সৈয়দ কওসর জামাল * দু'টি কবিতা
হত্যাকাণ্ড
গাঢ় রাত্রি তোমাকে আমাকে রাখে দুই দিকে, আমার এ শ্রান্ত
চোখ নিভে নিভে আসে
তুমি কি শুনেছ হাসি ওই ভূতেদের? কতখানি নিষ্ঠুরতা
জাগিয়ে তুলেছে চারপাশে!
নিদ্রা ভুলে প্রতিবাদ করো, কিংবা ওঝা হয়ে শক-থেরাপির
সাজাও আসর
ফিরবে না গোধূলি কিংবা ভোরের আকাশ, আর তার আলো
পূর্বাপর।
সূর্যওঠার সাক্ষী হব বলে পার করি নিভৃত কষ্টের রাত
যেখানে নির্দিষ্ট নয় ঘন্টা মিনিটের পথ, কখন যে কার্ফু আর
কখন যে চাঁদ
দিকনির্ণয় করে হুইশিল তরঙ্গ তুলে, মুছে দেয় পূর্বপুরুষের
সৌধলিপি, স্মৃতি অকস্মাৎ
চূরমার সমস্ত বিগ্রহ, যেন প্রবল ভিসুভিয়াস হয়ে তারা
পেতেছে মরণ-ফাঁদ!
আর সেই লাশগুলো, যারা দেখা দিয়ে আবার হারিয়ে যায়
জলের ভিতরে?
জলের নির্মম গতি, অতীত কালের মতো নিরলস তারা
এ যাত্রার সাক্ষী নেই, জলের শব্দের মধ্যে সময়ের অন্তর্ঘাত
লাশ গুম করে
মাথার ওপরে ঘোরে নির্ভার আকাশ আর অনির্দিষ্ট
হত্যার কিনারা।
তবু স্বপ্ন
কত প্রাণশক্তি দ্যাখো, এখনও নিশ্বাস নিই, এখনও দাঁড়াই
উঠে মুঠো শক্ত হলে
শান্ত পুকুরের জলে ঢিল ছুড়ে ডেকে আনি পূর্বাপর ঢেউ
চিৎকার করেছি বলে থেমে গেছে দূরে পাইকের লাঠি
এখনও আকাশপানে চেয়ে দেখি নক্ষত্রপুঞ্জের সমাবেশ,
আর যোদ্ধাবেশে কেউ।
রাত্রিশেষে তবুও আলোর কথা ভাবো। চাও সমাপ্তি রাত্রির
ক্ষত সব ভুলে যেতে চাও, চিহ্ন মুছে যাবে—ভাবো নাকি
দিনের আলোয়?
চাষ হল, পৌষে ফসলের ঘ্রাণ ঘরে তুলছে কৃষকরমণী,
এ ছবি দেখেছ চোখে স্থির l
দেশের সীমানাজুড়ে বাস, বিমানের শব্দ নেই, গুলিও চলে না,
উড়েছে শান্তির খই।
নৃপতি দয়ার্দ্র অতি, স্নেহশীল, রক্তচক্ষুহীন, কাটান নীরবে
নাগরিক তেমনই তদ্গত, তুলে দেয় স্বেচ্ছায় খাজনার
আধুলি ও সিকি
স্বপ্ন ভেঙে যায় তবু স্বপ্ন গড়ে ওঠে ঠিক নিদ্রায়, বাস্তবে
তুমিও দেখেছ স্বপ্নে হেঁটে যাচ্ছি আমি মাথা তুলে আর
জেগে উঠে স্বপ্নগুলো লিখি।
***************************************************************************************************************


দুটি লেখা স্মৃতি মন্থন করে তোলে। অতীতের স্নিগ্ধ ঐশ্বর্যে আগামীর দিকে কাম্য নির্দেশ প্রদান করে রাখে। বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন