শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

বিশ্বজিৎ বাউনা





বিশ্বজিৎ বাউনা * দু'টি কবিতা



সীমায়িত ৯


খোসার মতো তুমি সেই আমাকে নিঃসঙ্গে ছেড়ে গেছো,

এই বনানী নির্ভর রোদের ঝিলে মৃতবাক ঝরা পাতা ডুবে, 

আমাকে অস্থির ব্যাপন শেখায়, তড়িতাহত অক্ষরের ছলে। 

এখনো সেই ভগ্নাংশ বিনিময়ের অধরা চুমুর প্রহরে প্রহরে 

থিতু প্রলেপের স্বীকার পড়ে আছে চিলসদৃশ বিকিরণে।


আবহমান বাতাসের আজ যৌবন ভেঙ্গে গিয়ে বাষ্পীয় বাসরে 

যে নিস্তল অক্ষমতা জেগে আছে তার কাছে ভস্মের বিনুনি 

আমাকে রক্তের খরায় ভাসিয়ে ভাসিয়ে চুরমার পাখির মতো 

দিবারাত্রি শেখায় মৃত উড়ানের ফোঁটা। দীর্ঘায়িত শূন্যের 

অধ্যয়নে মাথা নীচু সীমানার কোলে উড়ে আসে প্রকট...


অবিরাম আগুনের রাফ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ব্রহ্মতালুর প্রেত প্রচ্ছায়া, 

খরা বোঝাই ক্ষেত থেকে লুফে নিই প্রাক্তন চাঁদের চাহুনি 


বেবাক ছড়িয়ে থাকা মুহূর্তের ডগায় শীত শুয়ে পড়ে নষ্ট 

সম্বলে। 













সীমায়িত ১০


কতদিন এই নম্র বিচ্যুতি নিয়ে জেগে আছি একার গভীরে ভেঙে 

নিদারুণ অস্তরাগে পাঁঠার শরীরের মতো মেঘ দুলে যায় দূরে--


তোমাকে ছাউনিবিহীন বাক্যের কৌণিক প্রহরে কামনা করি, 

ঘোলাটে ক্ষমা দানাবৎ চর্চার বিকেল থেকে খসে গিয়ে ফের 

শরীর খারাপ নিয়ে শুয়ে পড়া যথাক্রমে চৌচির অভ্যন্তরে।


বেশিক্ষণ কলমের সম্মুখে নেতিয়ে পড়ে ঘুমলাগা ঘড়ি...

আমি তার বালির বাহু ছুঁয়ে ছুঁয়ে জলীয় দাবানল খুজি।


ক্ষীয়মান হলুদ বিন্যাসের প্রকরণে নিসর্গ বালিকার স্মৃতি 

ঘোর 

আমাকে পাড়াতুতো কাকের গলিতে দুবেলা চরায় হাতুড়ে 

বাতাস 

এলোমেলো ছেঁড়া পাতাগুলি অজেয় অভিমানে খুব চেয়ে 

থাকে 


রোদের সংসার সব খুবলে নিয়ে শীত শুয়ে আছে তার বিভ্রমে 

আমি একা একা নতশির বৃক্ষের শূন্য ডালে যেন ভানের 

পরাগ 


শৈবাল শোক নিয়ে ভেজা বাক্যে জেগে আছি অশ্রুর কারিগর।












*********************************************************************




বিশ্বজিৎ বাউনা 


বিশ্বজিৎ বাউনা। জন্ম ১৯৮৬। পশ্চিম মেদিনীপুরে। পিংলায়। ২০১০-এ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ. (ফার্স্ট ক্লাস, সিলভার মেডেলিস্ট)। বি.এড., পিএইচডি। পেশায় এইচ এস শিক্ষক। ২০১১ থেকে শিক্ষকতা করছেন ঘাটালের গৌরা সৌনামুই কেবিএ শিক্ষায়তনে। কবিতা ছাড়াও গল্প লেখেন। পেয়েছেন 'দ্বৈরথ সাহিত্য সম্মান', 'চূনী কোটাল স্মৃতি সম্মান' ও 'বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার'। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বই: 'ডুলুং পাহাড়ে রহস্য',  'ঈশ্বরীকে হলুদ সনেট', 'নৈঃশব্দ্যের ক্ষতগুলি',  'লুণ্ঠন শেষের শূন্যতা', 'ধুনুচি তফাৎগুচ্ছ', 'বিরসা মুন্ডা: উলগুলানের সনেটগুচ্ছ',  'অক্ষরের কালকেতু',  'বেতাল রহস্য', 'পীড়াপর্বে একলব্য' ইত্যাদি।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন