গুচ্ছ কবিতা * শিশির আজম
আস্তিকের গান
যে শবদেহগুলো তুমি কাঁধে নিলে তার মধ্যে একটা হলো
তোমার বোনের, তোমার
জন্য যা বেশ ভার -- বেগুনি আকাশে তারাগুলো নির্ঘুম,
যেমন ঐ পেঁচা, আর ঐ
মুন্ডুহীন পুলিশ -- চেনা মুখ পুনরুদ্ধার ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে
অদ্ভুত উন্নতিকণাগুচ্ছ হতে গভীরতায় হাত মেলাতে ধাক্কা
উপকূলীয় স্রোতের ওজনহীন ঘূর্ণনে আমরা প্রকাশ করেছি
আমাদের নগ্নতা, যা
বাঁচিয়ে দেয় সম্ভাব্য মৃত্যু হতে -- অলিখিত কবিতার কালি
সৃষ্টি করছে প্রকরণহীন ভাষা
বসন্তের প্রতারণার ভেতর ক্ষুধা বাড়ছে; আর ঐ লতাগুল্মে
জড়ানো বুনো হাঁসের পথ
সব নদীই এক -- গ্রামগুলোকে ছুঁয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে
পড়েছে,
ভাসমান খড়কুটো
ও কাকের ডানা ফিরিয়ে আনে বেহিসাবী পূর্বসুরীদের --
আদিবাসী পলিনেশীয়রা
রাতে যেভাবে তাদের কুকুরগুলোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো
দ্বীপপুঞ্জের বহমান ধ্বনির ঝাঁপটানি সংক্রমিত আমার
উত্তরাধিকারে
আর ভাস্কর্যের অমসৃণতা, ধোয়ালেও সরলতা নষ্ট হবে না
এই ঘাস আমাদের... এই ঘাস সবুজ, এই ঘাস সাদা ও লাল
এবং
অবশ্যই কালো, বাকি সব ভুলবোঝাবুঝি
স্বীকার করছি আমি দায়ী; অন্যদের ক্ষেত্রে এর কী
রকমফের হতে পারে তা তো
সবার জানা; এমন কেন হবে যে আমার লোমশ বুক অন্যের
জন্মবার্ষিকীকে ব্যাঙ্গ করছে
কালো উপত্যকা জুড়ে উড়ে বেড়ানো হাওয়ায় সহজ সৌন্দর্য
উপলব্ধির পূর্বে দরকার
টাটকা ঘুম... নিখুঁত রক্ত, একে মিশিয়ে নাও রক্তজবায়
হ্রদ হয়ে উঠবে আরো গভীর, প্রতিজ্ঞ ও প্রতিধ্বনিময়
আমি আদৌ বিদ্বেষী নই, আমি আস্তিক
চাঁদের সুতো
১।
ঈর্যার সিঁড়িতে ঈগল ও মোমবাতি। বটফল, শৈলমালা ও পশুত্বের যৌথসৃষ্টি হল ঈগল। পৃথিবী প্রথম নিজেকে যেভাবে দেখেছিল মোমবাতি সেভাবে শুরু করতে চায়। আমাদের উচিৎ হত্যাকারীদের বিশ্বাস করা আর রক্তের সুতো রোদে শুকোতে দেয়া।
২।
আমার ভাষা আর তোমার আত্মা ঐ চাঁদের কোটরে। স্তরের পর স্তর - এভাবে অসুস্থতা থেকে তোমার উদ্ভব। পরিত্যাক্ত অবস্থায় ধুলো ও বৃষ্টির স্মৃতি আমি জমা দিই তার কাছে। রাস্তার পাশে কাটাগাছের গুড়িগুলো ক্রমশ অবাধ্য হয়ে উঠছে রাস্তার মতো। রাস্তা ফণা তুলেছে।
শত্রট্টসংখ্যা পরিমাপ করতে যাওয়াটা চূড়ান্ত বোকামী। অন্তহীন গণিত যেভাবে আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে, বিপজ্জনক বন্ধুর মতো, তাকে বলা যায় রাখালি ও রাসায়নিক।
৩।
সূর্যের খাঁড়ি ও উপত্যকায় তুমি নিজেই বিলীন করে দিলে তোমার শৈশব, সৌন্দর্য ও স্থিতিস্থাপকতা। পাঁচীলের ওপাশে আমগাছটির অন্ধকার, হয়তো মরে যাবে, হয়তো না।
আমার শক্তি তোমার আত্মার কেন্দ্র। উল্টিয়ে বললে মকবুল ফিদা হুসেনের মতো শোনায়।
৪।
টুকরো টুকরো জমি ছিন্নবিচ্ছিন্ন সময়ের গতিচক্রে প্রসারিত হচ্ছে। একটুই সে জানে, রাস্তাটার দুটো মুখ, অনেকগুলো হা। আমাদের উষ্ণ আবহাওয়ায় সূর্য আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গাছের ছায়ায় ইবলিসের বোকামী, আর আমি ঘুমিয়ে পড়ি জলের উপর।
৫।
কিছুই অশুভ নয়, জড়িয়ে পড় রাস্তার কোলাহলে।
প্রশ্ন একাদশ
১|
বায়ু
কোন্ কোন্ উপাদানে
তৈরি
২|
আকাশের রং
কেন নীল
৩|
কুকুরের বাঁকা লেজ
কেন সেজা হবে না
৪|
থুতু
বিস্বাদ হয়েও
কেন মিষ্টি
৫|
ওই ব্যথাতুর
দাঁতে
কিভাবে তুমি কামড়ে ধরো
তরুন তারাটিকে
যে জানতোই না দাঁত কী ব্যথা কী
৬|
বর্ষা কী
৭|
কবিতা এখন কেন
ঘাসের ডগায়
তা দেয় না
৮|
বনে
যারা বাসা বাঁধে
তারা কি মানুষ
৯|
রবি ঠাকুরকে বাঁচাতে
এখন আমাদের কি করা দরকার
১০|
আকাশের তারা গোনা
আর প্রেম
কোনটা স্বস্তির
১১|
কবিতা
কেন
অসতী
****************************************************************************************************************
শিশির আজম
জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮ জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : এলাংগী, কোটচাঁদপুর ঝিনাইদহ -৭৩৩০
বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থসমূহ : ছাই (২০০৫) দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮) রাস্তার জোনাকি (২০১৩) ইবলিস (২০১৭)
চুপ (২০১৭) মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮)
মাতাহারি (২০২০) টি পোয়েট্রি (২০২০) সরকারি কবিতা (২০২১) হংকঙের মেয়েরা (২০২২) বিষ (২০২৩)
সম্পাদিত ছোটকাগজ : শিকড় (৫ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
সম্পাদিত কবিতার ভাঁজকাগজ : বাংলা (৩ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement এর উশকানিদাতা





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন