শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * প্রশান্ত মন্ডল



কবিতাগুচ্ছ * প্রশান্ত মন্ডল








ভাত

ফোটার আগেই নামিয়ে ফেলি মাঝে মাঝে 

ক্ষুধাপেট তখন আর মানতে চায়না 

অপরের অন্ন ধ্বংস করবার জন‍্য এ জন্ম কিনা জানিনা 

তবে, যুদ্ধক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়বার আগে 

শরীরে জোর আনতে হয় বলে

মুখে তুলে নিই ভাত।



আগুন আর আমি 

ছেলেবেলায় মা বেঁচে থাকতে

আমার বাঁ হাতটা পোড়া যায়, আগুনে..

তখন থেকেই আগুনের প্রতি ভয়

অথচ দ‍্যাখো, আগুনের আঁচে জ্বলে জ্বলেই

পোড়ামুখ নিয়ে পৃথিবীর পথে পথে হেঁটে চলেছি.....



আয়নার সামনে 

কখনো সখনো আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে

নিজেকে বড়ো অসহায় লাগে 

আশেপাশে কোনো ছায়া নেই,

আমার নীরবতার ভেতর পৃথিবী ঘুরতে থাকে 

পৃথিবী জ্বলতে থাকে 

পৃথিবী দুলতে থাকে

আয়না, আমি কোথায় দাঁড়াই!












সিঁড়ি 

প্রত‍্যেকটা সিঁড়িতে একজন করে পেয়াদা দাঁড়িয়ে 

সম্রাটের সভা পর্যন্ত যাবার গতি নেই

আমি আমার ফরমাইশগুলো তার কাছে পৌঁছব কি করে 

এদিকে রাজার রাজত্বে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় 

এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে

আমিও যে ফুরিয়ে যাব পারদের মতই....



অবহেলা

একদিন, অবহেলার ভেতর ঢুকলাম 

তেমন কিছু পেলাম না, শুধু লক্ষ্য করলাম..

এখানে ওখানে স্তুপে স্তুপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা 

তবু কেন যে মানুষ অবহেলা করে!

আসলে দু-চোখে ভেসে ওঠা পরিচ্ছন্ন মানুষগুলোই

নোংরামোর ভেতর ডুবে থাকতে ভালোবাসে...



রৌদ্র 

জ্বরের শীতলতা জড়িয়ে বসে আছি বারান্দায় 

কিছু মিঠে রোদ আমার পিঠ ছুঁয়ে আদর করে যাচ্ছে 

এমন অবস্থায় কাজের পরিকল্পনা গুলোয় তালা ঝুলিয়ে রেখেছি

তবু কিছু অবশিষ্ট তাগাদা সময়ের দরজা ঠেলে ঢুকে যেতে চাইছে

আমার এ সময়ে বিশ্রামের প্রয়োজন 

ক্লান্তির ঘুমকে বিতাড়িত করেছি কতবার 

এমন রৌদ্রের আদর থেকে সরে যেতে চাইছি না বলেই....



কবিরা

একটা আঙুর ফলের গাছের জন‍্য

একটা ফলের বাগান তন্নতন্ন করে চষে ফেললাম 

তোমার নজরে কবিরা এমন বোকা বোকা কাজ করে থাকে।


অথচ তুমি একটি বারের জন‍্যও ভেবে দেখলে না

কবিরা ছোট্ট একটা পুঙ্খানু বিষয় ঘেঁটে দেখবার জন‍্য

একটি মাত্র জীবনের ঝুঁকিও 

অনায়াসে নিয়ে ফেলতে পারে...


*******************************************************************************************************



প্রশান্ত মন্ডল

পিতা- লক্ষীকান্ত মন্ডল ও মাতা- কিরণবালা মন্ডল। ভারত, পশ্চিমবঙ্গ তথা শিলিগুড়ি শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগরে জন্মগ্রহণ এবং স্থায়ী বাসস্থান। জন্মের কিছুকাল পরই মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং ধীরে ধীরে অভাব-অন্টনের মধ‍্যে এগিয়ে চলার পথ তথা জীবন-বৃত্তান্ত। লেখার আগ্রহ তথা গুণী ও শ্রদ্ধেয় মানবদের জীবনী পড়বার ঝোঁক শৈশব থেকেই। প্রথম লেখার হাতেখড়ি বিদ‍্যালয় জীবনে এক তরুণ কবি তথা স্কুল শিক্ষককে দেখে। প্রথম আত্মপ্রকাশ "মুখচ্ছদ্ম" নামক আঞ্চলিক পত্রিকার দ্বারা। এরপর "শুকতারা" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, যৌথ সংকলন, ই-সংকলন, ই-ম‍্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশ। 

লেখালেখি ছাড়াও পাশাপাশি চলতে থাকে শিল্প-কর্ম, সঙ্গীত চর্চা, নাটক-থিয়েটার, অভিনয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যকলাপও চলতে থাকে সুযোগ পেলে। আর এই পরিমিত জীবনের যা কিছু দেনা-পাওনার গল্প তা স্বর্গীয় পিতা-মাতার প্রতিই উৎসর্গিত।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন