সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * অর্ণব সামন্ত

 



কবিতাগুচ্ছ * অর্ণব সামন্ত


পূরবীর বুকে ভৈরবী 

সন্ধ্যের সেঁজুতি জ্বালার আগে যদি 

আচমকা কোনো সকালের মুখ হানা দেয় 

আয়না তখন মুখ দ্যাখে একা একা 

দ্যাখে গহীনে গহীনে তার কত গাঙ ও আগুন 

নীলাভ অন্ধকারে নক্ষত্রদের ছড়াছড়ি 

নক্ষত্রের ফুলজন্ম ঝরে পড়ে পথপ্রান্তে , মাটিতে 

দেরাজ থেকে টেনে বার করে সেই জাদুবাস্তবতা 

আগুন খুঁটিয়ে দ্যাখে আর ভাবে 

পরম সভ্যতা চরম অসভ্যতার সেই সব যৌবন দিনরাত্রিগুলি 

স্মৃতির বকুল হয়ে তারা বিলীন হয়েছে অন্য ছায়াপথে 

শুধু সৌরভ এখনও যেন নাকে লেগে আছে 

সুর মিয়া মল্লারে কাঁপাচ্ছে চারপাশ 

ও আকাক্ষা তুই হৃদয়ে আন উচ্ছ্বাস 

বাঁধভাঙা সে নিয়মে অন্য নিয়মের চাষবাস 

স্মৃতি যেন মোমবাতি আগুন দরজায় কড়া নাড়ে ভবিষ্যৎ আঙুল 

বর্তমান দ্বিধাগ্রস্ত তাকে নেবে না ফেরাবে একেবারে 

মণি নিবদ্ধ মণিকর্ণিকায় শ্মশানের চিতাগ্নি ছুঁয়ে জাগে 

পূরবীর বুকে জাগে ভৈরবী আরেক বার পেতে চায় জীবনের স্বাদ !



কর্কটক্রান্তি 

কর্কটক্রান্তির দুপুরে বৃশ্চিক দংশন করে 

আয় কবুতর আয় জড়ানো আদরে আদরে 

ভগ্নাংশ নিদ্রায় ভগ্নাংশ জাগরণে 

তন্দ্রাঘোরে তন্দ্রাহরণী দ্রাঘিমাংশকে দ্রাঘিমা করে

আয়ু পোড়ে আয়ু পোড়ে তবু উজ্জীবিত শিখা 

মধ্যদিনে মধ্যগগন স্পর্শ করে অবাধ্য অসহ্য দহনে 

চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় কোষে কোষে ক্ষুধা মেটায় 

স্নায়ুতে স্নায়ুতে ঝঙ্কার ওঠে , বিদ্যুচ্চমকের ঝাঁকুনি 

স্বাতীনক্ষত্রের জল পড়ে গা'য় , জল যেতে চায় জলের গভীরে 

কিছুই অসম্ভব নয় আর সপ্তভুবন পদতলে মূর্চ্ছাপ্রবণ 

সমাধির থেকে উঠে আসে দুপুর একা একা 

তোর লাবণ্যের ঢেউয়ে ঢেউয়ে , তোর রূপের অরূপে 






            







দুপুরে , রাতের চাঁদ 

শঙ্খটি বাজায় দুপুরে , রাতের চাঁদকে পেয়ে

শঙ্খটি নম্রনত , শঙ্খটি সোচ্চার 

দুলে দুলে ওঠা ঢেউ সফেন জীবনের 

যাপন স্বর্ণ কুটুরিতে রাখে , ভ্রমর ফুলের বনে 

অকস্মাৎ হড়পা উজান আসে উজিয়ে সুর 

সুর ভাঙে তাল ভাঙে কথা ভাঙে 

তবু সেই ভাঙনের অভূতপূর্ব নির্মাণ রাখো 

মন্থনে মন্থনে গরল অমৃত ফোয়ারা

লক্ষ্মী বাহু টেনে নেয় অলক্ষ্মীর ঝাঁপিতে 

ভূমিকম্প অগ্ন্যুৎপাত লাভা উদ্গীরণ 

স্বর্গসুখ স্বর্গসুখ নরক গুলজার 

আর কত জন্ম পরে একান্ত আমার 

শঙ্খ বাদ্যে যুদ্ধ শুরু ক্ষেত্রে ধর্ম কর্ম 

দমকা হাওয়ায় হারজিৎ সমান সমান 

হত হওয়া কালগুলি সম্মুখে তোমার 

চেখে দ্যাখো চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় সম্ভার 

স্নায়ুমেদমজ্জায় লেখো আলো আলো আলো 

শঙ্খটি বাজায় পূরবী কি শান্তি কি শান্তি 

সুধার ভাঙা বাক্যে ভাঙা গানে ভাঙা কবিতায় 

লেখো লেখো লেখো তাকে রাখো হৃদিমধ্যে 

কখন হয়েছে সমুদ্র ভাসান ডিঙি মাঝি জানে না 

তুলে রাখো দেরাজে সুখ , গতজন্ম , পরজন্ম 

ভ্রমর ও হলুদ ফুলের দিনরাত্রি মহাকাব্য রচুক ... !



তিশানের নারী 

তিশানের নারীর মতন বিকেল আসে 

বাস্তুভিটের ঝাউবনে , প্রান্তরের সবুজ ঘাসে 

বায়বীয় নারী হয়ে ইছামতী উড়াল দিলেই

ভাঙা চালে ভাঙা ঘরে এসে হাজির কিশোরীজোছনা 

রোদ্দুরের ক্রোধ বাড়ে স্রোতস্বিনী প্রশমিত করে 

ফল্গুস্রোতে চুবিয়ে রাখে বেদম ভালোবাসা

অলৌকিক জলযানে চলে যায় জলের গহীনগভীরে 

নিমজ্জনে নিমজ্জনে ডুবুরি তুলে আনে অমল ভাসান

আশ্লেষ আবেশের দ্বিপদের তরকারি দিয়ে 

শিউলি সাদা ভাত বাড়ে নারীমাতৃক সভ্যতা তীরে 

সমুদ্র শুকিয়েছে তার তবু জীবন্ত ভিসুভিয়াস 

মগ্নমুগ্ধ করে রাখে লাভার মতন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে জড়িয়ে 

বহমান জীবনে লাবণ্য ফুরালেও আগুন থাকাটা জরুরী 

সেই টেনে নেয় মাধ্যাকর্ষণে , সেই দেয় মুক্তিবেগের ডানা 

সেজানের সাত স্তর খুঁড়ে খুঁড়ে রেমব্রান্টের আলো 

কথ্য সর্বনামে ডাকে হৃদয়ের ঈশ্বরী দরজা খুলে 

ব্যালকনিতে জ্যোৎস্না নামে আড়ি নয় ভাব করতে এসে 

দেরাজে রেখেছে সুখ পরজন্মের জাতককে নিয়ে 

রামধনু কেশে তার সৃজনের বৃষ্টি বিন্দু বিন্দু লেগে 

তখনি জেনেছে সর্বনাশের পরবর্তী সর্বপ্রাপ্তির অমৃতযোগ 



  **************************************************************************************    


 অর্ণব সামন্ত 

ইংরাজী ভাষার ছাত্র। ইংরাজীতে এম. এ ; বি . এড ।উনিশশো তিয়াত্তর সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীতে জন্মালেও স্কুল জীবনের পর থেকে শহরতলীতে আবাস । শিক্ষকতা পেশা , নেশা কবিতা লেখা । এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ , ৪টি - গোলাপ এবং , ঝরা সময়ের উপকথা , পারমিতা , বামাক্ষী । পেশাগত সময় বাদে গান শোনা , বইপড়া , ফোটোগ্রাফি , কবিতা লেখাকেই জীবন যাপনের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন।                                                   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন