শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

অণুগল্প * প্রদীপ কুমার দে


অণুগল্প সাহিত্যের একটি বিস্ময়কর শাখা। ' বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ?' ঠিক তাও নয় যেন, বিন্দুতে সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সার্থক অণুগল্পে। তেমনই একটি অসাধারণ অণুগল্প এবার আমরা পড়ছি ----


একটা খাস্তা কঙ্কাল 

প্রদীপ কুমার দে 

সন্ধ্যাবেলায় লোডশেডিং হয়ে গেল। প্যান্ট জামা গায়ে সেঁটে বেড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎই যেন সব কালো অন্ধকারে মুড়ে গেল। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কয়েক পা এগিয়েছি, পিছন থেকে ডাক এলো,

--  কি প্রদীপবাবু রাগ করেছেন ?

ঘুরে দেখি পিছনে কাকের মতো চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে নিলয়দা। উনি আমার প্রতিবেশী এবং লেখালেখি করার সুবাদে ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ওনার ব্যবহার এযাবৎ আমাকে ভীষণই পীড়া দিত তাই এড়িয়ে চলতাম। একবছর ধরে এড়িয়ে চলছি ওনাকে আর অবশ্যই উনিও আমাকে। উনি পিছুডাক দিয়েছেন, আমি উত্তর দিয়েই দিলাম,

--  এ বয়সে আর রাগ?

--  তাহলে চলেন না আমার ঘরে, বসে আমি আর আপনি মিলে কবিতা আর গল্প পাঠ করি ?

--  এই লোডশেডিং অন্ধকারে আলো কোথায় পাবেন?

--  আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হল তাই জানেন না, আমি একটা এমার্জেন্সি লাইট কিনেছি। অসুবিধা হবে না। 

--  কি বলেন ?  এমার্জেন্সি আলো?  তাতে কি হবে?

--  প্রচুর আলো। কোন অসুবিধা হবে না, বলছি তো। নচেৎ অন্ধকারে কোথায় যাবেন?

কথাগুলো বলে দাঁত বার করে হাসলো নিলয়দা।

চললাম ওনার সাথে। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। উনি ঘরে আমাকে নিয়ে ঢূকেই দরজায় চিটকানি দিয়ে দিলেন। ঘরের মধ্যে ঢুকতেই কিরকম একটা পচা গন্ধ নাকে এল। আমি বললাম,

--  নিলয়দা আগে লাইটটা জ্বালান।

--  হ্যাঁ এই যে …

আমি একপাশে অপেক্ষায়। লাইট কই। একটু অন্ধকার সহ্য করে নিলে যা হয় চোখ যেন কিছু দেখতে পেল। দেখি কই নিলয়দা তো নেই। ওমাঃ কি দেখছি? একটা লিকলিকে কঙ্কাল তার সরু সরু আঙুল দিয়ে একটা বই তুলে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।

ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম,

--  নিলয়দা? নিলয়দা?

বিকট শব্দ হল। কেমন ' হে -হে ' শব্দে নেকো সুরে হাসলো কেউ।

ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। অন্ধকারে দরজার চিটকিনি খুঁজতে লাগলাম। মুখে রামনাম।


বরাত জোরে বেঁচে গেলাম। হঠাৎই আলো চলে এল। ঘরে আলোর সুইচ অন করাই ছিল। আলো জ্বলতেই দেখি বিছানায় শায়িত একটি লিকলিকে কঙ্কাল।

চিটকিনি খুলে পড়িমড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছি। আওয়াজে নীচের ফ্ল্যাটের বৌদি বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,

--  কি ভয় পেয়েছেন তো? ইদানীং আমরা সব্বাই পাচ্ছি।









***********************************************************************************************************



প্রদীপ দে 

লেখক  নেশায়। পেশা ছিল হিসেবনিকেশ।  বয়স -৬২ । কলকাতা নিবাসী। বিবাহিত।
নিজের লেখা কয়েকটি বই আছে।

1 টি মন্তব্য: