কবিতাগুচ্ছ * গৌতম রায়
যোগক্রিয়ার রসায়নে
স্থাপত্য স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য জগতিক
জিপিআরএস রাখি খুলে, নির্দেশিত পথে বাড়াই পা,
আমাদের নদী শাখানদীকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে আত্মরতি
থেকে বৃহৎ ঠিকানায় রাখি চরণ।
আমাদের ভেতরেও খনিজ
আমাদের ভেতরেও জ্বলে ওঠার মশাল,
আমিও কী সূর্যের উত্তরসূরী নই? আমার বিভায়
প্রাণবান রন্ধনশালা,
যোগক্রিয়ার রসায়নে একটি নদী পর্ণমোচী অথবা
চিরহরিৎ হয়।
অপর্ণা যাত্রা শেষে
মহুল পতনের মতো কচ্ছপ পায়ে বড়ন্তির বিভাজিকায়
সূর্যাস্ত হয়,
আরোরার পায়ে পায়ে তুমি হেঁটে আসো আকাঙ্ক্ষী–
ডাহুক পানকৌড়ি আর শালিকের কনসার্টে ডুবে যায় দিন,
সন্ধ্যাতারার আলোয় চোখে চোখে কথা হয়।
পর্ণমোচী মেহগনি নি-পাতায় ঝরে যায়, অথচ তপস্যার
হরিৎতরুণ
জল ঝরা শরীরে মিলনের গান গায়, পলাশ থেকে চুঁইয়ে
জমা মধু-অমৃত করে পান।
অন্তরের আতস কাচ
রোশনী একত্রিত করে জ্বালিয়ে নেয় আগুন,
দহন থেকে উঠে আসে অগ্নিবর্ণা ফাগুন–
চন্দ্রনাথধামে দিয়ার বিভায় ওঠে কল্যাণ ধুন,
অভিলোচনে জেগে থাকে আমাদের আটপৌরে
হরগৌরীর আটচালাটি।
এর বাইরে গেলে উল্কাপতন
সংঘর্ষে মহাপ্রলয়।
অপর্ণা যাত্রা শেষে
ফিরে আসি ব্রাহ্মণ্ড বন্ধনে
সপরিবার পর্ণায়।
আমাকে ব্যাটন দাও
সেলুলার জেলের প্রবেশ দ্বারে অমর জ্যোতির
সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুদণ্ড ভাবিঃ
ইতিহাসের তাপ আলো আর শব্দের ধুন নিয়ে দাঁড়িয়ে
আমি,
আমার ভেতরেও সাভারকার–
মুক্তির অগ্নিশিখা আছে বলেই
প্রজ্জ্বলনের জন্য আতীব্র সাগর পাড়ি দিয়ে ছুটে আসা।
স্যালুট হে গর্বিত বীর,
জিপিআরএস সজাগ আছে
আমাকে ব্যাটন দাও
প্রতিকূলতা কেটে কেটে এগিয়ে নিয়ে যাই দেশমাতৃকার
সার্বভৌম রথ।
সন্ধ্যাতারার আলো হয়ে
কতকাল ক্ষয় করে লক্ষ্মীপুর সৈকতে প্রাকৃতিক প্রবাল
তোরণের নীচে এসে দাঁড়াই, দেখি আমার ভেতরেও
প্রবালবন্ধনী
মাথায় চাঁদা দোলাচ্ছে ফলবতী কেয়া,আকাল সময়ে
ভেজা বাতাসে স্বস্তি আসে, সাগরজলে ভেসে আসা
আমার পূর্বপুরুষ সাদা বালুকায় রাখি চরণযুগল,আমার অস্তিত্বের দণ্ডায়মান শক্তি।
সন্ধ্যা নেমে এলে আমি ছেড়ে যাই সৈকত
আমার ভূমাশক্তি কী ছেড়ে যাবে এ পৃথিবী!
সন্ধ্যাতারার আলো হয়ে জাগায়
আকাশ।
***********************************************************************************
গৌতম রায়
বাল্য কৈশোর কাটে পুকুর নদী ধানক্ষেত, আঁখবাদা, আমবাগান জামবাগান, শিঁয়াকুল বনে গ্রামীণ আবহাওয়ায়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পড়া শিবনারায়ণ হাই স্কুলে, রঘুনাথপুর কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, পুরুলিয়া শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় থেকে বি এড ডিগ্রি। বাবার রেলে কর্মসূত্রে নবম শ্রেণীতে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আনাড়া রেল কলোনিতে বসবাস, সেখানে বেড়ে ওঠা । পড়াশোনা করে ১৯৯২ ডিসেম্বরে বাবুগ্রাম সম্মিলনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহশিক্ষক হিসেবে যোগদান, ১৯৯৫ সালে ভূগোলের শিক্ষিকা সোমা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। আমাদের একমাত্র কন্যা সন্তান ঐশানী এবার (২০২৫) আইসিএসসি বোর্ড থেকে মাধ্যমিক দেবে। ২০১৪ সাল থেকে সুভাষ নগর, আদ্রা, পুরুলিয়ার বাসিন্দা। ৩০-শে সেপ্টেম্বর,২০২৪ শিক্ষকতার কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে অবসর পরবর্তী জীবন সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় নিবিড় মনোনিবেশে দিন কাটছে ভালো।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি ছাত্রজীবন (আটের দশক) থেকে। তবে সিরিয়াসলি এবং নিয়মিত লেখালেখি শূন্য দশক থেকে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা তের। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলোঃ "চৈতন্যভূমিতে"(২০০৬), "কালের প্রতিমা" (২০০৭), "উষ্ণতায় আহত আলো" (২০০৯), "নয়নতারা অনুশীলন "(২০১০), "শুভদার মাদল"(২০১১), "চোখের পা"(২০১৩), "জল সিন্থেসাইজার"(২০১৬), স্থাপত্য স্টেশন (২০১৮), "ধরে রাখি পারাবত নিশান"(২০১৯), বকখালি মডেল(২০১৯), "ড্রোন-দৃষ্টি"(২০২১), "এ আমার প্রথম শ্বাস "(২০২৩) এবং "দর্শন-মিনার"(২০২৪)। এছাড়াও প্রায় পঞ্চাশটি কাব্য সংকলনে কবিতা জায়গা পেয়েছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অন্তত পক্ষে পঁচিশটি বিভিন্ন সময়ে নানা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ এখানো গ্রন্থিত হয়নি। একসময় "আফর" বলে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করতাম, বর্তমানে বন্ধ। দীর্ঘ দিন ধরে সহসম্পাদনা করে আসছি "অনৃজু" লোকসংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। নতুন কবি সম্মেলন থেকে কেতকী কমবেশি উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে আসছি নিয়মিত। আমার কবিতা রচনার ক্ষেত্রে আবহমান প্রবহমানকে সম্মান জানিয়ে ধারা মুক্তির একটা প্রয়াস থাকে সবসময়।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ সাহিত্য মন্দির পুরস্কার-২০১০, সুদেষ্ণা স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার-২০১১, ভোরের সানাই পুরস্কার-২০১১, জিরাফ পুরস্কার-২০১৩, মন্দাক্রান্তা পুরস্কার -২০১৮, নবান্ন সম্মান-২০১৯, জঙ্গলমহল সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২০ অনন্য কবি সম্মান-২০২০, সাহিত্য আলপনা পুরস্কার২০২১, বিদ্যাসাগর পুরস্কার-২০২২, সাহিত্য সোপান পুরস্কার-২০২২, নীল নির্জন সম্মান -২০২৪, নীলাক্ষর সাহিত্য সম্মান-২০২৫



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন