পেশায় তিনি চিকিৎসক, কিন্তু তাঁর অন্তরাত্মায় ছায়া ফেলে কবিতার নীল ইশারা। অদ্ভুত এক মায়াবীছন্দে রচিত হয় তাঁর কাব্যভাষা।'...পড়ে আছে অবিকল আমার হৃদপিন্ডের আকারের পদ্মকুঁড়ি ' কিংবা ' শ্যামল আঁচলে মুখ ঢেকে কে চলে যায়/ বিমুগ্ধ পরকীয়ার মতো গূঢ আবেগে/ দুলে ওঠে জগৎ'
কবি উদয় ভানু চক্রবর্তী-র দু'টি কবিতা
ইতিবৃত্ত
তারপর এগিয়ে গেলাম ভেতরে,
সংকীর্ণ গুহামুখ ধরে ঘোরানো রাস্তা- পার হয়ে আকুল অরণ্য।
নাম না জানা পাখিরা উড়ছে-
পড়ে আছে অবিকল আমার হৃৎপিন্ডের আকারের পদ্মকুঁড়ি,
চামর দোলাচ্ছে কৃষ্ণকায় গাছের দল,
লাব-ডুপ লাব-ডুপ লাব-ডুপ- মৃদু স্বরে
বাজছে অনন্ত প্রাণ সংগীত!
শিশিরকণারা প্রবাহিত হচ্ছে ধমনী শিরা উপশিরা বেয়ে,
বিচিত্র আলো আঁধারিতে কোথাও রক্তের
উত্তাপ নেই, বিকৃতি নেই- প্রতারণা নেই সূর্যাস্তের,
পাপ নেই, যন্ত্রণা মৃত্যু কিছু নেই
কিছু নেই,
চিহ্নহীন জগৎ!
বসি খানিকক্ষণ- অনুরক্ত নম্র ঘাসের ওপর;
তিনটি সরু গলি চলে গেছে সম্মুখে,
কোন দিকে যাব ভাবতে ভাবতে চলেছি হেঁটে!
পলাশের লাল রেখা , টলটল ঢেউহীন নদী,
শিউলি রমণীদের নিখুঁত অঙ্গ সৌষ্ঠব, অপূর্ব মুদ্রায় নৃত্যরতা,
ওরা ডাকে মধুর ধ্বনিতে, চোখ বুজে আসে-
আধোচেতনার মতো নিমীলিত, এমনও হয়,
এমনও হয়!
হঠাৎ প্রবল বর্ণচ্ছটার ঝলকানি চারদিকে,…
কয়েক মুহূর্ত-
অতঃপর আলো সয়ে এলে, দেখি শব্দহীন অপার্থিব
সে প্রান্তরে শুধু তন্ময় মুখোশের সারি
অথচ সবই পরিচিত মুখ!
এই মুখ এই মুখোশ এই স্বপ্ন, সৎকার, বোধি-
মুখোমুখি?
যেন পেরিয়ে এসেছি কত উদ্যত সংসার
বাসনা !!!
বৃষ্টিসুখ এবং বিরহ
ঋতু পাল্টেছে, গাছের এমন বিনোদিনী ভাব
দেখে দোয়েলের গোপন ঈর্ষা জাগে-
পালকের মৃদু শিহরণ ভেসে ভেসে আসে,
নামে সহিষ্ণুতার উপর!
শ্যামল আঁচলে মুখ ঢেকে কে চলে যায়-
বিমুগ্ধ পরকীয়ার মতো গূঢ় আবেগে,
দুলে ওঠে জগৎ!
বিহ্বল মুহূর্তরা থেমে রয়েছে, বাতাসের ফিসফিস সংলাপ-
"সাইয়া বোলো তনিক মো'সে, রহিয়ো না যায়ে..."!
হে বিমর্ষতা-
এ প্রত্যাশার কোনো অন্ত নেই, এ নীরবতায়
শুধুই সুরের সমর্পণ !
তবে কি বিফল অনুরাগে সে রেখে গেল
অস্পষ্ট পায়ের ছাপ- কাঁপলো পাতারা?
ফিরে ডাকার ভাষা খসে পড়ছে, সম্পর্কের বুনোট ছেঁড়া-
আলুথালু উড়ে যাওয়া শ্রাবন পাখি, মেঘ ছোঁয়- মাটি ছোঁয়,
আর দুরন্ত অভিমান তারই পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে ছুটতে-
বৃষ্টি নামে হঠাৎ, ঠাঁই পায় অশান্ত ডানা,
দেখা হয়-
আলুলায়িত কেশ, চোখ নাক ঠোঁট,
আরও যত সৌষ্ঠব, স্মরনীয় স্পর্শটুকু -
আকাশ বুজে আসে!
লুকোনো ব্যথার নীচে,
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম---
বারান্দা ভেজে, চোখ ভেজে, ভেজে বুকও-
আজীবন চেয়ে থাকা তবু স্বপ্নের উজানে-
আশ মেটে না...
মেটে না সুখও !!!

উদয় ভানু চক্রবর্তী তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব শব্দকল্পদ্রুমে যে 'আকুল অরণ্যে' পাঠক্কে নিয়ে যান সেই নিবিড় অরণ্যে বাতাসেরা কথা বলে, পাখি গান গায়। কোমল জ্যোৎস্না এসে কখন যে 'পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ' তুলে বয়ে যায় আলোছায়াময় কোনও বিলীন প্রদেশ তার বেশ অনুরণিত হয়ে চলে ওঁর কবিতা শেষ হওয়ার পরেও।
উত্তরমুছুনকোনও প্রসংশাই যথেষ্ট নয় এ কবির উৎকর্ষতাকে পরিমাপের পক্ষে।
🙏
মুছুন🙏
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লিখেছ কবিতা দুটি। প্রানবন্ত ও অনুভবের।
উত্তরমুছুন🙏
মুছুনUday take khub kach theke apollo thaka kaleen dekhechi....onar rachana soili sotti khub touch kore .
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুনভীষণ সুন্দর লেখা দাদা
উত্তরমুছুন