নজর উল ইসলাম * দুটি কবিতা
মোহিনী
হেসেছিল মন হেসেছিল রাতের তারা
সোনাঝুরি চিকন রোদ জীবন মর্মে ভরা
আগুন চিনেছি সেদিন—মোহিনী মুখ
কথার জাদু চোখ মেলেছে অধরা বুক
চারিদিক জোনাকির আলো-জোছনা নিসর্গ
দেখেনি এমন আত্মহারা বিস্ময় অনন্ত
তুমি-ময়তা উন্নত পৃথিবীর মনপাড়ায়
সহায়তা পাব উৎকন্ঠায় জাগতিক পরম্পরায়
ছলনা বুঝিনি কোনো—মিশেছি আবহমান
মুখোমুখি রঙবদলের বাহারি অন্তপ্রাণ
শাশ্বত মানচিত্রে দরাজ অপার ক্রমাগত
প্রেমে-অপ্রেমে মুখর আদুরে জনম অবিরত
আত্মজিজ্ঞাসা ছবি হয়ে আসে প্রতি দৃশ্য কাব্যে
রিনিঝিনি স্পষ্টতর ঠিকই নির্ভার সে আকাশে...
অপ্রকাশিত স্বপ্নবীজ
গোপনে ইতিহাস হওয়া দিনলিপির যতই এপিঠ-ওপিঠ দেখি
সন্ধানী সুতোর ম্রিয়মান মন ডুকরে ওঠে প্রোথিত জীবনে
শুকনো পাতার ঠিকানাহীনতায় বুক বেঁধে ঝুলে থাকা
এমন অনালোক চেয়ে থাকে বালুচরে বিভাষার ভুবনে
ফিরে আসি বিরহ-উঠোন অপ্রকাশিত গর্ভবীজে
ঘনরাতের মত অন্ধকারে বিমোহন রসদ জোগান অঞ্চলে
বহুকাল বোধহয় ঠাওর করেছে এ পৃথিবীর চাদর
সব মাঝি মল্লার শ্যাওলার ভেতর থেকে টেনেছে নৌকো
গোধূলির রঙে মুড়ে কেবল সাগ্রহ জীবন স্বাক্ষরে
হেসে ওঠে ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গরাশি বাধ্যতায়
অপূরক অবিরত জীবনজড়িত আত্মরক্ষার অভিমুখে
যে গান পোড়ামাটির বিষাদ গহিন থেকে ঝরা ধুলো ওড়ায়
বিমুখ স্বপ্নমন্দিরে অক্ষর নির্মিত স্থাপত্য লেখে...
************************************************************
কবিতা এবং কবিতাকেই আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছেন নয়ের দশকের কবি নজর উল ইসলাম।১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর বসিরহাটের পশ্চিম বিবিপুর গ্রামে জন্ম। হাদরিদ্র পরিবারে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন নজর উল কবিতার হাত ধরেই।
দারিদ্র্যের কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার কৌলিন্য অর্জন না-করলেও নজর উল ইসলাম নিরন্তর কবিতাচর্চার কবি হিসেবে সমুজ্জ্বল দু-বাংলায়। তাঁর ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘নদী এলেই তুমি এসে যাও’, ‘রাতপাখির দেহলি’, ‘আমিই সেই পথ’, ‘ ও বৃষ্টির মেঘ’, ‘মুখ লুকনো হৃদযমুনা’, ‘ মেঘপাখির আগুনলিপি’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ও অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনে প্রবহমান তাঁর সৃজনশীল কাব্যকৃতির জন্য নজর উল ইসলাম পেয়েছেন চন্দ্রকেতুগড়, রিয়া ইন্ডিয়া এবং এখন বঙ্গদেশ সন্মাননা।





.jpg)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন