শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪

তপন পাত্র

 


তপন পাত্র * দুটি কবিতা







ঊষার  আলো

(১)

গতরাতে বিয়ে হয়ে গেল জ্যোস্না পিসির।

গত রাতে কি পর হয়ে গেল পিসি আমার?


আজ সকাল সকাল শ্বশুর বাড়ি...

বিদায় প্রহরের বিষাদ ঘন্টা বেজে উঠছে ---ঢং- ঢং-ঢং ...।


বুকের কান্না, মুখের কান্না বাগ মানে না।

মায়ের গলা জড়িয়ে মামার দিকে তাকিয়ে বলছে, " মামা এলে যত্ন করে খেতে দিবি মা,

আর

নজর রাখবি --গোবুর কুড়ের পুণকা শাকগুলি যেন গরু-ছাগলে মুড়িয়ে না খায়।


এক বছর আগে বাবা চলে গেছে।

 সেদিন উঠোনে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিল জ্যোস্না পিসি , সদ্য মৃত বাবার নিঃসাড় দেহ ধরে বলেছিল, "বাবাগো, আর কাকে বাবা বলবো, বলে দিয়ে যাও গো... বলো বাবা, আর কে দাঁড়ি ধরবে বাবা গো!"


গ্রামে একটি মাত্র ভুসি মালের দোকান ছিল, আমার দাদুর।


...এরকম কাঁদতে কাঁদতেই জ্যোস্না পিসিরা এক সংসারের মায়া ছেড়ে আরেক মায়ার খুঁটিতে বাঁধা পড়ে যায়।


শুকিয়ে যাওয়া চোখের জল বারংবার ছলছল করে ওঠে।













ছোট বেলা ধুলাখেলা

(১)

ছোটবেলায় ধুলায় ধুলায় ঘর বেঁধেছি।

খলাম কুচি দিয়ে সাজিয়েছি রান্নাঘর। শাক পাত ----কত ধরনের আনাজ পাতি।


একটু মন নড়ে গেলেই ভেঙ্গে দিয়েছি সব। ছড়া কেটেছি: 

"হাতের সুখে গড়লাম পায়ের সুখে ভাঙলাম!

হাতের সুখে গড়লাম পায়ের সুখে ভাঙলাম ... "!


পরদিন আবার গড়া-ভাঙ্গার খেলা।


বড় হয়ে দেখলাম, হাজার মেহনত করেও ছোটবেলার এক বিকেলের একটা ঘরের মতো ঘর বাঁধা হলো না।


(২)


একটু বৃষ্টি হলেই কুলি দিয়ে বয়ে যেত জল।

জল গড়াতে গড়াতে গিয়ে পড়তো ডোবায়।


অংকের খাতা ছিঁড়ে কাগজের নৌকা

ভাসিয়েছি বহতা পথের জলে।

হেলতে দুলতে চলে গেছে ডোবার ওপারে।


যেন ঝর্ণা বয়ে বয়ে নদী,

 নদী থেকে সমুদ্র।


বড় হয়ে একটাও নৌকা বানাতে পারলাম না।

আমার ঝর্ণাও নির্ঝর হয়েই থেকে গেল।

আমাকে তোমার নৌকায় নেবে গো

 ঈশ্বরী পাটনী ?



***************************************************************************



তপন পাত্র 

পুরুলিয়ার সুপ্রাচীন লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে পেশায় অধ্যাপক তপন পাত্রর কলমেগদ্য ও কবিতা উভয় শাখাতেই তিনি সাবলীল । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই ---কাব্যগ্রন্থ : মাটিও কালে ঢেউ  --(১৯৯৪) * অচেনা রং --(১৯৯৮) * স্বাতী নক্ষত্রের জল  ঝিনুকের বুকে --(২০০০) *  ঝড় সওয়া কলাপাতার গান --(২০০৩) * রচিত কবিতা --(২০১৮ ) বিভাবরী --(২০১৮) * সেই পলাশ্যার তিন পাত --( (মানভূঁইয়া কবিতা) (২০১৯) * সুদূর মাঠের প্রস্তাব -- (২০২০) * কোভিড নাইনটিন্ --(২০২০) * বসন খসে পড়ে --(২০২১) ছড়া---দিলাম ছড়া ছড়িয়ে --(১৯৯২) *  হুল  --(২০১৩)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন