কবিতাগুচ্ছ * দীপ্তিশিখা দাস
রাত জাগা ঢেউ
সব পথ থামিয়ে
তোমায় ছোঁব বলেই ছুটে চলেছি
রাত জাগা ঢেউ হয়ে।
দু-দণ্ড শান্তি নেই কোথাও
ঘুরে ফিরে যায় আর আসে
যে যাযাবর , তারই ঘুম হারানো
রাতের নেশায় সীমান্ত জুড়ে খুঁজে যায় প্রেম -----
তুমিই তো সেই, যাকে চেয়েছি
অবচেতন কোনো গাঢ় ঘুমে!
থামিনি , যত পথ শুধু হাহা ক'রে
ডাক দিয়েছে।
টলমলিয়ে ওঠে চারদিক
খানিক মুখ তুলে চেয়ে থাকি,
আবার ডুব দি অতলে ---
সকল প্রেম যেভাবে চেয়েছিল তোমায়
আমি তার রঙ ধরে রেখেছি ঝিনুকের বুকে।
আমার ভেতর তুমি ভেসে বেড়াও
তাতে তো কোনো বিষ নেই
যা আছে তা সব তোমারই
তাকে দেখে যদি পালাতে চাও
অন্য কোনো গ্রহে
তখনও নিথর আমি,'
বিষ প্রেম ছড়িয়ে দেবো, প্রেমাসক্ত
তোমার রক্তের কণায় ---
2.
কে এল কে গেল তার--
হিসাব পারিনি মেলাতে
নিজেকে মেরেই তো নিজেই জন্মেছি চিরকাল।
এ জন্মে কেবল নেই শরীর
মৃত্যুরও নেই কোনো পরিচয়।
আমার নেই আশ্রয়
তোমাতে খুঁজেছি যা
ঠিকানা তাতেও মেলেনি এখনও।
তুমি কার কাছে হয়ে আছো ঋনি?
বিক্রি করেছো বাড়ি ঘর!
যার দিকে চেয়ে ছুটে চলেছো আরো দ্রুত
তারও তো শেষ আছে
তুমি দাঁড়াও এবার।
যাব বলেই তো আসা
মিথ্যে কাড়াকাড়ি।
কত জায়গা থেকে যায় ফাঁকা
কোথাও লোকের ঠেলাঠেলিতে
ভেঙে যায় নাটক
প্রয়োজনে একাই চলে অভিনয়
একা বাজায় তালি।
মুড়ে নিংড়ে পিষ্ট করে দিলেও
এর শেষ হবে না জানি
যুক্তি আদেশ সাজে না আর
তোমাকে ঘিরেই তো মৌমাছিদের বাস
তারা মধু চায়।
যুক্তি বোঝে না
ওরা মাপঝোপ করে না
আমি কি তাদেরই একজন?
কেবলইসংগ্রহিকা !
বাউলের গানে ভর্তি সংগ্রহশালা
হেঁটেছে যুগান্তরের পথ ধরে
তারই পিছনে কারা যেন ডাক দেয়
ফিরে যেতে চাইলেই কি ফেরা যায় শৈশবে
যেখানে পুকুর পাড়ে
মাছ ধরে জেলে
সেখানেই ভালোবাসা হাঁ করে তাকিয়ে আছে আজও।
তুমি কি জলে নেমেছ কখনো?
যেদিকে চেয়েছো বর্ষন নেমেছে।
কী চাও? কাকে চাও?
কার শরীর ভিজিয়ে
তাকে কাঁপুনি জ্বর দেবে উপহার।
বাইতে বাইতে মাঝদরিয়া
এখানে কী ছাড়বো কী ধরবো
তা একান্তই আপনার
দূর কি তবে আরো দূরে যাচ্ছে সরে?
3.
একটু আধটু অবুঝ হও এবার
গোছানো জিনিস সব সময়
মন জোগায় না।
কাহিনী হোক বা কথা
আমার এলোমেলো থাকা
ভীষণ পছন্দের।
দূরত্ব বাড়বে, কাছেও আসবে
সেখানেই তো বেঁচে থাকা ।
সব পর্ব তবে কি আজ শেষ?
এক এক করে যা গড়েছি
কবে থেকে তাকে নিয়ে চলেছি
হরিণীর মতো জঙ্গলে
শেষ আর কতদূর।
আমি ইচ্ছে করেই নিয়ম ভেঙেছি
বিলিয়েছি প্রেম
তোমাকেও জুলুম দেখিয়েছি অনেক বেশি
এখানেও জুলুমবাজী আছে।
নিজেই হারাবো নিজেকে
কখনো জেতাবো আবার।
জিতে নিতে দ্বিধা নেই.....।
4.
জীবন ঝাঁঝালো
প্রেমে রসালো আস্ত গভীর ঘন খাদ
যার রহস্য ভেদ করা যায় কিছুটা
আর কিছুটা থেকে যায় বাকি।
প্রেম চায় আরো চায়
কোথায় পাবো তাকে, যার জন্য
জোর করে জোয়ার এনেছি
ঝড়ের রাতে।
ক্ষয় হয় কতো মুখ,
কতো ফুলের বাগান ভাঙে
গর্জে ওঠে সুনামি।
সারাদিন ধরে নিঃশব্দে পোড়ে
ভেতরের আমাজন
এত গভীরের দহন
আলোর দেখা নেই
আমি তো পুড়বো বলেই জ্বালিয়েছিলাম আগুন,
তাকে নিভিও না আর
তুমি তো কেবলই ছাই তুলে নিয়েছ হাতে।
ধরেছি কখনো, কেড়ে নিতে দিয়েছি হাসি মুখে।
হাতে হাত চেপেছি আড়ালে।
যা সব আমারই
তাকে নিজের ভেবেই তো
হারিয়েছি হাজার ভিড়ে।
5.
ঠিক কারা হয়েছে পাহারাদার
নাও তবে আরো বেরিয়ে পড়ি ভ্রমণে
সমতল মরুভূমিকে আঁকড়ে
এগিয়ে চলি আর
একটুক্ষণ
প্রাণ নেই যে ভুবনে
অযথা সেখানেও পাড়ি
দেবো ।
নেশায় মগ্ন সব কিছু
বালুচরে যে কীসের নেশা
জানি না ।
ঝাঁকে ঝাঁকে তালগাছ
অজানা পাখি
নাম আছে তাদেরও
হয়তো নেশা কাটলে তারাও ফিরে যাবে।
6.
সরছে মাঠের পরে মাঠ
এ কোথায় সরে যাচ্ছি
দুজনেই
বুঝি তোমারও আছে হারিয়ে যাওয়ার ভয়
সেই ভয়েই লুটেরার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছ হাতিয়ার।
হারাতে চাও না ----
আর কারো জন্যে পথে
দাঁড়িয়ে।
সমস্ত ভার নিয়ে শুয়ে আছি একা
একখানা মাঠের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে
রূপকথার রাজারাণী
তাদের সরে যাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে
ভারি হয় চোখ
কারো কোল নেই,
অভিমান ভাগ করে নেওয়া যেত।
7.
ছটপট করি, অস্থিরতা বাড়ে
সেখান দিয়েই তো
যেতে হবে
ভুল করেই হোক বা
ঠিক কতোটা ঠিক
তা না জেনেই তোমাতেই দিয়েছি ঝাঁপ
তুমি সমস্তটাই খোলা প্রাঙ্গন ,
বেলা যে ডুবে আসে
একা আকশে ভেসে বেড়ায় চাঁদ
শুকতারা ।
আমাদের কেউ কি ডানা
দেবে ধার
গোটা মেঘের মালিক হলে
মন্দ হবে না।
8.
ক্লান্তি তো আছেই
মনকেমনও করে
কান্না আসে
যার জন্য অগাধ বিচরণ
ছুটছি প্রাণপণে
সেই যে কতটা নিয়ে
কতটা দেবে ফেরত
তাই বা কে বলে দেবে।
গায়ে গায়ে তাও মেখেছি
রোদ
লেগে আছে বসন্ত।
একটা পলাশের বাগান
চিৎকার করে মাঝে মাঝে
বলে, ভুলে যেও না যেন!
ভুলতে কে চায় বলো?
সেও তো একটা অভিনয়
উজার করে, শূন্য হয়েই
টান দিয়েছি স্রোতে।
ফিরে পেলাম কি এমন কিছু,
ঠিক হয় না গতি।
ছলছল শব্দ আরো নিয়ে যাবে বহুদূর।
যত পথ যায়
পথ যেন আরো বাড়ে।
হাঁটা পথ থামতে চায় না
উড়েই বা যাবো কতখানি।
9.
একঘেয়েমি, বিবর্ণ লাগে বসবাস।
কাটাকুটি বিভৎস কতকগুলি মুখ।
তারা মানুষ খায়,মানবতাও খায়,
কিছু সরীসৃপও জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
নড়লেই ফোঁস করে,
ছোবল মারে,
ওই ছায়াপথ ধরে যেও না।
সেই সব পরিচয় সঙ্গে না নেওয়াই ভালো,
যাদের জন্ম নেই, বিবেক নেই
মানুষের ঢলে যারা মিশে যায় বিনা পরিচয়ে।
পবিত্র উঠোন, ধানের গোলায়, তুলসীপাতার
উপর টপকে পড়া শিশিরিয়েই গড়বো একটাই পরিচয়,
উড়ে যাবে পতাকা।
তোমার হাত ধরেই জন্ম হবে সেই আমির।
সারা গায়ে কাদা মেখে
ছমছম ণূপুর বাজিয়ে
ধরে আনবো বৃষ্টি।
10.
অমোঘ পার্বণ।
হাতে আমারো পরিয়ে দাও চুড়ি।
গলায় মালী ফুলের হার,'
কপালে চন্দনের টিকাতে
মাধবীবনের যত প্রজাপতি
ধেয়ে আসা চায়।
রঙিন করো, আরো রঙিন।
ঘুরতে ঘুরতে থেমে যাক নগরী।
কাঁধে বন্দুক নিয়ে নগর রক্ষী, ওহে রক্ষক পথ ছাড়ো ,যেতে দাও।
কিন্তু আমার তো নগর চাই না ।তবে বৃথা কেন মিনতি?
মান অভিমান দেখিয়ে ধাক্কা দি --- লোহার প্রাচীর।
ভাঙবে না জেনেও টানতে থাকি
দরজার খিল।
যাক চলে যাক,
এমন যাওয়াতে নেই দুঃখ, নেই হারানোর হাহুতাশ।
আগে থেকেই পথে কাঁটার বিছানা পাতা
তাতে ঘুম হয় না ,
হবেও না ।
যার হাতে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব
তার সৈন হওয়ার নির্মম কাহিনীতে কোথাও নেই আমি।
লড়তে লড়তে পায় উপাধি।
আমি কি প্রতিপক্ষ?
লড়াই তবে কার সাথে?
গোলাবাজিতে আকাশ যখন রক্তাক্ত
চিতায় চিতায় জ্বলছে আগুন
একটি নেভে, একটি জ্বলে
ফুসফুসে হাওয়া দিয়ে চলেছি তখনও ।
নির্জন ঘরে সময়ের অপেক্ষায় ফুরিয়ে যায়নি দিন,
ফুরিয়ে আসেনি সেই লগ্ন, যে লগ্নে ধ্বনিত হবে আমার প্রথম প্রতিঘাত।
তুমি দলে বেছে নিও আমায় , এ পথ আর একার নয় ।
11.
মুক্ত বাজারে
এই একাকী
সবটাই আমার ----
দিকবেদিক ফুলে ছড়াছড়ি, গন্ধে, বর্ণে
ঘিরে ধরে প্রেম---
প্রেম দিয়েই কিনে নেব
প্রেম ।
বিচার হবে, যাযাবরের
ঘর হয় কি না।
সত্যিই কি পাওয়া যায় না
সম্মতি?
দুহাত পেতে আছি তো আছিই ----
এতকালের টুকরো টুকরো যা আছে, পুরোটাই তুলে দেবো তোমাকে --।
দাবি হোক বা আবদার
বদলে একটি ঘর ও একটি শেকড়ে চারাগাছ দিও,' ----
এই তো প্রাপ্তি, ---
আর কিছু তো নেই চাওয়া
সাধনের পথ পূর্ণ ,'
আঘাত পাবো তো পাবো
সুখ যদি না আসে
আসবে না -----
যতক্ষণ লাভ নেই এ পথে
ক্ষতি ও নেই।
আঁচলে পুণ্য পাপ ও থাকবে, তাকে ধুয়ে মুছে নেবো ----
হলো তবে ইতি!
*****************************************************
প্রনাম নেবেন দাদা। আশীর্বাদ করুন যেন আরও ভালো লিখতে পারি।
উত্তরমুছুন