পিনাকী ঠাকুরের কবিতা.... বিস্মরণ আর অবিস্মরণের মধ্যিখানে অসেতুসম্ভব সেতু
পারমিতা ভৌমিক
কবি পিনাকী ঠাকুরের কবিতায় চলমান জীবনকে দেখি জীবনেরই মাপে । খেলাঘর জীবনে, অভিযাত্রী মানুষ, প্রেম, যুগযন্ত্রণা এসেছে শ্লেষে, পরিহাসে, ভালোবাসায়, সহমর্মিতায়, খেলায় খেলায়, গাঢ় প্রেমে, সাবলীল চলনের স্বকীয়তায়। জীবন জেগে থাকে তাঁর কবিতার নিজস্ব বাঁকের ভিতরে নদীর মতন, নিজস্ব প্রবহমানতায় ।
এসব দেখেছি আমি কবিবন্ধু উমাবন্দোপাধ্যায়ের চোখ দিয়ে কেননা পিনাকী ঠাকুরের কবিতা সেভাবে আমার পড়া ছিল না।
তবুও আমার লেখার আগ্রহে উমা আমাকে কবি পিনাকীর লেখা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। আমিও ভালো ছাত্রী। পড়ে নিলাম নির্বাচিত পিনাকী। আমি উমার কাছে কৃতজ্ঞ।
এখন সরাসরি পিনাকীর প্রসঙ্গে আসছি। কি ভাবছি সেটুকু শেয়ার করতে চাই পাঠকবন্ধুদের সঙ্গে ――
"সত্য সুন্দরকে ওরা এক টুকরো জমিও দেবেনা ।"
( গ্যালিলেও : বিদায় শম্ভু মিত্র )
এমনতর উপলব্ধি এই কবির।
কবিতায় উঠে আসে যে ব্যক্তিত্বের ছবি তিনি স্টেজে নামিয়ে আনতে পারতেন তাঁর অসামান্য অভিনয় দক্ষতায়, সেই কাল, আবহ এবং চরিত্রটিকেও । শম্ভু মিত্রও মিশে যান গ্যালিলেও হয়ে, বলেন কবিকন্ঠে" যা যা শিখিয়েছি ভুল।বাঁচতে দাও। পৃথিবী ঘুরছে না" কাল মিশে যায় কালান্তরে~ শম্ভু মিত্র ওরফে গ্যালিলেও ।
পিনাকী ঠাকুরের হৃদয়ভেদী উচ্চারণে উঠে আসা শ্রমিক জীবনের অনুভব ~ 'নববধূর রেশমি শাড়িখানা' বোনা হয় তাঁতির শ্রমের মূল্যে। অথচ তাঁতির~' খিদের রাত। টানাপোড়েন । ভোর।'
( তাঁতঘর )
উঠে আসে একটা কাল। আগুন, বারুদ, আন্দোলনের উত্তাল সময় ।
' "মার মার" শব্দ করে যারা নলে টোটা ভরেছিল তাদের না-ই বা চিনলে। স্ব- ইচ্ছায় গম্বুজে সওয়ার হয়েছ----
চূড়ায় উঠে বলো তবে,'দেখে নিবি? দ্যাখ্
তোদেরই দেশের মাটি এই দৈত্য পেটে ধরেছিল।'
( অভিযাত্রী ) (বিষ্ণু হালদারকে) )
এক সময়ের রাজনৈতিক সমাচার দর্পন তাঁর কবিতা ~
' মরে যাই নির্বাচন ধুয়ে আপনি রঙের শরবত
খেয়ে নিন ঢুকু ঢুকু,ছেলের পেট্রোল পাম্প,শালার পারমিট...
আচ্ছা থাক তবে থাক..... ভারত ভিক্ষুক নাকি! ধার!'
(ভোম্বল সর্দার)
( খগেন্দ্রনাথ মিত্র,শতবর্ষে বাংলা তরুণ )
আছে ফুটবল-- সে সময়ের ক্রেজ।
' বিশ্বকাপ।মারাদোনা। বুটপরা পাঁচটা ম্যান
একজনের পায়ের ওপর দশটা পা ঝাঁপ লাগায়'
( ?)
আশ্চর্য কুশলতায় কবি ধরেন মিডলাইফ ক্রাইসিস তাঁর কবিতায়
' পঞ্চাশের পর আসে শীতবোধ। ভয়। মাথাধরা।
কেবল চোখের খিদে। খাবারে বসলেই পরাজয়।'
টুকরো ছবির কোলাজে পঞ্চাশোর্দ্ধ জীবন ~
'অবসাদ। শীত করে।টাইবাঁধা গলায় পৌরুষ।
স্মৃতি বিস্মৃতির ঘাম । সাবানের গন্ধ। ভগবান ।'
শেষ লাইনে~
'ভয় নেই, বাজারে ভায়াগ্রা এসে গেছে।'
(মিড লাইফ ক্রাইসিস)
অপূর্ব শৈলী কবির ।
সমসময়ের শিক্ষাজগতও ধরা পড়ে কবির কাব্যজালে, নিপুণ কৌশলে~
' কো-এড স্কুল।কুহুর দল। পাশ করান নতুন স্যার।'
( স্কুল সার্ভিস পাবার পর দেবর্ষি )
আর থাকে প্রেম তরুণ কবির চোখে। সমাজের অলিগলি ঘুরে যাওয়া টুকরো কথোপকথনে প্রেমকাব্য ।
' অমন ইংরেজিতে ধমক উঃ হিরোইন
ডাকাতের হাতে পড়েছে পাজি বদমাসের হাতে ওই
শিমূলগাছটা অব্দি চলো না তারপর....'
(খেলাঘর)
অথবা~
ও হ্যাঁ ,আগুনের নীচে সে ছিল আগুনরঙ মেয়ে।
কেউ বলল,'কালি খুব পছন্দ আমার',অমনি সোনার বরণ
রোদ্দুরে পুড়িয়ে আসে,'এ্যাই মনে ধরেছে, কিশোর?'
(হিরোইন)
আছে সুদূরভাষিণী প্রেমে~
'সারারাত জেগে চিঠি লিখেছিলে ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারিনি'
( সুদূরভাষিণী )
পিনাকী ঠাকুরের কবিতা রচনার আটপৌরে ভঙ্গিটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য।
এটিকে উপসর্গ বলতে পারি। যাপন থেকে উঠে আসা সুখ দুঃখ ক্ষোভ অপ্রাপ্তি প্রাপ্তি সবই কখনও কৌতুকময় কখনওবা অন্য গভীরতায় কবির অন্তর আত্মা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
তিনি ভাষা ব্যবহারে কৃতবিদ্য কবি।
ভাষা ব্যবহারে পিনাকী একাগ্র ও বেগময় । সে ভাষা কখনো জীবনের শ্লথতা বা অবসন্নতাকে স্পর্শ করেনি। তাঁর নির্বাচিত ডিসকোর্সগুলো খাদহীন।অন্যান্য আধুনিক কবিতার মতো তাঁর কবিতা আত্মকথনের চড়া সুরে সুর বাঁধেনি বরং তা বর্জন করেছে।
এখন , পিনাকীর "অশরীরী "কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা একবার পড়ে নেব।
এই কবিতাটিতে খণ্ড খণ্ড যাপনচিত্র এসে তৈরি করেছে অন্য এক অপূর্ব নির্মাণ। আমি একেই বলতে ইচ্ছে কবি word painting এর জাদু। চিত্রগুলো হয়ে উঠেছে এক একটি রূপচিত্র। পিনাকী রূপকৃ্ৎ-শিল্পী। সেসব বৈশিষ্ট্য একটু দেখে নেব। দেখুন চিত্রসজ্জা――
"কোরা কাপড়ের খুঁটে নতুন আতপচাল,/তোমাদের গাছের বেগুন / বেঁধে দিয়ে
বলেছিলে : 'হরিশচন্দ্রের শালা , ও কথক আর নয়/পূর্ণিমার সন্ধ্যায় ফিরে এসে শ্রীরাধার গল্প খানি বলো"
আবার আরেকটি চিত্র দেখে নেব―-
"আসশ্যাওড়ার ঝোঁপ, বাঁশবন পাড়ি দিতে দিতে মাঝরাতে / কত মহাজনপদ একা গাই । সন এগারোশো সাত। /এই রাঢ়বাংলার আঠালো কাদায় ডুবে গেল"
পরপর চিত্রগুলো সাজানো পিনাকীর কবিতা দেহে যেন অন্য অলংকরণ হয়ে উঠেছে। এ যেন একটি গহন গহনা, জড়োয়ার গহনা―
"আমার সামান্য গাথা । বর্ষায় ঘর ভেসে/তোমার আতপ পচে ওঠে, জ্বরে কাঁপি, ভুল বাকি ঘোরে / আমার নিজের গান মুছে দেয় ভারী হাতে মহাপদাবলী"
পিনাকীর কবিতার বিভিন্ন স্তবকের মধ্যে মধ্যে মুদ্রণহীন একটা শূন্যতা কিম্বা বলতে পারি প্রয়োজনীর ব্যবধান সংজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনেক অর্থবহ হয়ে ওঠে প্রায়শই। বস্তুত এই Space টুকুতেই চিরায়তের সঙ্গেে বর্তমানের যোগসূত্র রচনা করাতে পিনাকীর দক্ষতা প্রশংসনীয়।
পিনাকী–নির্বাচিত কাব্যিকনির্বাহণ গুলো তাঁর কবিতার ভাষা শরীরকে কেন্দ্র করেই পাঠক ও শ্রোতার মধ্যে আকর্ষণের সেতু বেঁধেছে। তাঁর কাব্যিক নির্বাহণগুলোর সঙ্গে মিশে আছে মূলতঃ সঞ্চারক নির্বাহণ। নির্বাচনের মাত্রা ও মিশ্রণরীতির নিজস্বতাতেই পিনাকীর রচনা সমকাল থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র। কবি পিনাকীর কবিতা পড়লে বোঝ যায় কীভাবে তার কবিতা অন্যান্য genre বা বর্গ রচনা থেকে স্বতন্ত্র খাতে চলছে।
পিনাকী ঠাকুরের আর একটি কবিতা পড় নেব। সে কবিতার নাম -'শান্তিনিকেতনে বৃষ্টি ।কাব্যগ্ৰন্থের সদর নাম চুম্বণের ক্ষত। ―――
"আষাঢ় যায়, শ্রাবণও হল শেষ, /ব্রাত্যজনের রুদ্ধ এস. এম. এস../. বর্ষা নেই, আজকে শরৎ শুরু/ পাওয়ার কাট—কুঁচকে গেছে ভুরু/
ভুবনডাঙার আকাশ মেঘলা, বেজেছে ডম্বরু/
হঠাৎ যত রুদ্ধ আষাঢ়-শ্রাবণ/
কোত্থেকে আজ? তুমি, তোমার মা-বোন/ ঘুরতে এসে আটকে পড়লে ঘরে/ ভুবনডাঙার অচিন তেপান্তরে.../
ভুলেই যাওয়া বৃষ্টির গান তোমার গলায় ঝরুক!"
দেখুন, ঘুরে ফিরে সেই অক্ষরছবি বা wood painting এর কথাটিতেই আসতে হল। পিনাকী কিভাবে ছবিগুলো সাজাচ্ছেন আমরা দেখবো――-
"আষাঢ় যায়, শ্রাবণ হল শেষ," ছবিখানি যেন একটি নিসর্গ-হাইকু। (হাইকু বলতে আমি কিন্তু form -এর কথা বলছি না। শুধু চিত্রধর্মের কথা বলছি। জাপানী মোরাস-এর সঙ্গে বাংলা মেলা শক্ত।)
এরপরে পরপর খণ্ডছবি আসছে একটা যেন quick sequence –এ , ―――
"ব্রাত্যজনের রুদ্ধ এস. এম. এস..." "বরষা নেই; আজকে শরৎ শুরু"।―――
ব্যাপারটি কিন্তু লক্ষ করার মতো। আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকাল। অভিসরণের কাল।
সেই বর্ষা শেষ হলে শরৎকাল শুরু।
এর মধ্যেই পিনাকী এমন একটি ছবি দিলেন যা মানবপ্রকৃতি ও নিসর্গ প্রকৃতির একরূপতাকে প্রকাশ করছে। বর্ষার অভিসারও বর্ষা চলে গেলে শেষ হল । আধুনিক উপহাপনায় কবি আনলেন এস এম এস- এ তরঙ্গবাহিত অভিসরণের ভাবনা।
যেন বিরহী যক্ষের মেঘদূতের চলাটিই রুদ্ধ ও ব্রাত্য হয়েছে। অমরাবতীতে আজ অন্য উৎসব।
এরপরেই কবি উপস্থাপন করলেন একেবারে আধুনিক জীবনের ছবি ――
"পাওয়ার কাট ―কুঁচকে গেছে ভুরু"
পিনাকী ঠাকুরের ব্যবহৃত পারোল (Parole) তাঁর নিজস্ব অভিব্যক্তির অনুকূল হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও যে তা 'লাঁগ' (Langue) কে ছুঁয়ে একটা বড় ভাষা-সমাজের হয়ে ওঠেনি তা কিন্তু বলা যাবে না।
তাঁর এই ভাষিক structure কেই খুঁজতে হবে।
এখন আরও একটি কবিতায় আসবো―― "জিন্দেগী এক সফর"। এখানে দেখেছি পিনাকীর ভাষার স্বাতন্ত্রে বিদ্যুৎ ঝটকা আছে-"শরীর তো নেই আগের মতো জঙ্গি,"
"তুমিই ছিলে আমার হুরি পরি?"ইত্যাদি পংক্তি উল্লেখ্য।
অনায়াস সাবলীনতায় ব্যক্তিগত যাপন আর আরব্য গল্পরসকে পিনাকী গাঁথলেন নিজস্ব পারোলে।
বলা বাহুল্য কতগুলো "প্রোয়ারেটিক" কোড এই করিতটির ঘটনাসজ্জায় ক্রিয়াশীলতা সূচিত করছে। কবিতার প্রথম ও শেষ পঙতিতে একট সূক্ষ্ম বৈপরীত্য গড়ে দিয়েছে ঐ কোড।
এছাড়া বিষয়গত ভাবেও, কোথায় যেন সম্পর্কের একটা অদমিত যৌনবোধ প্রতীকী উপস্থাপনায় ধরা দিয়েছে।
পিনাকীর কবিতায় একটি contextual stytistics ―এর অন্তর্বয়ণ লক্ষ করছি। বিশেষভাবে এ প্রসঙ্গে "আদিম গ্যালারি" কবিতাটি পড়ে নিতে পারি।
――
"ঘোড়া এঁকেছিল তারা। শিকার উৎসব এঁকেছিল।/
গুহার দেওয়াল জুড়ে সেইসব শিল্পীদের আদিম গ্যালারি।/ আবছা আলো-অন্ধকার। এক কোণে জল চুঁইয়ে পড়ে।/ ময়ূর। বাঘের ডাক। হরিণ পালাচ্ছে। আদি মানবীর স্তন।/
তাঁবুতে হ্যাজাক। ট্রাঙ্ক। ক্যাম্প খাট। স্টোভে চা বসানো।/
চারজন গবেষক। দুজন পুরুষ। দুটি মেয়ে।/ চারজনের তিনজন খুব ব্যস্ত মাপজোকে। ব্যস্ত ল্যাপটপ।/ চায়ের দায়িত্ব ভুলে শুধু অন্ধকার দেখছে কার একা চোখ?/
কেউ ঘোড়া এঁকেছিল। হরিণ। বাঘের থাবা। রং খুঁজে ফিরে/ আদিম বৃষ্টির রাতে পাথরের বিছানায় রক্ত, লাল রং..."
――এসব কবিতার রচনাকালিন অন্তর্বয়ান কবির চারপাশে গড়ে তুলেছে কতকগুলো ভাষিক সত্তা আর তার ফলে কোথাও যেন নির্বাচিত অধিবাচনগুলো হয়েছে প্রসঙ্গবদ্ধ ও সচল।কবিতাকে পিনাকী কখনও ভেঙেছেন স্তবকে,
কখনওবা অধিবাচনিক একক--এ।
এই বিশ্লিষ্টতাই তাঁর কবিতার সংলগ্নতাকে অনেকবেশি বৈশিষ্ট্যময় করেছে।
'আদিম গ্যালারি'---কবিতা।থেকে একটিমাত্র শব্দ নির্বাচন করা গেল---'ঘোড়া'।
এককভাবে কোন শব্দই কোনো সংলগ্নতাতেই কোন সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারে না।এইজন্য পিনাকীর কবিতায় এসেছে অনুষঙ্গের সঙ্গে প্রতিবেশী কিছু অনুষঙ্গও। সেগুলো সাজিয়ে নিচ্ছি ----
ঘোড়া
শিকার উৎসব
অঙ্কন
গুহার দেওয়াল জুড়ে
গুহার কোণে জল চুঁইয়ে পড়ছে
আবছা আলো অন্ধকার
ময়ূর
বাঘের ডাক
হরিণ পালাচ্ছে
আদি মানবীর স্তন
----এইগুলো সব একেকটি প্রতিবেশী অনুষঙ্গ।
একেকটি স্বতন্ত্র word--painting-----সবকটি মিলে তৈরী হল আদিম গ্যালারি।
আরও ছবি সাজালেন পিনাকী---
তাঁবুতে হ্যাজাক
ট্রাঙ্ক
ক্যাম্পখাট
স্টোভে চা বসানো
চারজন গবেষক
দুজন পুরুষ, দুজন নারী
মাপজোকে ব্যস্ত সবাই
ব্যস্ত ল্যাপটপ
অন্ধকার দেখছে কার একা চোখ?
――এও একটি অনুষঙ্গিত স্বতন্ত্র ছবি যা কিন্তু প্রথম স্তবকের সঙ্গেই সংলগ্ন।যেকথা বলতেই হয় তা হল এই যে, একেবারে শেষের পংক্তিটিই আসল কবিতা।হেঁয়ালী ওখানেই।
ঐ একটি পংক্তিতেই পিনাকীর কবিসত্তা ঝিকিয়ে উঠেছে।
শেষ দুলাইন স্টেটমেন্টের মতো মনে হলেও সমস্ত ছবিটির এইইই একমাত্র ক্যানভাস।
পিনাকীকে জানতে হলে ,তাঁর কবিত্বকে বুঝতে হলে আবার একটি কবিতা পড়ব---'মাটিগাড়া'।
"স্নানঘর থেকে নগ্ন পরিটা তোয়ালে চাইল, তাকে/ চোখ তুলে আমি, সত্যি বলছি, দেখিনি। /তারপর? শুধু জলের শব্দ। সাবান। মিষ্টি গন্ধ। /সময় চলেছে টিকটক আর ঠিক দশটায় সেমিনার।/
সারারাত কারও পায়ের শব্দ। পরিবেশ আধিভৌতিক। /ভূতে বিশ্বাস করি আর না-ই করি—/ সারাদিন শুধু ক্লাস-সেমিনার-লাইব্রেরি-নোটস্-অফ ডে/
একটু দূরেই ধ্যানী হিমালয়। পাহাড়ে যাবার বদলে,/ পালিয়ে এসেছি... জানি না... বলছি.../
নগ্ন পরিটা? স্বপ্নের!"
――এই কবিতাটির আধিবাচনিক সংলগ্নতার নির্মাণে বিকল্পন (substitution) এবং অনুক্তগঠন (ellipsis) গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।অধিবাচনের গঠনে পিনাকী যেমন সংযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তেমনই বিরতিকেও তাৎপর্যময় করেছেন। স্তবকের মধ্যে মধ্যে তাই বুঝি কিছুটা মুদ্রণহীন শূণ্যতা মূল কবিতাটির সংঞ্জাপনের ক্ষেত্রে অনিবার্য অর্থ এনেছে।
প্রথম স্তবকে বর্ণিত হয়েছে নারীরূপ।
মিশ্র অধিবাচনিক (mixed discourse) প্রকাশে কখনও এসেছে পরীর কথা, কখনও তা এনেছে ছমছমে আধিভৌতিক স্পর্শ।প্রথাসিদ্ধ উপমা একই সাথে গ্ৰহণ ও বর্জন করে পিনাকী একটা অদ্ভুত বিপরিচিতিকরণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন পাঠককে।
এই Norm--ভাঙা প্রকরণকৌশলেই পিনাকীর স্বাতন্ত্র্য ও সিগনেচার স্পষ্ট।
সমগ্ৰ পিনাকীকে ধরে রাখতে হলে একটি তিনফর্মার প্রবন্ধ লিখতে হয়।সেটির পরিসর ও সময় সত্যিই অকুলান। তাই শেষ করতেই হচ্ছে।পাঠককে নতুন করে পিনাকী ঠাকুরের কবিতা পড়তে বলছি।পিনাকীর কবিতায় প্রচুর স্পেস ও আমার আলোচনাতে অনেক ফাঁক--ফোকর রয়ে গেল।উৎসাহী ও ঋদ্ধ পাঠকের কাছে অনুরোধ, আপনারা সেই ফাঁকফোকর শনাক্ত করুন ও পূর্ণ করুন।।
*******************************************************************
এইভাবে reductive discussion এটাই প্রমাণ করে যে, যে নিবিষ্ট
উত্তরমুছুনপাঠ একজন কবির অন্বিষ্ট আপনি তাকেই আপনার অক্ষরে লালন করেন।
প ঁপিনাকী ঠাকুর অত্যন্ত নীরব, প্রায় লোকায়ত অপিচ নাগরিক। আপনি
ওঁকে বিস্মৃতির আপাত অন্ধকার থেকে আলোয় তুলে নিলেন। আমার শ্রদ্ধা
নেবেন।
আপনার এই গভীর বিশ্লেষণ আরও ভালো ভাবে চিনতে শেখায় বুঝতে শেখায় । শ্রদ্ধা জানাই ।
উত্তরমুছুন