কবি স্বপ্নদীপ রায়-এর দুটি কবিতা
তাড়না
কিছু এমন লিখে যাই...
যা লেখা হয় নি কোথাও...কখনও।
কিছু এমন ছুঁয়ে যাই....
যার স্পর্শ পায় নি রক্ত-মাংস এখনও।
সেই ইচ্ছেটাই তাড়না।বোধ হয়।
শূন্য কাগজে আঁকিবুকি কাটি।
শব্দছক--কাটাকুটি--হিজিবিজি
হঠাৎ সবকিছু ঝাপসা কালো!
সিলিং থেকে দপ করে জ্বলে ওঠে
পরক্ষণে সহস্র ওয়াটের তেজিয়ান বাল্ব--
লাইট--ক্যামেরা--অ্যাকশন্--
মেজেঘষে কিছু চকচকে করে যাই....
---আমার যত্ন।
--তাড়নায় তাড়িত।বোধ হয়।
প্রতিদিন ভিন্ন সাজ.....
কিন্তু ঘুরেফিরে একটাই কাজ ...
নিঃশব্দ অন্তঃক্ষরণ।অনুসন্ধান।
তাড়না থেকে তাড়নায় উত্তরণ!
অদৃশ্য সেইই... চক্রবৎ গতি--
...বোধ হয়।
ঐ তাড়নাতেই
সেদিনের আমি চকমকি পাথর ঘষে
যে দাবানল লাগিয়েছিলাম বসতিতে
সেই আগুন আজ সাবালক--
সে একটু একটু করে প্রতিদিন বন্য
করছে আমাকে--ঠেলে চলেছে
বিবর্তনের উল্টো সিঁড়ি ধরিয়ে আদিম
গুহার নৃশংস নির্মম দুয়ারে---
সেখানেও খড়ি-মাটি হাতে বর্বর আমি
পাথরের গায়ে বিনিদ্র চেষ্টা চালিয়ে যাব...
যদি কিছু ফুটে ওঠে...অপার্থিব।
সেই প্রাচীনতম শক্তিই স্পন্দন।
সেই মনুষ্য জীবন।
স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির দিকে ধাবমান ঐ
মহাস্রোতেই আমার নিত্য অবগাহন।
একদিন ঠিকই তার মহামোহিনীবলে
অবচেতন স্নায়ুসূত্রে পাব
স্বর্গীয় পারিজাত সুগন্ধের সন্ধান!
-ঠিকই।।
সংকোচন
অ্যাপার্টমেন্টের একফালি জড়োসড়ো
বারান্দা থেকে পৃথিবীটাকে মনে হয়.....একবুক পাথর।
কয়েকপা পিছু হটলেই ছিমছাম দুটি রুম
একটি বাহারি ঝলমলে ড্রইংরুম.....
যেন,ঐ পাথর গলে অচিরেই জন্ম নেয়
একটি রূপকথার ছোট নদী।
তার সীমিত প্রাণে অসীম এক আকাশ ছন্দ!
পায়ে নাবালিকার চপলা দ্রুতি.....
হৃদয়ে,স্বপন সংসার-- একরত্তি আদিম স্পন্দ!
সংসার...সংসার...সে ঠিক যেন কেমন?
অণু থেকে পরমাণু....আর--
পরমাণু ভেঙে হাতে আপাত সহজ নিউক্লিয়াস
নিয়ে কিছুকাল নাড়াচাড়ার পর স্বধর্মে,
ঐ নিউক্লিয়াসের ভিতর একদিন সে খুঁজে পেল
তার খুঁটিনাটি অমূল্য রতন্--তারপর চলল,
চুলচেরা দাঁতকপাটি হাড়ভাঙা বিশ্লেষণ।
আলাদা....আলাদা...ভাবতে ভাবতে দেখা গেল
কখন এক দলছুট বিশৃঙ্খল লম্পট
জন্ম দিয়েছে বিষক্রিয়ার এক মহাশৃঙ্খল!
এরপর নিমেষেই গলিত স্খলিত হয়েছে পৃথিবী।
ম্যানহাটানের পথে পথে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে
সেই উন্মাদ বিজ্ঞানীকে তার কুখ্যাত আত্মরোদন!
ভয়াবহ সেই প্রবৃদ্ধ কাল থেকে
একালে আবার চোখ ফেরাই...দেখি--
আদরের ছোট নদী কাঠফাটা রোদ্দুরে
শুকনো স্তনযুগল আগলে সম্পূর্ণ রিক্ত!
দমকা হাওয়ার ধাক্কায় এন্ট্রান্স বন্ধ হতেই
রুদ্ধশ্বাসে তাকে খোলার প্রচেষ্টা করি।
দৌড়ে আসি কোনমতে লিফট টির দিকে...
বাটন্ ঠেলে দ্রুত নীচে নামতে চাই আমি!
স্পর্শ করতে চাই প্রতিদিনের দলিত সেই মাটি...
শুনেছি,তার আকাশ বহু আলোকবর্ষ বিস্তৃত
আমার দুচোখের স্পর্ধা ছাড়ি সর্বব্যাপী ব্যাপৃত-
আমি জানি....আমি জানি....
সহস্র বছরের পথপরিক্রমায় আমি একমাএ
তারই.....আশ্রয়স্থানভাগী!!
******************************************************
দারুন হয়েছে
উত্তরমুছুন