শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

মোহাম্মদ হোসাইন



মোহাম্মদ হোসাইন * দুটি কবিতা 


ভালোবাসলে মানুষ নি:স্ব হয়ে যায় 

 ভালোবাসার একটা কবিতা লিখব

একজনকে কথা দিয়েছি। কিন্তু, কোথা থেকে কী দিয়ে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছিনা। বিখ্যাত কেউ একজন বলেছেন, ''শুভ সূচনাই সমাপ্তির অর্ধেক''। 

মাঝখানে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছি। ঠিক ঘুমও নয়,  ঝিমুনি। আপসে, চোখ জুড়িয়ে আসছে। শীত যাই যাই করেও যাচ্ছেনা। এখানে ওখানে বসন্ত উঁকি দিচ্ছে। বসন্ত নিয়ে করিমের একটা গান আছে।

 " বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।''


আমার কোনো বন্ধু নেই। আমার কোনো বসন্তকালও নেই। আমি চিরদিন শীতকাল ভালোবাসি।

 "...আমার দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, 

দীর্ঘ বরষ মাস..."" 

ফকির লালনের কাছে একটা আয়না ছিল। সেই আয়নায় লালন তার বন্ধুকে সারাক্ষণ দেখতে পেত। রবীন্দ্রনাথও। হাছন রাজাও। 


আমি অক্ষরের মাঝে বসে আছি। ছায়া ও শব্দ পতন দেখছি। 

আমি একজনের ছবি আঁকছি সমগ্র জীবনভর....!

তার কাছে আমার অনেক ঋণ, অথচ, তাকে আমি ঠিক ঠিক ফুটিয়ে তুলতে পারছিনা! 


পৃথিবীতে অনেক সৌন্দর্য পোঁতা রয়েছে, অনেক কদর্যতাও 

ভালোবাসলে মানুষ সুন্দর হয়ে যায় 

ভালোবাসলে মানুষ নি:সংশয় হয়ে যায় 


আমি একটা ভালোবাসার কবিতা লিখব। 


আমি প্রতি সূর্যাস্তে এবং সূর্যোদয়ে পৃথিবীর প্রতি কোণায় কোণায় তোমার নাম লিখে রাখি 

আমি তোমার গায়ে লেপ্টে থাকি প্রতিক্ষণ তোমার ঘ্রাণ হয়ে, ছায়া হয়ে, মাধুর্য হয়ে ; অথচ, তুমি আমাকে দেখতে পাওনা, ছুঁতে পাওনা...!


আমার খুব কষ্ট হলে 

আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে করলে 

একদিন ভালোবাসার একটা কবিতা লিখব 


আমি তাকে কথা দিয়েছি। 

কথা দিলে মানুষ নি:স্ব হয়ে যায়...!! 








একটি কবিতার পূর্বলেখ

নদী পাড়ে 

আমাদের পুরনো দিনগুলো রেখে এসেছি

সবুজ হাওয়া, ঘাসফড়িং, পালতোলা নৌকা তাদের বয়ে নিয়ে যায়, স্মৃতি খেতে দেয় 

মাঝে মাঝে ঝড়ের ঝাপট এলে, বানভাসি হলে 

ঘুমন্ত মায়ের আঁচল ধরে টানে, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নির্ভরতা, স্নেহের খুঁটি যেন... 


মা জানেনা এখন আমাদের কোনো দিন নেই 

শুধু রাত, শুধু অনন্ত অন্ধকার . …! তবুও--


যারা খুব আনন্দে থাকে তারা আনন্দে থাকুক


যারা পাশ ফিরে শুয়ে আছে শুয়ে থাক তারা তাদের অভিমান ভুলে যাক, বালিশ বদল করে নিক, কিংবা দীর্ঘশ্বাসটুকু উড়িয়ে দিক ঠা ঠা করে... যেমন শাদা কবুতর শাদা শাদা মেঘে নির্ভার পালক ছড়ায় .


পৃথিবীকে দু:খের কথা বলে লাভ নেই, সে নিজেই ভারাক্রান্ত, মুহ্যমান ! তারচে, এসো, আমরা আমাদেরকেই গান শোনাই, বৃষ্টি কিংবা শরতের গল্প বলি আর বুক চিতিয়ে হেসে নেই হাহ হা... সা রে গা মা পা...! 


আজকাল তোমার বেশ উন্নতি হয়েছে। বেশ প্রমিত। 'বিষণ্নতা' বানানটা ঠিক ঠিক উচ্চারণ করেছ। অনেকেই এখনো মূর্ধন্য -ণ আর দন্তন্য-ন'র পার্থক্য করে ওঠতে পারে না। জীবনে আরও কতকিছু করে যেতে হবে...করে যেতে হয়...!! 


*********************************************************************************************



মোহাম্মদ হোসাইন

জন্ম : ১৯৬৫ সালের ১ অক্টোবর, সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ । লেখালেখি শুরু ছোটবেলাতেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মাধ্যমে লিখে যাচ্ছেন তিনি।  'দেশ' পত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে  বিয়াল্লিশ বছর ধরে চলছে তাঁর নিরন্তর যাত্রা। কবিতাই তাঁর ধ্যান, নিমগ্ন আরাধনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে পেশা হিসেবে নিয়েছেন শিক্ষকতাকে। বর্তমানে তিনি সিলেট শহরে বসবাস করছেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ

ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে (১৯৯৫) * মেঘগুলো পাখিগুলো (২০০১)

অরণ্যে যাবো অস্তিত্বে পাপ (২০০৩) * পালকে প্রসন্ন প্রগতির চাকা (২০০৪)

ভেতরে উদগম ভেতরে বৃষ্টিপাত (২০০৬) * মেঘের মগ্নতায় রেশমি অন্ধকার (২০০৯)

বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা (২০১২) * রূপপ্রকৃতির বিনম্র চিঠি (২০১৩)

নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ (২০১৪) * অন্তিম জাদুর ঘূর্ণন (২০১৫)

বিভাজিত মানুষের মুখ (২০১৫) * অনূদিত রোদের রেহেল (২০১৫)

ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে (২০১৭) * তুমুল বেজে ওঠে অন্ধকার (২০১৯)

হায়ারোগ্লিফিক্স (২০২০) * ছবি ও চেনাগন্ধের মেটাফর (২০২১)

ঈশ্বরের ছায়াচিত্র ( ২০২১) * রক্তাক্ত পেরেকের গান (২০২৩)

                                                           জলের গ্রাফিতি (২০২৩).


.

1 টি মন্তব্য: