রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * প্রশান্ত মণ্ডল




কবিতাগুচ্ছ * প্রশান্ত মণ্ডল 


ঘুমন্ত


শূন্য পথ। শূন্য ফাঁকা মাঠ

এখানে-ওখানে দু-চারটে গোরুবাছুর চড়ে বেড়াচ্ছে 

পথের ধারে কিছু দুইরঙা বক

এখান থেকে ওখানে উড়ে গিয়ে বসছে

কাছেই দুটো ঘুমন্ত গরু

ওখানে জড়ো হয়ে আছে আরও কিছু বকের দল

কেউ তার পিঠে, কেউ তার মাথায় 

আর কেউ তার শিঙের উপর দাঁড়িয়ে 


কোথাও কোলাহল নেই

ঘুমে ঢলেও পড়ছে না কেউ 

আমি জানি, এই চড়া দুপুর রোদ ছাড়া 

এই পরিবেশ এখন অন‍্য ঘুমে আচ্ছন্ন।



পৃথিবীর রং


মহাকাশ থেকে যতগুলো রং দেখা যায় পৃথিবীর 

তার চেয়ে বেশি রং ছিল একদিন আমাদের বুকে

আমরা কুয়োর পাড়ের মত পুরনো বস্তা ঘষে 

তুলে দিয়েছি সব


আজ আমাদের সকলের বুকের রং ফ‍্যাকাসে।


কেবল পার্বণ এলে আমরা নতুন পোশাক গায়ে চড়াই

রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে ফেলি চারিপাশ

আর উৎসব পেরিয়ে গেলেই

আমরা আবার গোবরজলে ধুয়ে নিই পা


এখন প্রশ্ন শুধু একটাই

পৃথিবীর বর্তমান রূপ ঢাকতে, তার জন্য উপযুক্ত পোশাক পাব কোথায়?



টেকনোলজি


অবশেষে আমরা বন্দী হয়ে গেলাম 

পুরোপুরি!

না, আংশিকও তো নয়

দেখো, ব‍্যাঙাচিরা কেমন প্রথম অবস্থায় 

একের সাথে এক জড়িয়ে থাকে জালিকায়


আমরা এখন এ. আই যুগে হাটছি

আর গায়ে গা জড়িয়ে মৃত্যুর দিকে ছুটছি, সকলে।



নার্সিংহোম


ঐ সমস্ত অত‍্যাধুনিক হাসপাতালে 

এখন আর মানুষের চিকিৎসা হয় না।


চিকিৎসা হয় কেবল, সময়ের সাথে সামর্থ্যের...



সিঁদুর


জীবিতকালে দেখেছি আমার স্বর্গীয় মা

তাঁর কপালে বড় করে একটা সিঁদুরের ফোটা দিতেন 

তখন বুঝতে পারিনি, তার রং এত গাঢ় হত কেন!


আজ বুঝতে পারছি আমাদের বাবা

সব হারিয়েও কিভাবে নব্বই বৎসর জীবিত থেকে গেলেন..



দুঃসময় আর ফড়িং


দুঃসময় পিছু ছাড়ে না। যেভাবে সন্ধ‍্যাকালে জ্বলন্ত আলোকে ঘিরে একের পর এক উড়ন্ত পতঙ্গরা জুড়ে থাকে। আমার প্রশ্ন ওখানে নয়। কিছু কিছু প্রশ্ন, প্রশ্নবিচিত্রাতেও নেই। কিন্তু জীবনে আছে। সেই প্রশ্নগুলোও হঠাৎ উদিত হয়ে ঐ পতঙ্গগুলো কিংবা দুঃসময়ের মত জড়িয়ে ধরে। 

আমাদের শৈশব যেভাবে কেটে গেল, ওটুকুই বোধহয় স্বর্গলাভ ছিল আমাদের! সারামাঠজুড়ি ফড়িংয়ের পিছনে ছুটে বেড়ালেও বেলা একটুও গড়িয়ে যেত না। ঘরে ফেরার সময় ঠিক একগাল হাসি থাকত মুখে।













**********************************************************



প্রশান্ত মন্ডল

পিতৃদত্ত নাম প্রশান্ত মন্ডল। রূপক(প্রশান্ত) নামেও কিছু কিছু লেখা প্রকাশিত। বাসভূমি - শিলিগুড়ি (অম্বিকানগর), পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। শৈশব থেকেই অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড়ো হয়ে ওঠা। তারই সাথে একাহাতের লড়াইয়ে শিক্ষাজীবন তথা কর্মজীবনে প্রবেশ। একইভাবে জীবনযাত্রার পথ চলা। তার পাশাপাশি ভালোবাসার সঙ্গী হিসেবে চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা, শিল্পচর্চা, সঙ্গীতচর্চা এমনকি থিয়েটারের মঞ্চ তথা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চেও চলতে থাকে আনাগোনা। যখন যেটুকু সম্ভব ব‍্যক্তিগতভাবে ভালোবাসার চোখেই দেখা সবটা। এরই মধ‍্য দিয়ে জীবনের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া সমস্ত জীবনের উপরেই ছেড়ে দেওয়া। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন