এ সময়ের একজন অগ্রগণ্য লেখক। তাঁর নিরলস সাহিত্যচর্চা আমাদের সমৃদ্ধ করে। গদ্য ও কবিতা -- সব মিলিয়ে দীপঙ্কর এ পর্যন্ত দশটিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। স্বরবর্ণে আমরা পড়ব বুদ্ধিজীবী বিষয়ক তাঁর একটি মননঋদ্ধ বীক্ষণ ----
বুদ্ধিজীবী বিষয়ক অসম্পূর্ণ দু- চার কথা
ড:দীপঙ্কর বাগচী
"The central fact for me is, I think, That the intellectual is an individual endowed with a faculty for representing, embodying, articulating a message, a view, and attitude,Philosophy or Opinion to, as well as for,a public."
Edward W. Said
বুদ্ধিজীবী কথাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল রহস্যময় শব্দ। দীর্ঘকাল ধরে এ বিষয়ে ইউরোপীয় ও আমাদের সমাজে বিতর্ক চলছে। বিতর্কের পথ ধরে নানারকম সংজ্ঞার জন্ম হয়েছে এবং শেষপর্যন্ত কয়েকটি সংজ্ঞাকে আমাদের মনে ধরতে পারে। তবে সকলরকম টানাপোড়েনের দীপিত অবস্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যে, ইতিহাস ও সমাজবিদ্যার কোনও সর্ববাদীসম্মত সংজ্ঞা হয় না। হলে এর সমস্ত আনন্দটাই মাটি হয়ে যায় জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে। বুদ্ধিজীবী বিষয়ক চাপান- উতোরে ঢোকার পর্বে আমাদের দেশের পটভূমিটি খুব সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক। কেননা সকল বুদ্ধিজীবী বিষয়ক আলোচনার প্রেক্ষিতে ঢোকার পর্বে সংক্ষেপে আমাদের দেখতে হবে, এদেশের বুদ্ধির বিবর্তন সাহিত্যের হাত ধরে চর্যাপদের কাল থেকে বর্তমানকালে এসে দাঁড়িয়েছে।
অতএব আমরা দেখি বাংলা সাহিত্যের জন্ম ১০০০ বছর। আর সেই এক হাজার বছরের নিরিখে বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতির বেড়ে ওঠার কালও এই হাজার বছরের সময়সীমায় চিহ্নিত। চর্যাপদের আগে বাঙালির ইতিহাস কী ছিল বা কেমন ছিল কিংবা বাঙালি জাতি হিসেবে আদৌ অবস্থান করতো কিনা এবং কিভাবে করতো তা নৃতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরাও এ বিষয়ে আলোকপাত করে থাকেন তাঁদের স্বাভাবিক অধিকারবশত , কেননা প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির তুলনায় বাংলার সংস্কৃতি রূপান্তর ইতিহাসগতভাবে নেহাতই ক্ষুদ্র। কিন্তু একটি কথা আছে যে, একটি শাসনতন্ত্রকে বা রাজতন্ত্রকে কিংবা গণতন্ত্রকে চেনা যায় তার শিল্প-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে। তাই বাঙালি জাতিকে চেনার ক্ষেত্রে ওই এক হাজার বছরের পুরোনো সাহিত্য দিয়েই চিনতে হবে। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে যে চর্যাপদ আবিষ্কার করেছিলেন এবং আচার্য প্রবোধচন্দ্র বাগচীর হতে ওই আবিষ্কারের যে পরিণতি ঘটেছিল, তার প্রেক্ষিতেই বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি রূপরেখা আমরা পেয়েছিলাম উত্তরসূরি হিসেবে। এবং ইংরেজ আসার আগে পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর নানা সমাজ-মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নদীর স্রোতের মতো চলেছিল। বস্তুত ইংরেজের এদেশে আসার পর সম্পূর্ণভাবেই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল সে চলন।
এতকাল ভারতভূমি নানা বিদেশি শক্তির করতলগত হলেও বাস্তবিক অর্থে তাঁরা কখনোই এদেশের সংস্কৃতিকে গিলে ফেলতে পারেনি। বরং এদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁরা খাপ খাইয়ে একটি নতুন সাংস্কৃতিক অবস্থান তৈরি করেছিল। বাংলায় ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রতিবাদী শক্তিগুলি সক্রিয় ছিল বৌদ্ধো, বৌদ্ধতন্ত্র , অন্যান্য লোকায়তিক ধর্মচর্চা, ইসলাম থেকে বাহিত সুফিবাদ, এছাড়াও বৃহত্তর হিন্দু সংস্কৃতিজাত ভক্তিবাদ, আরও নানা লোকবৃত্ত জেগে উঠেছিল এ মাটির উপরে। কিন্তু ইউরোপীয় শক্তি এদেশের সঙ্গে মেশা তো দূরের কথা বরং তাদের বস্তুভাবনাকে ভীষণভাবে চাপিয়ে দিয়েছিল বাংলার মাটিতে। বাঙালি কিন্তু এসবই নির্বিচারে গ্রহণ করেনি। কোথাও দীর্ঘ হেরে যাওয়ায় গ্লানি থেকে ধীরে ধীরে আত্মস্থ করেছিল। কোথাও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী প্রত্যয়গুলি তাদের দুর্বল ঘাড়ের উপর। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মুঘল রাজশক্তির শাসনকাল থেকেই বাঙালি সংস্কৃতি ও রাজনীতি সবসময়ই এক প্রতিবাদী অবস্থান নিয়েছিল।
ভক্তি ও সুফিবাদের যুগে বৃহত্তর ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বৈষ্ণবান্দোলন ও চৈতন্যের নেতৃত্ব তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ বলা যায়, একদিকে গোঁড়া সর্বধর্মীয় বাতাবরণে অন্যদিকে হিন্দু ধর্মসংস্কৃতির ভিতরে নানা ক্ষুদ্র ভেদবুদ্ধির ঈর্ষাজনক পরিস্থিতিতে। যেখানে বাংলার লোকায়তিক ধর্মীয় অবস্থান শৈব, শাক্ত ও বৈষ্ণবের কাজিয়ায় একপ্রকার রূপান্তর ঘটেছিল। চৈতন্য তাঁর অনবদ্য বামপন্থায় তাকে প্রতিহত করে একধরনের সংহতি আনতে চেয়েছিলেন এবং এই পথেই সেকালের সাহিত্যও একটু একটু করে ভাবের প্রস্রবণ ঘটিয়েছিল। তারপর মঙ্গলকাব্যের যুগ পেরিয়ে বাঙালি জাতি ইউরোপীয় শিক্ষা দ্রুত গ্রহণ করেছিল এবং নতুন শহুরে নাগরিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটেছিল। নানা প্রশ্নে তাঁরা জর্জরিত করে তুলেছিলেন - তৎকালীন বাস্তবকে। কালীপ্রসন্ন সিংহের ও প্যারিচাঁদ মিত্রের ' হুতুম প্যাঁচার নকশা ' ও 'আলালের ঘরের দুলাল ' থেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'কমলাকান্তের দপ্তর ' বা 'মুচিরাম গুড়' নামক প্রহসনগুলি কিংবা কবি মধুসূদন দত্তের ' বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ' অথবা ' একেই কি বলে সভ্যতা'-সহ বহু খ্যাত ও অখ্যাত লেখকের নানা রচনা সামাজিক ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ ও প্রতিবাদের এক নতুন ভূমিকায় উঠে এসেছিল। সেইসঙ্গে সাংস্কৃতিক এই প্রতিবাদগুলির পাশাপাশি সারাসরি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ সংগঠিত হতে শুরু করেছিল। ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহে, ১৮৭৩-র পাবনা বিদ্রোহ এবং পরবর্তীকালে তেভাগা, তেলেঙ্গানা কিংবা স্বাধীন ভারতের নকশালবাড়ি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাজের একটি বিশেষ ওয়াকিবহাল অংশকে পথে নামিয়েছিল।
এঁদের আমরা বুদ্ধিজীবী বলে উল্লেখ করি। এই বুদ্ধিজীবীরা সমাজের নানা ক্ষেত্রে, নানা অসাম্যের বিরুদ্ধে কখনও একসঙ্গে অথবা একা একা তাঁদের প্রতিবাদ ও মন্তব্য দ্বিধাহীনভাবে ব্যক্ত করেন। বস্তুত এই বুদ্ধিজীবী আমরা কাকে বলবো তা একবার সংক্ষেপে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করি। কেননা প্রাচীনকাল থেকে ইউরোপে সরাসরি অর্থে এবং পরবর্তীকালে এশিয়া ও আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে এঁদের অস্তিত্ব খুব গভীরভাবে দেখা যায়। গণতন্ত্রের একপ্রকার বিবেক হিসেবেই এঁদের অবস্থান সমাজে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু এঁরা কারা? আসুন, কিঞ্চিৎ দেখার চেষ্টা করা যাক।
বস্তুত ইংরেজি ভাষায় ' ইন্টেলিজেনশিয়া' বলে যে শব্দটি আছে, তা রুশদের দ্বারা বিশ্বে প্রচারিত। এটির প্রবর্তনা ওঁদেরই হাতে। প্রখ্যাত পণ্ডিত ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষ এই শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ করেছিলেন 'বিদ্বৎসমাজ '। একে শ্রেণী বলে তিনি চিহ্নিত করতে চাননি ,কারণ সমাজবিদ্যায় ' শ্রেণী' কথাটির একটু নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে।
'শ্রেণীচেতনা' মূলত আর্থনৈতিক স্বার্থের একতাবোধ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়। কেবল কার্ল মার্কস নন, একথা তাঁর পরবর্তী ভিন্নমতাবলম্বী সমাজবিজ্ঞানীরা ও মোটামুটি স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হননি। ম্যাক্স ওয়েবার ( Max Weber) মার্কসীয় সমাজভাবনার ' অনেক সূত্রই অভ্রান্ত বলে মেনে নেননি'। 'শ্রেণী' বিষয়ক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি 'class situation','status group' ইত্যাদি 'অনেক প্রকারের গোষ্ঠীচেতনাবাদের সূক্ষ্ম বিচার করেছেন'। তবুও যথার্থ বিশ্লেষণের আলোকে শেষপর্যন্ত এক্ষেত্রে সামাজিক ' শ্রেণী' ও 'আর্থনৈতিক স্বার্থের ' সরাসরি যোগ অস্বীকার করতে পারেননি।
যাই হোক, 'ইন্টেলিজেনশিয়া'বা বিদ্বানদের কোনও ঐতিহাসিক বা সমাজতত্ববিদ ( Class Status) বা সম্পূর্ণ একটি পৃথক শ্রেণী হিসেবে মর্যাদা দেননি। পণ্ডিতদের মধ্যে কেউ একে 'গ্রুপ স্টেটাস',আবার কেউ কেউ 'কমিউনিটি স্টেটাস' দিয়েছেন। দার্শনিক কার্ল মার্কস 'বিদ্বৎজনদের মধ্যশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের ঐতিহাসিক চরিত্রের সুস্থিরতা সম্মন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাধারণভাবে ' মধ্যশ্রেণী ' সম্মন্ধে তিনি গভীর সন্দেহ প্রকাশ করে গেছেন।' অবশ্য পরবর্তীকালে সমাজের নানা শ্রেণীর অবস্থানের কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, মধ্যশ্রেণীর মধ্যেও নানা স্তরের মনোভাবের উচ্চাবচতা প্রায় সবক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। এমনকী অর্থনীতিবিদ ও ঐতিহাসকরা বলেছেন, মধ্যশ্রেণীই আজ ক্ষমতার মূল কেন্দ্র। গত নব্বই -এর দশকে 'মার্কসের পর মার্কসবাদ'নামক গ্রন্থটিতে সমাজতত্ত্ববিদ শমিত কর দেখিয়েছেন, কীভাবে আজকের সভ্যতায় মধ্যশ্রেণীর হতে পতাকাটি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। যেখানে পুঁজির মালিক ও সর্বহারা শ্রেনীর ক্ষমতার দ্বৈরথ জমি পাল্টাপাল্টি করে নিয়েছে। আর মধ্যশ্রেণীর রমরমায় লড়াই - এর মূল ভূখণ্ডটি প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে তাকে ভাবতে হচ্ছে। যাই হোক, আপাতত আমরা দেখি, বিদ্বৎজনেরা কোনও স্বতন্ত্র 'শ্রেণী'নন এবং এ ব্যাপারে সবমতের সমাজবিদরাই মূলগতভাবে একমতের শরিক। 'সাম্প্রতিককালে বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে তিনটি ধারণা চালু আছে------
ক) যাঁরা গভীরভাবে ধারণা নির্মাণ, বই লেখা ও চিন্তার জীবনচক্র অনুধাবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁরাই বুদ্ধিজীবী।
খ) এই দ্বিতীয় ধারণাটি মার্কসবাদ থেকে এসেছে - এঁরা বিশেষ স্বীকৃত বৃত্তিগত শ্রেণী যেমন- অধ্যাপক, বক্তা, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী , সাংবাদিক এমন সব পেশার মানুষ।
গ) সাংস্কৃতিক বুদ্ধিজীবী, যাঁদের শিল্প ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতা আছে, যা এঁদের একধরনের ক্ষমতা দেয় এবং এর ফলে তারা 'জনগুরুত্বপূর্ণ' নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
আলফ্রেড হেব্বার বলেছেন, ইন্টেলিজেনশিয়া মানে হলো 'Socially unattached free intelligentia.' অন্যদিকে আর এক প্রখ্যাত সমাজবিদ কার্ল ম্যানহাইম 'Intelligentia ' সম্মন্ধে বলেন,'This unanchored, relatively classless stratum', আর রবার্ট মিচেলস - এর ভাষায় - 'intellectuals are the officers and subalterns of all arms and of all armies.' অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীরা হলেন সকল অস্ত্র এবং সেনার ভিতরে ঊর্ধ্বতন ও নিম্নবর্গীয় অবস্থান। আর ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি কালসমুদ্র মন্থন করে শেষ পর্যন্ত একটি বিষের পাত্র বিদ্বৎজনদের সামনে তুলে ধরে বলেছেন - "বুদ্ধিজীবীর জন্মই হয়েছে অসুখী হবার জন্যে।" কটাক্ষ করে এ-ও বলেছেন -'the jntelligentia is a class of liason officers.'
তাই প্রশ্ন করা যায়, বুদ্ধিজীবীরা কি একটি বিরাট বড়ো অথবা সম্পূর্ণ ক্ষুদ্র এবং ভীষণভাবে নির্বাচিত একদল মানুষ? কিন্তু বিশ শতকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী বিষয়ক আলোচনায় আমরা এ-মতের বিরোধী উপস্থাপনাই লক্ষ করি। প্রখ্যাত ইতালির মার্কসীয় বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দার্শনিক অ্যান্টনিও গ্রামশি যখন মুসোলিনীর জামানায় কারারুদ্ধ ছিলেন, তখন তাঁর 'Prison Notebook' -এ তিনি লেখেন- 'সকল মানুষই বুদ্ধিজীবী এবং এরপরই কেউ বলতে পারে-কিন্তু সমাজে সকল লোকের কাজে বুদ্ধিজীবীর কাজ নয়।'
এছাড়া গ্রামশি দেখানোর চেষ্টা করেন, যাঁরা সমাজে বুদ্ধিজীবীর কাজে নিয়োজিত তাঁরা মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এঁদের প্রথম অংশটি ধ্রুপদী সনাতন ( traditioanl) বুদ্ধিজীবী। যাঁরা মূলত শিক্ষক, ধর্মযাজক এবং প্রশাসক। এঁরা যুগ যুগ ধরে একই কাজ করে যাচ্ছেন এবং দ্বিতীয় অংশটি হলো অবায়বিক ( organic) বুদ্ধিজীবী। গ্রামশি দেখেছিলেন, এঁরা অনেক বেশি করে সামাজিক শ্রেনিগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল সম্পর্কে তিনি বলছেন - " the capitalist entrepreneur creates alongside himself the industrial technician, the specialist is poltical economy, the organizers of a new culture,of a new legal system, etc." বস্তুত, গ্রামশি বিশ্বাস করতেন অবয়বিক বুদ্ধিজীবীরা সক্রিয়ভাবে সমাজের সঙ্গে যুক্ত এবং সেইসঙ্গে তাঁরা সমাজের মন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাজার প্রসারণের কাজে নিবিড়ভাবে যুক্ত। শিক্ষক কিংবা ধর্মযাজকদের মতো বংশপরম্পরায় একই কাজ একঘেয়ে ভাবে করা নয়, পরিবর্তে নিরন্তর সৃষ্টি ও চলমানতার মধ্যে এঁদের বিকাশ।
অন্যদিকে আর এক তাত্ত্বিক জুলিয়েন বেন্দা তাঁর ' The Treason of the Intellectual ' -এ দেখান সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী কোনও সাধারণ হিসেব - নিকেশের মানুষ নন, তাঁর আদর্শের জগতে তিনি অনন্য। তিনি কখনোই বস্তুজগতের ক্ষুদ্রতার দ্বারা চালিত নন। যেন ' My Kingdom is not of this world' তাঁর লক্ষ্য নয়, কোনও বস্তুগত আকাঙ্ক্ষা বরং দর্শন বিজ্ঞান কিংবা শিল্পের অহৈতুকী কাজে তিনি নিয়োজিত, যাঁকে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বাগেশ্বরী শিল্পপ্রবন্ধাবলী'তে বলেছিলেন - শিল্পী কাজের লোক নয়, 'বাজের লোক '- হয়তো-বা কলাকৈবল্যবাদের এক নৈতিক প্রণোদনা এতে জেগে উঠতে দেখা যায়, যদিও জুলিয়েন বেন্দার এই বুদ্ধিজীবী সম্পর্কিত ধারণা ছিল অত্যন্ত অভিজাত চৈতন্য থেকে বাহিত। একটি ছোট প্রত্যক্ষ ও জোরালো মানুষের সমষ্টিকে তিনি মান্যতা দিয়েছেন। এখানে নারীর কোনও স্থান নেই। বেন্দা কখনোই বলেননি এই সকল বুদ্ধিজীবী কীভাবে সত্যে উপনীত হতেন। যদিও প্রখ্যাত পণ্ডিত এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর ' Representations of the Intellectual'-এ খুব আকর্ষক ভঙ্গিতে বলেছেন -সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে বেন্দার ওই মনোভাব যথেষ্ট আকর্ষক ও আবেদন জাগানিয়া।
সাঈদ বলেন, গ্রামশির দেওয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে বুদ্ধিজীবীর সামাজিক বিশ্লেষণ অনেক বেশি বেন্দার তুলনায় যুক্তিপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। যতই জুলিয়েন বেন্দা আকর্ষক হোক না কেন! অতএব নানা চাপান -উতোর ও পণ্ডিতদের নানাখানা ভাষ্যের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বলা যায় যে - 'বিদ্বৎজনের অবস্থা হলো, ঘরেও নহে, পারেও নহে, যেজন আছে মাঝখানে, কতকটা তার মতো সারাজীবন সাধ্যমতো বিদ্যার কেরামতি দেখিয়ে সমাজের কাছ থেকে তিনি যা পান, তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন না। শেষজীবনে তাঁর মনে হয়, সমাজের তরী তাঁকে তীরে নিক্ষেপ করে, পরিবর্তনের স্রোতে ভেসে চলে গেছে। সমাজের মধ্যে থেকেও তিনি এক জনমানবশূন্য দ্বীপে নির্বাসিত। একথা যত মনে হয় তত অতৃপ্তি বাড়ে, আক্রোশ বাড়ে, অভিমান বাড়ে।' ঐতিহাসিক আর্নল্ড টোয়েনবী এই অবস্থাকে 'জন্মগত অতৃপ্তি'- র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
অর্থাৎ এই বুদ্ধিজীবীরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থে শ্রেণীবদ্ধ একথা ততটা যুক্তিপূর্ণ নয়। বরং একটু অন্যভাবে বললে বলা যায়, এঁরা সমাজের অগ্রণী অংশ হিসেবে 'সমাজ' বদ্ধ। নোয়াম চমস্কি বলেন - "The responsibilities of Intellectuals,there are much deeper than what Macdonald calls the 'responsibility of people',given the unique privilages that intellectuals enjoy." আর আমরা এ-ও জানি সমাজে যা ঘটে তাই সমাজিক। হতে পারে তাতে একটি পক্ষের সায় আছে অথবা নেই কিন্তু তা কখনোই অসামাজিক নয়। তাই ঠিক আক্ষরিক অর্থে 'শ্রেণীচেতনা' বলে কিছু বলা না গেলেও এঁদের'গোষ্ঠীচেতনা' অবশ্যই আছে 'সেটা শিক্ষার চেতনা '। সমাজবদ্ধতার দিক থেকেও এর যথেষ্ট মূল্য আছে, একে অবশ্যই অগ্রাহ্য করা যায় না। পূর্বের উদাহরণগুলি থেকেই আমরা দেখেছি , সমাজবিদরাও এটি বাতিল করেননি। কার্ল ম্যানহাইম বলেন -...'একটি একীভূত সামাজিক বন্ধনসব ধরনের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছে - সেটি হলো শিক্ষা, যা তাঁদের বিশেষভাবে বেঁধে রেখেছে।'
অধ্যাপক বিনয় ঘোষ খুব সুন্দর বলেছেন - " আমরা কষ্ট করে লেখাপড়া শিখছি এবং সেই শিক্ষাকে সমাজে কাজে নিয়োগ করেছি- এ বোধ সর্বস্তরের বিদ্বানদের মধ্যে আছে। সাধারণ গ্রাম্য স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বৈজ্ঞানিক, একনিষ্ঠ জ্ঞানতপস্বী সকলের মধ্যে বিদ্যার্জনের একটি একানিভূত আছে। এই একানিভূত থেকে সকল স্তরের বিদ্বৎজনের মধ্যে একটা সহানুভূতির ভাব সঞ্চারিত হয়।এই সহানুভূতি থেকেই তাঁদের মধ্যে 'সমাজ'বোধ আসে। ব্রাহ্মণ সমাজ, বৈদ্য সমাজ, কায়স্থ সমাজ যেমন 'কমিউনিটি ' বোধ থেকে গড়ে ওঠে ( শ্রেণীবোধ থেকে নয়),বিদ্বৎসমাজের ও কতকটা সেইরকম বিকাশ হয় "। যদিও এই সমাজ বোধের বন্ধন অবশ্য শ্রেণী বোধের বন্ধনের থেকে অনেক বেশি এলায়িত ও শিথিল। যদিও আজকের ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, পুরোনো শ্রেণীভিত্তিক সমাজ বিশ্লেষণ পদ্ধতি আজকে আর সেভাবে কাজ করে না বহুবর্ণিল ও বহুস্তরিক সমাজ মানসে। সুতরাং শ্রেণী সম্পর্কে সংজ্ঞা পুনর্নবীকরণেরও প্রয়োজন আছে আজকের দিনে।
যাই হোক, বুদ্ধিজীবী বিষয়ক সন্দর্ভের অন্তিম পর্যায়ে এসে আমরা দেখি ' শিক্ষা' যদি মাপকাঠি হয়, তাহলে স্বল্পশিক্ষিত থেকে উচ্চশিক্ষিত সকলকেই কি বিদ্বৎজন বলা যায়! 'তার চেয়েও বড়ো কথা, শিক্ষিত বা বিদ্বান ব্যক্তি মানেই বিদ্বৎসমাজভুক্ত হবার যোগ্য কি না ?' এডওয়ার্ড সাঈদ বুদ্ধিজীবীদের কর্মকাণ্ড এবং এসবের উদ্দেশ্যসমূহ বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন - 'বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে কথাটির মানে হলো-ক্ষমতার প্রতি সত্যভাষণ।' তাই বুদ্ধিজীবী ও ভাষার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন - ' Knowing how to use language well and knowing when to intervence in language are to essential features of Intellectual action.'
বস্তুত প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তাঁরাই যাঁরা বিচার-বিশ্লেষণের বোধ ও বুদ্ধির সুষম মেলবন্ধন ঘটান। সাধারণ ব্যক্তির তুলনায় যাঁরা পঞ্চেন্দ্রিয়ের পরিবর্তে ষষ্ঠেন্দ্রিয় অর্থাৎ মগজের ওপর বেশি অবস্থান। জ্ঞানপিপাসু এঁরাই বিদ্বৎজন বা বুদ্ধিজীবী। রবার্ট মিচেল দেখান - 'যাঁরা ভেবেচিন্তে শেখেন, ঠেকে বা ঠকে নয়, তাঁরাই ইন্টেলেকচুয়াল ' বলে গণ্য হবার উপযুক্ত। এই সংজ্ঞা যান্ত্রিক এবং গতানুগতিক বলা যায়। বরং কার্ল ম্যানহাইমের ব্যাখ্যা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক -' প্রত্যেক সমাজে কিছু সামাজিক গোষ্ঠী থাকে যাঁদের মূল কাজ হলো নিজেদের সমাজের স্বার্থে জগৎকে ব্যাখ্যা করা। এঁদেরই আমরা বুদ্ধিজীবী বলতে পারি।' অর্থাৎ সমাজের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে যিনি নিজের মনন ও মানবমন নিয়ে 'করবার করেন' তিনিই ইন্টেলেকচুয়াল এবং পণ্ডিতসমাজের একজন। 'তা যিনি করেন না, তিনি বিদ্বান হতে পারেন, কিন্তু বিদ্বৎসমাজের একজন বলে গণ্য হবার যোগ্য নন।'
যাই হোক, প্রাচীন যুগ থেকে আজকের নবায়মান সভ্যতায় বুদ্ধিজীবী নানা রূপে আমাদের কাছে উঠে এসেছেন। পুরোনো কলে প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক কিংবা ব্রাহ্মণ বলতে পন্ডিত এবং পন্ডিত বলতে ব্রাহ্মণ বোঝাতো।এঁরা সমাজমানসে একচ্ছত্র রাজ করতেন, ক্রমে এঁদের উপর সংকীর্ণ ভাবনার ছায়া ঘনীভূত হলো। প্রত্যক্ষ সমাজজীবনের সমস্যা, দ্বন্দ্ব ও প্রশ্নের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক লুপ্ত হলো। সমাজবিযুক্ত চিরায়ত বা ধ্রুপদী বিদ্যা স্কলাস্টিক ও অ্যাকাডেমিক হতে বাধ্য।
ম্যানহাইমের মতো একে ' একচেটিয়া চিন্তার বিশেষ ধরন' বলা যায় উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি - দুটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আমাদের কাছে উঠে আসে তা হলো - আমাদের এই ঘটমান বাস্তবে বুদ্ধিজীবী কাকে বলবো! যদি জ্ঞানতাত্ত্বিকদের সারাজীবন সাধনার ফলকে মনে রাখতে হয় তবে বুদ্ধিজীবী কখনোই ক্রিকেট খেলোয়াড়, সিরিয়ালের অভিনেতা কিংবা অন্যান্য বিনোদন পেশার মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই কি বলা যেতে পারে? গ্রামশির ' অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল'দের কথা মনে রেখেই বলছি। এঁরা অর্থাৎ উক্ত সরণিতে বিধৃত মানুষেরা হয়তো কেউ কেউ সত্যি পঠন- পাঠন কিংবা অন্যান্য মানবিক চর্চায় নিবেদিত কিন্তু বেশিরভাগই প্রচরলোভী এক একটি ব্যক্তিত্ব যাঁদের জ্ঞান কিংবা তত্ত্বচর্চা অন্যান্য সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে ভূমিকা সত্যিই কি আছে বা ছিল, জানা দুষ্কর। 'অবায়বিক বুদ্ধিজীবী'র আলগা ফাঁসে এঁরা কোন মানসিক আভিজাত্য ভাঙার কাজে এগিয়ে আসছেন ভাবলেই আতঙ্ক জাগে। বিশ্বায়ন কিংবা গ্লোবাল অর্থনীতির দৌলতে 'সনাতন বুদ্ধিজীবী'দের একচ্ছত্র অধিকার ভাঙতে গিয়ে যে মার্কিন আগ্রাসী চিন্তার প্রসার সমাজে ঘটছে তাতে এই বহুস্তরিক সমাজ জ্ঞানচর্চাকেই প্রধানতম শত্রু ভাবছে - ক্ষমতার কেন্দ্র ও অলিন্দ বলছে - অথচ আগ্রাসনের চরিত্রটি কিন্তু জ্ঞানচর্চার মধ্যে দিয়েই বৌদ্ধিক অস্ত্র হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এদেশে প্রয়োগ করছে। পুঁজির চরিত্রই তাই, কখনও কখনও জ্ঞানের ছদ্দবেশী পোশাকে সে জ্ঞানকেই আক্রমণ করে। প্রথম বিশ্বে যা প্রযোজ্য তা তৃতীয় বিশ্বে কীভাবে প্রযোজ্য হবে, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট ভাবার অবকাশ আছে। প্রথম বিশ্ব নানা প্রাযুক্তিক অর্থনৈতিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে। সে যেভাবে জ্ঞানতত্ত্বে ক্ষমতার মোকাবিলা করবে, আমাদের বিশ্বে তা অসম্ভব ও হাস্যকর বলেই মনে হয়।
সুতরাং প্রতিমুহূর্তে নিজেদের সামাজিক অর্থনৈতিক বাস্তবকে সামনে রেখেই বুঝতে হবে আজকের উত্তর-ঔপনিবেশিক এশীয় ও ভারতীয় রাজনীতি আর অর্থনীতিকে। না হলে আমাদের অবস্থা হবে অন্ধের হস্তীদর্শনের মতো। নিজের দেশের মূল অবস্থান সবার আগে ভাবতে হবে। আজকের বিদ্বৎসমাজের বিকাশ হলো পুরোপুরি ' ভিন্ন সামাজিক পরিবেশে'। অবাধ বাণিজ্য ও ধনতন্ত্রের প্রাথমিক অগ্রগতির সঙ্গে আবির্ভাব হলো নতুন প্রগতিশীল বিদ্বৎসমাজের। তাঁরা যে বিদ্যার সাধনা করতে লাগলেন, তার সবচেয়ে বড় আদর্শ হলো প্রখর বিচারবুদ্ধি, নির্মল যুক্তি ও উদার মানবমূল্যবোধ। 'Nobilitus' নয়, Humanitus হলো নবযুগের আদর্শ।' এই নতুন জ্ঞানবিদ্যাকে বলা হতো ' হিউম্যানিস্ট' বিদ্যা। রেনেসাঁস থেকে শুরু উদ্ভূত এই 'মানবিক বিদ্যা' শেষপর্যন্ত শিল্প বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লবের কাল পেরিয়ে গত শতকের শেষ দশক থেকে উত্তর মার্কসীয় ও উত্তর অবয়ববাদীদের হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন আদরায় গঠিত হচ্ছে। কিন্তু জ্ঞানচর্চার পদ্ধতিগত সকল বৈষম্য ও নানাখানা চিন্তার সফল ও ব্যর্থ রূপায়ণের পরেও মানুষের নৈতিকতার আদিম অর্থটি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে । আর যতকাল বুর্জোয়া সমাজ পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত থাকবে তত কালই এর অন্তর্গত দ্বন্দ্ব-স্বরূপ বিবেকের ভূমিকায় বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর ও একক অথবা সমষ্টিগত প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। এমনকী যদি মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র ও স্থাপিত হয়, সেখানেও 'বিদ্বৎজন গোষ্ঠী' র উপস্থিতি থাকবে বলেই মনে হয়। অন্তত যতক্ষণ না ( withering away of the state) রাষ্ট্র আপনা থেকেই বিলুপ্ত হচ্ছে, মানবিক গুণের সর্বোত্তম বিকাশের ফলে। কিন্তু সে তো কল্পনার সোনার পাথরবাটি...!

অসামান্য তথ্যমূলক বিশ্লেষণ। বহু কিছু জানলাম। প্রবন্ধটিরতে জ্ঞানমার্গের পথে প্রদন্ধিকের অনায়াস বিচরণ লেখাটিকে প্রাঞ্জল করে তুলেছে। কখনওই নিজেকে বুদ্ধিজীবি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেনি। যার প্রলোভন এইসকল লেখায় চোরাগোপ্তা পথে অনেক সময় থেকে যায়। লেখাটি পড়ে অঅত্যন্ত সমৃদ্ধ হলাম
উত্তরমুছুনঅসম্ভব সুন্দর একটা লেখা.. আমার প্ৰিয় স্যার কে ধন্যবাদ এমন সময় এমন একটি লেখা উপহার দেবার জন্য..
উত্তরমুছুন