শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

অর্ণব সামন্ত

 



অর্ণব সামন্ত * তিনটি কবিতা


বোহেমিয়ান


সুন্দরের বাকল খুলতে খুলতে প্রথম আলো 

হরিণী শিকার করে চিতাবাঘ জ্যোৎস্না রাতে 

শঙ্খ বাজালে শঙ্খগুলো দেয় সুরেলা প্রত্যুত্তর 

ক্যাসুরিনা ভেসে যায় সুনামির উচ্ছ্বাসে 

মিল্কি ওয়ে নেমে আসে পদপ্রান্তে গ্রহণে গ্রহণে

হাওয়ার ফিসফিসানি যুগপৎ সৃজন ও ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে 

কোষের বারুদ জেগে ওঠে , স্নায়ু পুরুষ্টু টলটল 

নয়নপথগামী জীবন ও জগতের কোলাহল

তানপুরা তিলক কামোদের ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে সুখ অনুভব 

আরশিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখে তার অজন্তা ইলোরা 

প্রাগৈতিহাসিক ব্ল্যাকহোলে দাউ দাউ আগুন পোড়ায় জীবন 

আবিষ্কারে আবিষ্কারে বেলা যায় চেনার মধ্যে কত যে অচেনা 

সুন্দর বাকল খুলেছে , খুলতে পেরেছে কি মন ?

বোহেমিয়ান শব্দগুলো উচ্ছ্বাসে ছোটে ইনহিবিশন ফেলে 

রেখে 

শঙ্খেই যুদ্ধ শুরু , শঙ্খেই যুদ্ধ শেষ 

জয় সমান সমান পরাজয় 

কখনও পরাজয় গ্রেটার দ্যান জয় 

নক্ষত্র মরে গেলেও সুপারনোভা 

নীহারিকা রহস্য চেপে ঠোঁট ঠোঁটে দীর্ঘ ভেজা চুমু দেয় !



আচমকা শরৎ 

          

আচমকা শরৎ যখন অকালবোধনে ডাকে 

দ্রাঘিমা দাঁড়ায় থমকে লাজে রাঙা , অবাধ্য লাস্যে 

লালিত্যে ধুয়ে দেয় সমস্ত সংস্কার , আদি অকৃত্রিম জাগে 

ভুলে যায় সমস্ত জগৎ , কায়া , মায়া , ছায়াপথ 

কথার গভীরে কথা ডুবে যায় , ভেসে ওঠে অমল ভাসানে 

আবার নির্ভেজাল প্রলয়ে উদ্ভাসিত হয় অবাধ সৃজন 

সমস্ত চুরমার করে ঘটে অভূতপূর্ব নির্মাণ 

পদ্মপাপড়িগুলি ফুটতে থাকে ক্রমশঃ আদরে সোহাগে 

ঠোঁটে ঠোঁটে অস্ফুট প্রতিজ্ঞা আলোকবর্ষে হেঁটে যায় 

হৃদয়ে হৃদয়ে অলকানন্দা কবি ও কবিতা অসহায় ভাসে 

প্রাণে প্রাণ ঢেলে প্রাণাধিক মাতে স্বরবর্ণ উচ্চারণে , স্থাপনে 

আধফোঁটা অশ্রুশিশির জমা হয় দ্রাঘিমার নয়নে 

অক্ষাংশ থাকে না দূরে ওভারল্যাপে শুধু বিদ্যুচ্চমক 

বিদ্যুচ্চমক 

আচমকা শরৎ এসে দাবি করে , মায়িক সম্পূর্ণ তুচ্ছ

আয় আমরা উৎসের স্রোতে অমায়িক ভাসি 

এই মরণে , এই সমাধিতে ডেকে নিই জীবনের চেয়েও বেশি 

জীবন 

শিউলি সাদা ভাতের সুঘ্রাণে ম'ম' গেরস্থালি 

ওতপ্রোত অভিষিক্ত দ্রাঘিমা অক্ষাংশ ভুলে 

এককের গানে মুক্তিবেগের উড়ানে চলে অন্তর্কথন !



পাগলির কিসসা 

       

পাগলি একইপ্রকার থাকে 

কূপমন্ডুকতাকে ভাবে সমুদ্র পিপাসা 

চৌকাঠে ঢাক্কায় ইগো , স্বতন্ত্রতা

অথচ চুরমার হয়ে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি হবার কথা ছিল 

নয়নে নয়ন পড়লেই গ্যালাক্সির 

গ্যালন গ্যালন আলোকসম্প্রপাত উথলায় 

মছ্ছকন্যা হওয়া তার হয় না 

ছেলেকে টিউশনে নিয়ে যায় , বরকে বিরিয়ানি দেয় 

দমকা হাওয়া সারা শরীর মন কাঁপায় 

তবু সে পাত্তা দেয় না , এক লাখি স্যালারিতে 

ভাবনায় স্যালাইন দেয় , নতুনভাবে বাঁচবার চেষ্টা করে 

কিন্তু নিজের কবর নিজেই খোঁড়ে 

কফিনে শেষ পেরেক নিজেই মারে 

চিতার মুখাগ্নি নিজেই করে 

প্রাণ দাও প্রাণ দাও বলে 

শবকে আঁকড়ায় আগুন আগুন ভালোবাসে 

যে আগুন তাকে বাঁচাতে পারত 

তাকে না ভালোবেসে যে আগুন ছাই করে 

তাতেই সমর্পণ করে নিজেকে 

তবু পাগলি ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে 

সেই পাগলের দিকে ছোটে 

জীবনকে খুঁজে পেতে , নিজে আস্ত একটা জীবন হতে 

                                                                           












**********************************************



                                  অর্ণব সামন্ত 

ইংরাজী ভাষার ছাত্র। ইংরাজীতে এম. এ ; বি . এড ।উনিশশো তিয়াত্তর সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীতে জন্মালেও স্কুল জীবনের পর থেকে শহরতলীতে আবাস । শিক্ষকতা পেশা , নেশা কবিতা লেখা । এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ , ৪টি - গোলাপ এবং , ঝরা সময়ের উপকথা , পারমিতা , বামাক্ষী । পেশাগত সময় বাদে গান শোনা , বইপড়া , ফোটোগ্রাফি , কবিতা লেখাকেই জীবন যাপনের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন