কবি প্রদীপ ঘোষ-এর দুটি কবিতা
খুঁজো না আমায়
প্রমত্ততায় আঙুলগুলো প্রবল পুরুষ হয়ে
নিজের-ই গলায় চেপে বসতে চাইছে যখন !
আমি জলের অভিধান পাঠ করি।
জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকিয়ে ছিল আলো,
তবুও স্মৃতিরা মেঘমেদুর। আকাশ আমায় শিখিয়েছে
না এ ভূমি আমার, না আমি এই ভূমির। তখন
অন্ধকার বড় নিবিড়, জমকালো। আগুন আর
আলোর তো কোনো ছায়া থাকে না বলো ?
জল কে চেনাই জলের মুকুর।
মেঘ আমাকে জিরাত চেনাতে রেখে গ্যাছে
গাঁটছড়া আউশের কুশাঙ্কুর।
যদি চাও, তারল্যের উপমায় জল
দেখতে পারো। কাঠিন্য পরখ করতে চাইলে
জাগিয়ে রেখো একটি তুহিন রাত। কখনও ভোরে
দুয়ার খুলে দেখো নক্ষত্র বিকীর্ণ বাষ্পীত আলোর রেণু ;
ঘাসের ডগায় কুয়াশার আনত অভিঘাত.....
পূরবী রাগ
সারমেয় আর ছায়া-র মতো প্রভু ভক্তি-র
নিদর্শন আর হয় না জানো ! এক্ষুনি চলে যেতে-ই, ইশারা
তো করোনি ! তবু তোমার ছায়া-টি ও চলে গ্যাছে।
বাতাসের মর্মর শতধায়, গুলমোহরের ফুল কুণ্ঠিত,
স্থবির রেখে। যেভাবে পুকুরের জলে ঢিল পড়লে
তিরতিরে ঢেউয়ের উদ্বেল অনুরণন ! তখনও মন
ক্যামনের বেলোয়ারি চুড়ির এলোমেলো নিক্কণের
অনুপ্রাস আমায় বলতে বলে.... 'আজ যানে কি জিদ
মাত করো, ইঁয়ুহি পহেলুমে ব্যইঠে রহো'।
গাঢ় সন্ধ্যায় সময়ের ব্যস্তানুপাতে বৃষ্টি পড়ছিল
এতোলবেতোল | পুকুরের পাড় ভাঙ্গার শব্দ লাবডুব
লাবডুব। লাইটপোস্টের নিচের বৃষ্টি ফোঁটাগুলোর
আলোর স্নানে আমার দৃষ্টি টানে। অকারণেই কত না
শান্তদিনের এভাবে-ই ফেরি পারাপার।
অসম্ভবের কোনো সম্ভাবনা নেই জেনেও
চৈতালি হাওয়ায় কোয়েলা গাইবে সুরে ; বায়স স্বরলিপি
লিখবে রোজ ভোরে। বেগানা পুকুরের শ্যাতলা পৈঠায়
স্মৃতির স্মারক শেতলা জলে পা ডুবিয়ে। কুয়াশার
চাদরে কচুরিপানার পার্পল রঙা ফুলে আমার মন
লুকনোর গহীন সবুজবন। কে য্যানো বললো ও ছেলে
আর কতক্ষণ ?
ওদিকে এয়োদের বৃন্দগান। কইলো বেলা যে
বয়ে যায় জলকে চল। পল্লবে পল্লবে সহস্র নিঃস্ব তারার
তিমির আর রূপালী ঝিলমিল। পূরবী রাগে মাতোয়ারা
সাঁঝের হৈমন। থেকে যাওয়া মানায় কীভাবে বলো ?
নূতন কাপড় গহনায় পঞ্চ ব্যঞ্জনে অধিক রাত্রে আজ যে
তোমার অধিবাসের আয়োজন....
********************************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন