মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * গৌতম কুমার গুপ্ত

 





কবিতাগুচ্ছ  * গৌতম কুমার গুপ্ত




দলিল

একটি গেলাসে জলের মতো
জন্ম ঢেলে দেখেছি
মৃত্যুর সঙ্গে কতটা রসায়ন তার

আবাল্য ক্রীড়াভূমি জন্মের উঠোন
পরিচিত সুখদুঃখগুলি 
ঘুরে ফিরে আসে

কিছুটা সবুজ কিছুটা ফ্যাকাশে নীল
বিহিত করে আনন্দ নিরানন্দ

সময়ের কয়েকটি সিঁড়ির বাঁকে
নীরব হয়ে যায় দ্যুতি
গাছেরা হেলে দুলে বাতাস খায়
সবুজে মিশে থাকে পরাগ

জন্মকাহিনী পরম্পরা

একটি মৃত্যু একটি জন্মের কাছে
অপরাধী হয়ে থাকে


ফুল

কিছু পণ্য দিশারী ফুল
রেখে এসেছি।
কোথায়?  জানি না
হতে পারে পলাশ কিংবা
রডোডেনড্রন
শুধু স্মৃতি গন্ধময়
খুঁজে বেড়াই আবহ সন্ধ্যা
আর জোনাকির ফিকে আ্লো
পাহাড়ের গায়ে ঠিকরে পড়ে
সবুজ অন্ধকার

ইস, যদি ভালবাসতিস
ভোরের হাওয়ায়
ফুলের পাপড়ি দিকভ্রান্ত
হতো না
অব্যর্থ জায়গায় পৌঁছে যেতো
ঠিক আলোর প্রতিশব্দে

তখন
একটি নীল খামের প্রতিধ্বনি
খুঁজে বেড়াচ্ছে চরাচরে



এখন বসন্তবেলা

প্রভাতের প্রাথর্নাগুলি আজ মুলতুবি থাক
বরং আমরা কা্লো কফি সেবা করি
এভাবেই স্বাস্হ্য পান বিধিসম্মত হোক

এখন বসন্তবে্লা
দুয়ারে ডেকে গেছে কোকি্ল
অচেনা কিংশুকে লেগেছে আগুন
আমারও পলাশে একাকী ফাগুন

এসো আজ ভেসে যাই
আবিরের রংয়ে
উৎসব আজ রৌদ্রমুখর

বিজন বিষাদে
তবু কেন একা একা

নিবিড়ে জড়াও অভিমান ছায়া।


প্রাপ্তি

প্রাপ্তির ঘরে কাকতাড়ূয়া
দূর দূর করে হটে যায় শিকারী
এ্যান্টেনায় ঝুলে থাকে পরবাস
আঁধার ঘনিয়ে কা্লবৈশাখ
ছন্নছাড়া করে দেয় ছেঁড়া রোদ্দুর

তবু ধারাপাত গুণে এতকাল
দু একটি মুদ্রা নুড়ি পাথর ঘুড়ির লাটাই
 কিশোরের ইহকাল হিসেবী সঞ্চয়
প্রাকবৃদ্ধে পরকীয়া ঝুলে থাকে
 প্রাপকের হাতে ঋণ সমগ্র এবং

জীবনের প্রাপ্তি অধরা
বাকিটা খড়কুটো ইতিহাস


নাগরিক

বাতাসের সংকেতে  ঘুড়ি ওড়ে
মেঘের ইংগিতে বৃষ্টির জন্ম হয়
অক্ষর হেলনে একটি কবিতা ফোটে
এসব মিথ্যে ভাবনায় অলস দিন কাটে

পর্দা থেকে কবে সরে গেছে লজ্জা
দরজা থেকে পায়ের নিভৃতি ছাপ
এই সব অসভ্য দিনগুলি বেহিসাবী
আমার স্বপ্নে মিথ্যে বেলুন আকাশে য়ায়

ইস্তিরীর ভাঁজে ভাঁজে পোশাকের টেরাকেটা
আমি নাগরিক ভাবে আছি
কষ্ট কাঠিন্যে অম্লবিষাদে।





********************************************************




গৌতম কুমার গুপ্ত

জন্ম  ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ  " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও  লিখেছেন। ইতিমধ্যে "কয়লাক্ষেত্র "এবং কৃষ্ণগহ্বর নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।শীঘ্র একটি কাব্যগ্রন্থ 'যদি হৃদয়ের কথা বলো'প্রকাশিত হতে চলেছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন