কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায়
যে ক্ষত দৃশ্যমান নয়
১.
কতবার কতরূপে এলে...
দেখা হলো, কথা হলো, পরিচয় তো হয়নি
কত অজানায়
সেই দুটি হাত ধরেছি যে
কত গোপনে
করেছি আসা যাওয়া
কতবার ?
নিজের গোপনে তবুও দেখেছি কি সঠিক সেই মুখটি ?
অ-সুখ ডেকেছে খালি...
যে-সুখে তার আর আমার বুকে ঝুঁকে ছিলো
অনেক চৈত্র দিনের মায়া
যে হাওয়ায়
কে যেন বারবার ডেকেছিলো ----
বলেছিলো , এই তো ;
তবু "সে আমি" আমি না ।
যাকে খুঁজেছ তুমি....
সেই আমির নিতান্ত গোপনে রেখেছো কেবলই
ব্যর্থ আসা-যাওয়া দিনটি তোমার
যে যাওয়া আসায়
কোনোদিনও পাবে না তুমি তাঁকে
তবুও তোমার খোঁজার মাঝেই
তাঁর চতুর পরিচয়টি
যেন ।
২.
ঘুমের জগতে যাদের
জাগরণের তন্ময়তা
তাদের দিকেই মৃত্যুর মত
ধেয়ে আসে কিছু অন্ধকার...
সম্পর্কের লালিত্য মুর্ছনা
তবুও চায়
সেখানেই কিছুটা শান্তি যেন ;
উঠে আসে তাদেরই দুহাতে
নির্দিষ্ট কিছু গ্লানি , নির্দিষ্ট কিছু অভিশাপ ?
দেখা দেয় এমন কিছু অনধিকার
তছনছ হয় মনুষত্ব ;
ঝরা পাতার ভেতর
ঘুরতে ঘুরতে তারপরেও
দেখা হয় শাল জঙ্গলের দুপুরে
সেই সব স্মৃতিমগ্ন হাওয়াদের অশরীরী স্বরূপ ?
৩.
যে তাঁকে কল্পনায় দেখা সে কি সে ?
বিশ্বাস গাঢ় হতে না হতে
ফুল ফুটে বিকশিত
কোন পায়ে চুম্বন আঁকবো ?
ধুলায় কতো কাঠটগর হাসছে খিলখিল করে ...
সাদা টগর ফুলে কামড় বসিয়েছে
চৈত্রের রোদেলা বাতাস ...
উপর্যুপরি ঢেউয়ে আচ্ছন্ন দীর্ঘশ্বাস , উথালপাথাল সমুদ্রের জলও .....
কিছুতেই বুঝতে পারি না
শেষপর্যন্ত বিশ্বাস কি
ডুবসাঁতার চাইবে,
নাকি যে যেমন
সে তেমন ভাবেই ফিরে যাবে....
একটি দৃশ্যতেও
যায় আসে না কিছুই কারো
যতভাবেই কাঁদুক
কাঠটগর কিম্বা কাঠগোলাপেরা
যেতে যেতে পিছন ফিরে
সে-ই একই হাসি তো হাসবে
ঢেউগুলির আচ্ছন্নতা
উল্টো সোজা সেলাই হতে হতে একটি রাতের কাঁথাতেই
মুড়ি দেবে সারা শরীরটা ।
৪.
কিছুই নিই না
কিছুই যায় না নেওয়া ।
খানিকটা দেওয়া নেওয়া মিলিয়ে
ভুলিয়ে দেয় সব সময় ।
এইটুকু গেঁথে নিয়ে
শুরু ও শেষ চলেছে আপন নিয়মে ...
রেখে দিয়েছি তাইতো সবটাই গুছিয়ে, যার যেটুকু নেবার
পাঠ করে তুলে নাও ;
তার জন্যে যেটুকু, সেইটুকুতে দিও না বাহ্যিক দৃষ্টি
অন্তর মাঝে অন্তরের
বোঝাপড়া চলেছে অনেক....
এত কিছু নিয়েও মেটেনি স্বাদ ?
বাকিটুকু ছেড়ে দাও
চোখ বুজে চেয়ে আছি
যে মুখের দিকে
একটি প্রদীপের মতো
তাকেই রেখে যাও ।
সকালের আলোয়
টলমল করছে জানি অনেক আসন্ন বৈশাখ ---
ছেড়ে দেও , ঐটুকু নিয়েই তো পড়ন্ত বেলার নদীটির ভেতর
যুগলবন্দী মেঘের মতো চেয়ে আছি ।
৫.
কতো ভাবে বুঝোতে গেছে
কোনোভাবেই ফেরে নি দৃষ্টি
জ্বলে গেছে সবটা বিশ্বাস
ছারখার হয়েছে তুষের আগুন ?
হাসতে হাসতে ইচ্ছা হলেই
সেঁকতে পারে দুটি হাত
ইচ্ছে করলেই ছেলেবেলার মিষ্টি আলুর স্বাদও নিতে পারে একটুখানি ;
সেই চোখেই সব স্মৃতি খাবি খায় কেমনে দ্যাখো... ।
*****************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন