['স্বরবর্ণে'র চতুর্থ সংখ্যা থেকে শুরু হয়েছে কবি দীপংকর রায়ের আত্মজৈবনিক উপন্যাস ' কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে '। এই উপন্যাস লেখকের ষোল-সতের বছর বয়সের কালপর্ব থেকে শুরু। যদিও লেখকের জন্ম এপার বাংলায়, কিন্তু শিকড় ছড়িয়ে থেকেছে ওপার বাংলায়। কাজেই যাতায়াত থেমে থাকেনি। ইতিমধ্যে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি দেশ ছেড়ে চলে আসা আর তারই নাছোড় এক টানাটানির মধ্যে যে জীবনের ক্রমাগত আসা আর যাওয়া ,এই উপন্যাস মূলত তারই এক নির্মম নিষ্ঠুর ভাঙা-গড়ার আশ্চর্য কথোপকথন। ধারাবাহিকভাবে যা আমরা পড়ছি, কবি দীপংকর রায়ের মায়াময় কলমে।]
কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে
পর্ব * ১৭
দীপংকর রায়

আস্তে আস্তে কীরকম ভাবে যেন অতিমাত্রায় জড়িয়ে যাচ্ছি গোরুবাছুরের জগতের সঙ্গে । বিশনি ভাই কয়েকদিন এদিক ওদিকে কাটিয়ে ফিরে এসেছে আবার । তাতে একটুখানি হালকা লাগলেও কেন যেন খুব একটা হালকাও হতে পারছি না । এই মুহুর্তে যা উপার্জন তাতে টানাটানি থাকে । কেন যে বেহিসাবের খাতায় চলে যাচ্ছে সব দিকটা ! যদিও সেটা বোঝার উপায় খুব একটা কঠিন তো নয় , গোরু বাছুরের আহারাদির জন্যে দানা-ভুসি-বিচালির যা মূল্য , তারপর লোকজনের মাস মাহিনা , কাজের দিদিরও তো একটা মাস মাহিনা আছে ; ভাই-এর পড়াশোনার খরচ , এই সবকিছু মিলে মোটামুটি একটা বড় সংসারই বলা চলে আমাদের । এছাড়া বিষয়টা এবারে আরো ধরা পড়েছে , কালো গরুটিকে বারকয় নানা ভাবে চেষ্টা করেও সে পূনরায় গাভিন হবার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছে না । সেও যে দুধ দেয় দুবেলা মিলে এখন , তাতে তার খোরাকির খরচও ওঠে না । এর পর লাল গরুটির বাচ্চা সুরভীকেও পালন করা । সেও তো পরিণত হয়ে উঠেছে ! ইতিমধ্যে তাকে দিয়ে তার মাকে দুধ দুইবার সময় আর পানানো হয় না । জটাভাই দুহাতে সরষের তেল ডলে নিয়ে পানান দেয় তার ।
বিষয়টা এরকমই দাঁড়াচ্ছে , সকলের উপদেশ এবং অনুযোগও , ব্যবসায়িক ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে একটিই কথা —- “ কালো গরুটিকে আর চেষ্টা না করে ওকে এবারে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দাও ।”
বিয়ে দিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো ওকে বিক্রি করে দেওয়া । কিন্তু এক্ষেত্রে মুশকিলটা হচ্ছে সেখানেই, মাও চাইছে না ওকে বিক্রি করতে কারণ, এখন এই অবস্থায় বিক্রি করলে তার সঠিক মূল্য কেউই দেবে না । তাও খরিদ্দার তো সেই কসাই । কয়েকজন ইতিমধ্যে পুষবার নাম করে দেখাদেখি করে গেছে । আদতে তারা সকলে একই । সামনে কুরবানী, ঈদের একটা বাজার আছে । একবার দড়ি খুলতে পারলেই তারপর নেপালগঞ্জ ঠাকুর পুকুর বা বাকড়ার হাঁটে কিম্বা ডায়মন্ড হারবার , যে কোনো অঞ্চলে হাত বদল হয়ে চলে যাবে সে । অথচ মুখে বলছে, “ আমাদের অঞ্চলে প্রচুর ঘাস জঙ্গল , তাই খেয়েই ফুরোতে পারবে না মা । আমরা তো এরকম ঠাট গরুই কিনি মা । ভালো জাতের গরু খুঁজি এই জন্যেই তো, আর এটা তো পিওর হলেস্টান গরু, ও ছাড়া খেলেই দেখবেন গভনা হয়ে যাবে । আমাগের জমা ধানের কুড়ো, গমের কুড়ো খেয়েই ফুরতি পারবে না । প্রকৃতির ভেতরে ওরে ছাইড়ে দিতে হবে । তালেই দেখবেন ও গভনা হয়ে গেছে । তা মা , কী কলেন কন ? একটু ভাইবে চিন্তে কবেন না হয় কদিন পরেই । তা হলে আজ চলি তাহলে ? দুইদিন পরেই না হয় নেবোখানে, ভাবে দেখেন কী করবেন ।”
আধাবয়সি মানুষটা কি মিথ্যে কথা বলছে ? না ওঁর বাড়ি সত্যি সত্যিই মফস্বলের কোথাও ? হয়ত বাকড়া হাট না হলে পৈলানের দিকে । যা হয় হোক গে , কিন্তু মা এবং আমার কারোরই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না । কিছুতেই মন সায় দিচ্ছে না । মাকে বলি, আচ্ছা দেখি না আরো কিছুদিন । তারপর যা হয় একটা কিছু ভাবা যাবেনে না হয় ।
একটা ছুটির দিন দিদিরা এলো । অশোকদার সঙ্গে এই বিষয়টা আলোচনা করতেই সে বললো , ও কত টাকার দানাভুসি খায় বল তো ? তুই ওসব বাদ দিয়ে ওকে ভালো ডাক্তার দেখা । ওর ওষুধপত্র ডাক্তার খরচ যা লাগে আমাকে জানাস । এতদিন ওর দুধ খাওয়া হলো আর এখন ওকে শেষে কিনা কসাইএর হাতে বিক্রি করতে হবে ! শোন , তোর কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই । আমি আছি , তুই চেষ্টা কর ।
কেন জানি না ভেতরটায় কীরকম একটা ঢেউ খেলে যাওয়া অনুভব করলাম । সেটা কীসের ? আনন্দের ? নাকি ভরসার ! গলাটা ভার হয়ে গেল । চোখমুখের উপর কেমন যেন একটা তরঙ্গ খেলে গেল। অশোকদা কি দেখতে পেল সেটা ? নাকি পেল না !
সকালবেলা আটটা-নটার দিকে যখন ওদের স্নান টান করিয়ে পাশের খোলা মাঠে বেঁধে দেওয়া হয় একটুখানি হাঁটাচলা করার জন্যে বা ঘাস জঙ্গল যা একটু আধটু পায় খুঁটে-খেটে খাবে, এই ভেবে । সে হয়ত বাড়ির পাশের মাঠে , না হলে স্কুলের মাঠের ভেতর । সেখানে ওরা লম্বা দড়িতে বাঁধা থাকে বাঁশের খুটোয় । তখন যদি বেঁধে দেওয়ার সময় কালো গরুটি কাছে পায় তো সে আমাকে জিভ দিয়ে চেটে দিতে চায় । তাকিয়ে থাকে করুণ ভাবে যেন আমার মুখের দিকে । যদি আমি ওদের থেকে খানিকটা দূরে থাকি , তখন মনে হয় কিছু যেন বলতে চায় আমায় । আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ করি সে সব কিছুক্ষণ । ও যেন বলে , আর একটু চেষ্টা করেই দেখ না কেন আমায় । একটু ডাক্তার-বদ্দি করেই দেখ না কেন ; তারপর না হয় একটা ভালো জাতের ষাঁড়ের কাছে নিয়ে যেও আমায় । হলেও তো হতে পারি সন্তানসম্ভবা !
কখনও কখনও মনে হয় , ওরা মনেহয় আমাদের কথাবার্তা সবটাই বোঝে । এই যে ওকে নিয়ে আমাদের একটা মানসিক টানাপোড়েন চলছে , সেগুলি সবই যেন সেও বোঝে ।
এ ছাড়া এই যে ওকে নানা অছিলায় দেখতে যারা আসা যাওয়া করছে রোজ, ওর সামনে দাঁড়াচ্ছে,অহেতুক ওর গলায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । এ কথা সে কথা বলতে বলতে কেউ কেউ ওর দুবেলার দুধের পরিমাপ করছে । কিম্বা হয়ত ফিসফিসিয়ে দুধের বদলে ওর এইমুহুর্তে শরীরের ওজন নিয়েও কিছু বলাবলি করছে । আর এইসব ইঙ্গিত, কথা বলাবলি , ও হয়ত খানিকটা খানিকটা আঁচ করতে পারেও এখন । আর পারে বলেই আমাকে দেখলে আমার মুখের দিকে অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে ফ্যাল ফ্যাল করে । ও হয়ত বুঝোতে চায়, আমরা মানুষজনের ঐ সব ছলনা বুঝতে পেরেছি না পারিনি
ওকে ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারি না আমিও , যে শোন , আমরা যখন তোর দুধ খেয়েছি , তখন তোকে কসাইয়ের হাতে তুলে দেবো না কোনোভাবেই ।
অশোকদাও তো বললো , ওর দুধ খেয়ে যখন মানুষ হলো আমাদের ছেলেটা , তখন ওকে যতদিনই লাগুক চেষ্টা করতে হবে, কীভাবে স্বাভাবিক করে ওঠা যায় ওকে । ট্রিটমেন্ট শুরু করে দে তো তুই , দেখি কী হয় ।
নিউটালিগঞ্জে একজন পশুবিশেষজ্ঞ আছেন শুনেছি । এর আগে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের নারানদা এসেছিলেন যখন কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা নিয়ে তিনিও বলেছিলেন এই ডাক্তার বাবুর কথা । এ ছাড়া জটা ভাইও সন্ধান দিয়েছিলো তাঁর ।
সময় করে একদিন তাঁর ওখানে যেয়ে উপস্থিত হলাম। কিন্তু এমা , এ কী , এ যে ডাক্তারির থেকেও অডাক্তারি বেশি ! টাকাপয়সার চাহিদা যেমন নেই , সেটা যেমন একটা আশ্চর্যজনক বিষয় , তেমন আর একটি জিনিসও দেখলাম , রাজত্বের মানুষ তাঁকে ঘিরে একেবারে গোল হয়ে বসে আছে । নানা গল্পগাছা চলছে সেখানে । আমাকে তিনি ঘরে ঢুকতে দেখে ইশারা করে বসতে বললেন একটি খালি চেয়ার দেখিয়ে ।
এর পর দেখতে পেলাম উনি স্বাভাবিক ভাবে যেন হাঁটাচলা ঠিক মতো করতে পারেন না । একটি হাত-লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে লাগে ওঁকে । লাঠি না নিয়েও দেখলাম একবার দেয়াল ধরে ধরে একটু ঝুঁকে , দুলে দুলে চলতে হলো যেন ওঁকে ।
সবটাই বসে বসে দেখছিলাম । ইতিমধ্যে একটি কথাও হয়নি তাঁর সঙ্গে । খানিকক্ষণ গেলে ভিড়টি একটু হালকা হলে উনি আমার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন । শুরুটাও করলেন অতি সাধারণ কথায় । জিজ্ঞাসা করলেন , আমাদের বাড়িটি ঠিক কোথায় । আমার বাড়িতে কে কে আছে । গরু বাছুরের দেখাশোনা কে করে । নিজেই নাকি গোয়ালা রাখা আছে । ইতিমধ্যে গরুটিকে কতবার পাল ধরানো হয়েছে । আমি অন্য কোনো কিছু করি কিনা । নাকি গরুর পরিচর্যাতেই শুধু ব্যস্ত থাকি ।
প্রথম প্রথম একটু বিরক্তই হচ্ছিলাম । মনে মনে ভাবছিলাম , এ কি গরুর চিকিৎসা করবে , নাকি আমার চিকিৎসা করবে ! এ যেন আমারই চিকিৎসা করতে চাইছে আগে ।অদ্ভুত বিষয় যেন সবটাই । যাইহোক তার প্রশ্নের উত্তর একে একে সমস্তটাই খানিকটা খানিকটা করে বলবার চেষ্টা করলাম । শেষপর্যন্ত নিজের কাজের কথার বিষয়ে বলতে যেয়ে বললাম , আমার বিশেষ কোনো কাজ নেই ।সমস্ত দিন গরু বাছুরের দেখাশোনা আর তার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলে একটু বাড়তি সময় বই পড়েই কাটাই । একটুআধটু লেখালিখি করি , এই যা ।
শুনে উনি যেন একটুখানি হাসলেন মিচকি মিচকি। তারপরেই বললেন , কী বইপত্র পড়ছেন এখন ?
একটুখানি আড়াল রক্ষা করেই বললাম , সেরকম কিছুই না । যা পাই সেটাই পড়ি । ভালোলাগলে কন্টিনিউ করি না লাগলে রেখে দি । আর একটা ধরি ।
উনি বললেন , সেটাও যদি না ভালো লাগে , তখন ? তার ও পরেরটা তো ?
— না , ঠিক যেমন করে বললাম তেমনটা না হয়ত , খুব সহজে যে ছাড়ি না , দুই একদিন তারপরেও দেখি । কারণটি খোঁজার চেষ্টা করি । ভাবি , কেন ভালোলাগছে না ! উত্তর পেলাম তো ভালো , আর না পেলাম তো , তাহলে আর কীইবা করার ! ছেড়ে দি তখন ।
—-- কী লিখতে ভালোবাসেন আপনি ?
—-- কবিতা ।
—-- পড়াবেন তো একদিন । আচ্ছা , সে তো হলো , আমি গেলে লোকজন একটুখানি সহযোগিতা করতে পারবে তো , ধরে-করে দিয়ে ?
—--- হ্যাঁ হ্যাঁ , সেটা পারবে তো ঠিকই —-
—-- এইজন্য বললাম , দেখছেন তো , আমি আর পাঁচ জন মানুষের মতো তো স্বাভাবিক নয়, তাই । যদিও আমার সঙ্গে যে ছেলেটি থাকে সে অনেকটাই সাপোর্ট দিতে পারবে যে সেটা যেমন ঠিক, তবুও যদি লাগে ! গরুটি যদি একটু দুষ্টু হয় তাহলে । তা না হলে , শান্ত হলে তো কথাই নেই কোনো । তাই বলছি ,শান্ত , নাকি রাগি ?
—-- না না খুবই শান্ত ।
—-- ঠিক আছে , কথাটা বলা এইজন্যই ওষুধটষুধ লাগলে তো দিতে হবে । তবে আমি কিন্তু তারপরে আপনার কবিতা শুনে তবে আসবো । আর ওটিই আমাদের হবে নতুন সম্পর্কের কথা । ঠিক আছে , আজ তাহলে এই পর্যন্তই কথা থাকলো ? সামনের রবিবার সকালের দিকে আমি যাবো আপনাদের বাড়িতে ।
খানিকটা হতবাক হবার মতোনই অবস্থা । গরুর চিকিৎসা করাতে এসে এ দেখি কবিতা পাগলের খোঁজ পাওয়া ! কবিতা লিখলে তাহলে সমাদরও জোটে এতোটা ? অথচ সেই কথাটা বলতেই তো আমি সংকোচ বোধ করি সবসময়ই ! এই যদি না বলতাম, তাহলে কি এই মানুষটি এতটা গুরুত্ব দিত ?
অন্তরাল থেকে কে যেন কিছু একটা বললো যেন !
সত্যি সত্যিই কি লেখালিখির জন্যে সমাদর পাওয়া যায় কোথাও? যদিও শরৎচন্দ্র পড়ছি শুধু শুনলে উনি কি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন! কারণ শরৎচন্দ্রে থেমে আছি এটা জানলে কোথাও কি বিশেষ কদর পাওয়া যায় এখনও ?
এই প্রসঙ্গে শংকরের কথাটিই তো প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে বিশেষ ভাবে : এটা পড়তে হবে , ওটা পড়তে হবে … ।
তাই তো মনে মনে ভাবি , এই বয়সে কত খোঁজ ওদের কাছে! অথচ আমি তো কিছুই জানি না । এখনো যেটুকু শুনে শুনে খুঁজে ফেরা …..! এই জন্যেই তো ডাক্তারবাবু কে কী পড়ছি কথাটিতে পরিস্কার করে সেরকম কিছুই বলতে পারলাম না । একটু অন্য ভাবে , কায়দা করে ঘুরিয়ে বলেছি খানিকটা শুধুই ।
ভেতরে কোথাও একটা যেন দুটি বিষয় নিয়েই জোর পেলাম খানিকটা ।
কালিকে মনে মনে বললাম যেন ফিরে আসতে আসতে
— তাহলে তোকে আর কসাইয়ের হাতে দিতে হবে না রে কালি । মনে হচ্ছে ঠিক জায়গায়ই এসেছি তাহলে , বুঝল ? নিশ্চয়ই একটা কোনো গতি করে দিতে পারবেন এই ডাক্তারবাবু । দেখি না কেন তোকে পূর্ণ জীবন ফিরিয়ে দিতে কত দিন লাগে ।
রবিবার দিনই ডাক্তারবাবু এলেন । নিজে হাতে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে দিলেন , চিন্তার কিছু নেই রায় বাবু । ওকে চিকিৎসা করলেই আশাকরছি ও ইনসিমেশন কমপ্লিট করে ধরে নিতে পারবে। এখন আপনার পরিচর্যার উপর আর একটুখানি ওষুধপত্র ব্যবহার ঠিকঠাক করতে পারলেই ও ধরে নেবে । তবে অবশ্যই ষাঁড়ের কাছে নিয়ে যেতে হবে । আর ওষুধ দেখি কী আপনাকে দিয়ে দিতে পারি , বাকিটা একটু কষ্ট করে কিনে নেবেন আপনি । তবে আশা করছি অনেকটাই দিয়ে দিতে পারবো আমিই আপনাকে ।
বললাম , ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু । বুঝতেই পারছেন , একটি গরুর উপর তিনটি কে চালাতে হচ্ছে । আসলে ওকে ঠিক ছাড়ানোর ইচ্ছাটা আমাদের কারোই নেই ।
ডাক্তারবাবুকে তার ফিস্এর কথা জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, ঐ রিক্সাওয়ালার ভাড়াটি দিলেই হয়ে যাবে । আমি তো সরকারি বেতন পাই কিছু একটা । ওঁ হ্যাঁ , আগামীকাল সন্ধ্যাবেলায় একবার আসবেন কিন্তু । দেখি হসপিটাল থেকে কী পাওয়া যেতে পারে । এরপর বাকি ওষুধগুলি আপনি একটু কষ্ট করে নিয়ে নেবেন মুর এভিনিউএর ওষুধের দোকান থেকে । এদিকে অন্য কোথায়ও পাবেন না ।
ডাক্তারবাবু চলে গেলে তার উপস্থিতি আমার ভেতরে নানাভাবে এক অন্য অনুভবের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নানা বর্ণে বিচরণ করালো ।
পরে বেশ কিছুদিন গেলে জানতে পেরেছিলাম এই মানুষটির কথা । তার কতটা অবদান সমাজের প্রতি । এই যে তিনি আজ বিকলাঙ্গ , সে কিন্তু তার জন্মসূত্রে পাওয়া নয় ! বা কঠিন কোনো অসুখবিসুখের জন্যেও নয় ! একাত্তরে নকশাল সিপি এম এর ভুল আক্রমণের শিকার এই মানুষটি । যদিও পরে অবশ্য আক্রমণকারীরাই জানতে পেরে তার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে নিজেরাই ছুটোছুটি করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় । তাই না হলে এই মানুষটিকে আজ আর আমরা এভাবে দেখতে পেতাম না হয়ত । সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী সেই পরোপকারী মানুষটির নাম জিঞ্জিরশেখর সেন শর্মা ।
*****************************************************************************
আগামী পর্বে
******************************************************************************