সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রিয় কবি প্রিয় কবিতা * সুভাষ মুখোপাধ্যায়





এই বিভাগে আমরা এমন দু-একটি  কবিতা পড়ব , যে কবিতা আমাদের অন্তর্লোকে বিস্ময় সৃষ্টি করে শুধু নয় ,আমাদের কবিতা পড়ার আনন্দে অবগাহন করায় , প্রতি দিন  প্রতি মুহূর্তে | এই পর্যায়ের কবি যে সবসময়  বিখ্যাতই  হবেন , এমনটা নয় , তিনি অখ্যাত তরুণ তরুণতর কবিও হতে পারেন , কিন্তু ,শর্ত একটাই ,কবিতাটি যেন আমাদের মর্মলোক স্পর্শ করে | স্বরবর্ণ / ৬    সংখ্যায় 'প্রিয় কবি  প্রিয়  কবিতা ' বিভাগের কবি হলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় |






পাথরের ফুল

( মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর লেখা )

সুভাষ মুখোপাধ্যায়


 ফুলগুলো সরিয়ে নাও,

 আমার লাগছে।

মালা জমে জমে পাহাড় হয়

ফুল জমতে জমতে পাথর।

পাথরটা সরিয়ে নাও,

আমার লাগছে।


এখন আর

আমি সেই দশাসই জওয়ান নই।

রোদ না,জল না,হওয়া না ----

এ শরীরে আর

কিছুই সয় না।


মনে রেখো

এখন আমি মা-র আদুরে ছেলে-- 

একটুতেই গলে যাব।


যাব বলে

সেই কোন সকালে বেরিয়েছি--- 

উঠতে উঠতে সন্ধে হল।

রাস্তায় আর কেন আমায় দাঁড় করাও?


অনেকক্ষণ থেমে থাকার পর

গাড়ি এখন ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে চলছে।

মোড়ে ফুলের দোকানে ভিড়। 

লোকটা আজ কার মুখ দেখে উঠেছিল?


ঠিক যা ভেবেছিলাম

হুবহু মিলে গেল।

সেই ধুপ,সেই ধুনো, সেই মালা,সেই মিছিল---

রাত পোহালে

সভা -টভাও হবে।

(একমাত্র ফুলের গলায় জড়ানো কাগজে লেখা /নামগুলো বাদে)

 সমস্তই হুবহু মিলে গেল।

মনগুলো এখন নরম ---

এবং এই হচ্ছে সময়।

 হাত একটু বাড়াতে পারলেই

ঘাট -খরচাটা উঠে আসবে।


এক কোণে ছেড়া জামা পরে

শুকনো চোখে 

দাঁতে দাঁত দিয়ে 


ছেলেটা আমার 

পুঁটুলি পাকিয়ে বসে।

বোকা ছেলে আমার

ছি ছি এই তুই বীরপুরুষ?

শীতের তো সবে শুরু---

এখন কি কাঁপলে আমাদের চলে?


ফুলগুলো সরিয়ে নাও,

আমার লাগছে।

মালা জমে জমে পাহাড় হয়

ফুল জমতে পাথর।

পাথরটা সরিয়ে নাও,

আমার লাগছে।


 ৩

ফুলকে দিয়ে

মানুষ বড় বেশি মিথ্যে বলায় বলেই 

ফুলের ওপর কোনোদিনই আমার টান নেই।

তার চেয়ে আমার পছন্দ 

আগুনের ফুলকি

যা দিয়ে কোনোদিন কারো মুখোশ হয়না।


ঠিক এমনটাই যে হবে,

আমি জানতাম।

ভালবাসার ফেনাগুলো একদিন উঠবে উঠবে 

এ আমি জানতাম।

যে বুকের 

যে আধারে ভরে রাখি না কেন

ভালোবাসাগুলো আমার

আমারই থাকবে।


রাতের পর রাত আমি জেগে থেকে দেখেছি 

কতক্ষণে কিভাবে সকাল হয় 

আমার দিনমান গেছে 

অন্ধকারের রহস্য ভেদ করতে। 

আমি এক দিন এক মুহূর্তের জন্যেও 

থামি নি।

জীবন থেকে রস নিংড়ে নিয়ে 

বুকের ঘটে ঘটে আমি ঢেলে রেখেছিলাম 

আজ তা উথলে উঠল।


না।

আমি আর শুধু কথায় তুষ্ট নই

যেখান থেকে সমস্ত কথা উঠে আসে 

যেখানে যায় 

কথার সেই উৎসে

নামের সেই পরিণামে,

জল- মাটি -হাওয়ায় 

আমি নিজেকে মিশিয়ে দিতে চাই।


কাঁধ বদল করো।

এবার

স্তূপাকার কাঠ আমাকে নিক। 

আগুনের একটি রমণীয় ফুলকি

আমাকে ফুলের সমস্ত ব্যথা 

ভুলিয়ে দিক।।



1 টি মন্তব্য:

  1. যতবার এ লেখা পড়ি একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ।
    ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে
    লাগছে, আমার লাগছে খুব , ফুলগুলো সরিয়ে নাও এবার ।

    উত্তরমুছুন