শর্মিষ্ঠা মিত্র সেনগুপ্ত * দু’টি কবিতা
দাগ
সবজে গালচে পাতা পাহাড়ের ঢাল আমাদের খুব পছন্দ
ঘর বাঁধবার অভিপ্রায়ে ইঁটের বদলে চাঙর চাঙর বিশ্বাস
পেতে দিলাম
ধৈর্য্যের ওপর স্নেহের প্রলেপ পোক্ত করলো তার দেওয়াল
কয়েক পোঁচ মায়া লেপে দিয়ে দু'জনে খিলখিল করে
হেসে উঠলাম
মাথার ওপর শক্ত করে আঁটি আঁটি খুশি দিয়ে ছাদ দিলাম।
বাড়ি বানানোর শেষ দিনে আমরা পাহাড়কে সাক্ষী রেখে
চোখে চোখ পেতে দিলাম
আমাদের ইহজন্ম- পরজন্ম এক হতে দেখে কয়েকটা
ব্লু জে গান গেয়ে অভিবাদন জানিয়েছিল।
আজ দেড় দশক পর মাটিতে ফাটল দেখে থমকে যাই
মুখ তুলে দেখি ছাদের খড়ও অনেকখানি সরেছে
আমাদের মাঝে ঝরে পড়ছে বিম্ববতী মেঘ।
অচেনা হওয়ার আগেই তাই ছুটি নিলাম
বুকের ক্ষতে আল্পনা আঁকতে আঁকতে পেরিয়ে যাব
এই পাহাড়, এই সর্পিল রাস্তা, এই রঙ হারানো আমাদের
বাড়ি - যা দিয়ে তুমি - আমি একদিন ফ্রেস্কো
বুনেছিলাম সযত্নে।
শুধু সামনের বছর যখন আমাদের বাড়ির পিছনের
বাগানে লাল রডোডেন্ড্রনের কুঁড়ি ঝাঁপিয়ে আসবে
তখন আমাকে একবারটি মনে মনে ডেকো।
ভালবাসা ম্লান হলেও আমাদের হৃদগহীনে তো তার
দাগ থেকেই যায়
- মোছা যায় কি?
প্রাপ্তি
দুধের সরের মত ফিনফিনে জ্যোৎস্না লেপে নাও চন্দনশরীরে
একে একে ঢাকা পরে কণীনিকাদ্বয়, মরুভূমি-বুক,
আলতা রাঙ্গা পায়ের পাতা
এরপর আস্তে আস্তে এসে দাঁড়াও ঘন নীল আকাশের নীচে
পেছনে পড়ে থাক তোমার ইহজীবনের পিঞ্জর
কারণ এর ঠিক তেত্রিশ মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড পর
তোমার ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে উঠবে চোখ ধাঁধানো ধূলিঝড়
নেড়ে ঘেঁটে তছনছ করে দেবে তোমার যত্নে জমানো
সোনালী সুরের রং
মায়াবী বাগানবিলাসের ফুল ছড়িয়ে পড়বে যত্রতত্র
অতন্দ্রিলা তোমার দু'চোখের উজ্জ্বল ছায়াপথে নিভে
আসবে আলো
আকুতিজলে পরবাসের সাম্পান তুমি কখনও
ডোবাতে চাওনি।
তবু এইসব ঘটনা তুমি এড়াতে পারোনা
জ্যেষ্ঠপীড়িত শুষ্ক গাছের মত তোমাকে একে একে ঘিরে
ধরবে ধূসর বিষাদ অথবা অঘোররাতের শিথিলতা।
সময় থাকতে তোমার জন্য উচিত ছিল -
তোমার আঁজলায় যতটুকু জল লেগে থাকে,
ততটুকুই তোমার প্রাপ্তি।
******************************************************************







কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন