রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সম্পাদকীয়




**************************************************

না-সম্পাদকীয়

স্বরবর্ণ * ২১ * শীত সংখ্যা

২৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯ * ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

********************************************************


ফেরা

দেবাশিস সাহা


"মা, শোনো শোনো--" আবেগ, উত্তেজনা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছিটকাচ্ছে তমালের গলায়। তার একটা টুকরো এসে লাগল অঞ্জলির কানে, 'কী হয়েছে কী, আনন্দে কথা আটকে যাচ্ছে যে!' একটু থেমে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'চাকরি-বাকরির পাকা খবর পেলি বুঝি!'

'তোমার খালি ওই এক কথা...'

'না তো কী, বয়সটা কী কম হল? গেল ফেব্রুয়ারিতে তিরিশ পেরোলি, কতকাল আর টিউশান পড়াবি, বল?' ছেলের মুখের দিকে অসহায় তাকান অঞ্জলি । সেই তাকানো কতটা অর্ন্তভেদী, তমাল পড়তে পারে। বাবা চলে যাবার পর নামমাত্র পেনশনটুকুই ভরসা, ডিভোর্সি বোনটাও ছেলেকে নিয়ে মায়ের ঘাড়ে। শরীরটাও মা-র চিন্তায় চিন্তায় জরাজীর্ণ। তমাল কি আর জানেনা এসব! জানে ঠিকই, তবু গলায় কৃত্রিম অভিমান টেনে বলল, ' তুমি আমার কথাটা শুনবে না তো, মা?' 

'শুনব না কেন, বল--'

আরো কাছে এগিয়ে এসে মায়ের হাতটা মুঠোয় চেপে তমাল বলল, ' মানিকের সঙ্গে বাংলাদেশ যাব, তুমি না কোরো না, মা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফিরে আসব।'

'বাংলাদেশ! কেন ? কবে আমরা ও দেশ ছেড়ে ছুঁড়ে এসছি, জমিজিরেত, বাগান, পুকুর সব...তুই তখন কত ছোট!'

'সেই ছোটবেলাটাই আর একবার খুঁজতে যাব, মা!'

'পাবি?'

'না পাই, তবু---'

'মনে কর না আমিই তোর বাংলাদেশ, আমিই তোর ভারত, আমার গায়ে তো কোনো কাঁটাতার নেই।' বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন অঞ্জলি... ছেলে কথায় কথায় বলে,---চলো মা, বাংলাদেশ ঘুরে আসি। বাপ-ঠাকুরদার ভিটে...সেই পুকুর..বাগান...বাড়ি... আর একবার দেখে আসি...। আঁচলের খুঁটে চোখ মোছে অঞ্জলি, 'তবে যা, তাড়াতাড়ি ফিরিস কিন্তু বাবা।'

তাড়াতাড়ি ফেরা হয়নি তমালের। কাকা-কাকি, জ্যাঠা-জেঠু, ছোটবেলার বন্ধু অমর, প্রদীপ, কিশোর... সবার ভালোবাসার চাপে, এক সপ্তার জায়গায় ফিরল এক মাস পরে। 

ততদিনে অঞ্জলি পাড়ি দিয়েছে কাঁটাতারহীন আকাশে, না-ফেরার দেশে।


*************************************************************

 সেই বাংলাদেশ পুড়ছে.....

*************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন