সন্দীপ ঘোষ * দুটি কবিতা
একলা
ছেলেটা একলা হনহনিয়ে চলে গেল ওদিকে, মুখে একরাশ বিষণ্ণতা, দেহমনে ক্লান্তির মেঘ,শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি, তারপর ক্ষণিকের আশ্রয় বটবৃক্ষের নিচে |
এক সময় থামল বটে, অশ্রুজলে ভিজে যাওয়া
মলিন জামার জবজবে গন্ধ তাকে আজ বিচলিত করেনি |
একমনে উবু হয়ে বসে কী যেন খোঁজে,
উফ্, অসহ্য একাকীত্বের জ্বালা,
বুঁদ হয়ে হয়ে যায় আত্মমগ্নতায় |
টের পায় না কখন অন্তঃপুরের বাসিন্দারা
তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে |
বিবেক বলে, আমাদের দিকে চেয়ে দ্যাখ,
তোর অবহেলায়
আমরা কেমন জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে উঠেছি |
বিশ্বাস বলে, আমরা রয়েছি তোর অপেক্ষায়,
তোকে পথ দেখাব ব'লে |
সংবেদী অনুভব বলে, তুই ঘুরে দাঁড়া,
আমাদের কাছে টেনে নে,
দেখবি কেটে যাবে অন্ধকার |
পবিত্ৰ আর শুভচিন্তন ছেলেটাকে নাড়িয়ে দেয় |
ঘোর কাটে নিঃসঙ্গতার,
শুনতে পায় ওদের সমব্যথী সুর ------
সেরা সুখ 'ভালোবাসা'র পরম স্পর্শ
আলোকিত করে দেবে জীবনের চলার পথ |
না পাওয়া গুলো আলোর প্লাবনে হারিয়ে যাবে,
তারপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে সমস্ত যন্ত্রণা,
ফিরে আসবে আনন্দ, নতুন করে গড়বে সংসার |
একসময় ছেলেটা
সবাইকে হৃদের ভেলায় চাপিয়ে
দৌড়ে গেল বাড়ির দিকে,
ক্লান্তিহীন প্রাণোচ্ছল দেহমনে |
বিষবাষ্পে ভবিষ্যত
দাউদাউ করে জ্বলছে,
পুড়ছে সংসারীর গহন মনের অবয়ব,
নবজাত যেদিন জন্মিল লেলিহান শিখা
গ্রাসিল তার পবিত্ৰ কোমল হৃদয়ের বিশ্বকে |
পৃথিবী যত বড় হতে থাকে-----
পরিবারের লালিত তেজ ঝলসে দেয় এক লহমায় |
কুঁকড়ে ওঠে সারা শরীর এক অসহ্য অব্যক্ত যন্ত্রনায় |
আরে-- যাকে তোমরা জগতের আলো দেখালে,
হ্যাঁ তোমরা-- বিমুখ তো বটেই,
কেন তোমাদের সারা কোল জুড়ে নিকষ কালোর সামিয়ানা ?
রুখুসুখু ভাঙাচোরা কর্কশ বাগিচায়
কেন দিচ্ছনা পবিত্ৰ গঙ্গাজল ?
দ্যাখো চেয়ে, দ্যাখো--- কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে শিশুটা !
চব্বিশ ঘন্টা গোলাগুলি বর্ষণে ব্যস্ত অশান্ত ,
তোমাদের মুখনিঃসৃত বেআইনী অশ্রাব্য শব্দগুলো
তিরের ফলা হয়ে তোমার শিশুটার
তুলতুলে মন ও নরম বক্ষপিঞ্জরে
ঢুকছে একটু একটু করে |
জানো এর পরিণাম !
ভবিষ্যতই বলবে সেকথা…





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন