রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

অণুগল্প * উৎপলেন্দু পাল

 




একটি স্বপ্নের মৃত‍্যু 

 উৎপলেন্দু পাল 



বড়ো রাস্তার পাশের ঝোপে একটা ব‍্যাঙ আপন মনে পোকামাকড় খাচ্ছিল । আচমকা একটা ক্ষুধার্ত দাঁড়াশ সাপ কামড়ে ধরলো তাকে । ব‍্যাঙটা যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠলো , " ট‍্যাঁ - ট‍্যাঁ - ট‍্যাঁ ।" 

ব‍্যাঙের প্রাণ সঙ্কটে । কিন্তু তার বেঁচে থাকাটা খুবই জরুরি । মরবার আগে তার অনেক কাজ বাকি । সামনে শীতকাল , খেয়েদেয়ে প্রচুর চর্বি সঞ্চয় করতে হবে । তারপর একটা লম্বা শীতঘুম । বসন্ত শেষে জেগে উঠে আগামী বর্ষায় অসংখ‍্য ডিম পাড়তে হবে । নিজের বংশধরদের রেখে যেতে হবে এই পৃথিবীর বুকে তার পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য । মরবার ফুরসৎ কই ! 

সে প্রচুর টানাটানি করেও সাপের মুখ থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না । জীবনে সে অনেক লড়াই করেছে , কিন্তু এবারের এই অসম লড়াইটা একেবারেই অন‍্যরকম । অসম্ভব , তবুও তাকে এ লড়াই জিততেই হবে । সে লড়াই ছাড়বে না । এক দৃঢ় প্রত‍্যয় নিয়ে সে শেষ বারের মতো একটা চেষ্টায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে একটা কামড় বসালো ঠিক সাপের চোখে । তীব্র যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে সাপটি ছেড়ে দিলো তাকে । ছাড়া পেয়েই ব‍্যাঙ মারলো এক লাফ । এ লাফ তার জীবনের সেরা লাফ । যে করেই হোক তাকে বেঁচে থাকতেই হবে । লাফ দিয়ে সে এক্কেবারে মাঝ রাস্তায় । 

ঠিক তখনি কোথা থেকে একটা বেয়াড়া টোটো গাড়ি এসে চেপে দিলো তাকে । তার সব স্বপ্নগুলো চ‍্যাপ্টা হয়ে গেলো গাড়ির চাকায় । তার স্বপ্ন দেখা চোখ দুটো ছিটকে বেরিয়ে গেলো শরীর থেকে । 

আসলে ব‍্যাঙেদের সাথে এমনটাই হয় চিরকাল । কত স্বপ্নেরই যে অকালমৃত‍্যু ঘটে । 


















******************************************************************************




 উৎপলেন্দু পাল 

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে কলেজে পড়ার সময় লেখালেখি শুরু। কলেজ ম্যাগ, দেওয়াল পত্রিকা, শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থার মুখপত্র, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার দেওয়াল পত্রিকায় লেখালেখি। তারপর কর্মজীবনে প্রবেশের পর তা ক্রমশঃ বন্ধ হয়ে যায়। পুরোনো বন্ধুদের উৎসাহে আবার ফিরে আসা ২০১৮ সালে। ফেসবুক সহ বাংলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রচুর লেখা প্রকাশিত। বাংলা  একাডেমী  সহ বিভিন্ন সংস্থায় কবিতা  পাঠ করে প্রসংশিত। শিক্ষকতা ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের ফাঁকে লেখালেখি। একমাত্র প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ 'মনের উড়ান '। প্রকাশক 'নবলিপি প্রকাশন', কোচবিহার।  কোচবিহার শহরেই  বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও বসবাস।  আগামী দিনে একটি মনের মতো কবিতা লেখার অপেক্ষায় সাহিত‍্য চর্চা চলবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন