শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

সম্পাদকীয়

 





স্বরবর্ণ * ৩


"....তুমি তো আমাদের মত সোজা মানুষ নও,-- তুমি দেশের জন্য সমস্ত দিয়াছ, তাই তো দেশের খেয়াতরী তোমাকে বহিতে পারে না, সাতাঁর দিয়া তোমাকে পদ্মা পার হইতে হয়, তাই তো দেশের রাজপথ তোমার কাছে রুদ্ধ, দুর্গম পাহাড় -পর্বত তোমাকে ডিঙাইয়া চলিতে হয়,-----কোন বিস্মৃত অতীতে তোমারই জন্য তো প্রথম শৃঙ্খল রচিত হইয়াছিল, কারাগার তো শুধু তোমাকে মনে করিয়াই প্রথম নির্মিত হয়েছিল,---সেই তো তোমার গৌরব! তোমাকে অবহেলা করিবে সাধ্য কার! এই যে অগণিত প্রহরী, এই যে বিপুল সৈন্য ভার সে তো কেবল তোমারই জন্য! দুঃখের দুঃসহ গুরুভার বহিতে তুমি পারো বলিয়াই তো ভগবান এত বড় বোঝা তোমারই স্কন্ধে অর্পণ করিয়াছেন! মুক্তিপথের অগ্রদূত! পরাধীন দেশের হে রাজবিদ্রোহী, তোমাকে শতকোটি  নমস্কার! "


'মুক্তিপথের অগ্রদূত'কে 'পথের দাবী' উপন্যাসের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এভাবেই শত কোটি নমস্কার জানিয়েছেন। ভারতবর্ষ তখন পরাধীন। ইংরেজ শৃঙ্খলকবলিত। কিন্তু শেকল ছেঁড়ার গান গাইতে আসছেন ভারতমাতার দামাল সন্তানেরা। শয়ে শয়ে,হাজারে হাজারে। মৃত্যু অবধারিত তাঁরা জানেন,তবু অহর্নিশ 'মৃত্যুর গর্জন' শুনছেন 'সংগীতের মতন'----


"যে শুনেছে কানে তাহার আহ্বানগীত
ছুটেছে সে নির্ভীক পরাণে 
সংকট আবর্ত মাঝে দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন 
নির্যাতন লয়েছে বক্ষপাতি
মৃত্যুর গর্জন শুনেছে সে সংগীতের মতন"


এমনই ত্যাগ-তিতিক্ষা,আত্মবলিদানের পথ ধরে এল স্বাধীনতা। এল ১৫ আগস্ট ১৯৪৭সাল । সকাল হল স্বাধীনতার । মেঘাচ্ছন্ন সকাল। দ্বিখন্ডিত হল  ভারতমাতা। গুমরে কাঁদল গঙ্গা-পদ্মা।


'এ আজাদি ঝুটা হায়' স্লোগান উঠল অচিরেই। এরই মধ্যে দিল্লির লালকেল্লায় উড়ল তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি কার্যকর হল দেশের সংবিধান। ক্রমে ভারত পরিচিত হল ' সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র ' রূপে।


তারপর বহু উত্থান-পতন সাক্ষী করে দুয়ারে পৌঁছল ১৫ আগস্ট ২০২১। ঠিক এই মূহুর্তে, কী দেখছি আমরা ? বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কবি সব্যসাচী মজুমদারের ভাষা ধার করে বলতে ইচ্ছে হয় ' আমরা মারতে মারতে গণতন্ত্র ফাটিয়ে দিয়েছি।' সত্যি,আমাদের গণতন্ত্র,আমাদের স্বাধীনতা '-র গালে কপালে রক্ত।স্বাধীনতা দিবসের পুন্যলগ্নে আজ আমাদের শপথ নেবার দিন ,যে কোনও মূল্যে আমরা দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ,গণতন্ত্র রক্ষা করব 


স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথে নয় শুধু, আমাদের অন্তরে প্রতিধ্বনিত হোক ...'' ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী, বল ভাই ---- ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ,আমার কল্যাণ... " 


পরিশেষে কৃতজ্ঞতা জানাই সেইসব কবি লেখকদের ,যাঁরা তাঁদের মূল্যবান রচনাটি দিয়ে স্বরবর্ণের বর্তমান সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ  করলেন 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন