কবিতাগুচ্ছ * ছোটন গুপ্ত
শীত কবিতা
শিরশিরানি বিকেল শীতের
গরম পোশাক শরীর ভারী,
সূৰ্য ছটার দীপ্তি পেলে
সেই যে দূরের স্বপ্নে পাড়ি ৷
রক্তগোলাপ প্রথম আলাপ
সূৰ্যোদয়ের উজান জুড়েই
তুই তো ছিলি উষ্ণ চা-য়ে
ডাক পাঠালি আলোক সুরে !
কথার পিঠে কথার কথায়
দাঁড়িয়ে থাকা শব্দ জোড়ে,
ফেরার কথা শেষ বিকেলে
রক্তরাগের রং-এর ঘোরে ৷
অংশু প্রভাত একটা গোলাপ
আলাপ-রাতের স্বপ্নে ডাকে,
আলোর দিশায় সোহাগ তৃষা
কবিতাদের ভুলেই থাকে ৷
সময় যখন হারিয়ে যায়
তখন নদীর চরায় বালি
হাঁটতে হাঁটতে স্মৃতির ঘরে
স্বপ্নে ভাঙন বসত খালি ৷
গোলাপ ফুলের পাপড়ি তখন
একটি দুটি ফুরোতে চায়,
বয়স বাড়লে বুকের মধ্যে
রক্তঝলক থমকিয়ে যায় ৷
একটা কথা বলবো বলে
তোর খোঁজে রাত জেগেছিলাম,
সূৰ্যভোরে হিম বাতাসে
আলোর রেণু সাজিয়ে দিলাম ।
আনাড়ির কথা
কেউ বলে যায় বিদঘুটে আধবুড়ো
যাক কটা দিন, ভাঙবে দাঁতের নুড়ো,
বয়স কি কম ? ধবধবে চুল সাদা !
ক্যামনে বোঝাই সত্যি বেজায় হাঁদা ।
শিখতে নারাজ শয়তানি খল ছল
তাও তো ভাবিস লোকটাকে অচল,
আসল যে সে বেকার বা আনাড়ি
স্বপ্ন দেখার শখ আছে তার ভারী ।
দৃষ্টি নেহাত ঝাপসা চোখের কাচে
কেউ মেলে না ভরসা রঙিন আঁচে
ইচ্ছে হলেই যা তা বলাই ঠিক
নেই প্রেমিকা, তাই দেখে দশদিক ।
আবোল তাবোল লেখার বাতিক জুড়ে
ছুট্ ছুট্ ছুট্ পাটনা মধুপুরে
পোশাক মানে লাল জামা নীল জামায়
কেউ তো থাকেই নিষেধ জরিমানায় ।
সমস্ত দিন পদ্য খাতায় আঁকা
একটি মেয়ের টলমলে চোখ ঢাকা
কোথায় গো সে ? দূরের খেয়ালবাসি,
বলছিল কাল, তাকেই ভালোবাসি ।
রাতজাগা কবিতা
দুরূহ শব্দমালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে
বসে থাকে হিম ঋতু শূন্যের চরে
গাছেদের শুখা পাতা আনমনে ঝরে
সারারাত জেগে থাকা হিসেব মিটিয়ে
এক দুই তিন শুরু শূন্যের পরে
ঝরে যাওয়া ভাবনার জট জটিলতা
ভূমিতল মেনে নেয় ক্ষয় অধীনতা
শেকড় জলের আশে তলাতল ঘোরে
আপাতত বিরতির কথা জেগে থাক
অনন্ত খুঁজে ফেরে কবিতার স্মৃতি
খুঁড়ে দেখো কোন পথে চেতনার ইতি
পুষে রাখা শূন্যতা জ্বলে পুড়ে খাক্
ঘাম টুপ করে ঝরা চিমনির ঘরে
তোমাদের বাসা ছিল তোমাদের জোত
তোমাদের চোখে ছিল সাগরের স্রোত
তোমাদের ভালোবাসা দাউদাউ পোড়ে
ভোর এলেই ডানা মেলে পাখির উড়াণ
শূন্যের কাছে ওরা হার মানেনি তো
মেনে নিই সুর তাল লয় অপহৃত
ভোলা কি সহজ নাকি জীবনের গান ?
নদী যদি
অভিমানী শ্যাওলার কাছে
সীমিত শব্দ জেগে আছে
চেনা নদী পারে তার সবুজাভা ছায়া হয়ে বাঁচে ।
নদী তো একলা বয়ে চলে
শত ঢেউ কলকল কত কথা বলে
ভালোবাসা নদী হলে ফিরে চায় শাওনের জলে ।
***********************************************************
পোশাকি নাম প্রবীর দাশগুপ্ত। কবিতা লেখেন ভালোবেসে। মানুষ সময় সমাজভাবনা তার লেখার উপজীব্য। কবিতায় বার্তা থাকে একসাথে হাতে হাত বেঁধে পথ চলার। বিশুদ্ধ ভালোবাসা প্রত্যাশা ছড়িয়ে যায় কলমে। সুচেতনার ভরসায় কবিতা কথা বলুক, এটুকুই চাহিদা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। 'আগুন বৃষ্টি ভালোবাসা', 'ফিনিক্স আয়', 'দহনকালের কবিতা' 'নীরবতার শব্দমালা' এবং 'অশোক লিপি'। ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'ছেঁড়া স্বপ্ন অথবা' যন্ত্রস্থ। পেশায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক। জন্ম- ০৬/১২/৬৪।





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন