চন্দ্রাণী গোস্বামী * দু’টি কবিতা
ওফেলিয়া
অনির্বচনীয় ভঙ্গিতে সে যখন ঘুমিয়ে থাকে
তার পায়ের পাতায় জেরুজালেমের একটুকরো ভূখন্ড
লেগে থাকে অপার শান্তির মতো।
আমি সেখানেই রেখে এসেছি আমার যাবতীয় মাহেন্দ্রক্ষণ।
তার সোনালী দুটি দ্বীপের মাঝে লিখে রেখেছি
চাঁদের তাড়সে ভেসে যাওয়া আমার ভাটিয়ালি গান।
কিন্নরী নাভিমুলে লেখা আছে আমার বিষাদসিন্ধু...
যদি কোনোদিন চৈত্রের সর্বনাশা বিষণ্নতা নিয়ে সে
চোখ মেলে তাকায়,
শরীরের ছায়াপথ জুড়ে পাবে ভাবীকালের তুমুল জলজ
গর্জন;
"ঢেউ ভাঙছে, কারা টুটছে"...
গিরিখাতে প্রবল তুফানিয়া জলোচ্ছ্বাস। যেন চন্দ্রদেবের সাথে
মানিনীর নাছোড় নিবিড় সঙ্গম।
তার নাম ওফেলিয়া।
এক জীবনের ঘুমের মতো শান্তির পরিক্রমণ সেরে এবার
তার গর্ভে জন্ম নেবে আগামীর সমুদ্রমন্থন...
উপসংহার
সময় এলে এভাবেই চলে যেতে হয়।
যা কিছু এজীবনে স্পর্শ করেছি
তার ভেতরে
তোমার কোমল অঙ্গটুকুই নিয়ে
ভিড়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যেতে হয় ---
পাহাড়ের ওপার থেকে তিস্তার শরীর ছুঁয়ে
তোমার কমলারঙের হাসিটুকুও নিয়ে চলে যেতে হয়।
আর সন্তর্পণে ছেড়ে যেতে হয়
পাথরের স্তব্ধমুখ,
খিদের পরেই প্রিয় তোমার স্পর্শ
আর স্পর্শের চেয়েও অশরীরী লাবণ্য বিস্ময়--- তোমার
নাভিফুল।
এভাবেই আত্মার মুঠো মুঠো জন্মঘ্রাণ ভালোবাসার মতো
ছড়িয়ে চলে যেতে হয়।
শুধু বলে যেতে হয়, সমস্ত আলোর ভেতরে আমিই ছিলাম
তোমার মাধব আশ্রয়।
**********************************************************
জন্ম সত্তর দশকের শেষদিকে। স্কুল জীবন, বড়ো হয়ে ওঠা সবই কলকাতায়। পড়াশোনা স্নাতকোত্তর , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে কলকাতার একটি কলেজে হিসাব রক্ষণ বিভাগে কর্মরত। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি তীব্র আসক্তি। নতুন শতকের প্রথম দশকের শেষ থেকে নিয়মিত লেখালেখি। কবিতা আশ্রম, কৃত্তিবাস, গাঙ্গেয়, অপদর্থের আদ্যক্ষর, বম্বে ডাক, তমোহা, সাজি পত্রিকা, বিকল্প বার্তা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর কবিতার বই----







"কিন্নরী নাভিমূলে লেখা আছে আমার বিষাদসিন্ধু"...এমন লেখা খুব বিরল। অনবদ্য। দুটি লেখা বেশ কয়েকবার পড়তে ইচ্ছে করে, এখানেই এ লেখার শক্তি ও রহস্য লুকিয়ে আছে।
উত্তরমুছুন