মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * অর্ণব সামন্ত

 




         
কবিতাগুচ্ছ  * অর্ণব সামন্ত 



আপেল ও তীরন্দাজ 

            
গভীর জলের রক্তিম শোলপোনা খেয়ে গ্যাছে ডিম 
একজন তীরন্দাজই সফল হয় চাঁদমারি ফুঁড়ে যেতে 
আপেলের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বোঝার আগেই 
কেউ আবেশে আশ্লেষে ঢলে পড়ে দ্রাঘিমার দুর্বলতায় 
রামধনু কাপড়ে ঢাকা আগাপাছতলা 
তবু উন্মুখ নাভি মাধ্যাকর্ষণে টানে হাজার হাজার ফুলকি 
কেউ তার জারিত হয়ে স্নিগ্ধতার পথে হাঁটে রূপান্তরে
ঘূর্ণিপাকে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয় মরে গিয়ে নক্ষত্রের কামনা বাসনা 
কেউ তর্জনী নির্দেশ করে কেউ করতল পাতে গ্রহণ আগ্রহে 
ছায়াশরীরের প্রতি ছায়াশরীরের যুদ্ধ বাড়ে প্রেম 
ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে দেয় জায়মান কাব্যের শরীর 
আগুনকে সাক্ষী রেখে আগুনই রচনা করে আগুনে সন্তান 
আপেলই মাধ্যাকর্ষণ হয়ে গিলে খায় সমস্ত পৃথিবী 
উড়ে যায় মুক্তি উড়ালে হাজার মরণ পরে দারুন বাঁচায় 
গভীর জলের জল যেতে চায় আরও গভীরে ব্ল্যাকহোলের কঠিন প্রসবে 
নবজাতক আবহমান দ্রাঘিমার বুকের সুধাপানে মগ্ন 
নতুন তীরন্দাজ নতুন নতুন মৃগয়ার জন্য নিজেকে তৈরী করে।



উপঢৌকন 

         

দুর্দম আহ্বান ছিল আখরে , শব্দে 
ভাবে ভঙ্গিতে তখন সিঁড়িতে ওঠার উজান 
উজিয়ে আসছে সুর , স্বরলিপি , সৌরভ 
বিকেল ঝাঁটিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় জঞ্জাল 
সকাল আনতে তার কি উন্মাদনা 
মিল্কিওয়ে নেমে আসছে বারান্দায় 
উপহার উপঢৌকন উজিয়ে যাচ্ছে উপভোগে 
সম্পৃক্ত , সমৃদ্ধ হতে হতে তোর ওষ্ঠে স্ফুরিত আমার গান 
আমি প্রমিথিউস হয়ে স্বর্গ থেকে চুরি করা আগুন 
তোকে দিচ্ছি দহনে , উজ্জীবনে , সুসভ্যতায় 
প্রত্ন আকরিক থেকে বেরিয়ে আসছে খাঁটি সোনা 
ঝঙ্কারে , বিদ্যুচ্চমকে এককের গান তখন আকাশ ফুঁড়ে অন্য আকাশে 
শিকার তীরন্দাজ হয়ে তীরবিদ্ধ করছে শিকারীকে 
অমল জ্যোৎস্নায় ভাসাচ্ছে স্বর্গ ও স্বর্গসুখের চরাচর !




স্বাতী নক্ষত্রের ঘূর্ণিজল 

          

নির্যাসটুকুও নিঙড়ে রাখি চন্দনচর্চায় 
স্বাতী নক্ষত্রের জল জলের আরও গহনে যেতে চায় 
কী দহন কী স্নিগ্ধতা কী তেজে মহিমায় ভরপুর 
ওগো প্রনম্য অগ্নি তুমি জেগে থাকো ভস্ম নিঃস্ব করে দিতে 
কী দারুন মরে গিয়ে উড়ান দিতে ফিনিক্স ডানায় 
ঢেউগুলি উজ্জীবনের জীবনকে দেয় জীবনের চেয়েও বেশি ছোঁয়া 
গরলে গরলে যে জীবন হয়ে যায় অমৃতের চেয়েও বেশি সুস্বাদু 
নির্যাসের ছায়া রাখে ব্ল্যাকহোল কাব্যে ,
আলোর ভাস্কর্য প্রসব করে কারুকামনার কারুকার্যে
পোশাকের মতো খুলে ফ্যালে মনের ভিতর মন 
মাংস-মেদ-মজ্জা-স্নায়ুর অঙ্কুরোদ্গমে এসো আলো
তরতাজা কবিতা হয়ে দাঁড়ায় নির্যাস মুখোমুখি 
কথনে জ্যোৎস্না হাসিতে রোদ্দুর দ্রাঘিমাকে সোনালী করে 
হৃৎকমল করে না আফশোষ জীবন ছোট্ট বলে 
বরঞ্চ এ ভুবনে ঢেলে দেয় সৌরভের ঢেউ , সুরের আগুন 
চানঘরে গান হয়ে নৃত্য করে এ জীবন এ যাপন 
স্বাতী নক্ষত্র জলধি হয়ে পেতে চায় গভীরে জলের ঘূর্ণি স্বাদ !




জ্যোৎস্না 


জ্যোৎস্না লালন করে , জ্যোৎস্না পালন করে 
সেই জ্যোৎস্না করে পান , সেই জ্যোৎস্নায় চান 
গানঘরে চান করে উঠে আসে নির্জন দুপুর 
তিলক কামোদ বেজে ওঠে দখিনা সুবাতাসে 
অরণ্য শেখাও তাকে , মোহনা শেখাও 
উপত্যকা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আশ্লেষ বর্ণমালা 
গহীন গাঙের অথইয়ে জলের গভীরে যেতে চায় জল 
সংস্কার উচ্ছন্নে পাঠানো নির্ভীক আদি প্রাণ 
দ্বৈততার বীজ বোনা জমিনকে এককের দৌরাত্ম্যে ডাকে 
বুদ্বুদ জীবন ভুলে ডুবে যায় দৃঢ় প্রত্যয় গরিমায় 
ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে জাগে জায়মান সময়ের অপত্য সুখ 
দ্রাঘিমাংশ রেখে দেয় বুকের গভীরে বুকের গভীরে 
জ্যোৎস্না কথনে কাছে দাঁড়ায় সাতজন্মের আত্মীয়তা নিয়ে 
জ্যোৎস্না ভাগ বাটোয়ারা করে দুটি চাঁদ 
আবার এককের জ্যোৎস্নায় হারায় দারুন !




 দেরাজে সাতজন্ম 


দেরাজে তুলে রাখি গত জন্মের দরাজ হৃদয় ও দুপুর 
সন্ধ্যের ভিজে কন্ঠ , রাতের অঙ্কুরোদ্গম 
সকাল সকাল কুসুম কুসুম মন আছে তোর শরীর নেই 
বিকেলে শঙ্খকে বাজাল হলুদের গভীরে গিয়ে 
বিদ্যুচ্চমকে বিদ্যুচ্চমকে কখন বৃষ্টি এল , কখন যে জ্যোৎস্না 
ভিজে পুড়ে ভিজে পুড়ে দহন স্নিগ্ধ বেলার কামনা 
সুর সৌরভ ছড়িয়ে ছড়িয়ে করতলে এনে দিল সমস্ত ভুবন 
সাতজন্ম বেঁধে গাঁটছড়ায় মুক্তিকে দেওয়া হল ছাড়পত্র 
দেরাজে দ্রাঘিমাংশ অনন্ত দ্রাঘিমায় ভাসে মগ্নমুগ্ধতায় !

                                                                          

  **************************************************************************************    


 অর্ণব সামন্ত 

ইংরাজী ভাষার ছাত্র। ইংরাজীতে এম. এ ; বি . এড ।উনিশশো তিয়াত্তর সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীতে জন্মালেও স্কুল জীবনের পর থেকে শহরতলীতে আবাস । শিক্ষকতা পেশা , নেশা কবিতা লেখা । এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ , ৪টি - গোলাপ এবং , ঝরা সময়ের উপকথা , পারমিতা , বামাক্ষী । পেশাগত সময় বাদে গান শোনা , বইপড়া , ফোটোগ্রাফি , কবিতা লেখাকেই জীবন যাপনের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন।   


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন