শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়



পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে

(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )

কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায় 

   

১৭১.


একদিন এইসব ঝরা পাতায় 

অলিখিত বর্ণমালা হবো , ঘুরে বেড়াব পথের ধুলোয় ----- 

ধুলো হয়ে যাবে বোধ ও বধিরতা – ;

ধুলো-পাতায় মিশে কত কথা হবো হয়তো ; 

যে উন্মাদ সেই সব ঘাস-পাতাদের বিছানায়

শরীর এলিয়ে আনমনা মন হবে , 

তাঁরই জন্যে সব অপেক্ষা যেন আজও , 

বহুকালের ?


হাওয়ায় হাওয়ায় যতোই হই না কেন পাতা ফুল , যতোই 

লিখি নাম ----- 


সে তো  দ্বীপবাসী ,

অনেক নীল জল খেলছে তার চারপাশে—-  

শরীরে তার মিশে গেছে এতটাই পরগাছা  , 

তাতে লিখে গেছে কারা যেন 

      শুধুই বেনাম -----


কি ভাবছ বসে বসে ?

পাতা ঝরার বেলা !


অনেক ফুলের মাঝে 

আছাড়িপিছাড়ি খাওয়া 

পাপড়ির ধুলোমাখা 

দিনগুলি —-- ?


কতবার ডাকলাম ,

গান হয়ে পাতা ঝরার  মাঝে 

শুধুই লুটোপুটি খেলো  !


মিশে গেলাম উভয়েই  

অনেক অবহেলিত পাতায় ফুলে ;


তবুও সেই আমি কি 

  এই আমির কেউ ?


১৭২ .


পথের গান শুনছিলাম ,

মৌমাছিরা কুশল  চাইলো মাঘের বাতাসে ; 

বলতে পারি নি ।


নাভিমূলে তার 

আমমুকুলের জন্মান্তর চেয়েছিলাম ?


মাঘের বাতাসে বাজতে থাকলো 

কত না-জানা সুর ....;


ওহে অ-বোধির

   সে কি বোধির !

ওহে আগামীর ফাগুন-হাহাকার 

বলো বলো , 


ওই তো সে চেয়ে আছে  চরাচর জুড়ে ---- ফোটাতে 

আর একটি কুসুম কাল----- ?


এই সকল ঘ্রাণে কত আর মৌমাছি হবো আমি ,

ঋতুসুখ ভাসিয়ে দেবো কত আর জীবনের অপার শূন্যতায় ---- 


ভাবছিলাম সেই কথাটিই 

   তার দিকে চেয়ে চেয়ে ...... ;


১৭৩.


অবাধ্য স্নায়ু- পথে 

এক দুরন্ত কৈশোর 

চলাচল করে ।


ডানায় উড়ে বেড়ায় কত না 

ঘাসফুলেদের চিৎকার---- কত হিম রোদ্দুর লুটোপুটি খায়

তার সরস্বতী চাহুনি জুড়ে ------


কি যে তন্ময় ছুটোছুটি ! কি যে গভীর! এলোমেলো ঘুম পথে 

স্রোতদের দুমড়েমুচড়ে চলে যায় 

সে সব ছবির মহড়া ---


কাকে বলি সে সব ?


তুমি কি শুনতে চাও,

সে কি জানতে 

পেতেছিল গাল , তাহাদের অন্যমনষ্ক অভিনিবেশে ---?


স্নায়ু-পথে এমন কত কিছু আসে আর যায় !

এমন কত জীবনের মুগ্ধতা খানখান হয়ে পড়ে থাকে !


যে প্রাণ , ভ্রান্ত পথে 

হাজারো রূপ-আরাধনায়         ভাসিয়েছিল নৌকা ,

কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে ...... ;


যদিও তুচ্ছ 

সেই সব মানসিক অবসাদ , তুচ্ছ সেই সব কাহিনী ,

মরে হেজেও মরে না তাঁরা ----- বাঁচিয়ে রাখে এমন কিছু ,

ঘুরে ঘুরে পাক খেয়ে পড়ে 

       কত ডানা -----


তবুও নতুন সে সব ;

অতি পুরাতনের অভিনিবেশ ফুঁড়ে উঠে আসে কত না 

ভুল তন্দ্রা আমাদের ....!


১৭৪ .


কে যে কার 

অহেতুক আনমনে

মিথ্যে অনুকূল ----


তুমিও ভুল , আমিও ;

তারই ভেতর 

পাহাড়ি হাওয়া দের 

       এই কৌতুক ----


সে তবু স্বপনের দুল 

     পরায় কানে -----


ওহে ভুল , 

এবার আপন ছন্দে 

        চলো দুলে.....


আহা , আমি নয় 

তুমি নয় 

সয় , সে বাতাস সয় ,

এমন কত পরিহাস

      আজীবন -----


মরেছে সে-ও , 

তাঁহারই মাঝে ?


যেও যেও , আজ নয় 

         কাল ,

সেই তাঁর প্রকৃত সকাল ?


আজ ধুয়ে ফেল মুখ 

     একাকী চুম্বনে ----


সেই বুঝি অকাল তার !


১৭৫ .


অন্ধকার জেগে উঠেছিল 

একাকী ; 


নক্ষত্রদের মাঝে 

ভেসে যেতে যেতে 

চেয়ে দেখেছিল , কে যেন আরো দূর তারাদের থেকে দুহাত 

বাড়িয়েছে একা ----


সেই সব হাতের প্রসারতা এতটাই নির্জন , নিঃসঙ্গ ----

আলো ফেরে না যেদিকে 

শুধুই অন্ধকার ছেয়ে যায় , ফেউ ডেকে ওঠে , চাঁদও কাত হয়ে পড়ে থাকে 

নেড়া ডালের ডগায় ;



রাতকানা পাখিদের ডানার ঝাপ্টা শুনি শুধুই ; 

অনেক অসাড়তায় হাবুডুবু খেয়ে উঠি 

আহত সিংহের মতো ।


দ্বিতীয়বার ছুঁতে

অন্য এক আকাশের ঘূর্ণির ভেতর 

পাক খেতে খেতে 

আবারও চলে যাই

কোনো এক দিকে যে ,


সে কথা 

খুব ভালো করে জেনে গেছি আজ —-


১৭৬ .


কতটা জীবন নিয়ে মানুষ 

   সে কথা জানো না !

মিথ্যে শরীর নিয়ে 

অশরীরী পড়ে থাকো।


এই চেয়ে থাকার অনেক গল্প ---- 

জানি বলেই গল্পের আগা মাথা ভেঙে 

ভাসিয়ে দি 

অনেক শব্দের মহিমায় .......


এবার বলো 

কোন গল্প শুনতে চাও 

একটি গোটা রাত 

মানুষের সাথে ----- ?


তাঁর মানুষ রূপে 

   বারবার ফিরে 

ঘুরে আসতে পারি যেন  

অন্য এক জীবনের মহিমায় 

  সকল দিক ভুল করেও ; ----


১৭৭ .


এত যে কাছে কাছে 

             রাখি ,

সে যদি সত্যিই আসে 

            কাছে 

খুব কি আহ্লাদিত

              হবো  ?

নাকি আরো দূরে 

              যেয়ে 

পেছনে চেয়ে থাকতেই 

 বেশি ভালোবাসবো ?


হঠাৎ দেখা 

কাছে এসে যদি গুনগুন করে , গাইতে 

     থাকে একা  

মুচকি হেসে ওঠে যদি 

রাতের পথের মতো 

           কেউ ,-----


সে যে কে , তাতো বলে নি !


সেই মেঘ-কুয়াশায় ধোঁয়া ধোঁয়া চারদিক যখন ----- 


১৭৮.


কেন সে মেলে ধরে এত আলোর      মেলা? 

ডানায় গুটিয়ে নি 

তাই 

দিনের সব অন্ধকার !


ডালের ডগায় ঘর আমার ,

আলো আর অন্ধকারের খেলা। 

সারা বেলা জেগে থাকে 

মেঘ-বৃষ্টি-জলের কথা বলা ।


খাতা মেলে ধরে ভাঙা আলোর বেলা ---

খেলা তার চোখ পাল্টে কয়, বলেছ বলে কি 

আর চাবে না জল ;

সেই চোখের ফল্গুধারায়..?


১৭৯.


উপেক্ষা করি কী করে ?


পাশ ফিরতে মাথাটি যায় ঘুরে ।


এ যে মধ্যরাতের হাতছানি !

ঘুম চোখে সামনে দাঁড়ালো ।


চিনতে না চিনতে 

বুঝতে না বুঝতে 

এমনই সে ভাব , এমনই ঘোর , কুয়াশায় কুয়াশায়  

   আলোআঁধারিতে 

        মিশে গেল ......!


চাঁদকেও শেষরাতে আকাশের 

               কোনায় 

ডুমো ডেওর মতো মনে হয় ।


আকাশের ওপারে 

      এভাবেই 

হারিয়ে যায় আকাশ ----  

কোনো এক অসীম অন্ধকারে — !


তবুও এ গান 

  শেষ না করে 

তাকে ভুলাই কীভাবে ?


১৮০.


এ যেন একটি গোলকের ভেতর হাজারো অভিব্যক্তি !

পাহাড়ের উচ্চতায় ঠাট্টা করছে আমায় ।


মেঘেদের হাসি ছাপিয়ে 

ঝর্ণা হয়ে ঝরে পড়ছে 

   অসংখ্য চোখ —-


তাকে ধরবো বলে 

হাত ডোবাই বুকের ভেতর , হাড়-পাজরারা দশ দিক 

পরিক্রমণ এ 

স্তব্ধ দাঁড়ালো ।


ছুটে ছুটে 

ঘুরিয়ে দেখাতে থাকলো

প্রকৃত শস্যের লালনপালন ।


পথ মুড়িয়ে 

উঠিয়ে নিল যেন তাঁর কোলের ভেতর ।

আস্ত একটি বটবৃক্ষ ঝুরি নামালে যেমন টা হয় 

   ছায়া-শীতলতা ----

যত দূর পর্যন্ত নদী বইতে পারে 

       তারপরও 

 কূলকিনারা বিহীন ……


তাঁর দীপ্তিতে 

       এভাবেই 

ভিজতে ভিজতে শব্দ হয়ে  

অসংখ্য দিকে প্রতিস্থাপিত হলো

   সেই সাধনতন্ত্র -----


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন