কাছে ছিলে দূরে গেলে
সৃশর্মিষ্ঠা
মাতাল আপোষ আর মেকি ভদ্রতাময় জীবনের বাইরে এমন বন্ধু কেউ আছে? শেষ বিকেলে যার কথা মনে পড়ে! অথবা মনে হয় সবার থেকে দূরে সরে গিয়ে চুপ করে বসি তার পাশটিতে! দিনহারানো শীতলপাটিতে শুয়েবসে দুচার কথা। কিংবা ট্রেনলাইন ধরে দুজনের হাঁটা। ভারসাম্য বাঁচাতে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে। লাইনের দুপাশে দুজনের হাত স্পর্শ করার কী তীব্র সাধ। সাধ্য যতটা অবাধ্য। কিছু সম্পর্ক এমনই। না ভোলা যায়, না ছোঁয়া। তাকে দেখতে ইচ্ছে করে। তার মনখারাপের রং আর আমার মনখারাপের রং একই কিনা। শীতের নতুন হাওয়ার শিরশিরানি একইসাথে আমাদের যমজ প্রাপ্তি কিনা! জানতে ইচ্ছে করে। আকণ্ঠ দ্বিধা আর প্রশ্নে ডোবা এক অনামী আত্মীয়তা। যাকে এড়িয়ে কোথাও পালানোর জায়গা নেই। যেখানেই যাই আমার একান্ত দ্বিতীয় আত্মার প্রবল অনুপস্থিতি আমাকে নৈঃশব্দ্য শেখায়। এই অনভিপ্রেত অনুপস্থিতির উপস্থিতি ভীষণ তীক্ষ্ণ। দূরত্বকে ক্রমশ স্পষ্ট করে তোলে। দূরত্বেরও গুরুত্ব আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই বুঝি মানুষটা খুব কাছে, আগত প্রশ্বাসের মতো। আবার পরক্ষণে মনে হয় সে ক্রমশই দূরে, নির্গত নিশ্বাসের মতো।
বিকেল ৪:৪৩
সময়টা এসময় একেবারে একা। সঙ্গ দিতে আসে নলেন গুড়ের সান্ধ্য বাতাস। রুটিনমাফিক গাছে জল দিতে দিতে ঘাড় ফেরাই অচেনা প্রৌঢ়জনের ডাকে...
...শুনছেন! এখানে একটি ফ্ল্যাটে একা এক বয়স্কা মহিলা থাকেন। বলতে পারেন কোন্ ফ্ল্যাট? (কাঁপা গলা শুনে মনে হলো প্রশ্নটা করার সময় তাঁর বুকের ভেতর একটা পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে শ্বাসকষ্টে)
...কোন্ ফ্ল্যাট জানি না। তবে তিনতলায় একজন থাকতেন।দেখতে পারেন।
...গেছিলাম। একটা দরজায় বেল বাজিয়ে জিজ্ঞেস করতেই উত্তর না দিয়ে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
... অন্য দরজায়?
...যাওয়ার সাহস হলো না
...ওনার নাম? ফোন নম্বর?
... বছর চোদ্দ আগের কথা, হারিয়ে ফেলেছি। শুধু বাড়ির নাম মনে আছে।
এত বছর পর বন্ধুর নাম আর ফোন নম্বরটুকু সম্বলহীন করে যিনি এসেছিলেন, ফিরে গেলেন বনবাসের স্তব্ধতা রেখে। না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে ঝাপসা যোগসূত্র ধরে সম্পর্ক তবুও অটুট। দূরত্বকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, কয়েক মুহূর্তের কাছে পাওয়াটাও যে ডিঙনো যায় না। আসলে দীর্ঘ দূরত্বের পার্বনে মেতে যে বুনো গুল্মগন্ধের দরজা গড়ে উঠেছে পিছন ফিরে দেখার স্বভাব তার নেই। অথচ দরজায় খিল নেই। সে কি ভাবছে আমি এসে কড়া নাড়ব! আমিও যে নিঃশব্দে ডেকে ডেকে ফিরে যাচ্ছি! শীতের কুয়াশায় বন্দী হয়েছে স্বর। বলা হয়ে ওঠে না আর, তুমি যতটা ভালো নেই, আমিও ততটা না-ভালো-থাকার কাছাকাছি...
*********************************************************************
জন্ম কলকাতায়। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা ও লেখালেখি শখ। কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায়। দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রণা, প্রেম, পাল্টে যাওয়া রঙ লাগে কবিতায়।




পুরোটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম, নিঃশব্দে তারপর শ্বাস নিতে গিয়ে বুঝতে পারলাম বুকের মধ্যে একটা কষ্ট পাখির মত ডানা ঝাপটাচ্ছে❗
উত্তরমুছুনলেখায় কবির আন্তরিক দ্বন্দ্ব মুখর হয়ে উঠেছে। বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন