রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

নিবন্ধ * প্রদীপ কুমার দে

 



মানবপ্রেমের কবি রবীন্দ্রনাথ 

প্রদীপ কুমার দে


মানবপ্রেমী কবি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সারাজীবন ধরে তিনি মানুষের জয়গান গেয়েছেন। ওনার সৃজনশীল কাজেই আমরা মানুষকে পাই এক ঈশ্বরের ভূমিকায়। মানুষই ভগবান এ তথ্য তার রচিত কাব্যগ্রন্থে, গল্পে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে রয়েছে।


অতীতে, যখন এক মানুষ অন্য মানুষের চোখে সমাজে পরিচিতি পেয়েছিল ক্রীতদাসের ভুমিকায়। ঘৃণ্য, অস্পৃশ্য আরো নানাবিধ বিভূষণে বিভূষিত ছিল তারা। জাতপাতের দায়ে তাদের সেই অসহায়ত্ব বুঝিবা ঈশ্বরের বুকেও আঘাত করেছিল। স্বয়ং ঈশ্বরও তা চায়নি। তিনি এই সুন্দর পৃথিবী গড়ে কোটি কোটি জীবনে প্রানের সঞ্চার করেছিলেন, মানবজন্ম দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর উন্নত জীবন গড়ে ছিলেন, চেয়েছিলেন সুন্দর সৃষ্টির আনন্দে মাতোয়ারা হতে কিন্তু তার সেই সৃষ্ট প্রানের মানুষই নিজের স্বার্থে নিজদের মধ্যে বিভাজন তৈরী করে দিল। 


স্রষ্টার ইচ্ছে ছিল অন্য তাই তিনি এই ধরায় অবতীর্ণ হলেন। ঈশ্বরকে দৃষ্টির মধ্যে আনার চেষ্টা ব্যতিরেকেই আমরা রক্ত মাংসের এক মহামানবকে স্বাক্ষাত ভগবান হিসেবে পেয়ে গেলাম। আজ সেই মানব ভগবানের কথাই লিখতে চলেছি এই মানবপ্রেম নিয়ে আমার সামান্য ক্ষমতায় কিন্তু প্রবল মানসিক ইচ্ছায়।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত চণ্ডালিকা একটি উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্য। এটি ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয় এই "চণ্ডালিকা" নামক নৃত্যনাট্যটি। মানুষের মনের কথা তুলে ধরতে যে সমাকালীন সমাজদর্পণ তিনি কলমে আনেন তা হল ......


বৌদ্ধ সাহিত্যের কাহিনী থেকে 'চণ্ডালিকা'র মূল ভাবটি গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই নৃত্যনাট্যের ঘটনাস্থল শ্রাবস্তী নগরী। প্রভু বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আনন্দ এক গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে বিহারে ফিরে যাওয়ার সময় তৃষ্ণা বোধ করেন। তিনি দেখতে পেলেন একজন তরুণী কুয়ো থেকে জল তুলছে। সে এক চণ্ডালকন্যা, তার নাম প্রকৃতি। তার কাছে জল চাইলেন আনন্দ। কিন্তু তাকে তো সবাই চণ্ডালকন্যা বলে অস্পৃশ্য মনে করে। তাই সংকোচভরে প্রকৃতি আনন্দকে জানায় যে, সে চণ্ডালকন্যা আর তার কুয়োর জল অশুচি। আনন্দ তাকে বলেন যে, তিনি যে মানুষ, প্রকৃতিও সেই মানুষ। সব জলই তীর্থজল, যা তৃষ্ণার্তকে তৃপ্ত করে, স্নিগ্ধ করে। আনন্দের এই ব্যবহারে, সেইসঙ্গে তাঁর রূপে মুগ্ধ হল প্রকৃতি। নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবনা বদলে গেল তার। এ যেন তার নতুন জন্ম। তার হাতের এক গণ্ডূষ জল গ্রহণ করে আনন্দ তার জীবনের সমস্ত অপমান ধুয়ে দিয়ে দিল। আনন্দকে পেতে চাইল প্রকৃতি।

কিন্তু সমাজের কিছু বিভেদমূলক নিয়মে তাঁকে পাবার কোনো উপায় না দেখে সে তার মায়ের সাহায্য চাইল। তার মা জাদুবিদ্যা জানত। মন্ত্র পড়ে এবং জাদুশক্তির জোরে তার মা শেষ পর্যন্ত আনন্দকে টেনে আনল তার মেয়ের কাছে। তার মা প্রকৃতিকে তার মায়াদর্পণে দেখতে বলল আনন্দকে। প্রকৃতি দর্পণে  দেখল  কিন্তু আনন্দের ক্লান্ত, ম্লান রূপ দেখে সহ্য করতে পারল না প্রকৃতি। কোথায় গেল তাঁর সেই দীপ্ত উজ্জ্বল, স্বর্গের আলোর মতো রূপ! সে পা দিয়ে ভেঙে ছড়িয়ে ফেলল তার মায়ের মন্ত্রের সমস্ত উপকরণ। তারপর প্রকৃতি ও তার মা দু'জনেই ক্ষমাপ্রার্থনা করল আনন্দের কাছে। তাদের এই নতুন উপলব্ধির মধ্যে দিয়েই শেষ হয় রবীন্দ্রনাথের 'চণ্ডালিকা'র কাহিনী। ১৩৪৪ সালের ফাল্গুন মাসে 'চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য' নামে পুস্তিকা আকারে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ইংরেজীর ৭ মে ১৮৬১ আর বাংলার ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ সন আর বিদায়  ৭ আগস্ট ১৯৪১ বঙ্গাব্দ ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮। একাধারে  কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক হিসেবে তাঁকে পাই, বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” প্রভৃতি   অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প, ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

সারাজীবন তিনি মানুষের যে জয়গান গেয়ে গেছেন তার স্বাদ যে বড় অমৃত সমান!



তথ্যসূত্র -

গুগল উইকপিডিয়া 

রবীন্দ্র রচনাবলী 



****************************************************************************************************************





                             প্রদীপ কুমার দে


প্রদীপ দে বা পুরোনাম প্রদীপ কুমার দে, নামে কি আসে যায়, কর্মেই জীবনের পরিচয় যদিও নাম একটা লাগে সারাজীবনের স্বাক্ষী হিসাবেই, জন্ম যেভাবেই হোক হিসাব মিলিয়ে দেওয়াই ছিল যার কর্মজীবনের অঙ্গীকার, যেখানে অন্যের হিসাব মিলাতে গিয়ে নিজের হিসাব অগুছালো হয়ে যায়, তাতেও জীবনযুদ্ধে খামতি আসে না, টগবগিয়ে ছুটে চলে তার মনের সাধ আর ইচ্ছেগুলো।

পিতা ছিলেন শিল্পী মানুষ স্বর্গীয় বনমালী দে আর মাতা তাঁরই সহযোগী স্বর্গীয়া মীরা দে।
মধ্যকলকাতার বইপাড়ায় যার জন্ম তার হাতে কলম উঠে আসবে এতে আর চিন্তার অবকাশ কোথায়? হাজারো প্রতিকূলতা কাটিয়ে অসম লড়াই চালিয়ে আজও কলমকে মনের মাধুরী মিশিয়ে জাগ্রত রাখার আপ্রান প্রয়াস যে জারি রেখেছি তার অকাট্য প্রমান আমার স্বরচিত আটটি গ্রন্থ প্রকাশের পর প্রাপ্ত আনন্দ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন