রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কবিতাগুচ্ছ * অমিত চক্রবর্তী



 

"প্রাক-বসন্তের অভিমান ঝরে পড়ে বসন্তে"


কবিতাগুচ্ছ * অমিত চক্রবর্তী 


১  

বসন্ত–বিষুব


তুমি বোধহয় লম্বা হাতা, কনুই অবধি ব্লাউজ পরেছ

সারা শীতকাল, তাই আজ হঠাৎ হাতকাটা

ব্লাউজে তোমায় মনে হল বসন্ত-বিষুব,

আমি ঘোষণা করে দিচ্ছি বসন্তদিন –

পাখির দল, তোমরা ফিরে আসতে পার দক্ষিণের দ্বীপ থেকে

শুরু করতে পার রতিকামনা, তোমাদের গূঢ়লেখ

স্বপ্নকাকলি।


 ২

চকমকি পাহাড়ে বসন্ত


চকমকি পাহাড়ে বসন্ত আসে ছোপে ছোপে, একটানা নয়

আজ সকালে বিষণ্ণ বুঝি, দেরী করে ফেলেছে সূর্য,

মেঘ কুয়াশার গুঁড়ো লেগে আছে গাছের ছায়ায়।

তারপর বেলা বাড়তেই ছেনালি, দুরন্তপনার জৌলুস

তারপর বেলা বাড়তেই বেগুনী আন্দোলন –

লাল বেগুনী, নীল বেগুনী মিশ্রণ থেকে ভেসে যায়

বাহান্ন রঙের বাহার।


                                    এখনো কিছু শুকনো পাতা

আশঙ্কায়, এখনো কিছু ন্যাড়া গাছ দুরুদুরু চটক জলসায়।

এদিকে পাতা আসার আগেই ফুল কার্পেট, পাথরে ঝোপেও

থোকা থোকা ফুল, চর্তুদিকে নীল ফুল এখন, রেড বাড,

মৌমাছি, ভ্রমর।


এই সব দিনে ক্ষুদ্র মনে হয় সমতলের চিন্তা,

ক্ষুদ্র মনে হয় বিরহী উপদ্রব –


আজ যদি কোনো পাহাড়ি দেবী আসে, বরদান ঢালে মাথায়,

চকিতের স্কি লিফটে নিয়ে যায় উরস বা মান্টেজ

কোন পাহাড়ি দেবের বৈঠক – দেখে আসব কেমন করে

সে বসন্ত আঁকে চকমকি পাহাড়ে, কেমন করে

জখমী পোঁচ দেয়, জাফরি কাটা নিয়ম ভেঙে।












বসন্ত, জাগ্রত হও


ওঠো বসন্ত, জাগ্রত হও, মুছে দাও ভ্রূকুটি আমার,

সীমাবদ্ধতা, আমি উল্কার মত গরম অথচ পতনশীল,

নদী দাও গালে, আচমকাই ভালবেসে ফেল,

চকিতে নগ্ন কর একমুঠো আবির ছুঁড়ে।


শোনো বসন্ত, ছোট ছোট অজস্র স্বপ্নের কোলাজে

আমার বড় স্বপ্ন, আমি তো স্বভাবে পশ্চিমী, মাদুলি মানত

গ্রহতারা খুলে ফেলেছি কবে, তবু নামাবলী গায়ে

নামগান, আপাদমস্তক ছবি তার, উল্কিতে গমগমে

শরীর, সর্ব অঙ্গে মাখা বিদায়ের গন্ধ। কবেকার

ঘেমো ভেজা ব্লাউজ, মুঠিতে জড়িয়ে আমি নিরাপদ,

রাতে অভেদ্য ঘুমের সময়। ঘাম মুছে গেছে কবে,

লোকদেখানো শুখনো ব্লাউজ এখন আড়ম্বরে,  

গোপন হাসিতে তার ছুরি, শান দেওয়া বিদ্রূপ।


এসো বসন্ত, মুছে দাও সেই শোকতুক, ভীরুপ্রাণ,

মুক্ত কর অষ্টাবক্র পুরুষের মিনমিনে বিষাদের গান।


 ৪

ভয়


ভয়। হারিয়ে ফেলার। পেয়ে হারিয়ে ফেলার । 


বাজপাখির চোখে আমি জল দেখেছি সেদিন

এ দীর্ঘ বসন্তে, যুদ্ধে, হেরে গেছে অনেকেই,

রাজা হেরে গেছে রঞ্জনের কাছে, ভিক্ষাপাত্র নিয়ে

হাঁটুমুড়ে সে, নন্দিনীর কাছে ভগ্ন অবশেষ,

অথবা এক চতুর খেলা, কৌশলে কোনো

মহাকাব্যের নাটক, অভিনয়ে

বসন্ত দিনের রংমশাল।


তোমার কথা ভাবলেও ভয় বিদ্ধ করে আমায়,

একটা জীর্ণ, লোমশ ভয় ঘিরে ধরে চরকিপাকে,

আসন্ন যুদ্ধের গন্ধ আমাদের লম্বা উপন্যাসে।

মেঘের আড়াল থেকে ইন্দ্রজিৎ এখন, একটা

গুপ্ত প্রণালী, গোপন পদ্ধতি কোথাও, অলক্ষিতে উত্তরণ হবে

বিজয়ীর, ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সব কিছু

দু চোখে ধাঁধা লাগিয়ে।


তাই ভয়। হারিয়ে ফেলার। পেয়ে হারিয়ে ফেলার।   


********************************************************



অমিত চক্রবর্তী 


অমিত চক্রবর্তীর জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়।  এখন আমেরিকায়, ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ডিন। সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতা – বাক, কবিতা আশ্রম, ছায়াবৃত্ত, বম্বে Duck, যুগসাগ্নিক, অন্যনিষাদ, বাতিঘর অনলাইন, শারদীয়া খোঁজ, শব্দের মিছিল, মহাভারত, অপার বাংলা, উত্তর আমেরিকার পত্রিকা বাঙলা লাইভ, উদ্ভাস, যুক্তরাজ্যের পত্রিকা ড্যাশ, এবং আরো অনেক পত্রিকায়।  ঋক প্রকাশনী আয়োজিত বিরহের কবিতা প্রতিযোগিতায় উচ্চস্থান। উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা অভিব্যক্তির কবিতা বিভাগের সম্পাদক (অদিতি ঘোষ দস্তিদার ও সংগ্রামী লাহিড়ীর সঙ্গে)। প্রথম কবিতার বই “অতসীর সংসারে এক সন্ধ্যাবেলা” প্রকাশ পেল এই সেপ্টেম্বরে (২০২১) রা প্রকাশনী থেকে।




৩টি মন্তব্য:

  1. অমিত চক্রবর্তীর অমিত শক্তিশালী লেখনীর সঙ্গে প্রথম পরিচয়েই
    বসন্তবাহারে যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম। "মধুর বসন্ত"-এ মায়ার খেলায়।

    উত্তরমুছুন