কবিতাগুচ্ছ * মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
১.
সব মানুষের নিজস্ব একটা গন্ধ আছে ।
আমি পাই । খুঁজি । হাতড়াই ---
জীবনের
আনন্দের
ভালোবাসার
সুখের
কান্নার
সবকটি গন্ধকে ছাপিয়ে মানুষই ।
সময় এভাবে সময়কে অতিক্রম করে যায় ।
নিজস্ব মানুষ না হলে সেই গন্ধ কেউ পায় না ।
নিজের করে পাওয়া তো নয় পাওয়া ।
তবু মুহুূর্ত আসে ক্ষণ আসে ।
রেশ থেকে যায় ক্ষণে ক্ষণে প্রতিক্ষণে সাড়াশব্দে ।
মানুষের গায়ে মানুষের গন্ধ পেয়ে মানুষেরা বেঁচে থাকে ।
খুঁজে চলে ----
২.
মনের গহনে শব্দ থেকে জন্ম নেয় অন্য সব শব্দ ।
প্রত্যেক জন্মের জন্য এক একটি শব্দের মাত্রা ও বিন্যাসে শস্যজমি ভরে ওঠে ।
আমাদের ঘর নেই
আমাদের শস্য নেই
আমাদের শব্দ আছে শুধু ---
আলোর শব্দটি নেই শুধু তার গতি বহুদূর যায় ,
জলের শব্দটি আছে সেও যায় বহুদূর ,
বাতাসের শব্দ আছে সেও যায় বহুদূর ।
মন যেন মানুষের সর্বাপেক্ষা দ্রুত ---
কে কোথায় কার ঘাড়ে মাথায় হৃদয়ে বসে
কেউ জানে না বলেই মনকে আমি
শেকল খুলেই রাখি আর বলি যা উড়ে যা যেখানে খুশি , যতদূর যাবি উড়ে যা সেখানে ----
মন তৈরি হয়
প্রতিদিন তৈরি করি মনের বাকল ।
প্রতিদিন মন যত্ন চায়
প্রতিদিন আমার মন একই রকম ।
ভালো রং খারাপ রং চাপিয়ে চাপিয়ে দেখি তার বদল হয় না কিছু ।
সংশোধন হয় মাত্র ।
স্বাধীন যদিও মন তবু ভারবাহী যান
মানুষ ঘুরেও আসে সেই ভ্রমণের গল্প মন
আমায় নাড়ায় কথা বলে আমি স্থির অবিচল ।
মন ভাঁজ করি পাঠ করি আহ্লাদ ঘনায়
তবু তার নিজস্বী পাঠেই মগ্ন মন ।
মনে যা যা প্রতিদিন ঘটে তাকে বলি ইচ্ছে তোর
তুই তোর সব ইচ্ছে দমিয়ে নিজের মধ্যে
পুরে রাখ নিজেকেই ----
বিষাদ আনন্দে আর আনন্দে বিষাদ যত বাড়ে
মন তত আমার নিজের হয়
আমি লিখি লিখি লিখি ----
৩.
অসম্ভব নীলরঙে অনর্গল কথা বলি শুনি
যেন জলসাঘরের মুগ্ধতা নিয়ে এক মায়া ।
কথার বাগান ও বাড়ি ----
কথা বলা আর শোনা এক জিনিস নয় ,
এও এক খেলা যেন মেতেছে নদীতে মাছ ---
যে বলে আর যে শোনে তার হৃৎপিন্ড এক রঙেরই হয় ।
সেই সব হৃদপিন্ডের বাবা ও মা এক
এমন কি ডাক নামও এক ।
কথার ঈশ্বর হই ----
কথাশ্বরী নাম নিয়ে মানুষের মুখে মুখে কথা হয়ে ঘুরি চলি
হাঁটি খাই চেটেপুটে ।
খারাপ কথায় আমি হুস হুস খেলি কখনো বা ধাপ্পা
বলে লুকিয়ে পড়তেই সে চমকে চমকে ধরে নেয় আমাকেই।
শীতলে ভেঙেছি গান ও করবী ।
খারাপ কথায় আমি চুপ হয়ে সরস্বতীকে বলি
জিভ কেটে নাও
জিভে জিভে তুমুল ঝগড়া চলে খুব মজা পাই ।
চলুক ---
অনাবশ্যক কথারা আত্মহত্যা করে বলে
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় !
অনাবশ্যক ভাবনা তার কথা কি বলবে কি বলবে তোমার সে ভারে ভর ও ভার মাপি ।
অনাবশ্যক কথায় স্নান করি মধু মেখে
কাশি হলে বকো খুব জানি
তবু মধু মাখি ।
অনাবশ্যক কথায় মধু নেই তবু সে মধুর
কথা কখনো লেখায় লেখাশ্বরী হই ।
কথাশ্বরী লেখাশ্বরী জড়াজড়ি করে কথামালা
হেঁটে যায় ব্যানারে ও বিজ্ঞাপনে ।
মানুষের হৃৎপিন্ডে রক্ত ঘুরপাক খেয়ে খেয়ে
কথার শোধন চলে রক্তের শোধন চলে
মানুষে মানুষে রক্ত আর কথা অনবরত ব্রহ্মান্ডে
শব্দ ব্রহ্ম ছোঁয় নির্জনে অগোচরেই ।
৪.
গাছে গাছে আলো থেমে আছে ।
আলোয় আঁধার খুঁজি তার মধ্যে
প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দুঃখ ভেঙে ভেঙে
কত কত জল্পনা কল্পনা কথা ।
ভাবি দিন কেটে যায় কিভাবে বুঝিনি আজো
তার মধ্যে লেখাতুর আত্মার ক্রন্দন কেউ
আমাকে পেয়েছে ! এইসব শুনলেই হাসি পায় ।
প্রতিটি লেখার জন্য পুজো করি মন্ত্র পড়ি এমন হয়ত নয় তবু
সার্ট ঝাড়া শব্দে বুঝি কেউ পরে নিচ্ছে সার্ট --- সামনে বেড়াল
তবু পাহারায় ! !
চোখ যায় আকাশেই যেখানে কালপুরুষের বিজ্ঞান নেই
যেখানে হরিতকী বন দোলে
সেখানেই ছড়িয়েছি কর্পূর কদম ।
গাছে গাছে হিম জেগে ---
হিমের বাজনা শুনে লেখায় আমার মন বসে ।
আলো হিমে এই গভীরের রাত
না আমার না তোমার তবু ---
দুখ জাগানিয়া আমায় জাগিয়ে রাখ
আরক্তিম কথা খুঁড়ে চলি
নিশ্চুপ রাতের ঘোরে রাত এসে পড়ে
মানুষের ঘরে ঘরে ---
কাঠবাদামের গাছে ধীর বাতাস জাগিয়ে রাখে
প্রথম প্রহর ---
আমি কি ছিলাম আর কি হয়েছি কি হব
এইসব অপেক্ষায় লিখে যে আঙুল ভাঙি
সেও কি আলোর জন্যে আঁধার গ্রহণ নয় ! !
*********************************************************************







কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন