পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে
(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )
কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায়
১৭১.
একদিন এইসব ঝরা পাতায়
অলিখিত বর্ণমালা হবো , ঘুরে বেড়াব পথের ধুলোয় -----
ধুলো হয়ে যাবে বোধ ও বধিরতা – ;
ধুলো-পাতায় মিশে কত কথা হবো হয়তো ;
যে উন্মাদ সেই সব ঘাস-পাতাদের বিছানায়
শরীর এলিয়ে আনমনা মন হবে ,
তাঁরই জন্যে সব অপেক্ষা যেন আজও ,
বহুকালের ?
হাওয়ায় হাওয়ায় যতোই হই না কেন পাতা ফুল , যতোই
লিখি নাম -----
সে তো দ্বীপবাসী ,
অনেক নীল জল খেলছে তার চারপাশে—-
শরীরে তার মিশে গেছে এতটাই পরগাছা ,
তাতে লিখে গেছে কারা যেন
শুধুই বেনাম -----
কি ভাবছ বসে বসে ?
পাতা ঝরার বেলা !
অনেক ফুলের মাঝে
আছাড়িপিছাড়ি খাওয়া
পাপড়ির ধুলোমাখা
দিনগুলি —-- ?
কতবার ডাকলাম ,
গান হয়ে পাতা ঝরার মাঝে
শুধুই লুটোপুটি খেলো !
মিশে গেলাম উভয়েই
অনেক অবহেলিত পাতায় ফুলে ;
তবুও সেই আমি কি
এই আমির কেউ ?
১৭২ .
পথের গান শুনছিলাম ,
মৌমাছিরা কুশল চাইলো মাঘের বাতাসে ;
বলতে পারি নি ।
নাভিমূলে তার
আমমুকুলের জন্মান্তর চেয়েছিলাম ?
মাঘের বাতাসে বাজতে থাকলো
কত না-জানা সুর ....;
ওহে অ-বোধির
সে কি বোধির !
ওহে আগামীর ফাগুন-হাহাকার
বলো বলো ,
ওই তো সে চেয়ে আছে চরাচর জুড়ে ---- ফোটাতে
আর একটি কুসুম কাল----- ?
এই সকল ঘ্রাণে কত আর মৌমাছি হবো আমি ,
ঋতুসুখ ভাসিয়ে দেবো কত আর জীবনের অপার শূন্যতায় ----
ভাবছিলাম সেই কথাটিই
তার দিকে চেয়ে চেয়ে ...... ;
১৭৩.
অবাধ্য স্নায়ু- পথে
এক দুরন্ত কৈশোর
চলাচল করে ।
ডানায় উড়ে বেড়ায় কত না
ঘাসফুলেদের চিৎকার---- কত হিম রোদ্দুর লুটোপুটি খায়
তার সরস্বতী চাহুনি জুড়ে ------
কি যে তন্ময় ছুটোছুটি ! কি যে গভীর! এলোমেলো ঘুম পথে
স্রোতদের দুমড়েমুচড়ে চলে যায়
সে সব ছবির মহড়া ---
কাকে বলি সে সব ?
তুমি কি শুনতে চাও,
সে কি জানতে
পেতেছিল গাল , তাহাদের অন্যমনষ্ক অভিনিবেশে ---?
স্নায়ু-পথে এমন কত কিছু আসে আর যায় !
এমন কত জীবনের মুগ্ধতা খানখান হয়ে পড়ে থাকে !
যে প্রাণ , ভ্রান্ত পথে
হাজারো রূপ-আরাধনায় ভাসিয়েছিল নৌকা ,
কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে ...... ;
যদিও তুচ্ছ
সেই সব মানসিক অবসাদ , তুচ্ছ সেই সব কাহিনী ,
মরে হেজেও মরে না তাঁরা ----- বাঁচিয়ে রাখে এমন কিছু ,
ঘুরে ঘুরে পাক খেয়ে পড়ে
কত ডানা -----
তবুও নতুন সে সব ;
অতি পুরাতনের অভিনিবেশ ফুঁড়ে উঠে আসে কত না
ভুল তন্দ্রা আমাদের ....!
১৭৪ .
কে যে কার
অহেতুক আনমনে
মিথ্যে অনুকূল ----
তুমিও ভুল , আমিও ;
তারই ভেতর
পাহাড়ি হাওয়া দের
এই কৌতুক ----
সে তবু স্বপনের দুল
পরায় কানে -----
ওহে ভুল ,
এবার আপন ছন্দে
চলো দুলে.....
আহা , আমি নয়
তুমি নয়
সয় , সে বাতাস সয় ,
এমন কত পরিহাস
আজীবন -----
মরেছে সে-ও ,
তাঁহারই মাঝে ?
যেও যেও , আজ নয়
কাল ,
সেই তাঁর প্রকৃত সকাল ?
আজ ধুয়ে ফেল মুখ
একাকী চুম্বনে ----
সেই বুঝি অকাল তার !
১৭৫ .
অন্ধকার জেগে উঠেছিল
একাকী ;
নক্ষত্রদের মাঝে
ভেসে যেতে যেতে
চেয়ে দেখেছিল , কে যেন আরো দূর তারাদের থেকে দুহাত
বাড়িয়েছে একা ----
সেই সব হাতের প্রসারতা এতটাই নির্জন , নিঃসঙ্গ ----
আলো ফেরে না যেদিকে
শুধুই অন্ধকার ছেয়ে যায় , ফেউ ডেকে ওঠে , চাঁদও কাত হয়ে পড়ে থাকে
নেড়া ডালের ডগায় ;
রাতকানা পাখিদের ডানার ঝাপ্টা শুনি শুধুই ;
অনেক অসাড়তায় হাবুডুবু খেয়ে উঠি
আহত সিংহের মতো ।
দ্বিতীয়বার ছুঁতে
অন্য এক আকাশের ঘূর্ণির ভেতর
পাক খেতে খেতে
আবারও চলে যাই
কোনো এক দিকে যে ,
সে কথা
খুব ভালো করে জেনে গেছি আজ —-
১৭৬ .
কতটা জীবন নিয়ে মানুষ
সে কথা জানো না !
মিথ্যে শরীর নিয়ে
অশরীরী পড়ে থাকো।
এই চেয়ে থাকার অনেক গল্প ----
জানি বলেই গল্পের আগা মাথা ভেঙে
ভাসিয়ে দি
অনেক শব্দের মহিমায় .......
এবার বলো
কোন গল্প শুনতে চাও
একটি গোটা রাত
মানুষের সাথে ----- ?
তাঁর মানুষ রূপে
বারবার ফিরে
ঘুরে আসতে পারি যেন
অন্য এক জীবনের মহিমায়
সকল দিক ভুল করেও ; ----
১৭৭ .
এত যে কাছে কাছে
রাখি ,
সে যদি সত্যিই আসে
কাছে
খুব কি আহ্লাদিত
হবো ?
নাকি আরো দূরে
যেয়ে
পেছনে চেয়ে থাকতেই
বেশি ভালোবাসবো ?
হঠাৎ দেখা
কাছে এসে যদি গুনগুন করে , গাইতে
থাকে একা
মুচকি হেসে ওঠে যদি
রাতের পথের মতো
কেউ ,-----
সে যে কে , তাতো বলে নি !
সেই মেঘ-কুয়াশায় ধোঁয়া ধোঁয়া চারদিক যখন -----
১৭৮.
কেন সে মেলে ধরে এত আলোর মেলা?
ডানায় গুটিয়ে নি
তাই
দিনের সব অন্ধকার !
ডালের ডগায় ঘর আমার ,
আলো আর অন্ধকারের খেলা।
সারা বেলা জেগে থাকে
মেঘ-বৃষ্টি-জলের কথা বলা ।
খাতা মেলে ধরে ভাঙা আলোর বেলা ---
খেলা তার চোখ পাল্টে কয়, বলেছ বলে কি
আর চাবে না জল ;
সেই চোখের ফল্গুধারায়..?
১৭৯.
উপেক্ষা করি কী করে ?
পাশ ফিরতে মাথাটি যায় ঘুরে ।
এ যে মধ্যরাতের হাতছানি !
ঘুম চোখে সামনে দাঁড়ালো ।
চিনতে না চিনতে
বুঝতে না বুঝতে
এমনই সে ভাব , এমনই ঘোর , কুয়াশায় কুয়াশায়
আলোআঁধারিতে
মিশে গেল ......!
চাঁদকেও শেষরাতে আকাশের
কোনায়
ডুমো ডেওর মতো মনে হয় ।
আকাশের ওপারে
এভাবেই
হারিয়ে যায় আকাশ ----
কোনো এক অসীম অন্ধকারে — !
তবুও এ গান
শেষ না করে
তাকে ভুলাই কীভাবে ?
১৮০.
এ যেন একটি গোলকের ভেতর হাজারো অভিব্যক্তি !
পাহাড়ের উচ্চতায় ঠাট্টা করছে আমায় ।
মেঘেদের হাসি ছাপিয়ে
ঝর্ণা হয়ে ঝরে পড়ছে
অসংখ্য চোখ —-
তাকে ধরবো বলে
হাত ডোবাই বুকের ভেতর , হাড়-পাজরারা দশ দিক
পরিক্রমণ এ
স্তব্ধ দাঁড়ালো ।
ছুটে ছুটে
ঘুরিয়ে দেখাতে থাকলো
প্রকৃত শস্যের লালনপালন ।
পথ মুড়িয়ে
উঠিয়ে নিল যেন তাঁর কোলের ভেতর ।
আস্ত একটি বটবৃক্ষ ঝুরি নামালে যেমন টা হয়
ছায়া-শীতলতা ----
যত দূর পর্যন্ত নদী বইতে পারে
তারপরও
কূলকিনারা বিহীন ……
তাঁর দীপ্তিতে
এভাবেই
ভিজতে ভিজতে শব্দ হয়ে
অসংখ্য দিকে প্রতিস্থাপিত হলো
সেই সাধনতন্ত্র -----

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন