রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

উপন্যাস * বিশ্বনাথ পাল

 


 


[ 'স্বরবর্ণ * ১২ সংখ্যা থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বনাথ পালের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বামনের চন্দ্রাভিযান'। উপেক্ষা, অনাদর আর দারিদ্র্যের তীব্র দংশনজ্বালা দাঁতে দাঁত চেপে, একটি যুবক কী ভাবে একক নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে জীবনের সাফল্য ছিনিয়ে আনে, এই উপন্যাস তারই জীবন্ত আখ্যান। লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের বেকারত্বের জ্বালার বাণীরূপই শুধু নয়, তা থেকে উত্তরণের অমোঘ বিশল্যকরণীও বটে এই উপন্যাস।]


বামনের চন্দ্রাভিযান 

পর্ব * নয় 

বিশ্বনাথ পাল

  তেরো 

মাঝেমধ্যে গীতা পড়তাম। গীতা পড়ে মনে হত নিষ্কাম কর্মের সাধনাই মানুষের জীবনে উন্নতির সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। কর্মফল সম্পর্কে সন্দেহ আমাদের আন্তরিক কর্মপ্রচেষ্টা্র প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ‘কর্মেই তোমার অধিকার, ফলে নয়’ মনে রেখে কাজ করতে পারলে ফল মনে হয় ভালই হয়।

সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাগলের মতো সমস্ত পরীক্ষা টার্গেট করতাম না। আমার মূল লক্ষ্য ছিল পিএসসির তিনটি পরীক্ষা— ডবলুবিসিএস, মিসসেলেনিয়াস এবং ক্লার্কশিপ, এছাড়াও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসতাম। এদের মধ্যে পিএসসির প্রথম দুটিতে  বসার ন্যূনতম যোগ্যতা গ্রাজুয়েট আর তৃতীয়টির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক। স্কুলে তড়িৎস্যার ভৌতবিজ্ঞান পড়ানোর সময় কার্য পড়াতে গিয়ে বলেছিলেন আমরা যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করি সেই পরিমাণে কার্য উৎপন্ন হয় না, কিছুটা ঘর্ষণজনিত কারণে ব্যয় হয়। স্যার উদাহরণ টেনে বলেন, মাধ্যমিকে তোরাও যদি স্টার পাওয়ার লক্ষ্য রেখে পরীক্ষায় বসিস, ফার্স্ট ডিভিশনটা নিশ্চিত হবে এইসব স্মরণ করে আমিও ভাবতাম, তালিকায় ডবলুবিসিএস থাকলেও তা যেন অনেকটা লক্ষ্যের সর্বোচ্চ মাত্রা বা প্রচ্ছন্ন লক্ষ্য। মূল লক্ষ্য অন্তত একটা কেরানির চাকরি নিশ্চিত করা। এমন উদাহরণও সহজলভ্য ছিল— মাস্টার ডিগ্রি আছে, পিএইচডি আছে, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পাশ করে একটা ক্লার্কের চাকরিও পায়নি। ফলে কেরানির কাজ নিশ্চিত হলে কপালে থাকলে নিশ্চয়ই আরও উপরে ওঠার দরজা খুলে যাবে। আবার এমন ভাবনাও গ্রাস করত যে একদিন এত বড় হব যে আমার মাথা এভারেস্ট স্পর্শ করবে। আমাকে যারা ছোট করছে, অবজ্ঞা করছে, তারা ঘাড় বেঁকিয়ে দেখবে। আর আমার বর্তমান অবস্থান যেন খাদের গভীরে। অন্ধকারে মাথা ঝুঁকিয়ে নাগাল পাওয়া ভার। কোথাও এসব বলতাম না। তবে এই আত্মবিশ্বাসের চোরা স্রোত মাঝেমধ্যে কবিতায় চুঁইয়ে নামত।

এভারেস্টের কথা যখন উঠলই বলি, আমার চাকরি পাওয়ার প্রচেষ্টাকে মনে মনে মিশন এভারেস্ট  বলে কল্পনা করতাম। এভারেস্ট কেন? যে সময়ের কথা বলছি তখনও পর্যন্ত কোনও বাঙালি অভিযাত্রীর এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড নেই। মানে সত্যব্রত দামের নাম  তখনও সাধারণ মানুষের অজানা। এভারেস্ট জয় বেশ ঝক্কির ব্যাপার। তার জন্য দিনের পর দিন অধ্যবশয়, অনুশীলন, পরিশ্রম, সাহস এবং আর্থিক আনুকূল্য লাগে। তাহলে এই আপাত অসম্ভব সম্ভব হতে পারে। হতে পারে, কারণ হবেই যে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই, মাঝপথে কেউ তুষারঝড়ে প্রাণ হারিয়ে চিরতব্রে বরফের রাজ্যে হারিয়ে যেতে পারে। অতএব এভারেস্ট জয়ের জন্য একজন অভিযাত্রীর অন্তরে যে নিষ্ঠা একাগ্রতা দরকার, পরিবেশের সঙ্গে লড়াইয়ের মানসিকতা দরকা্র আমার মধ্যেও তার আগমণ ঘটুক চাইতাম। আসলে এভারেস্ট জয় অনেক  বড় ব্যাপার, সরকারি চাকরির পাওয়ার সঙ্গে কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু আমার মতো সুখী অলস প্রকৃতির মানুষকে এই কল্পনা তাতাত। কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বয়ে আনত গরিবের এভারেস্ট মিশনের পালে। এমনিতে সরকারি চাকরি খুব দুর্লভ একটা ব্যাপার। লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় বসে কিন্তু শূন্যপদ হাতে গোনা। ফলে কার কপালে যে শিকে ছিঁড়বে, সেটা ভেবেই আর্ধেক পরীক্ষার্থী হতোদ্যম হয়ে পড়ে। আরও খেয়াল করে দেখলাম অনেকেই ভাগ্য পরীক্ষার জন্য বসে। আবার যতজন পরীক্ষার্থী ফর্ম পূরণ করে তার একাংশ পরীক্ষা হলে উপস্থিত হয় না। সুতরাং লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে আসলে আমার প্রতিযোগী নয়। আমার প্রতিযোগী বড় জোর কুড়ি-তিরিশ বা চল্লিশ হাজার ছেলেমেয়ে, যারা সরকারি চাকরিকে পাখির চোখ করে দিনরাত পড়াশোনা করছে। ভাগ্য পরীক্ষার থেকে পড়াশোনায় তাদের বিশ্বাস। তাদের অনেকের যেমন খাওয়া-পড়ার চিন্তা নেই, বাবা-মা উচ্চ প্রতিষ্ঠিত, আবার একাংশ খুব কষ্ট  করে আমার মতো টিউশনির টাকায় পোষ্টাল অর্ডার কেনে। অনেকেই ভাল কোচিং ও কলকাতার উপযুক্ত পরিবেশের কারণে গ্রাম, মফসসল ছেড়ে মেসবাড়িতে আশ্রয় নিয়ে পড়াশোনা চালায়। বাবা মাসে মাসে টাকা পাঠায়। আমার অবশ্য রাতদিন খিল আটকে পড়াশোনা করার কোনও সুযোগ ছিল না। কারণ টিউশনি, স্কুলে পড়ানো। জীবন আগে। কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্নটাকে কিছু দিনের জন্য অনুধ্যানের বিষয় করতে চাইলাম। টিউশনি পড়াতে গেলেও সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতা মূলক পড়ার ম্যাগাজিন রাখি। ছাত্রছাত্রী যে সময় উত্তর লেখে আমি ম্যাগাজিনে চোখ বুলাই। অধিভাবকরাও আমাকে এঅবস্থায় দেখে ফাঁকি মারছি ভাবত না। সাইকেল লিক হলে পর সারাইয়ের দোকানে সাইকেল জমা দিয়ে পাশের টুলে বসে যতক্ষণ না সারানো হয়, একটু পড়ে নিই। রোজ দুটি করে খবরের কাগজ রাখি—একটা বাংলা, একটা ইংরেজি। সব পড়া হয় না, তবে অনেকটা পড়ি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর থেকে কোন প্রশ্ন সামনের পরীক্ষায় আসতে পারে তা আগাম আন্দাজ করে একটা বড় খাতায় তার পেপার কাটিং কেটে লাগাই আঠা দিয়ে। বেশ শ্রমসাধ্য কাজ। কিন্তু ভাল লাগত। আর সরকারি চাকরির পরীক্ষার সে অর্থে কোনও সিলেবাস তো হয় না, একটা বিষয়ের আউট লাইন দেওয়া থাকে, তার মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকে। আমার ভাল লাগত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর হালচালের খবর রাখতে। মাঝেমধ্যে পেপার কাটিঙের খাতা উল্টে পাল্টে দেখতাম। ফলে ছবিগুলিও স্মৃতিতে গেঁথে যেত। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কে বা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নাম কী—তা তাঁদের ছবি সমেত মনে পড়ে যেত। কিন্তু আমার চাকরির  প্রস্তুতি আমার বাবার মনে কোনও আশার সঞ্চার করেনি। বাবাকে বলতে শুনেছি, ও  পড়ে নাকি? রাত্রিবেলা একটু খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখে, এই যা। বাবা নিজে পড়তে পারত না এই আফশোস বাবার মধ্যে খেলে বেড়াত— অনুভব করতাম। বাবাও মাঝেসাঝে পেপার নেড়েচেড়ে ছবি দেখত। হয়তো এত কিছু পড়ার জগত অগোচরে থেকে যাওয়ার বেদনা জাগত। বাবা শুধু ছবির মতো নামটুকু সই করতে পারত। দেশভাগের পর যখন এদেশে এসে বা্বাকে স্কুলে ভর্তি করা হল, সহপাঠীদের   তুলনায় বাবার বয়স অনেকেটাই বেশি। দু-চার দিন পরে লজ্জায় আর স্কুলের পথই মাড়াল না। বড়দের শুভাকাঙ্খী শাসনেরও অভাব ছিল। মা লেখাপড়া জানে। ক্লাস ফোর পাশ।  তাতেই মা আমার প্রথম শিক্ষাদাত্রী। রান্নাঘরে ছোটবেলায় মা’র কাছে  চটের বস্তা পেতে পড়তে বসতাম। চাইলে মা কি বাবাকে একটু পড়াতে পারত না। আমার প্রস্তুতিতে বিশ্বাস না থাকলেও জীবনে একবার বাবার গর্বের কা্রণ হয়েছি। ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়ি, সেখানে সপ্তাহে একদিন করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ক্লাস নিতে আসতেন। বাবাকে সে খবর জানাতে বাবা রাষ্ট্র করতে বাকি রাখেনি, ও অর্থমন্ত্রীর কাছে পড়ে।

তো, যাইহোক, স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি তখন, আমাদের ক্লাসে পড়াতে এসেছিলেন দেবজ্যোতি স্যার নামে একজন ইংরেজির শিক্ষক। পদবি মনে নেই। ভীষণ শান্ত, সুদর্শন। কিন্তু যেন ব্যক্তিত্বের অভাব। বড্ড চুপচাপ। স্যার ক্লাসে ঢুকলে আমরাও তাঁর উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে আমাদের হইচই, মাছের বাজারের চিৎকার জারি রাখতাম। স্যার অসহায়ের মতো তাকাতেন, ক্লাসে পায়চারি করতেন। একদিন স্যার অতিষ্ঠ হয়ে মুখ খুললেন। আমাদের মানসিক ভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টায়। স্যার সেদিন কী বলেছিলেন হুবহু মনে নেই। কিন্তু সেদিনের পর থেকে শ্রদ্ধায় স্যারের ক্লাসে আমাদের হইচই গণ্ডগোল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্যার বলেছিলেন কালাহাণ্ডির সেই মা-কে আপাত দৃষ্টিতে হয়তো ‘মা’ বলেই মনে হবে না, যে কিনা নিজের সন্তানকে বেচে দেয়। কিন্তু সেই মায়েরও মাতৃত্ব খুঁজতে গেলে যেতে হবে সেই মন্দিরে যেখানে সে মাথা কুটে বলছে, ঠাকুর, আমার সন্তান যেন খেয়ে পরে বেঁচে থাকে। স্যার বলেছিলেন পাশ করার জন্য সারা বছর পড়ার কোনও দরকার নেই। কিন্তু পরীক্ষার আগের একমাস এমন ভাবে পড়তে হবে যেন ঘুমের মধ্যেও পড়ার স্বপ্ন আসে, কোনও ফাঁকিবাজি রাখা চলবে না—আর তাতে এমন আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে যে যদি একজনও কেউ পাশ করে তবে আমি করব। স্যারের এই কথাগুলো মাঝেমধ্যেই মাথার ভিতর টেপ রেকর্ডের মতো বাজত, আমাকে উদ্বুদ্ধ করত। আমি সেই আত্মবিশ্বাসের সন্ধান মনে চালাতাম।

***

খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে একদিন একটি ছোট্ট প্রতিবেদনে চোখ আটকে গেল। লিখেছে অরিন্দম চৌধুরির নতুন উপন্যাসের থিম—You should hope for the best and be prepared for the worst. বাহ! বেশ ভাল লাগল কথাটা। বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়—সর্বোত্তম ভালর আশা করলেও সব থেকে খারাপটার জন্যও প্রস্তুত থেকো।  টুকে রাখলাম কথাটা। কোথাও কিছু ভাল লাগলে ডায়রিতে টুকে রাখতাম। কারও থেকে ধার নিয়ে পড়া বইয়ের ভাল লাগা পংক্তিও সেখানে স্থান পেত নিজের বই হলে তো দাগিয়ে পড়ি। কোনও পরীক্ষার জন্য নয়। নিজের জন্য। আমার ক্ষেত্রে এই রকম নীতি মেনে চলা যেতে পারে। গীতার নিস্কাম কর্মের বিকল্প হিসাবে। কাজ করে সম্পূর্ণ নিস্কাম হওয়া যেন অনেক সাধনার বিষয়। তার চেয়ে সব চেয়ে ভালটা চেয়ে প্রাণপণে খেটে গেলাম, কিন্তু খারাপ ফলের জন্যও মনকে প্রস্তুত রাখলাম। কারণ ফলাফল তো আমার হাতে নেই।

সুদীপের একটি কথা এক বন্ধুর মুখে শুনে বেশ খারাপ লাগল। একদিন বাবাই এসেছিল আমাদের বাড়িতে। আমার কেমন কী পড়াশোনা এগোচ্ছে খোঁজখবর নিতে। বাবাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা পরিচয় সুদীপের মাধ্যমেই। বাবাই নিজেও রাজ্যসিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিকে সুদীপদের বাড়িতে কেমিস্ট্রি পড়ার সময় বাবাইও আমাদের সঙ্গে পড়ত। বাবাই বলল, সোমনাথ , তোকে একটা কথা বলছি, তুই শোনার পর কিন্তু মন কারাপ করবি না, কেমন?

না, করব না, কী কথা বল?

সুদীপ তোর সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে একটা বাজে কথা বলেছে।

কী বাজে কথা সেটা তো বলবি?

বলেছে সত্যজিতের সরকারি চাকরি হবে কিনা সন্দেহ আছে, ওর অ্যাটিচ্যুডে প্রবলেম আছে।

বলেছিলাম বটে, কিন্তু মন খারাপ হল। তবে এতো আমার কাছে নতুন নয়, আমার প্রতি নিকট-দূরের মানুষরা প্রকাশ্যে বা গোপনে অনাস্থা জ্ঞাপন করবেন এটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে। মানুষ সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয় না, সাফল্যকে দেয়। আমি যদি জীবনে কিছু করে এদেরকে ভুল প্রমাণ করতে পারি, সেটাই আমার সার্থকতা হবে। আমার মনে পড়ে গেল মাস তিনেক আগে বিবাহ-বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক বন্ধুর বাড়িতে গেটটুগেদারে সুদীপের করা মন্তব্য। কথা প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে বলেছিল, সোমনাথ  যখন দাঁড়াবে, ওর আর দাঁড়াবে না।

কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থের বিষ আমার বুকে জ্বালা ধরালেও চুপ করেই ছিলাম। কী বলতাম? ঝগড়া করতাম? দিন যদি আসে সবাই একদিন জবাব পেয়ে যাবে।

বাবাই নিশ্চয়ই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলেনি। কী লাভ বলে ওর। কিন্তু সুদীপকেও ক্ষমা করেই দিলাম। রবীন্দ্রনাথের একটি কথা মনে পড়ে গেল। মৈত্রেয়ী দেবীকে চিঠিতে লিখছেন, ‘যদি বাহিরের কোনও ক্ষুদ্রতা তোমাকে পীড়ন করে থাকে তবে তার কাছে পরাভব স্বীকার করতে লজ্জাবোধ কোরো’ আরেক জায়গায় বলছেন, ‘যাদের মন অতিরিক্ত স্পর্শকাতর, তারা সবটা শোনে না, সবটা জানে না। সবাই তাদের এড়িয়ে চলে না, কাজ নেই। বন্ধুর বন্ধুত্ব তাদের প্রতি মঙ্গলদায়ক হয় না’ 

সুদীপও কাটাকল থেকে ইকনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রি করার পর দিল্লির একটা ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে এমবিএ করে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছে। তবে অরিন্দমদা বলে যে সুদীপ যেখান থেকে এমবিএ করেছে, তা টাকার জোরে, ওকে কোনও এন্ট্রাস পরীক্ষা দিতে হয়নি। সে যাইহোক, বেকারত্ব কী সুদীপ জানে না, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কোনও সৌভাগ্য ছিনিয়ে নেওয়ার প্রকল্পে  আমার মতো ওকে নাম লেখাতে হয়নি। আর আমাদের দেশে টাকা থাকাও তো একটি যোগ্যতা। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলিজিবিলিটি কন্ডিশন। উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, সাদা চামড়া-কালো চামড়া, বুদ্ধিমান-বোকা এই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে একটি মাত্র শ্রেণিভেদই যেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একদলের হাতে টাকা আছে, আরেক দলের হাতে নেই, ইংরেজিতে যাকে বলে Haves and Haves Not.

ফুটপাত থেকে না কলেজস্ট্রিটের কোনও দোকান থেকে কেনা একটা বই আমার মধ্যে বেশ ইতিবাচক মনোভাবের সঞ্চার করল। বইটির নাম—‘তুমিও জিতবে’। শিব খেরার লেখা ‘You Can Win’-এর বাংলা অনুবাদ। সারা বিশ্বেই বইটি আদৃত শুনেছি। বেশ খুঁটিয়ে দাগিয়ে বইটা পড়লাম। সহজে হতাশ না হওয়ার বেশ কিছু উদাহরণ আছে। তার একটি এরকম—একজন আচার বিক্রেতা আচারের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন। এক হাজারটা বাড়ি ঘোরার পর প্রথম ক্রেতার সন্ধান পান। এই ভদ্রলোকটির আশাবাদকে স্যালুট করতেই হয়।

এইসব পড়ে আমারও বোধোদয় হল, সরকারি চাকরির পরীক্ষার পথ বেছেছি যখন পরীক্ষা দিয়ে যাব, যে যা-ই বলুক চাকরি পাওয়ার আগে বা বয়সের বেড়া টপকানোর আগে থেমে যাব না।

অবশ্য আমার পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টা যে সকলে ভাল চোখে দেখত তা নয়। তারা চাইত অন্যভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

একবার পাড়ারই একটি ছেলে পার্থ একটি পঞ্জি স্কিমে আমাকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে নামার প্রস্তাব দিল। শুনেই নাকচ করে দিলাম। ও বলল, এটা একটা ভাল রোজগারের পথ হত তোমার। কিছুই সেরকম করতে হত না। শুধু আরও কিছু লোককে হুইস্পারিং ক্যাম্পেন করে বুঝিয়ে এই ব্যবসায় নামাতে হত, যাতে চেনটা সচল থাকে। তারপর তোমার কাজ না করলেও চলত। চেনটা সচল থাকলেই কিছুদিন অন্তর অন্তর চেক পেতে। 

স্বভাবতই কাজ না করে চেক পাওয়ার গল্প আমার ভাল লাগেনি। ওর বক্তব্য অনুসারে সাড়ে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে আমি প্রথমে পাব একটি হায়দ্রাবাদের পার্ল ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের একটি সিডি। তারপর এই দ্রব্যহীন ব্যবসায় নেমে কী মহতী উন্নতি অপেক্ষা করছে মানুষকে বুঝিয়ে শৃঙ্খলে যুক্ত করতে হবে।

আমি রাজি হলাম না দেখে পার্থ আমার প্রতি বেশ বিরক্ত হল। কিছুদিনের মধ্যে পার্থ একটি বাইক কিনল। শুনলাম এটা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নির্দেশেই ওকে কিনতে হয়েছে লোন নিয়ে। বুঝলাম ব্যবসায় যে প্রচুর আমদানি হচ্ছে তা মানুষকে বোঝানোর জন্য কিছু তো ঠাটবাটের দরকার। নাহলে লোকে আকৃষ্ট হবে কেন?

সাড়ে সাত হাজার টাকা জোগাড় করতে পারাটাও আমার কাছে অসম্ভব ছিল হয়তো। কিন্তু সেজন্য আপশোশ হয়নি একফোঁটা। সহজে টাকা  কামানো তো আমার লক্ষ্য নয়। শুধু অর্থ নয়, অর্থের সঙ্গে চাই সম্মান। সরকারি চাকরি পাওয়ার যে প্রকল্পে নিয়োজিত হয়েছি, তাতে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু না করলে নয়, তা-ই করব। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত করার খেলায় মাতব না। সহজে পয়সা রোজগারের রাস্তায় পা বাড়াব না। ‘রাধারাণি’-র বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় নিজের সম্পর্কে বলাই যায়—‘উহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।’

 

চোদ্দ

 

এরই মধ্যে বাবা গুরুতর অসুস্থ হল। যমে-মানুষে টানাটানি। পার্কসার্কাসের চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে পড়ে থাকলাম দিন দশেক। হার্টের অসুখ। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। তারপর বাবা বাড়ি ফিরল। ধুমপান বন্ধে ডাক্তারবাবুর নির্দেশ উপেক্ষা করে বাবা বিড়ি খেত। আমাদের বারণ শুনত না। আমারও তখন ধুমপানের নেশা। এক বাড়ি থেকে অন্যবাড়ি পড়াতে যাওয়ার ফাঁকে সাইকেল দাঁড় করিয়ে সিগারেটে সুখটান দিতাম। কলেজে ভর্তি হয়েই এই নেশা ধরেছিল। বেশি খেতাম না। কিন্তু তাও দিনে  চার-পাঁচটা গোল্ড ক্লেক লাগত। প্যাকেট কিনলে বেশি খেতে ইচ্ছে করবে বলে দোকান থেকে একটা করে কিনে খেতাম। আর সে সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া সুবেশা রমণীদের দেখতাম। বুকটা হু-হু করত। মনে হত এই সিগারেটের ছাইয়ের মতোই জীবন ফুরিচ্ছে যাচ্ছে। কোনও নারীসঙ্গ-লাভের মতো সক্ষমতা কি এ-জীবনে অর্জন করতে পারব! বাড়িতে অনেক রাতে আমার বিড়ি নেশা পেয়ে বসত। আমার স্টক বাড়ন্ত হলে আলনায় ঝোলা বাবার পাঞ্জাবির পকেট হাতড়ে বিড়ি চুরি করে খেতাম।আজ মনে হয় ডাক্তারের বারণ অগ্রাহ্য করে বাবা যে বিড়ি খেত এতে আমারও যেন প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। বাবা বিড়ি খেত বলেই তো রাতে পাঞ্জাবির পকেট হাতড়ে আমিও বিড়ি পেতাম। কই এটা নিয়ে তো পরদিন হুলুস্থুলু  করিনি। চিত্তরঞ্জন থেকে বাবা ফেরত  আসে মে-র মাঝামাঝি। তারপর তিন-চার মাস বাবা ভাল ছিল। শরীর যে আবার খারাপ হতে পারে আশঙ্কা ছিলই। বাবাকে শ্যামাপদ  চৌধুরির  বাড়ির দুর্গা ঠাকুরটা বানাতে বারণ করলাম। প্রচন্ড ধকলের কাজ বাবার শরীর নিতে পারবে না মনে হয়েছিল। কিন্তু বাবা যখন কিছুতেই আমার বারণ মানতে রাজি হল না, এক কঠিন কথা আমার মুখে উচ্চারিত হল, তুমি যদি ঠাকুরটা বানাও আমার মরা মুখ দেখবে। মুহূর্তের অসতর্কতায় কত কঠিন কথাই তো আমাদের মুখ থেকে বেরোয়। বাবাও যে কতবার রাগের মাথায় আমাদের মুণ্ড কেটে গঙ্গায় ভাসাতে চেয়েছে! তো, আমার ওই কঠিন কথা শোনার পর কোনও সংবেদনশীল বাবা হলে নিশ্চয়ই দূর্গা ঠাকুরটা বানাত না। কিন্তু আমার বাবা তো কিছুতা গোঁয়ার গোবন্দ। সূক্ষ্মতার নিদারুণ অভাব। কিন্তু ভগবান বোধহয় পিতাকে ছেলের মরা মুখ দেখা থেকে রক্ষা করার জন্যই পিতার হাতে ঠাকুর বানাবার কাজ সম্পূর্ণ করলেন না। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তৃতীয়ার দিন রাত দশটা নাগাদ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা শুরু হল বাবার। আমি ছিলাম এক বন্ধুর বাড়তে আড্ডারত। সাড়ে দশটা নাগাদ ফিরে দেখি বাবার অবস্থা সঙ্গীন। বড় ঘরের মেঝেতে বাবাকে শোয়ানো হয়েছে। কিন্তু বাবা স্থির থাকতে পারছে না। এপাশ ওপাশ করছে আর খালি ককাচ্ছে। ছুটলাম একটা ট্যাক্সি ডাকতে। আমার ভান্ডারে তখন মাত্র চারশো টাকা সম্বল। মাসের শেষলগ্ন। স্কুলের মাস ছয়েকের মাইনে বকেয়া। ট্যাক্সি ডাকতে গিয়ে মনে হল একটা অ্যাম্বুলেন্স হলেই ভাল হয়। অক্সিজন দিতে দিতে যদি বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ভাল হবে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে এইচ এল সরকার রোডে লাইফলাইন নামে এক সংস্থায় গেলাম। ভাড়া জানলাম এগারোশো টাকা। কিন্তু পুরো টাকাটা আগাম পেমেন্ট না করলে অ্যাম্বুলেন্সে বাবার বিপর্যস্থ ফুসফুস অক্সিজেন পাবে না। ‘লাইফলাইন’-এর ভদ্রলোককে চারশো টাকা দিতে চাইলাম, বাকিটা পরে দেব বলি। কিন্তু কিছুতেই তিনি রাজি হলেন না। বরং কাঁচা ঘুম ভাঙানোয় বেশ বিরক্ত হলেন।

উপায়ান্তর না দেখে ছুটলাম কাছেই এক বন্ধুর বাড়ি। মোশারফ। স্কুলের বন্ধু। সরু গলি দিয়ে যাওয়ার সময় একটা কালো বিড়াল আমার রাস্তা কাটল। মা বলে কালো বিড়ালের রাস্তা কাটা খুব খারাপ লক্ষ্মণ। কিন্তু এখন অতশত ভাবার সময় নেই। একটা ট্যাক্সিতে করে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আশু কর্তব্য। যথেষ্ট টাকা নেই বলে অ্যাম্বুলেন্সের আশা ছেড়েছি। মোশারফকে বললাম, তোর কাছে কিছু টাকা থাকলে নিয়ে চল।

ও দু-হাজার টাকা নিয়ে বেরোল। রাত বারোটা নাগাদ ট্যাক্সি পেলাম। তারপর বাড়ি ফিরে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে বিস্তর ছোটাছুটির পর যখন হাসপাতালের বেডে বাবাকে শোয়ানো গেল ঘড়িতে তখন দেড়টা। ডাক্তারবাবু দেখে বললেন, প্রায় শেষ করে এনেছেন। ওষুধ লিখে দিলেন। আমি নীচের দোকান থেকে তা কিনে নিয়ে গেলাম। বোতলের জল গলায় ঢেলে বাবাকে ওষুধ খাওয়ালাম। কিন্তু খানিক ক্ষণের মধ্যেই বাবার চোখ উল্টে জিভ বেরিয়ে দেহ নিথর হয়ে গেল। বলাইদা, আমার জামাইবাবু বলল, সমু সব শেষ। ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটা।

চার ঘণ্টা না কাটলে বডি ফের পাওয়া যাবে না। নীচে নেমে আমি আর মোশারফ বসে বিড়ি খেলাম। জুতো পেতে বসে অপেক্ষা করতে থাকি রাত শেষ হওয়ার।  আমার জীবন থেকে ‘বাবা’-র যে চিরতরে বিদায় ঘটে গিয়েছে মালুম পেলাম না।

সকাল হলে পর বাবাকে চারতলা থেকে নামাতে বেশ বেগ পেতে হল। ওঠার সময় বাবার লিফট ব্যবহারের অনুমতি ছিল। ফলে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু নামার সময় প্রাণহীন বাবার সে অনুমতি নেই। স্ট্রেচারে শায়িত বাবাকে আমি, মোশারফ, বলাইদা ও গৌতম, আমার জ্যাঠতুতো ভাই— চারজনে সিঁড়ি দিয়ে নামাতে লাগলাম। খালি ভয় করছিল এই বুঝি বাবা পড়ে গেল। বাবা যাতে না পড়ে যায় তাই মা কালীকেও ডাকলাম মনে মনে। যদিও স্ট্রেচারে শায়িত বাবা ছিল না, বাবার নিথর দেহ। পরে ভেবে অবাক হয়েছি এত সামান্য কারণে কেউ মাকালীকে ডাকে? বাবাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তো ডাকতে পারতাম।

একটা ম্যাটাডোর ভাড়া করে বাবার বডি নিয়ে আসা হল বাড়িতে। উঠোনে বাবাকে শোয়ানো হল। পাড়ার বহু মানুষ এবং স্থানীয় ক্লাব থেকে বাবার মরদেহে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হল। মাথার কাছে ধূপ জ্বালনো হল। দেখে মনে হল লেখাপড়া না জানা নিরীহ সাদামাটা মানুষটাকে লোকে পছন্দই করত। মা কেঁদেছিল কি? ভাল মনে নেই। কিছুক্ষণ পরে খই ও খুচরো ছড়াতে ছড়াতে ম্যাটাডোরে করে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হল গড়িয়া শ্মশানে। গড়িয়া শ্মশানে আমি আর প্রিয়ব্রত একবার এসেছিলাম বিনা কারণে। আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত শ্মশান-চত্বরে শ্রীমন্ত সওদাগরের প্রতিষ্ঠিত একটি মন্দির। দুপুরের খা খা রোদ্দুরে, নির্জনতায়  মন্দিরটি প্রথম বার দেখে বেশ গা ছমছম করেছিল নোনাধরা আটচালা মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে এক প্রাচিন বট। ভিতরে মা কালীর ছিন্নমস্তা রূপ। নিজেই নিজের রক্তপান করছে।

 

বাবার শরীরটা যখন ট্রলিতে শুইয়ে ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে ঢোকানো হল, তাকাতে পারিনি। মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম।

বাড়ি ফেরার পর যত সময় গড়াল, বাবার অভাব টের পেতে থাকি। মাথা কুটলেও আর বাবাকে দেখতে পাব না। জ্বলজ্যান্ত মানুষটা নেই হয়ে গেল, স্মৃতি হয়ে গেল। কেমন এক অদ্ভু ভয় জাগানো অনুভূতি টের পেলাম। মানুষের থাকা আর না-থাকার মধ্যে মৃত্যুর পার্থক্য।  ভয় পেতে লাগল মায়ের জন্য। মা যেন অনেক অনেক দিন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকে।

পরদিন খবর পেয়ে স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক আমাদের বাড়িতে এলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড স্যার অমলেন্দুবাবু। আমার বকেয়া ছ’মাসের মাইনে দিলেন। সঙ্গে আরও এগারোশো টাকা। এই টাকাটা আমি নিতে চাইনি। কিন্তু অমলেন্দুবাবু বললেন যে এটা তাঁরা সবার ক্ষেত্রেই করে থাকেন। টিচাররা চাঁদা তুলে দেন।

আমার ভাল লাগছিল না। কিন্তু মায়ের কথায় নিতে হল।

বাবার কাজের টাকা জোগাড়ের চিন্তা ঘুচল। তবে মনে হল, ইস! স্কুলের টাকাটা যদি  ক’দিন আগে পাওয়া যেত তাহলে হয়তো বাবাকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচানো যেত।

মা-দিদির সঙ্গে আলোচনা করে বাবার কাজে কোনও রকম ত্রুটি রাখা হল না। পাশের ক্লাবের মন্ডপ নেওয়া হল। স্কুলের শিক্ষকদের একদিন গিয়ে নেমতন্ন করে এলাম। কয়েক জন স্যার এসেছিলেন। শ্যামাপদ চৌধুরির দুর্গা ঠাকুরের বাকি কাজ সম্পুর্ণ করল আমাদের এক আত্মীয়। আমার পিসতুতো দাদা, যে চাকরির পাশাপাশি ঠাকুরও বানাত পাড়াতেই।   

 

বাবার মৃত্যুতে মনে বেশ আঘাত পেলাম। আমার গরিব বাবা বাজারে একটা টাকাও দেনা রেখে যায়নি তাঁর ছেলের শোধ করার জন্য। মানুষটা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ কী জানল না। সুখ কাকে বলে জানল না। ভাত-কাপড়ের চিন্তাতেই জীবন গেল। কোথাও বেড়াতে যায়নি। সমুদ্র কী, পাহাড় কী, অরণ্য কী জানা হল না মানুষটার। ক্ষোভে-দুঃখে আমার বুক টনটন করত। আমাকে ধনী হতে হবে। মাকে সুখে রাখতে হবে। বাবাকে পারিনি। মাকে যেন একটু আর্থিক স্বাচ্ছন্দের মুখ দেখাতে পারি।


 

*********************************************

 আগামী পর্বে 

*********************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন