রাইনের মারিয়া রিলকে
রাইনের মারিয়া রিলকে (জার্মান: René Karl Wilhelm Johann Josef Maria Rilke, ৪ঠা ডিসেম্বর ১৮৭৫ - ২৯শে ডিসেম্বর ১৯২৬) বিখ্যাত জার্মান কবি ও ঔপন্যাসিক। রাইনের মারিয়া রিলকের পুরো নাম রেনে কার্ল উইলহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকে। তার লেখা কবিতা এবং গদ্য উভয়ই গীতিময়। একটা মিস্টিক বা রহস্যময় আঙ্গিক রিলকের লেখার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এলিয়টের মতোই তার বেশিরভাগ লেখাতে নিঃসঙ্গতা ও উদ্বিগ্নতা গ্রাস করেছে। সৃষ্টির মধ্যে অস্তিত্ত্বের এই টানাপোড়েনই তাকে যথার্থ আধুনিক কবি করে তুলেছে। কবি জয়িতা ভট্টাচার্যের অনুবাদে আমরা পড়ছি রিলকের একগুচ্ছ কবিতা।
প্রিয়তমাকে
চিৎকার করে
ডাকো ওগো প্রিয়া!
জানলার শার্সি তে তোমার গাঢ় চোখ,
গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা,
প্রাচীন বৃক্ষের অন্ধ গলিপথে গুটিগুটি
এগিয়ে আসছে ফ্যাকাশে শূন্যতা!
সখী,আদর করো আমায়,আলিঙ্গন করো,
এই একাকী আঁধার ঘর ছেড়ে
চলো চলে যাই ঘন নীল উপবনে ,
ওখানে ভেসে আছে তোমারই ধূসর প্রতিবিম্ব,
আমি হৃদয় উজাড় করে দেব তোমায়
দু হাত মেলে...
চাঁদনি
দক্ষিণ জার্মানে এক রাত
পরিপক্ক ফ্যাকাশে ছায়ার নিচে চরকা কাটে
চাঁদের বুড়ি।
প্রাচীন মিনার থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মুহূর্তরা,
তিমির সমুদ্রে।
দূর বনান্তে পাতার খসখস ধ্বনি,
রাত প্রহরীর মতো একা একা
শূন্য পাতা
কী জানি,কোথা থেকে বেহালার মুর্চ্ছনা জেগে উঠেছে!
প্রেম ও প্রেম আমার...
আমাকে অন্ধ করে দাও
যদি অন্ধ করে দাও তবুও দেখব তোমায়,
মন মুকুরে।
যদি বধির করে দাও শুনতে পাবো তবু তোমারই কন্ঠস্বর,
পঙ্গু দেহেও পৌঁছে যাবো তোমার কাছে,
যাবো যদি কেটে নাও জিভ রুদ্ধবাক আমি
তবু তোমাকে ডাকব নিরব অভিলাষে।
যদি গুঁড়িয়ে দাও হাত তবু হৃদয়ডোরে করব আলিঙ্গন
তোমাকে।
যদি আগুনে ফেলে মারো তবুও জেনো
আমার প্রতি হৃদস্পন্দনে
শুধু তুমি
তুমি
তুমি
এবং একমাত্র তুমি।
চলাচল
অনির্বাণ শিখা ছুঁয়েছিল চোখ। এখন পথ ছেড়ে
অপর কোনো অনুরূপ পথে,দূরে-দূরে।
না পেলেও আঁকড়ে ধরেছি প্রতিবার।
ছুঁতে না পারলেও সেই আলো
আমাদের বদলে দিচ্ছে আমরা কিছু টের পাচ্ছি না।
হাতছানি দিচ্ছে আমাদের ভেতরের রক্ত স্রোত!
ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসের স্পর্শটুকু শুধু
টের পাচ্ছি এখন।
বারবার
ঘুরে ফিরে আসি পুনরায় প্রেমের আয়তক্ষেত্রে। ওখানে ছোট্ট চার্চ,বিষণ্ণ গতপ্রাণ নামগুলি শুয়ে থাকে ভয়াবহ গাঢ়তায় হারিয়ে যাবে বলে। এসো আমরা হাত ধরাধরি করে বসি বুড়ো বটের নিচে। পুনরায় এসো ফুলের বাগিচায় শুয়ে থাকি আমরা মুখোমুখি আকাশের দিকে চেয়ে।
*************************************************************************************************
কলকাতা নিবাসী সাহিত্যিক জয়িতা ভট্টাচার্য পেশায় শিক্ষক। অল্প বয়স থেকে লেখালিখি। প্রধানত মানবাধিকার বিষয়ক বুলেটিন ও খবরের কাগজে লিখতেন। প্রথম প্রেম কবিতা। এযাবৎ চারটি কবিতার বই,একটি গল্পের বই ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত। লিখেছেন অসংখ্য সংকলনে। এছাড়াও নিয়মিত প্রবন্ধ, ও অনুবাদ কবিতা লেখেন বৈদ্যুতিন ও মুদ্রিত পত্রিকায়। পেয়েছেন সরকারি ও সাহিত্য গোষ্ঠীর নানা সম্মান।




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন