছে পরাভূত হোয়ো না কখনো।"(জয়সীমা)।
কামদুনির নৃশংস ঘটনার পর তিনি পথে নামেন ও প্রতিবাদে শামিল হন। আর কবিতায় আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, " 'কিছু কি খুঁজছেন আপনি ? ' /শুনতে পাচ্ছি: 'খুঁজছি ঠিকই, খুঁজতে তো হবেই -/ পেলেই বেরিয়ে যাব, নিজে নিজে হেঁটে।/ 'কীখুঁজছেন?'/ মিহি স্বরে বললেন তিনি: 'মেরুদণ্ডখানা।' "(হামাগুড়ি)।
শেষ দিকের প্রতিটি কবিতাতেই ফুটে উঠেছে সময়ের ক্ষতচিহ্নগুলি। তাঁর এই সব কবিতার আন্তর সাদৃশ্য খুঁজে পাই লুই বুনুয়েলের চলচ্চিত্রে।
"মুক্ত গণতন্ত্র" কবিতাটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য: "যথার্থ এই বীরভূমি - / উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসে/ পেয়েছি শেষ তীরভূমি।/ দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।/ সবাই আমায় কর্ তোয়াজ - / ছড়িয়ে যাবে দিগবিদিকে/ মুক্ত গণতন্ত্র আজ।"
মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত "সীমান্তবিহীন দেশে দেশে'(২০২০) কাব্যগ্রন্থেও ফুটে ওঠে সময় ও সমকালের ছবি: "উন্নয়নকালে এরকম দু-একটা কান্ড ঘটে যায় সোনা/ তাছাড়া চারিদিকে এত আলো মেলা খেলা আহ্লাদের ফোয়ারা দেখছ না?/ এর মধ্যে বারবার প্রতিক্রিয়া দিতে দিতে হয়ে যাব প্রতিক্রিয়াশীল?" (প্রতিক্রিয়া)। একেবারে আমাদের মুখের ভাষাকে কবিতার সাজপোষাক পরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কারুবাসনা আর নন্দনভাবনা এইখানে এসে মিলে যায়।
৪
অন্যদিকে, এই মানুষটিই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক। ১৯৮১ সালে বাংলা বিভাগে প্রথম "লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী" তারই নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। ক্লাসে রবীন্দ্রনাথের "রক্তকরবী" বা "বিসর্জন" পড়ানোর কথা আজ প্রায় প্রবাদপ্রতিমতায় অন্বিত হয়ে গেছে। রবীন্দ্র সাহিত্য পাঠের এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তার ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক’, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’ রবীন্দ্র সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। অন্যদিকে, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সঙ্গে বিশ্ব কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ “সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত” তার উল্লেখযোগ্য কাজ। তার কবিতায় ও গদ্য রচনায় বারবারই ফিরে এসেছে বাংলাদেশের নিসর্গ ও মানুষের কথা। বাংলাদেশ সম্পর্কিত লেখাগুলি 'সন্ধ্যানদীর জলে" সংকলনে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি, জ্ঞানপীঠ, সরস্বতী সম্মান এবং পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সরস্বতী সম্মানের সম্পূর্ণ অর্থ (পাঁচ লক্ষ টাকা) তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে দান করেন একান্ত নিভৃতে।
ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সামাজিক মানুষ। তাঁর পরণের সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে ছিল বাঙালিয়ানার শাশ্বত রূপ।
শঙ্খ ঘোষ চলে গেছেন। পড়ে রইলো কবিতা, গদ্য রচনা, অনুবাদ সাহিত্যের সম্ভার যা আমাদের কাছে এক বিবেকী দর্পণের মতো সবসময় জাগিয়ে রাখে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ই শঙ্খ ঘোষের স্ত্রী প্রতিমা ঘোষ চলে গেলেন।


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন