রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * প্রশান্ত মন্ডল






কবিতাগুচ্ছ * প্রশান্ত মন্ডল 


শীত

এক কোমল শব্দ!

কোথাও তাড়া নেই। কোথাও উলঙ্গ-প্রহর নেই!

কাঁঠালের শুকনো পাতারাও 

কুয়াশাকে আলিঙ্গন করে টুপটাপ ঝরে পড়ে সাথে


পৃথিবী জুড়ে কেমন এক সবুজের ছোঁয়া লেগে থাকে 

মাঠে-ঘাটে সর্ষেফুলের রঙ-ঘ্রাণ-উৎসব

সঙ্গীহীনের কাছে মন কেমনের গন্ধটাও

কোলবালিশের ঘুম!


ঠিক সন্ধ‍্যের আগে

বুকের খুব কাছের কিছু চেনা গানের সুর

বসন্তকে ডেকে বেড়ায় নদীতীরে.. তা ঐ পথিক জানে।



বাঁধাকপি

বাঁধাকপি দেখলে শীতকালের কথা মনে পড়ে যায়

অথবা শীত এলেই বাঁধাকপির ছড়াছড়ি..

একথা আজকের শিশুদেরও অজানা নয়

অন‍্যদিকে, এক থালা গরম খিচুড়ি আর দুটো বেগুন ভাজা

ঠোঁটে জল নিয়ে আসে!

আমরা শীতকাল বলতে এটুকুই বুঝলাম?


কিন্তু যাদের ঘরের একমাত্র সৃষ্টিশীল অভিভাবক 

শীতের রাতে মরে গেল অভাবে 

তাঁর অন্তিমদিনের নেমতন্নে বাঁধাকপির ঘন্ট 

পাতে নেবার সময় শুধু এটুকু জিজ্ঞাসা করো তাদের..

'শীতকাল কাকে বলে?'

উত্তর পেয়ে যাবে...











বাবুই পাখি

শীত এলেই দেখি,

বাবুই পাখিরা কেমন প্রাণপণে কাজে লেগে পড়েছে।

তখন ওদের চোখে ঘুম থাকে না বোধহয় 

সারা শহর, সারা গ্রাম আর ধানের জমি ঘুরে 

ঘর বাঁধার সরঞ্জাম কুড়িয়ে নিয়ে আসে ওরা

যেগুলো তুমি পায়ে মাড়িয়ে চলো

অথবা ঝেটিয়ে ফেলে দাও দূরে 


ওরা ওতেই গুছিয়ে নেয় স্বপ্ন

বেঁধে নেয় শীতের ঘর

শিশুর জন‍্য খাবার এনে দেয় মাঠ চষে 

আর আমরা ল‍্যাম্প পোস্টের মত দাঁড়িয়ে থেকে 

চেয়ে চেয়ে শুধু দেখে যাই....


শীতের কান্না

আমি শীতের রাতকেও কান্না করতে দেখেছি

পথের মোড়ে অথবা নর্দমার পাশে

ঠিক শীতার্ত রাতগুলোয়। খিদের জ্বালায়

তুমি দেখনি বোধহয় 

দেখলে, পাথর ঠুকে হলেও আগুন জ্বালাতে

মোড়ের চায়ের দোকানগুলো থেকে দু-কাপ চা আর 

অন্তত একটা পাউরুটি কিনে এনে খাওয়াতে 


নইলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নিজের উষ্ণ বিছানায় 

ঠিক যেভাবে অন‍্যেরা পাশ কাটিয়ে চলে যায় 

আর সকাল সাতটায় তোমার কোমল ঘুম ভাঙার পর

খবরের কাগজ আর কফি হাতে নিয়ে.. 

'আহা!', 'উহু!' স্বরে সমবেদনা জানাতে...!


সর্ষেফুল

শব্দটির ভেতর এক না বলা সুখ লুকিয়ে আছে। যেটা কেবলই একাত্মে অনুভূত হয়, যখন দু-চোখের সামনে সর্ষেফুলের সমুদ্র। গাছে গাছে পাখির ডাক, উড়ন্ত ফড়িং আর মধু আহরণকারী মৌমাছির ঝাঁক দেখলেই তা টের পাওয়া যায়। ঐ নিরিবিলি মুক্ত পরিবেশে আর মৃদুমন্দ বাতাসে তখন একটা আমি'র খোঁজ পাওয়া যায়। যেই মানুষটি তখন আর নিজেকে ছাড়তে চায় না। ইচ্ছে হয় ওই সর্ষেক্ষেতের খুব কাছেই একটা ঘর বেঁধে নিই নিজের সাথে। আর কাউকে প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। নিজেকে যে অত সহজেই বেঁধে ফেলা যায় না। না বারোমাস সর্ষেফুলের প্রেম খুঁজে পাওয়া যায়। এ জীবন বড়ই ধাঁধাময়। কেবলই দু-চোখে সর্ষেফুল। সুখও তাই। এই আছে, এই নেই। তবু মানুষ স্বপ্ন দেখে। তবু মানুষ সুখী হতে চায়। কিন্তু শীতকাল মানুষের জীবনের বারো মাসে ঠিক একবার করে আসে.. তার কোনও দায়বদ্ধতা নেই!











*******************************************************************




প্রশান্ত মন্ডল

পিতা- লক্ষীকান্ত মন্ডল ও মাতা- কিরণবালা মন্ডল। ভারত, পশ্চিমবঙ্গ তথা শিলিগুড়ি শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগরে জন্মগ্রহণ এবং স্থায়ী বাসস্থান। জন্মের কিছুকাল পরই মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং ধীরে ধীরে অভাব-অন্টনের মধ‍্যে এগিয়ে চলার পথ তথা জীবন-বৃত্তান্ত। লেখার আগ্রহ তথা গুণী ও শ্রদ্ধেয় মানবদের জীবনী পড়বার ঝোঁক শৈশব থেকেই। প্রথম লেখার হাতেখড়ি বিদ‍্যালয় জীবনে এক তরুণ কবি তথা স্কুল শিক্ষককে দেখে। প্রথম আত্মপ্রকাশ "মুখচ্ছদ্ম" নামক আঞ্চলিক পত্রিকার দ্বারা। এরপর "শুকতারা" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, যৌথ সংকলন, ই-সংকলন, ই-ম‍্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশ। লেখালেখি ছাড়াও পাশাপাশি চলতে থাকে শিল্প-কর্ম, সঙ্গীত চর্চা, নাটক-থিয়েটার, অভিনয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যকলাপও চলতে থাকে সুযোগ পেলে। আর এই পরিমিত জীবনের যা কিছু দেনা-পাওনার গল্প তা স্বর্গীয় পিতা-মাতার প্রতিই উৎসর্গিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন