[ 'স্বরবর্ণ * ১২ সংখ্যা থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বনাথ পালের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বামনের চন্দ্রাভিযান'। উপেক্ষা, অনাদর আর দারিদ্র্যের তীব্র দংশনজ্বালা দাঁতে দাঁত চেপে, একটি যুবক কী ভাবে একক নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে জীবনের সাফল্য ছিনিয়ে আনে, এই উপন্যাস তারই জীবন্ত আখ্যান। লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের বেকারত্বের জ্বালার বাণীরূপই শুধু নয়, তা থেকে উত্তরণের অমোঘ বিশল্যকরণীও বটে এই উপন্যাস।]
বামনের চন্দ্রাভিযান
পর্ব * তিন
বিশ্বনাথ পাল

কিছুদিন পরেই অবশ্য জানা গেল যে এম. এস-সি. প্রথম বর্ষে কেউ ড্রপ দিলে পরের বছর পরীক্ষায় বসার জন্য তার আর ক্লাস না করলেও চলে। শর্ত শুধু একটাই প্রথম বর্ষে ক্লাসে উপস্থিতির হার কমপক্ষে পঁচাত্তর শতাংশ থাকতে হবে। এই নিয়ম আমাকে বাঁচিয়ে দিল।
এক শীতের সন্ধ্যায় বেহালা থেকে ইউনিভার্সিটির সহপাঠী দেবাশিস এল আমাদের বাড়িতে। আমাদের বাড়ি আসবে বলে ও আসেনি। এসেছিল পিসির বাড়ি কালীপুজো উপলক্ষে। আমাদের বাড়িও একই এলাকায় জেনে দেখা করতে এসেছে। ওর কাছে শুনলাম ও-ও এবছর ড্রপ দিয়েছে।কিন্তু ওর ড্রপ দেওয়া আর আমার ড্রপ দেওয়া এক জিনিস নয়। ও দিয়েছে ভাল রেজাল্টের প্রত্যাশিত প্রস্তুতি হয়নি বলে, আর আমি ফেল করার ভয়ে।
দেবাশিসকে মা বলল, “ওর একেবি-র পেপারটা নাকি কিছুতেই মাথায় ঢোকে না।”
ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়া আমার আটপৌরে মায়ের মুখে ‘একেবি’-র কথা শুনে দেবাশিস খুব মজা পেল।
‘একেবি’ মানে আশীষকুমার ব্যানার্জী। পড়াতেন রিভিল্ড প্রেফারেন্স থিওরি। একেবি-র ক্লাসে নেওয়া নোট পড়ে বুঝতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছিলাম। কখনও স্বগোতোক্তি করেছি ব্যর্থতার। ধুত্তরি! এই একেবি-র নোট মনে রাখা আমার কর্ম নয়। নামটা আমার মুখে শুনে শুনে মায়ের মনে গেঁথে গেছে।
দেবাশিস জানাল যে প্রতিবছর শীতে নাকি ওর জীবনে একজন করে নতুন বন্ধু আসে। আমি ওর বন্ধুতালিকায় নবতম সংযোজন। এর আগে ওর সঙ্গে যেটুকু আলাপ ও মেলামেশা, তাতে আমাকে ওর বন্ধু না বলে পরিচিত বলাই শ্রেয় ছিল।
ওর কাছেই জানলাম যে ড্রপ দেওয়ার পর পরের বছর পরীক্ষায় বসতে গেলে ইউনিভার্সিটি গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ, টাকা জমা দেওয়া ইত্যাদি কিছু অফিসিয়াল কাজ করতে হবে। তবে নতুন করে আর ক্লাস করার দরকার নেই। আগের বছর ক্লাসে যদি পচাত্তর শতাংশ উপস্থিতি থাকে, তবে এতেই পরের বার পরীক্ষায় বসার অনুমতি মিলবে ক্লাস না করেই।
দেবাশিসের কথায় যেন আলোর রেখা দেখতে পেলাম। বুঝলাম আগের সহপাঠীদের মুখ না দেখেও পরীক্ষায় বসা যাবে। এটা বেশ ভাল ব্যাপার। কারণ ওদের মুখোমুখি হতে হলে পরীক্ষা দিতে না পারার জন্য লজ্জা, অপরাধবোধে কুঁকড়ে যেতে হোত। মনে মনে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। এম. এস-সি. পাশের স্বপ্ন।
এরপর থেকে সত্যিই দেবাশিসের সঙ্গে আমার এক বন্ধুত্বের গিঁট বাঁধল, যা আজও ছিন্ন হয়নি।
পাঁচ
আমাদের পাড়ায় ছিল তুষারের মামাবাড়ি। ও প্রায়ই মামাবাড়ি আসত। রাস্তাঘাটে দেখা হত। রোগা, কালো, চশমায় ঢাকা উজ্জ্বল চোখের তুষারের সঙ্গে একদিন নিজেই আলাপ করে বন্ধুত্ব জমাতে সময় লাগেনি। তখন মাধ্যমিক পাশ করেছি, ইলেভেনে না টুয়েলভে পড়ি। দেখি ও-ও একই ক্লাসে পড়ে। আমাদের বাড়িতে ওর যাতায়াত শুরু হল। মামাবাড়ি এলে ও আমাদের বাড়িও আসত। আমরা পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা চালাতাম আড্ডা মারার ফাঁকে। দুজনে দুই আলাদা টেষ্ট পেপার কিনে পরীক্ষার আগে সেগুলি বিনিময় করেও সমাধান করতাম। ওর মামাবাড়ি অবস্থাপন্ন হলেও ওর সঙ্গে আমার কমন ফ্যাক্টর ছিল দুজনেরই পারিবারিক অসাচ্ছল্য। ওদের বাড়ি গেলে ওর বাবাকে কখনও দেখতাম না। কেমন যেন আশঙ্কা হত যে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ও অপ্রস্তুত হবে, তাই বিরত থাকতাম। ওর মা কাজ করে দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতেন। তুষার ছিল বড়। ছোট ভাইটার নাম মনে নেই। যাইহোক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে নেতাজীনগর ডে কলেজে ভর্তি হলাম। তুষার অন্যত্র। ফলে আমাদের যোগাযোগে ভাটা পড়ল। কিন্তু জোয়ার এল ড্রপ দেওয়ার পর আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে। কারণ ওকে ইউনিভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হওয়া প্রথমবর্ষের সতীর্থ হিসাবে পেলাম।
উচ্চমাধ্যমিকের পর ইচ্ছা ছিল ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রিতে অনার্স নেব। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে নম্বর ছিল ৫৭২। অর্থাৎ প্রথম বিভাগের থেকে ২৮ নম্বর কম। ফলে বিএসসি পাসে ভর্তি হলাম নেতাজীনগর ডে কলেজে। অর্ণব স্যারের কাছে পড়তে গিয়েছিলাম অংক। স্যার বললেন, “পাশ কোর্সে পড়ে কী করবে? গ্রাজুয়েশনের পর তো তোমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। তোমার যা নম্বর আছে তাতে ইকনমিক্সে অনার্স পেয়ে যাবে।”
তখন ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ। স্যার বললেন, “নেতাজীনগর কলেজে আমার একজন বন্ধু অধ্যাপক আছেন। ওঁকে আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। চিঠিটা নিয়ে তুমি ওঁর সঙ্গে দেখা করো, তোমার ইকনমিক্সে অনার্স হয়ে যাবে।”
হলও তাই। এক সন্ধ্যায় রাস্তা চিনে চিনে বিশ্ববন্ধু ঘোষ বা বিজি স্যারের বাড়ি গেলাম। অর্ণব স্যারের চিঠি দেখাতেই বললেন কাল কলেজে দেখা করতে।
তারপর নেতাজীনগর কলেজে বিএসসি পাশ কোর্স থেকে আবার ইকনমিক্স অনার্সে শিফট করলাম। এভাবেই বাড়ির অভিভাবকের পরামর্শে নয়, কোচিঙের স্যারের কথায় কেরিরারের রাস্তা নির্বাচন।
ইকনমিক্সে ষোলো জন ছাত্রছাত্রী ছিলাম অনার্সে। এখানে আমার এক স্কুলের বন্ধুকে ফিরে পেলাম। সুমিত শীল। লম্বা, ফর্সা, লাজুক স্বভাবের সুমিতের সঙ্গ আমার বেশ পছন্দের ছিল।
বিশ্ববন্ধু ঘোষ বা বিজি স্যার অর্থনীতির অধ্যাপক। ফলে কলেজের পাশাপাশি তাঁর কোচিঙেও ভর্তি হলাম। কিন্তু কোচিঙে তাঁর পড়ানোর স্টাইলে আমরা, যারা উচ্চমাধ্যমিকে অর্থনীতি পড়িনি, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি পড়েছি, তাদের বেশ সমস্যা হত। কোনও বিষয়ে বুঝতে না পারলে স্যার বলতেন—ওদিকের আলমারিটা খোলো, তিন নম্বর তাকের লাল মলাটের বাঁধানো বইটা আনো।
বই থেকে স্যার একটা নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা বা অধ্যায় বের করে দিতেন বোঝার জন্য। আমরা টুকতাম। কখনও বই সঙ্গে নিয়ে নিকটবর্তী জেরক্সের দোকানে যেতাম। সেইসব জেরক্সকপি অধিকাংশ সময়ই ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকত। কিন্তু তবু আমরা বিজি স্যার ব্যতীত অন্য কারও কাছে পড়ার কথা ভাবতে পারিনি। ভাবতাম ইকনমিক্স বোধহয় এভাবেই পড়ানো হয়।
ভুল ভাঙল পার্ট ওয়ানের রেজাল্ট বেরনোর পর।
রেজাল্টে দেখা গেল ষোলো জন ছাত্রীছাত্রীর মধ্যে মাত্র তিন জন ছাত্র পাস ও অনার্স দুটি ক্ষেত্রেই পাশ করেছে। কোনও ছাত্রীর নাম ছিল না সেই তিন জনের মধ্যে। যে ছেলেটি অনার্সে কলেজে সর্বোচ্চ নম্বর ২০৩ অর্থাৎ পঞ্চাশ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে, তার নাম অভিজিৎ। কিন্তু সে অংকে ফেল করেছে এবং সে বিজি স্যারের কাছে ইকনমিক্স পড়েনি। তাকে খুব একটা ক্লাস করতেও দেখা যায়নি। কারণ সে অধিকাংশ সময় শুনতাম ক্রিকেট কোচিং ক্লাসে প্র্যাক্টিস করতে ব্যস্ত থাকত।
আমাকেও সবাই অকৃতকার্যের দলেই ধরে রেখেছিল।কারণও ছিল। ক্লাসে পারতপক্ষে মুখ খুলতাম না। কারণ অধিকাংশ সময় কী বুঝছি, তা-ই ভাল বুঝতাম না। ক্লাসে পড়ানোর সময় কোনও প্রশ্ন করব, আর সেই প্রশ্ন যদি বোকার মতো হয়ে যায় এই ভয় পেতাম।আর সুমিত বাদে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা দেখতাম বেশ ফটর ফটর করত। তাদের অনেকেরই অর্থনীতি নতুন বিষয় নয়, উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছে। ফলে তাদের সামনে স্বভাব-লাজুক হওয়ায় ও সাহসের অভাবে সিঁটিয়েই থাকতাম।বিষয়টাও আমার ক্ষেত্রে নতুন তো বটেই, তারওপর বইপত্রও বলতে গেলে ইংরেজিতে। মনে সন্দেহ হত যা বুঝছি তা কি ঠিক বুঝছি?
রেজাল্ট বেরনোর দিন সন্ধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের একটি দল বিজি স্যারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। যেন একসঙ্গে এত ছাত্রছাত্রীর অংকে ফেল করায় তাদের কোনও দোষ নেই, দোষটা ইউনিভার্সিটির বা পরীক্ষকের। হয়তো খাতাগুলোই ঠিকমতো দেখা হয়নি। অনেকটা ডেপুটেশন দেওয়ার ভঙ্গিতে দলটা এগিয়ে যাচ্ছিল বিজি স্যারের বাড়ির দিকে। আমিও ছিলাম সেই দলে। আমাকে সহসা এক সহপাঠিনী প্রশ্ন করল, “সোমনাথ, তোর ম্যাথস ক্লিয়ার?”
বললাম, “হ্যাঁ।”
আমার উত্তরে মেয়েটি যেন আকাশ থেকে পড়ল। মানে মুখচোরা ক্লাসে প্রশ্ন না করা ছেলেটির এক চান্সে পাশ করায় সে বেশ অবাক।
একদিন আমি আর তুষার রাণীকুঠিতে অভিজিতের সঙ্গে দেখা করলাম। কলেজে ক্লাস না করেও ওর অনার্সে হায়েস্ট পাওয়ার রহস্য কী জানাটা আমাদের উদ্দেশ্য।
অভিজিৎ বলল, “আমি এজি স্যারের কোচিঙে পড়েছি। পরীক্ষায় এজি স্যারের নোট লিখেছি। তাই হয়তো অনার্সে ভাল রেজাল্ট হয়েছে।”
এজি মানে অমিতাভ ঘোষ। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক অমিতাভ ঘোষ পরে শুনি এক বিখ্যাত চিত্র-পরিচালকের তুতো ভাই।
অভিজিৎ আরও বলল যে এজি স্যারের কাছে অ্যাডমিশন ফি ও প্রথম মাসের মাইনে দিয়ে ভর্তি হতে হয়।
আমি সংশয় প্রকাশ করলাম যে সুমিত কি অ্যাডভান্স দিয়ে পড়বে! শুনে অভিজিৎ বলল, “দ্যাখ, এটা ক্যারিয়ারের ব্যাপার, সুমিত না পড়লেও তোর পড়া উচিত।”
সুমিতকে গিয়ে বললাম, এজি-র কোচিঙে পড়তে চাই। কিন্তু ওখানে অ্যাডভান্স দিয়ে পড়তে হবে।
সুমিত প্রথমে অ্যাডভান্স দিয়ে পড়ায় আপত্তি জানাল। বলল, “একবার উচ্চমাধ্যমিকে একজন স্যারের কোচিঙে ইংরেজি পড়তে গেছি। স্যার বললেন, ‘অ্যাডভান্স এনেছ? অ্যাডভান্স ছাড়া আমি পড়াই না।’ আমি বললাম, ‘আমিও অ্যাডভান্স দিয়ে পড়ি না।’ বলে বেরিয়ে এসেছিলাম।”
তো, এহেন সুমিতকেও রাজি করাতে আমাকে বেগ পেতে হল না। কারণ এজি-র কাছে পড়ার হাতে গরম ফলাফল অভিজিৎ। ওর ক্লাস না করে বিজির কাছে না পড়ে হায়েস্ট নম্বর পাওয়া।
গ্রাজুয়েশনে পার্ট ওয়ানে তুষার গড়িয়ার এন্ড্রুস কলেজে ভর্তি হয়েছিল। কী কারণে যেন ওর একটা বছর নষ্ট হয়েছিল। কৌশিকেরও এক বছর নষ্ট হয়েছে পক্স হওয়ায়। একদিন তুষারের সঙ্গে গেলাম বালিগঞ্জে এজি স্যারের কোচিঙে। গিয়ে দেখি স্যারের সঙ্গে পড়ার ব্যাপারে কথা বলার কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে।কারণ পড়ানোর রুমের পাশেই আরেকটা অফিসরুম। সেখানে বসে এক রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা। কোচিঙে ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কথা তার সঙ্গেই বলতে হবে। আমরা জেনেছি পার্ট ওয়ান ও পার্ট টু-তে পড়ার মাসিক মাইনে যথাক্রমে আড়াইশো ও সাড়ে তিনশো টাকা আর ভর্তির ফি দেড়শো টাকা। অর্থাৎ তুষারকে পার্ট ওয়ানের জন্য দিতে হত মোট চারশো টাকা, আমাকে পাঁচশো টাকা।
আমরা গিয়ে রিসেপসনিস্ট ম্যাডামকে বললাম যে স্যারের কাছে পড়তে চাই। কিন্তু অত টাকা দিয়ে পড়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ম্যাডাম আশ্বাস দিলেন যে এ ব্যাপারে তিনি স্যারের সঙ্গে কথা বলবেন।
এর দু-তিন দিন বাদে তুষার আমাদের বাড়িতে হাজির। ও যা বলল তার মর্মার্থ হল মাঝে আরেক দিন ও এজি স্যারের কোচিঙে গিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে। ম্যাডামকে ফি কমাতে রাজি করানোর জন্য আমার সম্পর্কে প্রশংসাসূচক অনেক কথা বলে। যেমন আমি কবিতা লিখি, বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাগাজিন বার করি। আমাদের বাড়িতে মূর্তি বানানো হয়, সেই কাজেও আমার পারদর্শিতা আছে, আমি পড়াশোনায় ভাল, অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছি টিউশনি করে ইত্যাদি। কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ।
তুষার ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পর বলল, “তোর সম্পর্কে নিজের থেকে একটু বেশি বলা হয়ে গেছে বুঝলি।”
আমার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। ম্যাডাম তুষারের কাছে আমাদের দুজনের ফিসই একশো টাকা করে কমাতে রাজি হয়েছেন। অর্থাৎ আমাকে চারশো টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে মাসে আড়াইশো দিতে হবে। তুষারের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে তিনশো ও দেড়শো।
এবার আমি গেলাম সুমিতের কাছে। এজি স্যারের কোচিঙে কবে থেকে পড়তে যাব ঠিক করতে। কারণ আমি আর সুমিত একই সঙ্গে নেতাজীনগর কলেজে ও বিজি স্যারের কোচিঙে যেতাম। সুমিতকে আমার ফি কমানোর কথাও বললাম। ও কিছু মনে করল না। তাছাড়া আমার মতো অসচ্ছলতার সমস্যা ওর ছিল না।
অমিতাভ ঘোষের কোচিঙে পড়া শুরু করলেও বিজি স্যারের কোচিং কিন্তু আমরা ছাড়লাম না। কলেজে ক্লাস করতে গেলে স্যারের সঙ্গে দেখা হত। পড়া ছেড়ে দিলে মনোমালিন্য হতে পারত। তবে অন্যত্র পড়ার খবর বিজি স্যারকে বলিনি। তাছাড়া স্যারের বাড়ির বিশাল বইয়ের সংগ্রহ-ও আমাদের পার্ট-টু-তে কাজে লাগতে পারে মনে হল।
এজি স্যারের কোচিঙে পড়ার কল্যাণেই আমি ও সুমিত দুজনেই পার্ট-টু-তে তুলনামূলক ভাবে ভাল রেজাল্ট করলাম। আমি চারশোতে ২০৭, সুমিত কত মনে নেই, তবে ২০০-র বেশিই। পার্ট ওয়ান ও পার্ট-টু মিলিয়ে অনার্সে আমার নম্বর দাঁড়াল ৩৯১। নয় নম্বরের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ হল না। যাইহোক, এই নম্বরে যে এমএসসি পড়ার সুযোগ পাব তার একটা ক্ষীণ আশা ছিল। কারণ ইকনমিক্স খুব একটা সহজ বিষয় নয়। নম্বর তোলা শক্ত। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসিতে ভর্তির ফর্ম পূরণ করে জমা দিলাম।
প্রথম তালিকা প্রকাশের দিন নাম দেখতে ইউনিভার্সিটি যাইনি। মনে হয়েছিল প্রথম তালিকায় জায়গা হবে না। কিছু ছাত্রছাত্রী জেএনইউ বা প্রেসিডেন্সিতে চলে গেলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকায় স্থান হলেও হতে পারে। এক বন্ধুর থেকে ইউনিভার্সিটির ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করলাম, “আচ্ছা এমএসসি-তে ভর্তির সেকেন্ড লিস্ট কবে বেরোবে?”
অপর প্রান্তের ভদ্রলোক বললেন, “কত নম্বর ছিল?”
বললাম, “৩৯১।”
আমাকে অবাক করে ভদ্রলোক বললেন, “ফার্স্ট লিস্টেই হয়ে গেছে।”
বুঝলাম ইকনমিক্স সত্যিই কঠিন বিষয়।
এম.এস-সি. পার্ট ওয়ানে ড্রপ দেবার পর মনে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।
মা ইউনিভার্সিটির পড়া ছেড়ে ডবলু.বি.সি.এস.-এর জন্য তৈরি হতে বলল। কিন্তু যে ছেলে ফেল করার ভয়ে পরীক্ষায় বসে না, সে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হবে? ব্যাপারটা আমার অদ্ভূত ঠেকল। ড্রপ অনেকেই দেয়, হয়তো ফেলও করে কেউ কেউ, কিন্তু পরের বার পাশ করার জন্য ঝাঁপায় না?
তো নতুন ব্যাচে আমার সহায় হল কৌশিক ও তুষার। ওদের সুবাদে অনির্বাণ ও বিকাশের সঙ্গে আলাপ হল। এম.এস-সি. পার্ট ওয়ানে বসার জন্য গত বছরের নোট, খাতাপত্তর আমার ছিলই। তবে প্রতিবারই সিলেবাস একটু অদলবদল হয়। সেই বদলটুকুর কোনও ক্লাস না করেই কৌশিক ও তুষারের থেকে নোট পেতে কোনও সমস্যা হল না। এম.এস-সি. পার্ট ওয়ান পাশ করলাম, পেলাম ৫০০-তে মাত্র ২০৮। ৪১ শতাংশের সামান্য বেশি। আমার টনক নড়ল। সূর্যপুর স্কুলের পরীক্ষায় ফার্স্ট হতাম। মাধ্যমিকেও স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। স্কুলের স্যাররা আমাকে ভালবাসতেন। ক্যারিয়ারের কথা ভেবে কোনওদিন পড়াশোনা করিনি। পড়াশোনা না করলে স্যারদের ভালবাসা হারাব ভেবে পড়তাম। ক্লাসে দু-এক জন স্যার আমার খাতা দেখার পরে অন্য ছাত্রদের তা পড়তে বলতেন আদর্শ উত্তর কেমন হবে বোঝাতে। মাধ্যমিকে স্টার মার্কস না পেলেও সত্তর শতাংশের কাছাকাছি নম্বর পেয়েছিলাম। গত শতাব্দীর সেই সময়ে মাধ্যমিকে ভুড়ি ভুড়ি নম্বর তো উঠত না, ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়াও তখন পাড়ায় খবর হত। আর সেখানে এম. এস-সি.-তে মাত্র ৪১ শতাংশ! অর্থাৎ থার্ড ডিভিশন।
ইতিমধ্যে মৌমিতার সৌজন্যে বয়ে চলা ঝড় থামাতে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের বই পড়তে শুরু করলাম। বিবেকানন্দের একটি কথা মনে দাগ কেটেছিল। নচিকেতা কোথায় যেন বলেছিল, অনেকের মধ্যে আমি প্রথম, মধ্যম কিন্তু অধম কখনও নই।
আমারও মনে হল যে করেই হোক ফেল করার ভয় যেমন পার হয়েছি, এবার তৃতীয় বিভাগও পরিবর্তন করতে হবে। সামনে পার্ট-টু-র তিনশো নম্বরের পরীক্ষা আমার হাতে আছে। এই তিনশো নম্বরে যদি ভাল নম্বর তুলতে পারি তবে এগ্রিগেটে থার্ড ডিভিশন পালটানো সম্ভব হবে।
ইতিমধ্যে জেনেছি মাস্টার ডিগ্রিতে পঞ্চান্ন শতাংশ নম্বর থাকলে কলেজে পড়ানো সুযোগ থাকে, নেট স্লেট পরীক্ষায় বসা যায়। অর্থনীতিতে আমার যা জ্ঞানগম্যি, তাতে কলেজে পড়ানোর কথা কষ্টকল্পনায়ও আসত না। কিন্তু বন্ধুরা যখন এই ক্ষেত্রে তাদের কেরিয়ার গড়ার আলোচনা করত, তখন সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার জন্য আপশোশ যে হত না টা নয়। কোনও প্রেমের মোহে আক্রান্ত না হয়ে প্রথম থেকেই সিরিয়াসলি পড়লে আমারও ভাল রেজাল্ট হতে পারত। যাই হোক একটা শেষ চেষ্টার সূক্ষ্ম আশা মনে দেখা দিল। অলীক আশা ছিল হয়তো, তা-ও। পার্ট ওয়ানে ২০৮, অর্থাৎ পার্ট-টুতে যদি ২৩২ পাই, তাহলে আমারও প্রাপ্ত নম্বর হবে ৪৪০, অর্থাৎ কাঙ্খিত পঞ্চান্ন শতাংশ। কাউকে বলার সাহস হল না। পার্ট-টুতে বিষয় নির্বাচনের একটা ব্যাপার থাকে— ২০০ নম্বরের স্পেশাল পেপার আর একটা ১০০ নম্বরের অপশনাল। বেশি নম্বর উঠতে পারে ভেবে দুটোই অংক সংক্রান্ত বিষয় বেছে নিলাম— স্পেশাল পেপার ইকনমেট্রিক্স ও স্ট্যাটিসটিক্স আর অপশনাল পেপার অপারেশন রিসার্চ। দেখাই যাক বেশি নম্বর ওঠে কিনা।
উঠল না। পার্ট-টুতে ক্লাস করেছি। কারণ পুরনো সতীর্থরা ততদিনে পাশ করে বেরিয়ে গেছে। ফলে তাদের সাক্ষাতে লজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। তুষার, কৌশিক, বিকাশ, অনির্বাণ-সহ আমরা সবাই এই কম্বিনেশনের বিষয় নিয়ে এক সঙ্গে ক্লাস করলাম। কিন্তু আমার কাঙ্ক্ষিত নম্বরের ধারে কাছে পৌঁছতে পারলাম না। কিন্তু থার্ড ডিভিশনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হলাম। পার্ট-টুতে আমার প্রাপ্ত নম্বর হল ৩০০-তে ১৭১, অর্থাৎ সাতান্ন শতাংশ, কিন্তু এগ্রিগেটে আমার নম্বর দাঁড়াল ৪৭ শতাংশের সামান্য বেশি। যাইহোক এবার আমি ইকনমিক্সে এমএসসি পাশ, বেশ গালভারি শুনতে।
অমর্ত্য সেন যে বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন, সেই বছর ঢুকেছিলাম ইউনিভার্সিটতে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নিতেন আমাদের। যতদূর মনে পড়ে তাঁরই প্রচেষ্টায় নোবেল পাওয়ার পর আমাদের ডিপার্টমেন্টে আনা হয়েছিল অমর্ত্যবাবুকে একটি সেমিনার উপলক্ষ্যে। সেই প্রথম আমার কোনও নোবেল লরিয়েটকে কাছ থেকে দেখা। যদিও আলফ্রেড বেনহার্ড নোবেলের উইলে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার উল্লেখ ছিল না। কিন্তু এই বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে কমিটি ১৯৭৯ সালে একে তালিকায় ঢোকায়। আর বেরোলাম ইউনিভার্সিটি থেকে তিন বছর পর, একবিংশ শতাব্দির শুরুতে।
এবার কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু আমার যা রেজাল্ট, তাতে চাকরি জোটানো দুষ্কর মনে হল। তবে মনে আশা পোষণ করতাম সরকারি চাকরির। কারণ আমার বাবা কখনও সরকারি কাজ করেনি। ঊষা কোম্পানি বদলি শ্রমিক ছিলেন, যার একটা ভাল নাম ছিল—জয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্স। বাবা যেহেতু বদলি শ্রমিক ছিলেন, তাই কাজ না থাকলে বেতনের গল্প ছিল না— নো ওয়ার্ক, নো পে। অথচ বাবার নিজের ভাই ও খুড়তুতো ভাই-সহ তিন ভাই সরকারি চাকরি করতেন। ফলে তাদের ছেলেমেয়েরা ছোট থেকে যে সাচ্ছন্দ্য ভোগ করত, আমরা পেতাম না।
ঊষা ফানের একটা সময় রমরমা বাজার ছিল। সিলিঙে ঊষা ফ্যান ঝোলানো ছিল আভিজাত্যের পরিচায়ক। কলকাতায় জয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্সের দু’টি কারখানা ছিল, যার একটি বাঁশদ্রোণীতে আর একটি আনোয়ার শাহ রোডে। দ্বিতীয়টিতে তৈরি হত সেলাই মেশিন। প্রথমটির আজও অস্তিত্ব আছে। আর দ্বিতীয়টির জায়গায় গড়ে উঠেছে অতিকায় বিপনিকেন্দ্র ও বহুতল, যার পোশাকি নাম সাউথ সিটি। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সস্তায় উন্নত মানের ফ্যান বাজারে এসে ঊষা ফ্যানকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিল। ফলে প্রায়ই উৎপাদন বন্ধ, কারখানার গেটে তালা ঝুলতে লাগল। আমাদের সে সময় অন্ধকার নেমে আসত সংসারে। কারখানা খোলা থাকলে যাও-বা একটা রোজগারের যোগান অব্যাহত থাকত, বন্ধ হলে অনিশ্চয়তার মেঘ দেখা দিত। কারখানায় কাজের পাশাপাশি বাবা টুকটাক ঠাকুর বানাত বলে আমাদের কখনও না খেয়ে থাকতে হয়নি। হয়তো এমন হয়েছে বাবার হাতে একটা টাকাও নেই, বাড়িতে চালও বাড়ন্ত। বাবা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কোথায় বেরিয়েছে মা বা আমরা কেউ জানি না। দেখা গেল দশটা নাগাদ বাবা ফিরে এল দু-চার কিলো চাল ও রুমালে মাছ বেঁধে নিয়ে। কোনও এক জায়গায় গিয়ে ঠাকুর বানাতে হবে, বাবার থেকেই তারা ঠাকুর নেয়, তাই বাবা নিজে গিয়ে বায়না নিয়ে এসেছে। আবার ঠাকুর নিয়ে গেছে, কিন্তু কিছু টাকা বাকি আছে হয়তো, এভাবে গিয়েও তা আদায় হত। ফলে অভাব থাকলেও আমাদের হাঁড়ি চড়েনি এমন হয়নি। সরকারি চাকরির সুখ জ্যাঠাদের ছিল। আমরা পাশে থেকে তা অনুভব করতাম।ওদের সচ্ছলতার অহংকার টের পেতাম। ওরা আমাদের ছোট নজরে দেখত। অর্থহীনকে কে-বা কবে বড় নজরে দেখেছে?
ফেল করার ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার গ্লানিমুক্ত আমার এবার সরকারি চাকরির জন্য তৈরি হতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু কী উপায়ে যে পড়াশোনাটা শুরু করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতাম, পরীক্ষাও দিতে যেতাম, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে পারতাম না বা আমার সেই এলেম ছিল না। কোন বিষয়ের জন্য কোন বই পড়া উচি্ত তা-ও অজানা ছিল। সোজা কথায় গাইডেন্সের অভাব ছিল। এদিকে ট্যাঁকের জোর ও সাহস নেই। বছর দুয়েক আগে মায়ের কথায় রাজি হলে হয়তো বাবার কাছ থেকে কোনও কোচিঙে পড়ার টাকাটা পাওয়া যেত। কিন্তু আমিই রাজি হইনি আর এম.এস-সি.ও পড়া হও না, ফেল করার ভয়ের গ্লানিটা থেকেই যেত।
ছয়
সুদীপ একদিন আমাকে বলল, “তুই সরকারি চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছিস না?”
বললাম, “হ্যাঁ। কিন্তু কেন?”
“তাহলে বাপিদার সঙ্গে দেখা কর। বাপিদা বলে বলে প্রিলিমিনারি ক্লিয়ার করে।”
সুদীপ আমার স্কুলের বন্ধু। ওদের গভর্মেন্ট কোয়ার্টারে আমার যাতায়াত ছিল। হায়ার সেকেন্ডারিতে ওদের বাড়িতে কেমিস্ট্রি পড়তে যেতাম। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত আমাদের এক বন্ধুর দাদা ওদের বাড়িতে সুদীপ, বাবাই ও আমাকে পড়াতে আসত। বাপিদারাও ওই একই কোয়ার্টারে থাকত। বাপিদার বাবা অবসরের পর ফ্ল্যাট কিনে সুবোধ পার্কে শিফট করেন। তো, বাপিদার সঙ্গে আমার আলাপ ছিলই। সুদীপের কাছে বাপিদার বাড়ির অবস্থান ভাল করে বুঝে নিলাম। সঙ্গে নিলাম ফোন নম্বর।
ফোনে যোগাযোগ করে একদিন সাইকেল চালিয়ে বাপিদার বাড়ি গিয়ে আমার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলাম, “সুদীপ বলছিল যে তুমি বলে বলে প্রিলিমিনারি ক্লিয়ার করো, আমিও তো সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি, যদি একসঙ্গে পড়াশোনা করা যায়…”
আর বিশেষ কিছু বলতে হয়নি। আমার থেকে বছর দুয়েকের বড় বাপিদার মনে আমার সম্পর্কেও ভাল ছাত্র বলে ধারণা ছিল। ফলে বাপিদার সম্মতিতে যেন এক অসম বয়সি বন্ধুত্বের সূচনা হল। যদিও সে বন্ধুত্বে খাদ ছিল কিনা সেই মুহূর্তে জানা যায়নি। আর তাছাড়া খাদ ছাড়া যেমন সোনার গয়না গড়া হয় না, তেমনি জীবনের সৌন্দর্যসৃষ্টিও খাদছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
শিক্ষাগ্রহণে যেমন গুরুর কাছে নাড়া বাঁধার ব্যাপার থাকে, তেমনই আমার সরকারি চাকরির প্রস্তুতির প্রথম গুরু বাপিদা্র কাছেও আমি নাড়া বাঁধলাম সেই দিন।যদিও গুরুর মোটিভেশনে ছাত্রের শেষে ষন্দেহ দেখা দেবে।
বাপিদার পরামর্শে আমি রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য টাটা ম্যাকগ্রহিলের জেনারেল স্টাডিস ম্যানুয়াল বইটি কিনলাম। কলেজস্ট্রিট থেকে প্রায় ছ’শো টাকা দিয়ে। টাকার পরিমাণটা তখনকার বিচারে কম নয়। টাটা ম্যাকগ্রহিলের বইটা একটা থান ইটের থেকেও বেশি ভারি।
ইতিমধ্যে আমার এম. এস-সি. পাশের যোগ্যতায় কোনও বেসরকারি চাকরি জোটে কিনা তা পরখ করে দেখছি। একদিন মা বলল, “ছোটন তোকে দেখা করতে বলেছে।”
আমার বাবার এক খুড়তুতো দাদা যিনি সরকারি চাকরি করতেন, তার ছোট ছেলে ছোটনদা। ছোটনদা কোনও এক বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করে। বেশ ফিটফাট থাকে। স্মার্ট বলতে যা বোঝায় ছোটনদা তাই। তো, গেলাম একদিন ছোটনদার কাছে। বলল, “তুই এম. এস-সি. পাশ?”
বললাম, “হ্যাঁ।”
“কম্পিউটার জানিস?”
***********************************************************************************************
(আগামী সংখ্যায়)
************************************************************************************************