কবিতাগুচ্ছ * মনোজ বাগ
বরফ
কণা মাত্র বরফ , জলে ভেসে আছি ।
এক খন্ড খড় , এক টুকরো কুটো ,
চিমটি খানেক মাটি , বিন্দুমাত্র জলের বুদবুদ -
ভরে আছি নিজেতে নিজেই
গলে আছি নিজেতে নিজেই
মিলেমিশে আছি নিজেতে নিজেই !
ছত্রখান সমস্ত কিছুর মধ্যেও একছত্র হয়ে আছি নিজেতে নিজেই ।
জনান্তিকে বলি , এই এত কিছু যে আমি -
আসলে কিচ্ছুই নই ?
নিজেকে খুব করে শুনিয়ে শুনিয়ে বলি ।
দৃষ্টি ম্লান হয়ে আসে
জুলজুল চোখে দেখি জগৎ , জীবন -
আসবাবহীন সম্পূর্ণ শূন্য একটি ঘর এই আমি !
জলে বয়ে যায় জল , জলের সামগ্রী ।
লোকে যাকে পাথেয় বলে ।
বাতাসে বাতাস , জলেতে জল , মাটিতে মাটি -
দ্বিধা দ্বন্দ্বে বড্ড জ'রে আছি ।
আমি কিচ্ছুই নই !
নাকি এই আমিই বিভুস্বরূপ ...
নিজের সঙ্গে নিজের মল্ল যুদ্ধ চলে ।
মনের মধ্যে বিবেক ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে ,
চৈতন্য গুলিখোরেদের মতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
থম মেরে গেলে , পরমাত্মা মুখ টিপে হাসে ।
এই আবেশে নিজেকে দেখি :
নামমাত্র এক বরফের কুচি আমি ,
ভেসে আছি পয়োধি-প্রমান জলে ।
পরমাবেশ
মেতে আছি , মাতিয়ে রেখেছিও -
তাই ম'ম করছে আমার সৌরভ ঘরে বাইরে ।
সমস্ত দিন - সমস্ত রাত - মানে চব্বিশ ঘণ্টাই
এই সবই চলছে ।
এর পরও ঘুমে বুজে আসে না চোখের পাতা ।
বুকের মধ্যে ডুব ডুব করে শ্বাস-যন্ত্র।
এই একটি কাজই আমি আজন্মই একান্ত নিজের জন্যই করছি ।
আমৃত্যু আমাকেই করে যেতে হবে ।
এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের আর কারো সাধ্যও নেই
আমার হয়ে আমার এ কাজটি যে করে দিতে পারবে ।
আর একটি দায় আমার আছে -
সেটি , যে পরমে আমার অবস্থান , সেই সত্যটিকে যথাযথ ভাবে জানা ।
চোখে চেপে থাকা আঙুল , মনের আড়াল ,
সামনে পিছনে ডায়ে-বাঁয়ে উপরে-নিচে যেখানে
যত পর্দা ঝুলে আছে - সব সরিয়ে সরিয়ে ,
দৃষ্টি যতটা সম্ভব মেলে রেখে - চেয়ে আছি ।
শুভ্ নাম
ব্লাক বোর্ডে জ্বলজ্বল করা শুভ্ নাম ।
হাতে ডাস্টার নিয়ে ভাবছি -
এই তো মুছে দিলাম বলে ...
আমি না পারলেও অন্য যে কেউ এসে মুছে দেবে ।
আমার তো নিজের জন্য চাওয়ার কিচ্ছুটি নেই ।
কত দিন নিজেকে বোঝাচ্ছি -
হাতে ডাস্টার নিয়েও তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে আছি ।
সামান্য কটা চকের অক্ষর - কিছুতেই মুছে দিতে পারছি না ।
যোগ
যোগে যোগ হয়ে আছে সব ।
বিয়োগের অঙ্ক কোথ্থাও নেই ।
ভাসানের সময় - জলে ভেসে আছে প্রতিমার মুখ ।
জলে ভেসে আছে সাজসজ্জা , ফুল , মালা ...
দূরে শঙ্খ বাজে ।
সায়াহ্নে কেউ সন্ধ্যারতি করছে ।
অগ্নি
তৃণাঙ্কুশ থেকে বৃক্ষ -
দাবাগ্নি চেটেপুটে খায় সব ।
কোটি কোটি নক্ষত্রের আলোও যেভাবে
গন্ডুষে পান করেন একজন তৃষ্ণার্ত মানুষ ।
সম্পূর্ণ নিবারণের পরও ক্ষুধা তৃষ্ণা তবু থাকে ।
যজ্ঞাগ্নির মতো নিরন্তর আহূতি চায় ।
*********************************************************************************************
পেশায় ব্যবসাজীবী । কবিতা বেঁচে থাকার রসদ ; অনিবার্য এক ইন্ধনও । প্রিয় কবিতার গ্রন্থ : গীতা , ঈশোপনিষদ , গীতবিতান , আমিই মাটি , আমিই আকাশ (সুজিত সরকার) । কবিতা প্রিয় বিষয় হলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই টানে । সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রতিও প্রবল আকর্ষণ আছে । ভালো লাগে ভাবতে : আপাত যা কিছু -- এই সবই এক পরম সত্যেরই প্রকাশ ।





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন