সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

উপন্যাস * সুদীপ ঘোষাল




জীবনহাটের কড়চা 

সুদীপ ঘোষাল 


দ্বিতীয় পর্ব 


তারপর বাড়ি গিয়ে দুপুরে স্নান, খাওয়া সারা হলে বিশ্রাম নিয়ে বিকেল চারটের সময়। আবার দোকান খােলে। এইভাবে বেশ চলে যায় দিনগুলাে। মাধবের বয়স বেড়ে যাটের দরজায় কড়া নাড়ে।মাধব গান জানে। তাই মন খারাপ হলেই সে গান করে। খরিদ্দারও আনন্দ পায়। সকলেই তাকে ভালােবাসে।

নবগ্রাম  গ্রামের আর সেনপাড়া গ্রামের অনেক গরীব মানুষ দুপুরে খেতে যায়। কোনো পয়সা লাগে না। ওখানে বাবু, ভবরঞ্জন মাস্টারমশাই, আদিত্য কবিয়াল, সহ বিবেকানন্দ ডাক্তারবাবু, তাপসদা, জয়দেবদা, ভবদা, বিকাশদা, পল্লবদা, অনিলদা, প্রবীন আলােকদা, প্রলয়, দিলীপ দা ও আরও অনেকে ভবা পাগলার ভক্তরা ভবা পাগলা সেবা দেখাশােনা করেন। প্রত্যেক দিন প্রায় পাঁচশাে অভুক্ত লােক ওখানে খাওয়া দাওয়া করেন। সবাই খায় কিন্তু কার টাকায় এই ব্যবস্থা কেউ জানে না। জানে শুধুমাত্র কমিটির লােকজন। আজ রিপাের্টার এসেছেন। কমিটির লােকের কাছে জানতে চাইছেন, কার টাকায় এই সেবাশ্রম চলে বলুন তাে?সেক্রেটারি প্রবীরদা বললেন, মাধবদার টাকায় এই সেবাশ্রম চলে। তিনি চপ ও মুড়ি বিক্রি করেন। | রিপাের্টার যখন মাধবের চপের দোকানে গেলেন সে তখন চা দিতে দিতে গান ধরেছে, ও মন সওদাগর বিদেশে বাণিজ্যে এসে কেন বাধিস বসতঘর, দেশের মানুষ দেশে ফিরে চল | রিপাের্টার প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন, কবি অসীম সরকারের গান। খুব ভালাে করেন তাে আপনি। আপনি এতবড় সমাজ সেবক। সামান্য চপের দোকান থেকে আয় করে আপনি এই অসম্ভব কাজ কী করে করলেন। মাধব বলল, কোনাে কাজই, ইচ্ছা থাকলে, অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়ােজন অদম্য ইচ্ছা শক্তি। আমি তিল তিল সঞ্চয়ে তাল করেছি। নিজের খরচ কম করে অর্থ বাঁচিয়েছি তিরিশ বছর। আমি যা সঞ্চয় করেছি আর লােকের কাছে পাওয়া অর্থ একত্র করে, আমি এই আশ্রম গড়ে তুলেছি। আমার জীবনের স্বপ্ন সফল হয়েছে। আমি আজ খুব খুশি। কত মানুষ আমাকে এই কাজে সাহায্য করেন তার ইয়ত্তা নেই। রােজ আমার কাছে অনেক অনেক টাকা আসে সাহায্যবাবদ। সব টাকা ওই আশ্রমের নামেই সঞ্চিত হয়। আমার কিছুই নয়। সব মানুষের। ভববাবু, কুমারবাবুর মতাে কত লােক যে টাকা পয়সা দান করেন তার ইয়ত্তা নেই।এই অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে তার চোখে অশ্রুধারা। আনন্দের অশ্রু। জীবনের সবকিছু সকলের জন্য উজাড় করে নিঃস্ব হওয়ার আনন্দ একমাত্র দাতারাহ অন্তরে অনুভব করেন, সাংবাদিক গম্ভীর হয়ে বললেন। এতকিছু করেও মাধব কিন্তু নির্বিকার। এই  সেবাশ্রমের কাজ সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ুক। আর  স্বপ্ন দেখে ভারতমাতার সমস্ত সম্তান গরম ভাত খাচ্ছে পেট ভরে। শত শত সমাজ কর্মী এগিয়ে।সবুুজ ধানক্ষেতের ঢেউয়ে ফুটে উঠেছে ভারতের মানচিত্র। মাধব লাবাসে। সে দেখতে পায়, তরুণদের হাতে লাঙলের বোঁটা। তারা চাষআসছে দৃপ্ত পদক্ষেপে। সব স্বপ্ন দেখতে ভালােবাসে। সে একদিন এসে বলল, মাধবদা তােমাকে নিউ আপনজন ক্লাব’ পুরস্কৃত করবে। রঞ্জন একদিন এসে বল সয়ে বলল, কেন রে, কী করেছি আমি। আমি এখনও কিছু করিনি। তবে, সে গম্ভীর হয়ে বলল, কেন কিসের জন্য?  সে বলে, এ কথার কোনাে উত্তর হয় না, দাদা। কারণ সবাই জানে তুমি কী করেছে। ক্লাবের ছেলেরা এলে মাধব তাদের বলল, তােরা আমার সঙ্গে থাকিস তা হলেই হবে। মানুষের ভালাে করাই হােক আমাদের জীবনের ব্রত। সকলকে সঙ্গে নিয়ে, তাদের সাহায্য নিয়ে গােবিন্দ পাশের গ্রামে গড়ে তুলল আর একটি সেবাশ্রম। তার নামও দিল ভবা পাগলা সেবাশ্রম। এমনি করে সদিচ্ছার জোরে দশটি আশ্রম আজ চলছে মাধবের দয়ায়। মানুষ আজ জাতিবিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মানুষের সেবায় নিয়ােজিত। পরশ পাথরের পরশে আজ অনেক তরুণ দীক্ষা নিয়েছে মানব সেবার ব্রতে।। বাংলার সরকার সেবা মনােভাবের স্বীকৃতি স্বরূপ মাধবকে সম্মানিত করতে চায়। আনন্দ সংবাদটা সবাই মাধবকে জানাতে গিয়ে জানতে পারল, সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে রাস্তায়। অসংখ্য, আরও অনেক অভাবী মানুষের পাশে তার হৃদয় কুসুম ফোটানাের আশায়।


তৃতীয় পর্ব 


জুতো পরতে হবে সারা অঙ্গ ঢেকে রাখতে হবে তবে গিয়ে বাইরে বেরোতে হবে বাড়ি থেকে আসার পর সেসব সম্পূর্ণ চেঞ্জ করে তাদের সাবান দিয়ে ধুয়ে বালতিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে তারপর নতুন কাপড় পরিধান করে এমনকি সবজিগুলো কেউ ধুয়ে নিতে পারলে ভালো হয়।

কিন্তু এত কিছু তো করা যায় না মানুষ তো অলসের জাতি তাই বলে থাক অত কিছু হবেনা আর ওইখানেই তো গন্ডগোল ওইখান থেকেই ছিদ্রপথে করোনাভাইরাস হাসতে হাসতে ঢুকে যায় আর ঢুকে গিয়ে ধ্বংস করে পৃথিবী। 

অংশুমান আর মিলন বাবু জানলায় দুটো বাড়ি পাশাপাশি থাকে তারা জানলা দিয়ে কথাবার্তা বলছে মিলন বাবু তার বক্তব্য রাখছেন যে কিছু লোক আছে যারা বেপরোয়া হয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের রোগের ভয় নেই কিন্তু অজান্তেই তাদের অজান্তেই বের হতো তাদের শরীরে প্রবেশ করেছে। মিলন বাবু জানলা দিয়ে বলছেন, করোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বদুুয়োর বন্ধ। লকডাউন শুরু হল বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে। দোকান, বাজার, হাট স্কুল, কলেজ সব বন্ধ।তবু মিলনবাবু দোকানে গেলেন একবার। তিনি বলেন, আমার কিছু হবে না',।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা  বলছেন এই ভাবনাটাই করোনাকে, বিশ্ব মহামারীতে, পরিণত করার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নিয়ে বারবার বলা সত্ত্বেও এ দেশে বাজার-ঘাটে সেই দৃশ্য খুব কমই দেখা যাচ্ছে। অথচ দেশে ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার একটি ঘটনা রীতিমতো আশঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে। লকডাউন চলাকালীন মাত্র একবারের জন্য দোকানে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হলেন এক ব্যক্তি। অথচ তিনি মাস্ক, গ্লাভস সমস্ত কিছুই পরে গিয়েছিলেন। 


মিলনবাবু  জানিয়েছেন, তিনি লকডাউন সম্পূর্ণই মেনে চলছিলেন। কিন্তু ঘরে খাবার শেষ হতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল দোকানে। তাও একটি দোকানেই গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন পর থেকেই শরীর খারাপ হতে থাকে। জ্বর, শরীরে অসহ্য ব্যথা। এরপরই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর করোনা টেস্ট হয়। সেখানেই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। 

মার্কিন এক যুবককে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া হসপিটালে ভরতি করা হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী সেই যুবকের নাম বেনজি হা। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাস ছড়ায়। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখলেও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট অন্য কারও নাক, মুখ, চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই ভাল মাস্ক, চশমা পরাটা আবশ্যক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বেনজির ক্ষেত্রেও সেভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে বেশি। 


এই কোভিদ নাইনটিন বা করোনা রোগ আসার আগে অংশ মানে জীবন ছিল সহজ সরল তারা বাইরে ঘুরে বেড়াতো নিজের কাজ করতো টিউশনি পড়াতে কোনো বাধা ছিলনা কিন্তু করোনাভাইরাস আসার আগে আসার পরে আর উন্মুক্ত পরিবেশে ঘোরাফেরা করা যায়না তার আগের ঘটনা এখন কিছুটা আমরা বর্ণনা করছি। জীবন এক আশ্চর্য অনুভূতি। মহাপুরুষরা বলে গেছেন পৃথিবী একটা নাটকের মঞ্চ। নাটকে অভিনয় শেষে সবাইকে প্রস্থানের পথে ফিরতে হয়। মানুষ মরে গলে কোথায় যায়? মরে যাওয়ার পরে তার সেই অনুভূতি কি কাজ করে? লকডাউনের আগে অংশুমানের মনে হত, স্বজনের কান্না-কথাবার্তা-ভালােবাসা-ঘৃণা কিছুই কি বুঝতে পারে? সজীব প্রশ্ন। উত্তর জানা নেই। আমার মনে হয় যখন আমরা ঘুমােই তখন কি কোনাে পার্থিব বিষয় আমাদের মনে থাকে? কে বাবা, কে মা, কোথায় কে মনে আঘাত দিয়েছে কিংবা আমার প্রেমিক আমার প্রেমিকা কোথায় কি করছে কিছুই মনে থাকে না। এক নিরুত্তর জীবন্ত প্রাণী শুয়ে থাকে তার সমস্ত চেতনা জলাঞ্জলি দিয়ে। আশ্চর্য মানবদেহ, তার চাহিদা আর তার রসায়ন। কোন রসায়নবিদ রচনা করেছেন এই রক্তমাংসের সজীব দেহ। মূর্তিমান অংশুমান রায় এখন তিপান্ন বছরে পা দিয়েছে। সে বসে বসে এইসব ভাবছে। এখন নন্দনপাড়ে বাস। 


***********************************************

আগামী পর্বে 

************************************************



 সুদীপ ঘোষাল 

সুদীপ ঘোষাল গল্প, উপন্যাস লিখতে ভালোবাসেন।সৃষ্টিসুখ থেকে, অন্তরে আলো জ্বলে ও এবং ছাপাছাপি থেকে, তিন এ নেত্র,এই দুটি গল্পসংকলন বের হয়েছে কলকাতা বইমেলায়।।এছাড়াও আরও পাঁচটি বই আছে বিভিন্ন প্রকাশনার।গল্প  দিয়ে শুরু লেখা,ছোটোবলার স্কুলে পড়তে পড়তেই। পূর্ব  বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরে বাস করেন লেখক।জন্ম ১৯৬৫ সাল। সানন্দা ব্লগ  ঈশানকোণ, আরম্ভ,ধুলামন্দির,অক্ষর ওয়েব,দৈনিক সংবাদ,তথ্যকেন্দ্র,যুগশঙ্খ,আবহমান,অপরজন,কৃত্তিবাসী ওয়েব,ম্যাজিকল্যাম্প,জয়ঢাক,অংশুমালী,প্রভাতফেরী,দৈনিক গতি প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখি করেন নিয়মিত


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন