সন্দীপ ঘোষ * দুটি কবিতা
আঁধারে সূর্য
নামটাই সূর্য, আলো দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
অন্ধকারের আবর্তে মনের গোলকধাঁধায় বেসামাল।
শৈশবের ঘরের দেওয়ালে- ছাদে গনগনে আগুন,
কৈশোরের ঘরেও একই চিত্র
সতেজতা তার কাছে স্বপ্নমাত্র। আর মনের বিকাশ!
সে তো আলোকবর্ষ দুরে।
যে উৎস থেকে তার উৎপত্তি
দাউ দাউ করে সেই দুইপ্রান্ত জ্বলে যে লেলিহান শিখার
উদগীরণ হয়, তার অর্থ বোঝে না সে।
ভয় পায়, কাঁপতে থাকে, কখনো কখনো
পুড়েও যায়, এভাবেই পুড়তে পুড়তে পৌঁছে যায় কৈশোরে।
কী নেই তার, আলো দেওয়ার ক্ষমতা যে অপার।
প্রজ্ঞা, বিবেক, আন্তরিকতা, মূল্যবোধের রসদ----
যার অন্তঃস্থল ভাঁড়ার ঘর,
বার বার হোঁচট খেতে বাধ্য হয়, খেতে খেতে উৎসের
লেলিহান শিখাকে ধারন করে দেহে।
দ্যূতি ছড়ানো আলোর উপাদানগুলি গ্রাস হতে হতে
সূর্য পৌঁছে যায় যুবার পরিমণ্ডলে।
পুঁথিবিদ্যায় মেধাবী সূর্য তবুও দেয় মেধার পরিচয়।
নিয়োগপত্র পায় বাচ্চা পড়ানোর সরকারি পাঠশালায়।
তবুও রেহাই মেলেনি তার,
নিজালয় থেকে বিতাড়িত আশ্রিত সে অন্য ঠিকানায়।
এক প্রান্ত নিভলেও অন্যপ্রান্তের আগুন এখনও জীবিত,
খোলা জানলা পেয়ে মাঝে মাঝে ঝলসে দেয় সেই জীবিত আগুন।
সূর্য তার সমস্ত আলো চাপা আর্তনাদে, রোষানলে মুড়ে ফেলে।
ছড়িয়ে দেয় মদোন্মত্ততার তীব্র ফোয়ারায়।
আজ শত শত আঙ্গুলের নিশানায় বিধ্বস্ত সূর্য।
দিকে দিকে যখন মাতৃদিবস, পিতৃদিবস
শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ধূম পড়ে যায়, কে বা কারা যেন
তার বেঁচে থাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্তিত্বকে
খুবলে খুবলে খায়। কে খায়?
কেউ রাখে না এই সূর্যের খবর।
আজকের সূর্য আঁধারে ওঠে আঁধারে অস্ত যায়।
ওটা তো খাওয়ার ঘর
প্রত্যন্ত গ্রাম,
কৃষিজীবি, শ্রমজীবি, প্রান্তিক মানুষ
ছোট্ট ছোট্ট শিশু
গ্রামেই বিদ্যালয়
ওদের মা-বাবা স্কুলে পাঠায় আলোর খোঁজে।
সত্যিই কি পাচ্ছে ওরা আলোর দেখা?
রংচটা মলিন ইউনিফর্ম পরা বাচ্চাগুলো রোজ স্কুলে যায়,
পড়া পড়া খেলাঘরে খাওয়ার গল্প ওরা শুনেছে।
দাদা-দিদিরা যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরত,
ওদের প্রত্যেকের চোখেমুখে আনন্দের ঝরনা বইত।
চার বছরের ছোট্ট শিশু
কানু বলে, চল না দিদি তোদের ঐ খাওয়ার ঘরটাতে।
কোনটা ভাই খাওয়ার ঘর?
ঐ যে তোরা যাস, পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে।
ওখানে তো পড়তে যাই, কে বলেছে তোকে?
তবে যে তোরা বলিস-
ওখানে পেটপুরে খেলি নাকি ডিমের ঝোল ভাত?
তবে যে তোরা বলিস-
ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ি-ভাজার গল্প?
তবে যে তোরা বলিস-
ডাল-পোস্ত-ভাত তারিয়ে তারিয়ে খাওয়ার মজাটাই আলাদা?
ওটা তো খাওয়ার ঘর, তাই না?
কই কখনও তো বলিস নি কী পড়ে এলি?
দিদি বলে, স্যারেরা যত্ন করে পড়ান আমরা পড়ি।
তাহলে শুধু খাওয়ার গল্প কেন করিস?
ওটা তো খাওয়ার ঘর, তাই না?
কানুর বন্ধু পানুর প্রশ্ন, হ্যাঁ রে দিদি--
ঐ ঘরটা খাওয়ার জন্য পড়ার ঘর, না পড়ার জন্য খাওয়ার ঘর?
আমিও কেবল খাওয়ার গল্প শুনি।
কানু বলে,
বাড়িতে তোদের কখনো দেখিনি বইয়ের পাতা ওলটাতে,
শুধু খাওয়ার গল্পে থাকিস মেতে!
ওটা তো খাওয়ার ঘর, তাই না?
দিদি আর কী বলবে!
দিদির দাদা-দিদিরাই তো ওই খাওয়ার ঘর ইতিহাসের রচয়িতা!





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন