রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়





কবিতাগুচ্ছ * মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় 


.

সব মানুষের নিজস্ব একটা গন্ধ আছে । 

আমি পাই । খুঁজি । হাতড়াই ---

জীবনের 

আনন্দের 

ভালোবাসার 

সুখের 

কান্নার 

সবকটি গন্ধকে ছাপিয়ে মানুষই ।


সময় এভাবে সময়কে  অতিক্রম করে যায় ।

নিজস্ব মানুষ না হলে সেই গন্ধ কেউ পায় না ।

নিজের করে পাওয়া তো নয় পাওয়া ।


তবু মুহুূর্ত আসে ক্ষণ আসে ।


রেশ থেকে যায় ক্ষণে ক্ষণে প্রতিক্ষণে সাড়াশব্দে ।

মানুষের গায়ে মানুষের গন্ধ পেয়ে মানুষেরা বেঁচে থাকে ।


খুঁজে চলে ----


২.

মনের গহনে  শব্দ থেকে  জন্ম নেয় অন্য সব শব্দ ।

প্রত্যেক জন্মের জন্য এক একটি শব্দের মাত্রা ও বিন্যাসে শস্যজমি ভরে ওঠে ।

আমাদের ঘর নেই 

আমাদের শস্য নেই 


আমাদের শব্দ আছে শুধু ---


আলোর শব্দটি নেই  শুধু তার গতি বহুদূর যায় , 

জলের শব্দটি আছে সেও যায় বহুদূর , 

বাতাসের শব্দ আছে সেও যায় বহুদূর ।


মন যেন মানুষের সর্বাপেক্ষা দ্রুত ---

কে কোথায়  কার ঘাড়ে মাথায় হৃদয়ে বসে 

কেউ জানে না বলেই  মনকে আমি 

শেকল খুলেই রাখি আর বলি যা উড়ে যা যেখানে খুশি ,  যতদূর যাবি উড়ে যা সেখানে ----


মন তৈরি হয় 

প্রতিদিন তৈরি করি মনের বাকল ।

প্রতিদিন মন যত্ন চায় 

প্রতিদিন আমার মন একই রকম ।


ভালো রং খারাপ রং চাপিয়ে চাপিয়ে দেখি তার বদল হয় না কিছু ।

সংশোধন হয় মাত্র ।


স্বাধীন যদিও মন তবু ভারবাহী যান 

মানুষ ঘুরেও আসে সেই ভ্রমণের গল্প মন 

আমায় নাড়ায় কথা বলে আমি স্থির অবিচল ।


মন ভাঁজ করি পাঠ করি আহ্লাদ ঘনায় 

তবু তার নিজস্বী পাঠেই মগ্ন মন ।


মনে যা যা প্রতিদিন ঘটে তাকে বলি ইচ্ছে তোর 

তুই তোর সব ইচ্ছে দমিয়ে নিজের মধ্যে

পুরে রাখ নিজেকেই ----


বিষাদ আনন্দে আর আনন্দে বিষাদ যত বাড়ে 

মন তত আমার নিজের হয় 

আমি লিখি লিখি লিখি ----












৩.

অসম্ভব নীলরঙে অনর্গল  কথা বলি  শুনি

যেন  জলসাঘরের  মুগ্ধতা নিয়ে এক মায়া ।


কথার বাগান ও বাড়ি ----


কথা বলা আর শোনা এক জিনিস নয় ,

এও এক খেলা যেন মেতেছে নদীতে  মাছ --- 


যে বলে আর যে শোনে তার হৃৎপিন্ড এক রঙেরই হয় ।

সেই সব হৃদপিন্ডের বাবা ও মা এক

এমন কি ডাক নামও এক ।


কথার ঈশ্বর হই ----

কথাশ্বরী নাম নিয়ে মানুষের মুখে মুখে কথা হয়ে ঘুরি চলি 

হাঁটি খাই চেটেপুটে ।


খারাপ কথায় আমি হুস হুস খেলি কখনো বা ধাপ্পা 

বলে লুকিয়ে পড়তেই সে চমকে চমকে ধরে নেয় আমাকেই।

শীতলে ভেঙেছি গান ও করবী ।


খারাপ কথায় আমি চুপ হয়ে সরস্বতীকে বলি 

জিভ কেটে নাও 

জিভে জিভে তুমুল ঝগড়া চলে খুব মজা পাই ।

চলুক ---


অনাবশ্যক কথারা আত্মহত্যা করে বলে 

আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় ! 


অনাবশ্যক ভাবনা তার কথা কি বলবে কি বলবে তোমার সে ভারে ভর ও ভার মাপি ।


অনাবশ্যক কথায় স্নান করি মধু মেখে

কাশি হলে বকো খুব জানি 

তবু   মধু মাখি ।


অনাবশ্যক কথায় মধু নেই তবু সে মধুর 

কথা কখনো লেখায় লেখাশ্বরী হই ।


কথাশ্বরী লেখাশ্বরী জড়াজড়ি করে কথামালা 


হেঁটে যায় ব্যানারে ও বিজ্ঞাপনে ।

মানুষের হৃৎপিন্ডে রক্ত ঘুরপাক খেয়ে খেয়ে 

কথার শোধন চলে রক্তের শোধন চলে 

মানুষে মানুষে রক্ত আর কথা অনবরত ব্রহ্মান্ডে 

শব্দ ব্রহ্ম ছোঁয়  নির্জনে অগোচরেই ।


৪.

গাছে গাছে আলো থেমে আছে ।

আলোয় আঁধার খুঁজি তার  মধ্যে

প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দুঃখ ভেঙে ভেঙে 

কত কত জল্পনা কল্পনা কথা ।

ভাবি দিন কেটে যায় কিভাবে বুঝিনি আজো 

তার মধ্যে লেখাতুর আত্মার ক্রন্দন কেউ 

আমাকে পেয়েছে ! এইসব শুনলেই হাসি পায় ।


প্রতিটি  লেখার জন্য পুজো করি মন্ত্র পড়ি এমন হয়ত নয় তবু 

সার্ট ঝাড়া শব্দে বুঝি কেউ পরে নিচ্ছে সার্ট --- সামনে বেড়াল 

তবু পাহারায় ! ! 

চোখ যায় আকাশেই যেখানে কালপুরুষের বিজ্ঞান নেই 

যেখানে হরিতকী বন দোলে 

সেখানেই ছড়িয়েছি কর্পূর কদম ।


গাছে গাছে হিম জেগে ---

হিমের বাজনা শুনে লেখায় আমার মন বসে ।

আলো হিমে এই  গভীরের রাত

 না আমার না তোমার তবু --- 


দুখ জাগানিয়া আমায় জাগিয়ে রাখ 

আরক্তিম কথা খুঁড়ে চলি 

নিশ্চুপ রাতের ঘোরে রাত এসে পড়ে 

মানুষের ঘরে ঘরে --- 

 

কাঠবাদামের গাছে ধীর বাতাস জাগিয়ে রাখে 

প্রথম প্রহর ---

আমি কি ছিলাম  আর কি হয়েছি কি হব 

এইসব অপেক্ষায় লিখে যে আঙুল ভাঙি 

সেও কি আলোর জন্যে আঁধার গ্রহণ নয় ! !










*********************************************************************




মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় 


এম কম প্রথম ডিভিশন এবং বি এড। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা এক / যতীন্দ্র মোহন বাগচী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ /  আরাত্রিক সাহিত্য সম্মান ২০১৮




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন