শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪

প্রদীপ ঘোষ

  


প্রদীপ ঘোষ * তিনটি কবিতা










নিকষিত হেম 

দ্বীপের সমীপে জল ভাঙ্গে সাগর, আত্মরতিতে
উন্মাদ কবি নিশাজলে অলীক সাজায় গ্রন্থিতে।

কুমোর খোঁজে মৃত্তিকায় মূর্তি,কিংশুকে প্রতিভাস
ভ্রান্ত কবি'র নুড়ি পাথরেই ..নদী ছোঁয়ার উল্লাস।

প্রেমে ক্রন্দনে চুম্বনে, পারিজাতে আসঙ্গ বাসনা
ঘাসের আশ্লেষ হিমের স্পৃহা,এ নিশি ভোর হয়ো না।

জীবনের যা কিছু সংশয়াতীত নীহারিকা বিভ্রম
হে ঈশ্বরী! তুষের এ ধিকিধিকি ...কীসে উপশম?

রঙিলা স্বপ্ন বাওরে...নদী, ....নাসিহত মাহফিলে
অপলক জীবনকে মেপেছি কুনকেতে,গরমিলে!

এ নরম মাটির বুকে কি ভাবে আঁক কাটো কুসুম?
আঙুলে ছুঁয়ে দেখো খাম্বাজের লয়, রাত্রি নিঝুম।

আমি চিৎকার করি, ...জাগাও কুসুম সুর লহরী-
প্রেম! প্রেমের সপ্তকে কবি পুড়ে ..নিকষিত হেম।















পাটিপত্র

নগরে অবশ্য ঠাণ্ডা ঘরে সোফায় বসে। গঞ্জে এখনো খেজুর
পাতার পাটিতে ; পাটির বুনটের মতো-ই ভাঁজে ভাঁজে কথা
হবে। বুনন শুরুতে কাঁচা সবুজ পাতা কাঁটা বাঁচিয়ে জড়ো
হচ্ছে। গায়ের রঙ, পায়ের গড়ন, চুলের গোছ, শিক্ষা, বাপের
বাড়ির রেস্ত ইত্যাদি। শৈল্পিক নিপুণতায় ফর্দ তৈরি করছেন
ঝানু কর্তাব্যক্তি সুধী-রা। দু'চাকা নাকি চার? টু-বিএইচকে না
থ্রি? তৈজসপত্র সহ গহনার ভরি, উপর্যুপরি নগদ?
অন্যদিকে হাত কচলান, ওজর আপত্তি, বাকবিতণ্ডা, তেমন 
পরিস্থিতিতে চোখের জল প্রভৃতিতে নিষ্পত্তি।
সভা ভঙ্গ হলে একপ্রকার, নইলে জলযোগ শেষে পান সুপারি
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল মেয়ের বাপ। বয়ন সমাপ্তে উলুধ্বনি যোগে 
ফর্দে তেলসিঁদুর ছাপ। এখন দু'পক্ষেই মিথ্যে হাসির ভড়ং।

           ভালো তো ভালো। এমনিতেও সবুজপাতা-র
          খেজুরপাটি কবে যেন শুকিয়ে ছোটএলাচ রঙ।



গুণে গুণে ৮-বসুর জীবন

যাকে পুরুষ ভাবো বীর্যে, পাহাড় দেখি প্রসবিনী নির্ঝর
যাকে জীবন বলো, যাপনে দেখি নির্বেদ! স্মৃতির মর্মর।

অসম্ভবেরও যদি কোন সম্ভাবনা,তবু ময়ূরপঙ্খী নাও
ভেরেনি কখনও এ ফেরিঘাটে, সাম্পানের ইশারা ও।
উজান বাওয়া হয় না আর, হয় না তো। এত রিক্ততায়
হাহাকারের ঝিলমিল ঢেউ যে ! বুকের যেদিকে আঁচল
বিছানো, নদীর জল যেতেছে অন্য পাড়ে বিষাদ বালুচর।

চৌহদ্দিতে ঈশানে তুলসী তলায় জপ মালায় ; বীজমন্ত্র
আওড়াতে গোঁসাই আঙুল নাড়ায়। হবিষ্যান্নের মালসা
পোড়ায়। নৈঋতে কুটুম্বিতে উঠানের রোদ পেরোলেই
তিলিসিম আশিয়ানা। আখড়া বলো আখড়া, খেজুর
কাঁটায় ছাওয়া মেহমান নওয়াজিতে উলুঝুলু। তারে ঘর
কইলে ঘর ! সে থানে অপেক্ষার বসত গড়ে ফকিরি,
                                                   কাঁদনগীতির অবসর।

ও সাঁই দোহাই ! আমায় ৯য়ে নিয়ে চল, সমর্পণের আগে
আমি অপার হয়ে বসে রইলাম ০ন্যে! কোন কলঙ্ক ভাগে?




*********************************************************

প্রদীপ ঘোষ

 'দেশ' পত্রিকা সহ অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন, ই-ম্যাগে স্বরচিত কবিতা প্রকাশিত। ফেবুতে যথারীতি নিয়মিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক (বঙ্গবাসী কলেজ)। পরবর্তীতে আইন নিয়ে পড়াশুনা (সুরেন্দ্রনাথ ল'কলেজ) এবং জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা (সিওপি)। নিজ পেশা। কলকাতা নিবাসী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন