রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কবিতাগুচ্ছ * কল্পোত্তম




কবিতাগুচ্ছ * কল্পোত্তম


২৩.

তোমার এক এক অঙ্গেএক এক জলাধার

কোথাও অমৃত, কোথাও গরল

কোথাও অবগাহনের শীতলতা নিয়ে

গহীন মারিয়ানায় অজস্র জীবের আনাগোনা।


তুমি ঢেউ তোলো

ইশারায় ইশারায় ডাকো, আর

সাঁতারে অদক্ষ আমি

নামবো নামবো করেও

দাঁড়িয়ে থাকি পাড়ে।


শৈশব, কৈশোর, যৌবন পার করে

প্রবেশ করি বার্ধক্যের সীমানায়।

তবুও অপেক্ষা করো তুমি,

সমস্ত লাঞ্ছনা উপেক্ষা করে

নিয়ে আসো জোয়ার।


তুমি যে শেখাতে চাও সাঁতার

তোমার সন্তানকে।


২৪.

তার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে

আমাকেও আশ্রয় দিচ্ছ তুমি

দিচ্ছ ছায়া, দিচ্ছ আঁচল, দিচ্ছ

শীত গ্ৰীষ্ম বর্ষা ছয় ঋতুর সুখ।


তার সঙ্গে টান টান সম্পর্কে থেকে

আমাকেও টেনে রাখছো নিজের দিকে।


কোন্ মহাজাগতিক মায়ায়

আঁচলে গিয়ে শুই,

কোন্ মহাজাগতিক মায়ায়

খুঁজে ফিরি আশ্রয় তোমারই মাঝে,

শত বিশ্লেষণেও পরিস্ফুট নয়।


আমি কেবল মগ্ন হয়ে থাকি,


তোমার অঙ্গশোভায়

ভরিয়ে তুলি চোখ

তোমার অঙ্গশোভায়

ভুলে যাই পারম্পরিক খিদে।


২৫.

অহেতুক কল্পনা, জল্পনা উড়িয়ে

এগিয়ে চলো। শুনিয়ে চলো পাখিদের গান

ছায়া নিবিড় যত লোকালয়ে। একদিন

আমাদের পূর্বজের পদধূলি পড়েছিল

যে সকল পথে গ্ৰাম-দেবতার ঘোড়া ছুটেছিল

বেজেছিল ঘুঙুরের বোল

রাতের অন্ধকারে ঝরে পড়া পাতাদের গায়ে।

সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে

তোমার শরীরে খুঁজি পথ

তোমার শরীরে খুঁজি 

ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকা রথ, কর্ণের।


বেলা বেড়ে এলে খুলে যায়

সন্ধ্যার আগমনে একে একে রুদ্ধ হয় পথ।

তখন ভরসা শুরু অনুভব

বৈভবের বিপুলতা ছেড়ে

ছুটে চলা, ডুবে যাওয়া

অনন্ত অপেক্ষায় থাকা

অন্য এক শরীরের আলিঙ্গনে।পথেই পথের বাঁক












২৬.

আমি তো আসতে চাই বার বার

সুকোমল তোমার শরীরে,

প্রতিটা সবুজ ভাঁজ আর

ঘাসের গালিচা ভরা পাহাড়িয়া ঢালে

সূর্যের আলোয় হয়ে ওঠে  

যে বন সোনালী, সেই বনে

শুনতে চাই ডাক।


তুমি কি আনতে চাও

তারাদের দেশ থেকে  

বেছে বেছে শুধুই আমাকে? 

তুমি কি কাঁদতে চাও আমার কান্নায়?


আমাকেই পেতে হলে

পরিপূর্ণ করো না সব আশা

জানি না কেমনে বুনি জাল

কোন্ পথে ভাষার সকাল এসে

দেখাবে সেই পথ

তোমার শরীরে গিয়ে পৌঁছানোর

খুঁজে পাবো অলৌকিক নাক্ষত্রিক রথ।


২৭.

যে অনুভূতি শুধুই অনুভবের

প্রকাশের নয়, তার মধ্য দিয়েই

খসে পড়লো তারা

সুদূর আকাশ থেকে আমার উঠোনে।

সূর্যের আলো, দক্ষিণা বাতাস 

পাখিদের গান আর

শিশুদের আসা যাওয়া শুরু হলো

জলে আধো ডোবার চারপাশে।


ব্যাঙাচির ভাষা, জীবন কৌশল

মাঠ থেকে জলাশয় মুখে

ঘাসেদের প্রসারণ পর্যবেক্ষণ

শুরু হলো, শুরু হলো 

জীবনের গান-চেনা ঐ তারাটির।


তোর কোলে খসে পড়া তারাও কি

হিমালয় হয়? সূর্যের ছটায় 

দিতে পারে সোনালী ঝলক?

আমি তার প্রতিক্ষায় পার করি 

একেকটা উদয়াস্ত কাল

সোঁদা মাটি, ভোরের শিশিরে খুঁজি  

পৃথিবীর অনন্ত সকাল।


২৮.

এক নদীর জল আরেক নদীতে পড়ে

তারপর মিলে যায় সমুদ্রের

নীলাভ নগরীর রাস্তায়।


বছরের ষষ্ঠের পঞ্চমাংশ জুড়ে

আটকে থাকা ট্রাফিক সিগন্যালে হঠাৎ  

সিগন্যাল গ্রীন হলে

বেজে ওঠে সাইরেন

দেখা যায়, নীল বাতির এম্বুলেন্স

চারপাশের মানুষের তৎপরতা।


ডুব সাঁতার ছেড়ে দিয়ে

ধারাবাহিক কান্নায় ভুলতে থাকো

অতীত দিন যাপনের ঘোর।


সাঁতারের যে দক্ষতায় পেরিয়ে এলে

সুগভীর সুবিস্তৃত মোহনা, নানা ছলে

সেই সাঁতার ভুলিয়ে দেওয়ার  

দক্ষতাপূর্ণ কৌশলকে করায়ত্ব করে যারা

তারাই কান্ডারী, বলো, তোমার আমার ?


২৯.

আকাশে আয়না রেখে ঝকঝকে

বছরে বারোটা দিন মুখ দেখো

মাথা বাঁধো রাতের আঁধারে।


ঝোলাবে আয়না তুমি দিনমানে

সে সুযোগ কই ?

সন্তানের মুখে অন্য দিতে হবে, মাঠে মাঠে

ফসল ফলাতে তাই, ব্যস্ত তুমি

ব্যস্ত তুমি এর তার মাথার উপর

আলো জ্বেলে দিতে।


সারাক্ষণ ঘুরতে থাকো 

শৃঙ্খলে, বিশ্রামহীন।


আপাদমস্তক চুল ঘন কালো

পাক খায় বাতাসে বাতাসে

বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে স্নানান্ত জল

অবসর নেই তাকাবার, আয়নার দিকে

অবসর নেই, তোমার নিজস্ব পরিচর্যার।


অমল স্তন তুলে দিতে মুখে, ব্যস্ত থাকো তুমি

সু-কু সকল সন্তানের।


৩০.

ছয় মাস কাছে থাকো

উষ্ণ রাখো শরীরের চারপাশ

মুগ্ধ আলিঙ্গনে। 

ছয় মাস দূরে যাও

প্রতিটা অঙ্গে এসে ছুঁয়ে যায়

কনকনে হিমেল বাতাস।


অভিমানে কেঁপে উঠি

দক্ষিণে তাকায় বার বার

আড়চোখে দেখে নিই

ঠিক কার বারান্দায় নুয়ে পড়ো তুমি

আমাকে একলা রেখে

হিম হিম মৃত্যু মোহনায়।


আমার থেকেও কেউ বেশি প্রিয়

আমার থেকেও কেউ বেশি কাছে

আমার থেকেও কেউ বেশি ভালোবাসে  

এমন, আছে কি তোমার ?


আমি তবে শুয়ে যাই 

সু অথবা কু-মেরুর বরফের নিচে

তোমার দৃষ্টি যেথা যাবে না কখনো?


অনন্ত বৎসরের অভিমান জমে জমে

হিমালয় হয়ে এলে দেখে নিও

তোমার কোন্ অঙ্গ দিয়ে

কি মুহূর্তে গড়েছো আমাকে।


*******************************************************



 কল্পোত্তম

নিরলস সাহিত্যচর্চায় মগ্ন তরুণ কবি কল্পোতম । একটি উপন্যাস সহ ইতিমধ্যেই তিনি লিখে ফেলেছেন পাঁচটি গ্রন্থ । কাব্যগ্রন্থ  *  সাতরঙা পাড়  *  বত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক* ঝুমুর সঙ্গীতের বই  * রিঝে রঙে  উপন্যাস  *  পেইন্টেড ট্রেন  গল্পগ্ৰন্থ  *  স্বপ্নসিঁড়ি



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন